আলো পেরিয়ে অন্ধকার

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

তাপসকিরণ রায়
  • ৩৩
  • ২১
দুলাল মধ্যবয়সী এক যুবক।বি.এ.পাস করে চাকরির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।মনে সেবা ভাবনা থাকলেও সক্রিয় সেবায় সে অংশ গ্রহণ করতে পারে নি।শেষ পর্যন্ত তার জীবনের পরিণতি কি ঘটে ছিল সেটাই আজের গল্প...

দুলাল উঠে দাঁড়ালো।তাকিয়ে দেখল, আবছা আবছা আলো অন্ধকার ঘরের চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।কি দেখছে ও!সাদা চাদরে ঢাকা এদিক ওদিক পড়ে আছে মৃতদেহ!ও হাত দিয়ে নিজের চোখ রগড়ে নিলো।আরে!এ কোথায় এসে পড়েছে ও?বুঝতে পারছিলো না।
চার দিক অন্ধকার।ওষুধ পত্র নোংরা পচা গলা—সব মিলিয়ে কেমন এক বিদঘুটে গন্ধ নাকে এসে ঠেকছিল।দুলাল চারদিকে তাকাল,না,কোথাও কেউ নেই।ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা খুলতে পারছিল না,মনে হল বাইরে থেকে বন্ধ আছে।জোরে জোরে ধাক্কা দিলো।বাইরে থেকে শব্দ এলো--কৌন?যেন ভীত চকিত কেউ ডেকে উঠলো!
আবার দরজা ধাক্কালো দুলাল।বাইরে থেকে শুনতে পেল কেউ,রাম রাম,রাম রাম,বলতে বলতে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে! এবার ক'বার জোরে ধাক্কা দেওয়ায় কলকব্জা খুলে গিয়ে দরজার এক পাট আধ আলগা হোয়ে ঝুলে পড়ল।কোন মত ঠেলেঠুলে দুলাল ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিক।একবার সন্দেহ হল ওর,ও বেঁচে আছে তো!নাকি মরে গিয়ে এমনি অচেনা অদেখা দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে?
কিছু সময় স্থির হোয়ে এক জাগায় দাঁড়িয়ে থাকলো দুলাল। তারপর টলতে টলতে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হল।মাথায় বেশ ব্যথা,মনে হচ্ছে কেউ যেন পাথর দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করেছে ! ব্যথার জাগায় হাত রাখল।অনেক খানি ফোলা লাগছে কেন!হাতের সঙ্গে কেমন চাপড়া মত বেরিয়ে এলো।হাত চোখের সামনে এনে ধরল।কিছু বোঝা যাচ্ছে না--আবছা আলোয় বুঝতে পারলো না কিছু।হাতের ওপরে কেমন কালো কালো বড় বড় ঘায়ের বসটির মত লাগছে না?
দুলালের বাড়ি এখান থেকে প্রায় দেড় কিলো মিটার হবে।ও নেশার ঘোরের মত হাঁটতে লাগলো।রাস্তায় কোন গাড়ি দেখতে পেল না--কোন রিক্সা,অটো,ট্যাক্সি কিছুই নেই--একদম ফাঁকা রাস্তা!
কি করে এলো ও ঐ ঘরটায়?ঠিক ও বুঝতে পারলো না--কোন ঘর ছিল ওটা?হসপিটালের কোন ঘর?তবে এমন অন্ধকার কেন ছিল? সব রোগীই কি ঘুমিয়ে ছিল--আর কোন নার্সকেও দেখে নি--তবে! ভালো ভাবে মনে করতে চাইল দুলাল--কি হোয়ে ছিল তার?
হ্যাঁ,দুলালের আবছা আবছা যেন মনে পড়ছে--একটা ট্রাক,ব্রেক করার প্রচণ্ড,কানফাটা শব্দ,ওর হাতে মোটর সাইকেল,দুলাল,অন্ধকার,অন্ধকার আর কিছু অনুভবে আসছিল না তার।হ্যাঁ,কানে তার হৈ হৈ শব্দ গিয়ে ছিল, এক্সিডেন্ট,এক্সিডেন্ট...কিন্তু কার?কিছুতেই মনে করতে পারছিলো না।ইতিমধ্যে হাঁটুর ওপরটা ব্যথায় টন টন করে উঠলো।ও সে জাগায় হাত লাগিয়ে বসে পড়ল। হাঁটুর পাশে কেমন শক্ত শক্ত চাপড়া চাপড়া লাগছিল!
টলতে টলতে হাঁটছিল দুলাল।এই তো কলোনি এসে গেছে।আর কটা ঘর পেড়িয়ে তাদের ঘর।দুটো নেড়ি কুত্তা ওর পাশে এসে লেজ নাড়ছিল।ও তাকাল কুকুরগুলোর দিকে--ওগুলোকে চেনা চেনা লাগছিল,ওদের পাড়াতেই থাকে।ওরা বার বার ওর গায়ের কাছে এসে শুঁকছিল।
রাত নিশ্চয় অনেক হবে।একটা লোকেরও সাড়া শব্দ পাচ্ছিল না-- সবাই তখন ঘুমের কোলে ঢলে আছে।
ওই যে দুলালের ঘর--আর ক'পা ফেললেই পৌঁছে যাবে সে। আর চলতে পারছিলো না ও।সমস্ত শরীর ব্যথায় অস্থির লাগছিল।মাথা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল।আর যেন তার চলার ক্ষমতা নেই!হঠাৎ মাথা ঘুরে গেলো,মাতালের মত টলতে থাকলো আর এক সময় ও নিজের দরজার সামনেই জ্ঞানশূন্য হোয়ে পড়ে গেলো।

এদিকে মর্গের চৌকিদার ছুটে এলো ডাক্তারের কাছে।ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ইমার্জেন্সী ওয়ার্ডের ডাক্তার,নন্দী সাহেবের কাছে এসে রিপোর্ট করল,সাহেব!সর্বনাশ হোয়ে গেছে!
--কি হল?ডাক্তার নন্দী প্রশ্ন করলেন।
--মর্গে আমি পাহারা দিচ্ছিলাম--মনে হল কোন মরা উঠে চলতে লাগলো!সাদা কাপড় ওর শরীরে জড়ান ছিল!নির্ঘাত ভূত হবে সার!
--দূর বাজে বকিস না তো,যা নিজের কাজে যা।ডাঃ নন্দী চৌকিদারের কথায় আমল না দিয়ে বলে উঠলেন।মনে মনে ভাবলেন চৌকিদার নিশ্চয় নেশা করেছে।না হলে এমনি ঘটনা কখনো হয় নাকি !
--হ্যাঁ,বাবু,আমি নিজের চোখে দেখেছি,আপনি কাউকে পাঠিয়ে দেখতে বলুন।কিছু তো গড়বড় আছে সাব!বলে, দাঁড়িয়ে থাকলো চৌকিদার।
ডাঃ নন্দীর হাতে এক এক্সিডেন্ট কেস এসেছে--লোকটা স্পটডেথ ছিল।পুলিশে রিপোর্ট হয়েছে।কাল সকালে পোস্টমর্টেম হবে বডির।কি যেন নাম ছিল--মনে করতে চেষ্টা করলেন ডাক্তার।হ্যাঁ,দুলাল,দুলাল সমাদ্দার।এক্সিডেন্টে মারা গেছে লোকটা।ব্রেনে চোট পায়--মাথার পাশ ঘেঁষে ট্রাকের চাকা চলে গেছে,চাকার প্রেশারে ব্রেন হ্যামারেজ হোয়ে গেছে।
দুলাল সমাদ্দারের ডেড বডী রাখা আছে মর্গে।কালকের পোস্টমারটাম নন্দী সাহেবকেই করতে হবে।একবার নন্দী সাহেব ভাবলেন,এমন তো নয়,ওই সমাদ্দার কোন কারণে বেঁচে গেছে!ব্রেন হ্যামারেজের পেসেন্টরা অনেক সময় আনকনসাস থেকে যায়।এ ধরণের রোগীর কখনও কখনও পালস খুঁজে পাওয়া যায় না।পরীক্ষা নিরীক্ষায় অনেক সময় মৃত বলেই মনে হয়।দুলালকে নন্দী সাহেব অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা করেছেন।পুলিশী রিপোর্টে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন।
এমন ঘটনা খুবই বিরল।ডাঃ নন্দীর হাতে আজ পর্যন্ত এমনটি ঘটেনি।তবু কেন যেন মনে তাঁর খটকা লাগলো।উঁকি মেরে দেখলেন চৌকিদার তখনও দাঁড়িয়ে আছে--হয়ত তার কোন উত্তরের অপেক্ষায়।
ডাঃ নন্দী দেখলেন নার্স এক পাশে টেবিলে মাথা দিয়ে ঝিমাচ্ছিল।একজন এটেন্ডেন্ট সেও বেঞ্চিতে বসে দেওয়ালে মাথা টিকিয়ে ঘুমাচ্ছিল।তাঁর চেম্বারে আপাতত কোন রোগী নেই।ঘড়িতে দেখলেন তিনি,রাত একটা বেজে বিশ মিনিট। নন্দী সাহেব নিজের চেম্বার থেকে বের হলেন।চৌকিদারকে ধীরে বললেন,চলো দেখি তোমার ভূত কোথায়!দুজন মর্গের কাছে গিয়ে দেখল দরজার একটা পাট হাট হোয়ে খোলা। চৌকিদারঘরের ত্রিশ পাওয়ারের আলোটা জ্বালিয়ে দিল।ডাঃ নন্দী মর্গের ভিতরে ঢুকলেন।নাকে রুমাল অনেক আগে থেকেই লাগাতে হয়।চৌকিদারের অবশ্য অনেক অভ্যাস হোয়ে গেছে।
হ্যাঁ,জাগা খালি বলে মনে হচ্ছে--স্ট্রেচার শূন্য পড়ে আছে কেন?
--সব কটার বডীর মুখের কাপড় সরা,নন্দী সাহেব বলে উঠলেন।
একটা একটা করে সব কটা মরার মুখ থেকে কাপড় খুলে দেওয়া হল।
--আরে দুলাল সমাদ্দারের বডি কোই?চমকে উঠলেন ডাক্তার নন্দী।
--আমি আপনাকে বলেছি সার!একটা বডি হেঁটে চলে গেছে,চৌকিদার ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে।
--চুপ! বডি হেঁটে যায় নাকি!
--ওই হল সাব,ভূত হোয়ে ও চলে গেছে!আমি নিজে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছি,সাব!
--চুপ!আবার চীত্কার করে উঠলেন ডাক্তার।তুই এখনি হসপিটালের আশপাশ দেখে আয়,হ্যাঁ,এ কথা কাউকে বলবি না,মনে রাখিস কিন্তু!
চৌকিদার ঘাড় নাড়ল,অন্ধকারে সে ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে গেলো দুলাল সমাদ্দারের খোঁজ নিতে।ডাক্তার নন্দী চুপচাপ নিজের চেম্বারে বসে অধীর আগ্রহে চৌকিদারের অপেক্ষা করতে থাকলেন।এক ঘণ্টা সময় পার হোয়ে গেলো।তিনি হাসপাতালের বাইরে এসে দাঁড়ালেন। মনে তাঁর ভয়,ডেথ ডিক্লিয়ার করা রোগী যদি জিন্দা হোয়ে চলে যায় তবে তাঁর চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে!তাঁর বিরুদ্ধে নিশ্চয় কেস হবে।অপবাদের এক শেষ হবে!ভেবে তাঁর মাথা গরম হোয়ে গেলো। বেটা নেশাখোর চৌকিদারটা গেলো কোথায়!ভাবনার শেষ হতে না হতেই চৌকিদার কে একা আসতে দেখা গেলো।
--কোথাও নেই সাব!আশপাশ সব জাগা দেখে নিয়েছি আমি।
--কোথায় যাবে বল তো?
--আমি তো বলতে পারছি না সাব!
ডাঃ নন্দী তাড়াতাড়ি নিজের চেম্বারে ঢুকলেন।পুলিশকে দেওয়া রিপোর্টগুলি ফাইল থেকে বের করে দুলাল সমাদ্দারের এড্রেস দেখে নিলেন।তারপর বাইরে এসে নিজের কুয়াটার থেকে গাড়ি বের করলেন।চৌকিদারকে ডেকে নিয়ে রওনা হলেন দুলাল সমাদ্দারের বাড়ির দিকে।
--আমি ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছি,তুই ওই রোগীকে দেখতে পেলেই আমায় বলবি!
--হ্যাঁ,সার!
ধীরে ধীরে গাড়ি চলছিল।ড্রাইভার নয়,স্বয়ং ডাঃ নন্দী গাড়ি চালাচ্ছিলেন।দুলালকে যে তার চাই।এট এনি কস্ট,ওকে ধরতেই হবে।না হলে তাঁর মান,প্রতিষ্ঠা,চাকরি,সব,সব কিছু যাবে!নন্দী সাহেব বড় চিন্তিত হোয়ে পড়লেন।উত্তেজনায় মাথা তাঁর দপ দপ করছে।হাত ঘড়িতে মনে হল রাত এখন আড়াইটা।কিছু একটা করতেই হবে-- রাত পোহাবার আগে যে ভাবে হোক কোন একটা কিছু করতেই হবে।তিনি দুলালের ঠিকানা পড়ে নিলেন আবার।গাড়ি সমাদ্দারের কলোনিতে পৌঁছল।ঘরের নম্বর-বি-২৫ প্রথম সারির ঘরগুলির নাম্বার স্ট্রিট লাইটের আলোতে দেখে নিলেন নন্দী সাহেব--এ ৯,তার মানে তার পাশের লাইনই হতে পারে।গাড়ি ঘুরিয়ে পাশের রাস্তায় ঢুকলেন,হ্যাঁ,ঠিক,বি-১থেকে কুয়াটার শুরু হয়েছে।ধীরে ধীরে গাড়ি চলতে থাকলো।কিছু ঘর পার হবার পর হিসাব অনুযায়ী দুলালের বাড়ির কাছাকাছি ওরা এসে গেছে।দূর থেকে ঘরগুলির নাম্বার বোঝা যাচ্ছিল না।তবু আন্দাজ করে গাড়ি থামালেন ডাক্তার।দুটো ঘরের মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে নেমে ঘরের নম্বর পড়ার চেষ্টা করলেন। দেখলেন,বি-২৩ নাম্বারের ঘর।তার মানে সামনের ঘরটার পরেরটা দুলালের ঘর।দুটো ঘর এগিয়ে গাড়ি থামালেন।এটাই হবে দুলালের ঘর,ডাঃ নন্দী চৌকিদারকে বললেন,দেখ ত ঘরের নাম্বার কত?
চৌকিদার দেখে এসে বলল,সাব, বি-২৫
--তুই এক কাজ কর,ঘরের দরজায় গিয়ে কান পেতে শোন তো কারো গলা শোনা যাচ্ছে কি না!
--যাচ্ছি সার!চৌকিদার দুলালের ঘরের দিকে এগোল।কয়েক মুহূর্ত পরেই ও প্রায় দৌড়ে এসে বলল,ডাক্তার সাব,মনে হচ্ছে ওই লোকটা ঘরের দরজার সামনে বেহোশ হয়ে পড়ে আছে!
ডাঃ নন্দী চট করে সমাদ্দারের ঘরের দরজার দিকে এগোলেন। দরজার সামনে পড়ে থাকা লোকটাকে ভালো করে নজর নিয়ে দেখলেন, হ্যাঁ,দুলাল,দুলালই,জ্ঞানহীন অবস্থায় পড়ে আছে।বেঁচে আছে সমাদ্দার,বুঝতে পারলেন তিনি।চৌকিদার আর ডাক্তার দুজনে মিলে নীরবে চোরের মত সমাদ্দারের দেহটা তুলে কারের পেছনের দিকের লম্বা সিটে শুয়িয়ে দিলো।দুলাল সামান্য নড়েচড়ে উঠলো।আর দেরী নয়, তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিলেন ডাক্তার।গাড়ি চালাতে চালাতেই দেখে নিলেন তাঁর রিষ্ট ওয়াচ,রাত প্রায় তিনটে বাজতে চলল।তাঁকে সময় ব্যয় করলে চলবে না।ঝটপট কাজ সেরে নিতে হবে।
হসপিটালের বাউন্ডারির বাইরে মর্গের পাশটাতে গাড়ি রেখে চৌকিদারকে জিজ্ঞেস করলেন,দুলালের হোশ আসেনি তো?
চৌকিদার ধরে দেখল,বলল,সার নড়ছে,এখনি হুঁশ আসবে মনে হচ্ছে।
--এক মিনিট,আমি এখনি আসছি,দেখিস ও পালিয়ে না যায়,বলে ব্যস্তসমস্ত হোয়ে ডাক্তার হসপিটালের ডিসপেনসারি রুমে গিয়ে ঢুকলেন।কোন বাধা পাবার কথা নেই কারণ তিনিই তো হসপিটাল ইনচার্জ!এমন কি মর্গের চার্জেও তিনিই আছেন।ইনজেকশনের সিরিঞ্জ আর নিডিল,এম্পেল পকেটে পুরে ডাঃ নন্দী ফিরে এলেন।দ্রুত পায়ে এবার এগিয়ে চললেন মর্গের দিকে।চৌকিদারের সঙ্গে ধরাধরি করে সমাদ্দারের দেহটা গাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে মর্গের খালি স্ট্রেচারে শুয়িয়ে দিলেন।
দুলাল নড়েচড়ে উঠে বসলো।ও অবাক হোয়ে গেলো,আরে ও তো ঘর পর্যন্ত এসেছিল!তা হলে আবার এখানে ও কি করে এলো?পাশে চৌকিদার ও ডাক্তারকে দেখে,কে,কে?বলে আঁতকে উঠলো সে।
ডাক্তার বাবু বলে উঠলেন,চুপ,চুপ,আমি ডাক্তার,চুপচাপ শুইয়ে থাকো জাগায়।
--না,আমি বাড়ি যাবো,আমি কোথায়?দুলাল ভীত সন্ত্রস্ত হোয়ে বলে উঠলো।
তুমি হসপিটালে,শুয়ে পড়ো--ইনজেকশন দিতে হবে তোমায় --ডাঃ নন্দী বলে উঠলেন।
--আমি কোথায়?আবার দুলালের প্রশ্ন।
ডাক্তার কঠোর ভাবে বলে ওঠেন,চৌকিদার ওকে শুয়িয়ে দে!
আধো অন্ধকার ঘরের ভাঙা দরজা যতটা সম্ভব ঠেলে দিলেন ডাক্তার নিজে।চৌকিদার দুলালকে ধরে শুয়িয়ে দিতে গেলো।
--না,আমি শোব না,আমি কোথায়?দুলালের মুখে একই প্রশ্ন ফুটে উঠলো।
--চৌকিদার ওকে জোর করে শুইয়ে দে,কঠোর শব্দে বলে উঠলেন ডাক্তার।ইনজেকশন দেবার জন্যে হাতে রাখা তাঁর ওষুধ ভরা সিরিঞ্জ।
দুলালকে জোর করে শুয়িয়ে দিল চৌকিদার।আর ডাঃ নন্দী নির্বিবাদে তাঁর ডান হাতে ফুঁড়ে দিলেন অমোঘ মৃত্যুর বিষাক্ত ইনজেকশন।
দুলালের শরীর ঝাঁকা দিয়ে উঠলো।ডাক্তার নিশ্চিত হোয়ে গেলেন। আধ অন্ধকারের মধ্যেও ভূতের মত তাঁর চোখগুলি জ্বলতে লাগলো। চৌকিদারের হাতে তিনি এক বাণ্ডিল দশ টাঁকার নোট তুলে দিয়ে বললেন,সাবধান,কেউ জানতে পারলে তোরও কিন্তু ওই লোকটার মত অবস্থা হবে!

পরদিন সকালেই দুলাল সমাদ্দারের ঘর থেকে লোকেরা চলে এলো। বেলা তিনটের সময় ওর ডেড বডি মর্গ থেকে রিলিজ করে দেওয়া হল।
অতীত,আলো পেরিয়ে অন্ধকারে পড়ে থাকলো!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হোসেন মোশাররফ onek pore holeo golpoti porar lov songboron korte parini....khub val laglo. deri holo, kichhu mone neben na.
অনিমেষ রায় Besh valo laglo golpoti pore.
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
স্বাধীন ডিটারমাইন্ড হয়ে পড়লে যে কোন মানুষ নিজের মতের বাইরে বেরুতে পারে না। ভাগ্যহীন দুলাল এমনই এক ডাক্তারের শিকার হয়েছে। আহা দুলাল। মর্মান্তিক পরিনতির গল্প ভাল লিখেছেন দাদা।
পড়া ও মন্তব্যের জন্যে জানাই অনেক ধন্যবাদ,ভাই !
তানি হক মর্মান্তিক একটি ঘটনা .. :( দুলালের জন্য ভিশন কষ্ট হচ্ছে ..তবে এটাও সত্যি যে এমন ঘটনা হয়ত ঘটে আমাদের চারপাশে ..কিন্তু সেটা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জানার অন্তরালেই রয়ে যায় ...অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা দাদাকে এমন একটি বিষয়ের উপরে এই গল্পটি আমাদের উপহার দেবার জন্য
তানি,আপনাকে গল্প পড়ার ও ভাল মন্তব্যের জন্যে জানাই অনেক ধন্যবাদ।
মোঃ জামান হোসেন N/A অতীত,আলো পেরিয়ে অন্ধকারে পড়ে থাকলো! কিন্তু আপনার লেখাটি অন্ধকারের আলোকবর্তিকা। অনেক ভালো লাগলো।
গল্প পড়ার ও ভাল মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম স্পট ডেথ রিপোর্ট জায়েজ করার জন্যই দুলালের এ পরিণতি ? অথবা রোমাঞ্চকর কল্পকাহিনী হিসেবে বিবেচনা করলে ভালই লাগল ।
না,কল্পকাহিনী নয়,এমনটাও হয়,আমার বন্ধু তো সত্যি ঘটনা বলে দাবী করে।তবে আমার নিজের জানা ঘটনায় একজন আছেন যাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে রাখা হয়ে ছিল।তাঁর হোঁশ এলে নিজের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রাতের আন্ধকারে পালিয়ে এসে ছিল। তাঁর ভয় ছিল যে তার ক্ষেত্রেও এমনি গল্পের ঘটনা ঘটতে পারে বলে। যাই হোক গল্প পড়েছেন জেনে খুশি হয়েছি।ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।
সোহেল মাহামুদ (অতি ক্ষুদ্র একজন) "প্রদীপের নিচে অন্ধকার"----গল্পটি পড়ে ঠিক এ কথাটিই মনে পড়ল। বরাবরের মত অসাধারন!!!!
গল্পটি পড়েছেন জেনে খুশি হয়েছি--অশেষ ধন্যবাদ,ভাই !
ওবাইদুল হক দাদা আপনার লেখায় অনেক বাস্তবতা দেখলাম .
জায়েদ রশীদ উত্তেজনায় গোটা লেখাটা ছিল ভরপুর। ভাল লাগল পড়ে।
ভাল মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

৩০ সেপ্টেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪