ছেলেবেলার প্রেম এবং শাস্তি

শৈশব (সেপ্টেম্বর ২০১৩)

প্রশান্ত মাতাল
  • 0
  • ৫৫
হঠাৎ করে শান্ত আজ আরো শান্ত হয়ে উঠলো । কারন আজ তার শাস্তি হতে পারে , ভয়ংকর কোন শাস্তি , অথবা লজ্জার কোন শাস্তি । ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের বাড়ীতে অনেক আত্নীয়- স্বজন এসেছে । আত্নীয়- স্বজনদের নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই শুধু তার মামাতোবোন স্বপ্না ছাড়া । এই ফাজিল মেয়েটা মানুষকে এমন লজ্জা দিতে পারে যা বড়রা ও ভাবতে পারে না অনেক সময় । এইতো সেদিন ,শান্তর মেজ মামা মানে স্বপ্নার বাবা শান্তদের বলছে , তোমরা ছোটরা নিজেদের মধ্যে মারা মারি করবে না , যারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে তারা কখনো বড় হতে পারে না । স্বপ্না হঠাৎ বলে উঠলো বাবা তুমি কিভাবে বড় হলে ? ওর বাবা বলে , মা তোমার প্রশ্নটা বুঝি নাই ? স্বপ্না বলে , তুমি আর মা তো সব সময় ঝগড়া করো কিন্তু তুমিতো বড় হয়ে গেছ । শান্তর মেজো মামা সবার সামনে লজ্জা পেয়ে গেলে ও মেয়েকে বলে , মা আমরাতো ঝগড়া করি না , নিজেদের মধ্যে কথা বলি । স্বপ্না বলে , ঝগড়া নাতো কি ? ঐদিনতো মা আমার সাথে ঘুমালো , মা বলল তোমার সাথে নাকি তার ঝগড়া হয়েছে , তাই না মা ? তারা সবার সামনে খুবই বিব্রত হল । তারপর তার মা তাকে অন্য রুমে নিয়ে গেলো । তাই শান্ত ভাবছে ,তার মেজ ভাইয়ের তো শাস্তির কোন ঠিক ঠিকানা নাই । হয়তো সবার সামনে বলে বসবে , একশ বার কান ধরে উঠবস কর আর বল “ আমি কোন দিন অহনার সাথে কথা বলব না “ । শান্ত যে এখন বড় হয়েছে উনার তা মাথায়ই আসে না । তবে শান্ত শাস্তি হতে বাঁচার জন্য কেঁদে দিতে পারে কিন্তু স্বপ্নার সামনে কাঁদলে বিপদ আছে । এই মেয়ে সবাইকে বলে বেড়াবে , শান্ত ভাইয়া ভয়ে কেঁদে দিয়েছে । আবার কান ধরলেতো আরো বিপদ । তাও আবার যদি উঠবস করতে করতে বলে আমি অহনার সাথে কথা বলব না । এই মেয়ে পরে সবাইকে অভিনয় করে দেখাবে , সে কি করে কান ধরে উঠবস করেছে আর কি বলেছে । তখন সবাই জানতে চাইবে এই অহনাটা কে ? তখন এই বাঁদর মেয়ে বলবে , উনার গার্ল ফ্রেন্ড । এই মেয়ে ঢাকায় থাকে , ক্লাস ফাইভে পড়লে ও বয় ফ্রেন্ড গার্ল ফ্রেন্ড ব্যাপারটা বুঝে । তবে সবচেয়ে অসহ্য লাগে যখন মানুষকে লজ্জা দিয়ে কুট কুট করে হাসে । আবার মাঝে মাঝে ভাব ধরে সে যেন শান্তর চেয়ে বড় , অথচ শান্ত পড়ে ক্লাস টেন -এ । তাই শান্ত বুঝে উঠতে পারছে না কি করে সে এই শাস্তি এড়াবে ? যদি সে কান ধরে উঠবস করে ও কিন্তু অহনা নামটা মুখে আনতে পারবে না আর যদি বলে আমি ঐ মেয়ের সাথে কথা বলব না , তাহলে তার মেজ ভাই আবার বলবে , ঐ মেয়ে কিরে? বল অহনার সাথে কথা বলব না । কথা বলার সময় মনে ছিল না ? তাই শান্ত উপায় খুজতে থাকে । ও ভাবে ওর কি দোষ ?

শান্তর রোল নাম্বার এক । স্যাররা সবাই তাকে আদর করে , ক্লাস ক্যাপ্টেন সে , যদিও সে কারো নামে স্যারদের কাছে নালিশ করে না । এই জন্য তাকে রহমত স্যারের বেতের বাড়ি ও খেতে হয়েছে । এই রহমত স্যারকে সবাই টাকলু স্যার বলে ডাকে । স্যারের বয়স হয়েছে, মাথার সব চুল পড়ে গেছে , তেমন একটা কানে ও শুনে না, তবে স্যার খুব কড়া , এই বয়সে ও হাতের যা শক্তি ! স্কুলের বড় ভাইয়ারা ও উনাকে খুব ভয় পায় । স্কুলের নিয়ম হল – এক ক্লাস শেষ হলে আরেক ক্লাশের আগে কেউ যদি ক্লাস হতে বের হয় তাহলে ক্যাপ্টেনকে তাদের নাম লিখতে হবে পরের ক্লাসের স্যারকে দেয়ার জন্য । শান্ত কারো নাম লিখে না তাই সে সব ছাত্রের কাছে খুব জনপ্রিয় ক্যাপ্টেন । কিন্তু এক বছর আগের একদিন- রহমত স্যার এক ক্লাস পর আরেক ক্লাস নেয়ার জন্য অফিস রুম হতে বের হয়ে যখন দেখে ক্লাস নাইনের ক্লাস রুমের সামনে ছাত্রদের ভিড় তখন তিনি নিজের ক্লাসে না গিয়ে শান্তদের ক্লাসে আসে । এসে জিজ্ঞেস করে , কারা কারা বের হয়েছে ? কেউ স্বীকার করে না তাই স্যার শান্তকে বলে , তোমার কাছে নামের লিস্ট নেই ? শান্ত বলে না স্যার নেই স্যার বলে কেন নেই? শান্ত বলে – স্যার আমি অংক করছিলাম তাই খেয়াল করিনি কারা বের হয়েছিল । স্যার বলে তুই কিসের ক্যাপ্টেন ? তুই তো একটা হাঁদারাম । এই কথা শুনে সব ছেলেরা হেসে ফেলে । পরে স্যার সব গুলোকে একটা দুটা করে মার দেয় কিন্তু মনে হচ্ছিল শান্তকে বেশী মারবে , তাকে একটা মার দেয়ার পর হেড স্যার এসে পড়ে আর বলে এই স্যার কি করেছেন ? মাস্টারের ছেলেকে মারছেন কেন? শান্তকে সবাই মাষ্টারের ছেলে বলে – ওর আব্বু আর হেড স্যার নাকি ক্লাসমেট ছিল আবার এক সময় উনি স্কুলের টিচার ও ছিলেন । এখন উনি অবশ্য বিদেশ থাকেন ।
সে সময়ের কথা , ওদের স্কুলে নতুন একটা ছাত্রী এসে ভর্তি হয়েছে । সাধারণত এই স্কুলে সবাই ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয় তার পর এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যায় । কিন্তু এই ছাত্রীটা শহরের স্কুল হতে এসে ক্লাস এইটে ভর্তি হয়েছে কারন তার বাবা গ্রামে থাকবেন বলে ঠিক করেছেন । মেয়েটা দেখতে নাকি খুব সুন্দরী । শান্ত অবশ্য তার বন্ধুদের কাছ হতে শুনেছে । বন্ধু বলতে শান্তর এক জনই আছে , শিমুল । বাকীরা ক্লাসমেট । শান্ত যে মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথা বলতে পারে না তা সবাই জানে । এইতো সেদিন স্কুলে মার্চের খেলার সময় , স্কুলের বিতর্ক অনুষ্ঠানে করিম স্যার বলল , শান্ত তুমি তন্নিদের দলের সাথে থাকো , তাদের দল দুর্বল । শান্ত ঐ দলে যেতে চায় না কারন এই দলে ৩ মেয়ে ২ ছেলে । মেয়েদের সাথে কথা বলতে হবে তাই সে নীল দলে যায় নাই । সে পরে সাদা দলে যায় ।
শান্ত যে শুধু মেয়েদের সাথে কথা বলে না তা না সে মাঠের খেলার মধ্যে শুধু ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন খেলতে পারে । তার মনে আছে , সে যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ত তখন হাফ ক্লাস হওয়ার পর তার বন্ধুরা সবাই গোল্লাছুট খেলত, সাত চাড়া খেলত , আমার মাঝে মাঝে বোম্ব-ব্ল্যাস্টিং খেলত ( এক জন টেনিস বল অন্যদের গায়ে মারত ) , তখন স্কুল সিঁড়িতে বসে শান্ত চুপ চাপ তাদের খেলা দেখত । তার প্রাইমারী স্কুলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল সোহেল , অবশ্য সোহেল যতটা না তার বন্ধু ছিল তার চেয়ে বেশী ছিল তার বডি গার্ড । কেউ শান্তকে কিছু বললে তার রক্ষে ছিল না । সে বিষম দাঙ্গাবাজ টাইপের ছেলে ছিল। তবে মাঝে মাঝে সে ও শান্তর সাথে মজা করত । যখন ডাকার পর ও শান্ত তাদের সাথে গোল্লাছুট খেলতে যেত না তখন সোহেল তাদের ক্লাসের মার্জিয়াকে ধরে নিয়ে আসত আর কলা পাতা দিয়ে ছাতা বানিয়ে শান্তকে বর সাজিয়ে তার মাথায় ছাতা ধরত আর বলত চল আজ তোদের বিয়ে। তাই লজ্জা হতে বাঁচার জন্য মাঝে মাঝে তাদের সাথে গোল্লাছুট খেলত । মার্জিয়া ছিল তাদের ক্লাসের রোল নাম্বার দুই । সে সব সময় চেষ্টা করতে রোল এক হতে কিন্তু সব সময় শান্তর চেয়ে কিছু নাম্বার কম পেত । তাই সে শান্তর সাথে ভাব করতে চাইত যাতে পরীক্ষার সময় তারা এক সাথে বসতে পারে তাই সে ঐ সময় চুপচাপ থাকত সোহেলকে কিছু বলত না । কিন্তু পরীক্ষার সময় সোহেল সব সময় শান্তর সাথে বসত যদি কেউ এটা নিয়ে ঝামেলা করতে আসত তাহলে নির্ঘাত মারামারি । মাঝে মাঝে এক পাশে মার্জিয়া আরেক পাশে সোহেল বসত যদিও শান্ত আর মার্জিয়ার কোন কথা হয় নাই ওদের পুরো প্রাইমারী স্কুল জীবনে ।
আসলে শান্তর জীবন ছিল ছকে বাঁধা । ওর বাবা বিদেশ থাকত তাই তার আম্মা তাদের পড়ার জন্য বাড়িতে হাউজ টিউটর রেখে দিয়েছেন । উনার নাম ছিল নয়ন । শান্ত খুব ছোট বেলা হতে স্যারের নিকট পড়ে , সব কিছু রুটিন করা সেই চার বছর বয়স হতে । সকালে খুব ভোরে আম্মা জাগিয়ে দিত মক্তবে হুজুরের কাছে পড়তে যাওয়ার জন্য । মক্তব হতে আসত সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে তারপর কাছারী ঘরে পড়তে যেত । ওদের নয়ন স্যার থাকার জন্য বাড়ীর সামনে আলাদা ঘর বানানো হয়েছিল , ওটার নাম ছিল কাছারী ঘর,সেখানে তারা সবাই পড়তে যেত । সকালের অংক করা আর ইসলাম শিক্ষা পড়া হতে হতে দশটা বেজে যেত । পরের তিরিশ মিনিট খুব ব্যস্ততায় কাটতো তার । কারন এই সময়ের মধ্যে গোসল , খাওয়া-দাওয়া আর স্কুলের জন্য রেডি হওয়া । ক্লাস শুরু হত সকাল এগারোটায় । স্কুলে যেতে পনের হতে পঁচিশ মিনিট সময় লাগত । তাই ও যখন স্কুলে ঢুকত তখন হয় পিটি শেষ হত, না হয় স্যাররা ক্লাসে ঢুকত। তার কখনো পিটি করা হত না কিন্তু বন্ধুদের কাছ হতে শুনত তারা নাকি পিটি তে অনেক মজা করে । কিন্তু কেমন মজা তা শান্ত কখনো দেখে নাই । অন্য ছাত্ররা পিটি তে না আসলে বা দেরী করলে হেড স্যার শাস্তি দিতেন কিন্তু শান্তর জন্য ঐ সাজা ছিল মাপ কারন সবাই জানত সে বাড়ী হতে পড়া লেখা করে আসছে কারো সাথে আড্ডা দিয়ে নয় , অবশ্য আরেকটা কারন ও আছে সেটা হল শান্ত ক্লাসের ফাস্ট বয় । ফাস্ট বয়দের না মারা ছিল স্কুলের অলিখিত নিয়ম । তারা যদি মাঝে মাঝে ক্লাসে পড়া নাও পারে । যেমন -একদিন শান্ত তার ফুফুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল , ফুফুর বাড়ি তাদের বাড়ি হতে বেশি দূরে ছিল না তাই ও বাড়ী হতে সরাসরি স্কুলে চলে আসে তাই সেদিন অংকের বাড়ীর কাজ করে নাই । পরে অংক ক্লাসে স্যার বাড়ীর কাজ চাইল , যারা দিতে পারে নি স্যার তাদের সবাইকে মারল কিন্তু তাকে বলল শান্ত অংক বই দে , কোন অধ্যায়টা জানি আজকে শুরু করব ? পিছনে হতে সদ্য দোলাই খাওয়া কয়েকজন বলার চেষ্টা করল , স্যার শান্ত কিন্তু বাড়ীর কাজ আনে নাই কিন্তু স্যার যে কেন ওদের কথা শুনতে পেল না তা শান্ত বুঝল না তখন , পরে বুজল ক্যাপ্টেনদের বোধ হয় মারতে নেই। তার স্কুল শেষ হলে চারটার দিকে যখন বাড়ী আসত তখন বই রাখার জন্য কাছারী ঘরে আসত তখন নয়ন স্যার বলত , ভাত খেয়ে সোজা ঘুমাতে যাবি কোন হাংকি পাংকি না । এই হাংকি পাংকির মানে না বুঝলে সে বুঝত যে , অন্যদের মত তার মাঠে খেলতে যাওয়া যাবে না । আর স্যারের কথা অমান্য করে গেলে রাতে পড়তে বসে ঝিমালে উনি নানা বিচিত্র শাস্তি দিবেন । স্যারের বিচিত্র শাস্তির মাঝে একটা ছিল– এক পায়ের উপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে পড়া । পা মাটিতে রাখতে গেলে বেতের বাড়ির ভয় । একদিনতো মিনহাজ ভাইয়া মাটিতে পড়ে হাতই ভেঙ্গে ফেলল । মিনহাজ হল শান্তর চাচাতো ভাই সেও তাদের সাথে নয়ন স্যারের কাছে পড়ত । শান্তরা চার ভাই আর মিনহাজ ভাইয়া স্যারের কাছে পড়তে যেত। তবে এদের মধ্যে শান্তর ভাই নিশাত আর মিনহাজ ছিল একটু দুষ্ট প্রকৃতির । তারা দু জন এক ক্লাসে পড়ত আর স্যারের দেয়া নিয়ম ভঙ্গ করায় ছিল ওস্তাদ । তাই তারা নানা রকম সাজা ও পেত । যেমন বিকেলে খেলে আসত আর রাতে পড়তে বসে ঝিমালে স্যার বুঝত তারা বিকেলে না ঘুমিয়ে মাঠে খেলতে গিয়েছিল । তিনি শীতের রাতে খালি গায়ে গোসল ও করাতেন ওদের মাঝে মাঝে । তারপর ও ওদের রোখা ছিল স্যারের জন্য কষ্ট সাধ্য । স্কুল ছুটির দিনে গরমের সময় তারা দুপুর হতে না হতে পানিতে ঝাপাঝাপি শুরু করত । মাঝে মাঝে পুকুর পাড়ের উঁচু গাছের মগ ডাল হতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত আবার নারিকেল গাছের পাতা ভেঙ্গে তা ধরে পুকুর পাড় হতে দোল খেয়ে পানিতে পড়ত ,আবার পানিতে ডুব দিয়ে একে অন্যকে ছোঁয়ার খেলা খেলত । শান্ত গাছ হতে লাফাতে না পারলেও দোল খেয়ে পড়তে পারত । তবে সবার তৃতীয় চোখ থাকত নয়ন স্যারের দিকে , স্যার দেখে ফেললে আর রক্ষে নেই । তাই তারা যদিও বিকেলে না ঘুমিয়ে মাঠে যেত , শান্ত তখন ঘুমাত । তবে সে দু একদিন যেত । আর যেদিনই যেত ওদিন সন্ধ্যা হতে না হতে টেবিলে ঝিমাত । তখন নয়ন স্যার বলত , শান্ত যাতো , বাড়ীতে মুরগী গুলো ঘুমাতে গেল কিনা দেখে আয়।তারপর বলত যা মুখ ধুয়ে আয় , কিন্তু কিছুতেতো ঘুম যায় না । তারপর স্যার বলত – আচ্ছা তিন বিষয়ের পড়া দিলে তোর ছুটি । কিন্তু সব পড়া দেয়া হয়ে গেলে ও স্যার আরো পড়া দিতেন । শান্ত মাঝে মাঝে বলত স্যার আমি একটু বাহিরে হতে ঘুরে আসি । এই বলে বাড়ী গিয়ে যেই না বিছানায় পিঠ লাগানো অমনিই ঘুম । পরে স্যার আসত বাড়িতে ডাকার জন্য । তারপর ঘুম তাড়ানোর জন্য বলত – যা এখান হতে রাস্তা পর্যন্ত পাঁচ বার চক্কর দিবি , এই হল বিকালে না ঘুমানোর শাস্তি।
তবে তারা সবাই মিলে খুব মজা করত যখন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হত । তখন স্যার কিছু বলত না । তাই তখন তারা সবাই হয়ে উঠত খাঁচা ছাড়া পাখি । বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হত নভেম্বর – ডিসেম্বরে তখন সাধারনত শীত কাল হত । তাই মাঠ থাকত খালি আর মাঠে থাকত শুকনো খড় । সারা বিকেল খেলার পর সন্ধ্যায় সবাই মিলে কিছু খড় যোগাড় করে তাতে আগুন দেয়া হত আর খুব মজা করে আগুনের আঁচে শরীর গরম করত। আবার ঈদের আগের রাতে নানা রকম বাজি – ফটকা ফুটাত কারন নয়ন স্যার ঈদে উনার দেশের বাড়ী যেতেন । ডিসেম্বর শেষ হলে আবার সেই একই নিয়মে চলত । তবে শান্ত যখন ক্লাস এইটের শেষের দিকে তখন নয়ন স্যার বিদেশ চলে গেল । তাই শান্ত স্কুল টিচারের কাছে গেল প্রাইভেট পড়তে ।
তাই তার আগে শান্তর তেমন একটা খেলা ধুলা করা আর মেয়েদের সাথে কথা বলা হয়ে উঠে নাই । কারন স্কুলের আগে পরে ছেলেরা মেয়েদের সাথে কথা বলত কিন্তু তার সেই সুযোগ হয় নাই বিধায় সে মেয়েদের বিষয়ে ছিল অনেক লাজুক ।
যখন নাইনের শুরুর দিকে সে অংক স্যারের নিকট প্রাইভেট পড়তে গেল তখন শান্ত দেখে একটা ফুটফুটে মেয়ে স্যারের কাছে অংক করছে ।পরে শুনে এই মেয়েই নাকি স্কুলে নতুন এসেছে । স্যারের আবার বইয়ের দোকান ও ছিল ওখানে তাই উনি স্কুলের আগে মাঝে মাঝে দোকানে শান্তদের পড়াতেন আর বই বিক্রি করতেন । যখন স্যার বই বিক্রি করতেন তখন বলতেন অহনাকে অংক করে দিতে । পরদিন শান্ত দেখে স্যার তখনো আসে নাই কিন্তু অহনা এসে হাজির । শান্ত রুমে ঢুকতেই ঐ মেয়ে বলে আমাকে অংকটা করে দিন । শান্ত কিছু বলে না , চুপচাপ বসে থাকে। তখন মেয়েটা বলে আপনি অংক পারেন না বললেই হয় ।
তারপর ও শান্ত কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে । তারপর অহনা বলে আপনার আসল নাম কি ? এর মধ্যে স্যার এসে পড়ে , সাথে সাথে অহনা বলে , স্যার শান্ত ভাইয়া অংক পারে না । স্যার বলে তাই নাকি রে ? তুই ক্লাস এইটের অংক পারিস না ? শান্ত বলে , পারিতো স্যার । অহনা সাথে সাথে বলে , পারলে করে দেন নাই কেন? স্যার বলে , অহনা ওকে জ্বালাস না । আমি তোর অংক করে দিচ্ছি । কিন্তু সে বলে , না স্যার উনি সত্যি পারে কিনা দেখি । পারলে করে দিক না । তারপর শান্ত তার খাতা নিয়ে অংক করে দিতে থাকে , একটু পর দেখে অহনা মিট মিট করে হাসছে । ওর হাসি দেখে শান্তর গা জ্বলতে থাকে । তাই সে খাতায় এত জোরে লেখে যে , খাতা ছিঁড়ে যায় । ঐ বিচ্ছু মেয়ে সাথে সাথে স্যারকে বলে , দেখেন না স্যার উনি লিখতেও জানে না , দেখেন আমার খাতা ছিঁড়ে ফেলেছে । স্যার বলে ঠিকই আছে । তখন শান্ত হাসে আর অহনা কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকিয়ে থাকে ।
অহনার অত্যাচার হতে রেহাই পেতে শান্ত স্যারকে বলে , সে স্কুল ছুটির পর ওর বন্ধুদের সাথে স্যারের কাছে পড়বে । পরদিন স্কুল ছুটির পর দেখে , তার বন্ধুদের সাথে ঐ মেয়ে ও বসে আছে সেও নাকি স্কুল ছুটির পর পড়বে , সকালে নাকি তার আসতে দেরী হয়ে যায় । এখানে সে শান্তকে তেমন একটা জ্বালাতে পারে না , কারন স্যার সবাইকে বড় বোর্ডে অংক করায় । তারপর ও সে মাঝে মাঝে এসে বলে ভাইয়া আমার অংকটা হল কিনা দেখে দেন তো । এই সব দেখে শান্তর বন্ধুরা তাকে খেপাতো “ লাভার বয়” বলে । এরপর শান্ত একদিন ইংরেজী পড়তে যায় এনায়েত স্যারের কাছে । পরদিন দেখে ওখানে অহনা আর তার মা বসে আছে । তার মা স্যারকে বলে , স্যার আমার মেয়েটা ইংরেজীতে অনেক দুর্বল ওকে একটু ভালো করে পড়াবেন । পড়া শুরু হলে , অহনা বসে শান্তর ঠিক উল্টা দিকে । কিসের পড়া শুধু শান্তর দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসে । ছুটির পর বলে , স্যার আমি শান্ত ভাইয়ার নোট টা নিই । আমি ঠিক মত নোট করতে পারি নি । শান্ত বলেঃ না স্যার আমার নোট ঠিক মত হয় নাই । তাছাড়া নোট দিয়ে দিলে আমি কি পড়ব ? স্যার বলে , ও তোকে কাল দিয়ে দিবে , আর ঠিক মত করিস নাই মানে, না বুঝলে তখন বলিস নাই কেন ? স্যারের বকা শুনে , শান্ত বাধ্য ছেলের মত তার নোট টা দিয়ে দিল । পরদিন অহনা খাতা দেওয়ার সময় বলে , খাতার মাঝের পাতা বাসায় যাওয়ার পর পড়বেন । কিন্তু শান্ত পড়া শেষ হতে না হতে ক্লাস রুমের এক কোনায় গিয়ে দেখে কি আছে তাতে ? দেখে বিরাট এক চিঠি , শুরুটা এইভাবে ......

বৃথা কেন ফাগুন বেলায় , ফুল কি ফুটেনি শাখে ?
পুষ্পরতি লভেনি কি ঋতুর রাজন
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি
করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন ।
তার পর অনেক কথা । পড়তে পড়তে তার ক্লাসমেটরা দেখে ফেলে । ফলে স্কুলের সবাই জেনে যায় যে তারা একে অপরের নিকট চিঠি লেখে । শান্ত যতই তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে কোন লাভ হয় না । এভাবে প্রায় এক বছর কেটে যায় , তত দিনে শান্তর মনে ও অহনার জন্য জায়গা তৈরি হয়ে যায় । তারা পরস্পর স্কুলের আগে প্রাইভেটে একটু আগে আসে , স্কুল হতে বের হতে এক সাথে বের হয় । শান্তর নয়ন স্যার তো তখন নেই তাই শান্ত এখন মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলে । তবে সব বিশেষ দিন গুলোতে তার নিকট গিফট পৌছে যায় শান্ত খেলার মাঠে থাকুক আর স্কুলে থাকুক । এইত গত কয়েকদিন আগে , শান্ত স্কুল ছুটির পর অহনার সাথে তাদের বাড়ীর দিকে যায় । আর এলাকার কিছু ছেলে শান্তর মেজ ভাইকে বলে , ওতো পড়া লেখা করে না কিন্তু মেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়ায় । আবার একই খবর পাঠায় অহনার মামার নিকট । উনি জানায় অংক স্যারকে , স্যার আবার তা জানায় শান্তর মেজ ভাইয়াকে । তাই আজ তার বিচার হবে , কেন সে মেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়ায় , কেন ঠিক মত পড়া-লেখা করে না ?

অন্য কোন সময় হলে শান্তর সমস্যা ছিল না , সে সবার কথা মেনে নিত , কিন্তু এখনকার কথা আলাদা । কারন বাড়ীতে সব আত্নীয়-স্বজন , বিশেষ করে এই ফাজিল স্বপ্না টা তার সামনে ভাইয়া কিছু বললে , ওই মেয়ে সব সময় তাকে লজ্জা দিবে । তাই কি করা যায় সে ভাবতে থাকে । রাতে যখন খাওয়া দাওয়া শেষ হল তখন আসামী শান্তকে ডাকা হল । তাকে জিজ্ঞাসা করা হল – ঘটনা সত্য কিনা । সে কিছু বলে না কিন্তু দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে আর স্বপ্নাটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । সবার অনেক প্রশ্নের সে কোন উত্তর দিতে পারে নি লজ্জায় । তবে হঠাৎ তার ভিতর হতে সব ভয় উড়ে যায় , সে বলে আমি এমন কিছু করব না যাতে আপনাদের লজ্জা পেতে হয় । এটা বলার পর আর কেউ কোন কথা বলে নি । সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । শান্ত বেশ বড়দের মত কথা বলেছে আর বলেছে ও গম্ভীর কন্ঠে । এর পর আর কেউ কোন কথা বলে নি । আর শান্তর ও মনে হয় ও অনেক বড় হয়ে গেছে ।
তার পর সে আর কখনো সে ভাবে অহনার সাথে মিশে নি । এক সময় সে স্কুল পাশ করে কলেজে পড়ার জন্য ঢাকায় চলে আসে আর অহনা থাকে গ্রামে । অহনা অনেক চাইলেও শান্ত নানা অজুহাতে তাকে সময়ের অভাবের কথা বলে এড়িয়ে যেত । কারন তার মনে হতো , সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে আর বড় হলে কথা দিয়ে কথা রাখতে হয় । সে তার দেয়া কথা রেখে তার জীবনের প্রথম প্রেয়সীকে ভুলে যেতে থাকে । আজ ও ভুলে থাকার চেষ্টা করে কিন্তু আধো কি সে পারে ? কোন প্রেমিক ই কি পারে জীবনের প্রথম প্রেম ভুলে থাকতে ? ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সুমন কত ভাল লাগা অগোচরেই হারিয়ে যায়, আহা শৈশব আর স্কুল জীবন! ভাল লাগল গল্প।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
জামাল উদ্দিন বেশ ভাল হয়েছে।
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মোঃ সাইফুল্লাহ খুবই সুন্দর। আমার মা গল ব্লাডারে ক্যান্সারে আক্রান্ত। আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন ও আমার মায়ের শাররিক অসুস্থতার বিষটি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে যে যতটুকু পারেন আর্থিক সাহায্য করবেন । সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মোঃ সায়ফুল্লাহ ,সঞ্চয়ী হিসাব নং -১০১৭৪০৪, সোনালী ব্যাংক,মাগুরা শাখা মাগুরা।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
এশরার লতিফ শৈশবে ভালো লাগার স্ফুলিঙ্গ হৃদয়ে জ্বলে ওঠা আর তা বাধ্য হয়ে নিভিয়ে দেয়াই গল্পের মূল বিষয়, সে সাথে উঠে এসেছে ছোটবেলার স্কুল জীবন। ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
ধন্যবাদ লতিফ ভাই ।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

০৬ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪