আমার মায়ের পবিত্র রক্তের নিগূঢ় মর্মভেদ থেকে এক মমতাময়ী ভালোবাসার ধ্বনি ও বাক্য ভেসে আসতো আমার কানে সে এক মধুময় বর্ণমালার শব্দ। আমি তখনও পৃথিবীর মাটিতে ভূমিষ্ঠ হইনি লুকিয়ে লুকিয়ে মায়ের পবিত্র জঠর থেকে সেই স্ন্দুর ভাষার শব্দ ও গানগুলো শুনতাম রফিক, শফিক, সালাম, বরকত আর জব্বারের সুর আরো আরো অনেক ভাষা-শহীদের সুর গোপনে তাদের সাথে আমি কথা বলতাম আর বাংলা বাংলা বলে মাকে ডাকতাম তারপর আমি এই প্রিয় দেশের মাটিতে ভূমিষ্ঠ হলাম ! আমার বিবেকবোধ সুখ-দু:খ কষ্ট বেদনাগুলো বিকশিত চেতনা ও মানবতার জাগরণ হতে লাগলো তখন আমি স্বদেশের কান্নার শব্দ ধ্বনি শুনতে পেলাম আমার হৃৎপিন্ডের গভীরে বেদনা ও ভাষার রক্ত ঝরলো আমার অন্তর্গত দেহের জমিনে মাটি, অরণ্য পশু, পাখি নদী মাঠ কেঁদে কেঁদে উঠলো বিপুল প্রেম দু:খ বিরহ আর তীব্র যন্ত্রণায়। শুভ্র শেফালির গন্ধ থেকে তৃষ্ণারা আমাকে ডাকলো তারপর আমার স্বপ্ন গুলো ঘুরে ফিরে সামনের দিকে নতুন করে হাঁটতে লাগলো ইতিহাসের মানচিত্র ও আমাদের আকঙ্খাগুলোকে সাথে নিয়ে শ্রেণিহীন ভেদাভেদমুক্ত বোধ আর আঁধার-আলোর মিশ্রনে আমরা সবাই ক্ষোভে বিক্ষোভে জেগে উঠলাম শ্রমময় শ্রমজীবী মহাবিপ্লবের এই প্রিয় দেশে তখনই খুলতে লাগলো নিভৃত সচেতনতার নতুন দ্বার দু:খগুলো ভেঙে চুরে সুখের মিমাংসায় রক্তাক্ত হতে লাগলো রফিক চন্দ্র সূর্য নক্ষত্রের কাছে কথা দিয়েছিল শফিক সকাল দুপুর আর রাত্রির কাছে কথা দিয়েছিল বরকত নতুন শিশু আর প্রবীণ বৃদ্ধের কাছে কথা দিয়েছিল জব্বার মানুষের বিবেক বোধ, জাতি, আর মাটির কাছে কথা দিয়েছিল কৃষ্ণচূড়া রজনীগন্ধা টগর বকুল আর অসংখ্য ফুলের কাছে কথা দিয়েছিল আরো অনেক অনেক ভাষা শহীদেরা ! আমাদের ভাষা হবে বাংলা, আমাদের ভাষা হবে বাংলা আমরা বাংলা ভাষা চাই, আমরা মায়ের ভাষা চাই দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধরা সবাই ভাষার পক্ষে ঘুরে দাঁড়াও। যারা আমাদের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে চাই নি যারা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল সেই সব শত্রু আর শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলো। তারপর আমরা যতটা পারি দেশের জন্য সেবা ও কল্যাণের পথ ধরো অকল্যাণকে সরিয়ে সরিয়ে হেঁটে যাতে লাগলাম দৃ:খ কষ্ট বেদনা ভাঙা এক নতুন দিনের ঠিকানায়। অভিজ্ঞ ফসল ফলানো সাহসী কিষাণের সাথে আলো আর আঁধার উভয়কে বুকে নিয়ে জীবনের শোক তাপ ও অসংখ্য বেদনা ভুলে মাটির ক্লান্ত ভেদ করে আমরা হেঁটে যেতে লাগলাম নতুন শেকড়ে সঞ্চিত আলোর গন্তেব্যে জীবন ও মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যারা হারিয়ে যায় আর ফিরে আসেনা সময়ে উদাস ও কঠিন নদী দুই কূল ভেঙে হেঁটে যায় পুরাতন পৃথিবীর আঁকা বাঁকা পথ ধরে তাদের গভীর প্রেম আমাদের দেহে লুকিয়ে আছে কৃষ্ণচূড়ার জ্যোতির্ময় এক রঙিন আলো হয়ে। তাদের ভালোবাসা কেঁদে ওঠে পুষ্পের হৃদয় দহনে সাথে বেদনার্ত ভাষা শহীদেরা আস্তে আস্তে জেগে ওঠে সূর্যদীঘল নদীর নির্মল ও মায়াবী স্বচ্ছ সাগরের তীরে পুনরায় বিপ্লবের নতুন সুর ও গানে। অবেলার স্বপ্নের লালিত নিবিড় বাসনার কালো আঁধারকে ধীরে ধীরে ভেঙে দেয় তারপর গোপন দহনে ক্লান্ত আলো ছড়ায় মাঝরাতে ঘুমহীন তরুণ তরুণীরা জেগে থাকে তাদের শরীরে জ্বলে আগুন, বুনো পাখির উত্তাপে তখন কারা যেন দুয়ার খুলে ডাকে মা জননী, মা জননী ভাষা শহীদের মৃত্যুঞ্জয়ী চোখ আবার ফিরে তাকায় স্বপ্নগুলো থমকে দাঁড়ায় নিবিড় নিশীথ রাতে কষ্টের দহন জ্বালা, জ্বলে ওঠে হৃদয় পটে আর আলোর ঠিকানা খোঁজে ফুলের সৌরভ ঘ্রাণে এক সময় মুখোশের গভীরে ঘাতক শাসক নিরপরাধ জনতার শরীরে বিষ ঢেলে দেয় তখন গতিশীল পথ রক্তে কেঁদে ওঠে দৃষ্টির অন্তরালে তারপর আগুনে জ্বলেপুড়ে আর অশ্রু ঝরে আগামি দিনগুলো স্বাধীনতার আলোতে প্রজ্বলিত হতে থাকে মানুষের আশার সংসার আর সাধগুলো পুনরায় জেগে ওঠে লাল কৃষ্ণচূড়ার গান গেয়ে গেয়ে। সেই সব সাহসী বালকের উত্তরসূরীরা আজও ভাষার জন্য মিছিলে হেঁটে যায় ৮ ফাল্গুনে ঝরে যাওয়া নক্ষত্রগুলোর সাথে তারা আবার জ্বলে ওঠে আলোকিত স্মৃতি সৌধ মিনাওে ! কালো ব্যাজ জাতির বিশাল নিরবতা ও শোকে এক সময় দেহের ভাঁজে ভাঁজে আঁধার ভাঙে দুচোখ থেকে রৌদের আলো বিকশিত হতে থাকে তরুণ উল্লাসে ফেটে পড়া যৌবনের গানে। যে পাখিগুলো প্রেম ও ভালোবাস বুকে নিয়ে সারা দিন ডেকে ডেকে সন্ধ্যায় শিকারীর বুলেটে রক্তাক্ত হয়েছিলো লাশে তাদের দানে গড়া এই মাতৃত্বেও অমূল্য বাংলা ভাষা সমুদ্র ঢেউয়ের মতো জনতার স্বদেশে ভাসে দূর-দিগন্ত আসমানি রঙের নিচে। সেই শান্তির সাদা সাদা মেঘ গুলো এখনো ঘুরে বেড়ায় মাঝে মাঝে গোধূলি সূর্যের আলোতে ওরা লাল হয়ে ওঠে তখন সমুদ্র গর্জন বাতাসে অশুভ শাসকের শেকড় ভেঙে যায় তারপর জাতিকে ডেকে ডেকে বলে তোমরা আবার জেগে ওঠো তোমরা আবার জেগে ওঠো কঠিন পূর্বাভাস দাও ঘাতকের বিরুদ্ধে আমরা রফিক আমরা শফিক আমরা জব্বার আমরা সালাম আমরা বরকত আমরা সবাই ভাষা সৈনিক তোমাদের সাথে আছি তোমাদের সাথে থাকবো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।