প্রজেক্ট বাংলাদেশ

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

sakil
  • ৫৮
  • 0
চব্বিশশো একাত্তর সাল। তালহা নিজের স্বয়ংক্রিয় এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে গভির চিন্তায় মগ্ন।আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।সততা আর ন্যায়ের দিকদিয়ে শুধু নয়। সকল ক্ষেত্রে আজ সারা বিশ্বে একটা সন্মান জনক অবস্থানে বাংলাদেশের স্থান ।বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞান ও মহাকশ গবেষনা কেন্দ্র এখন ঢাকায় । কোন একসময় পৃথিবীতে নাসা নামক এমন একটি কেন্দ্র ছিল ।সেই সময় আমেরিকার বেশ প্রভাব ছিল কিন্তু চীনের সাথে আনবিক যুদ্ধের পর আমেরিকা একেবারে দারিদ্র দেশের তালিকায় চলে আসে দ্রুত।সেই থেকে রেড ড্রাগনদের অবস্থা বেশ শক্তিশালী হয়। ঢাকা ছাড়া ও দেশের একশ বিশটি জেলা শহরে আছে স্পেশাল টার্মিনাল । যেখানে উড়ুক্কু গাড়ি গুলোর স্টপিজ নামে পরিচিত। দেশের প্রায় সকলের কাছে নিজ দেশে প্রস্তুত লিমুজিন এফ এন আই প্রযুক্তির উড়ুক্কু গাড়ী আছে ।সেই সাথে ফোরওয়ে রাস্তা।জানজটের নাম মাত্র নেই, সড়ক দুর্ঘটনা একেবারে শুন্যের কোঠায় ।আরব দেশ গুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে গ্যাস এবং তেলের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। কিন্তু অতীত বিশ্লেষনে জানা যায় এই দেশটি এমন ছিল না । কিন্তু কি করে এই পরিবর্তন হল তা জানা নেই তালহার । ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। তাও পরিষ্কার নয়। শেখ মুজিবর রহমান নামে এক মহান বাংলাদেশীর ডাকে সেই সময় পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ জয় লাভ করে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এরবেশ কিছু বছর আগে বাংলা ভাষার জন্য প্রান দেয় ১৯৫২ সালে অনেক লোক । প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় ভাবে বিজয় দিবসএবং ভাষা দিবস পালন করে তার সরকার যথাযথ সন্মানের সাথে। এছাড়া এই বছর বিজয় দিবসের আলাদা তাৎপর্য আছে । কারন এই বছর বিজয়ের ৫০০ বছর পূর্তি । সে জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে তালহা ।
তালহা একজন সফট্যায়ার ইঞ্জিনিয়ার এবং মাননীয় মন্ত্রী পরিষদের প্রধান ।তথ্য প্রযুক্তির এমন কোন বিষয় নাই যা সম্পর্কে তার জ্ঞান নাই। তথ্য প্রযুক্তির সকল ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তালহা। একেবারে নিরঅহংকারী । যতটা সাদামাটা ভাবে জীবন চালানো যায় ঠিক ততটুকুই তিনি করেন । গতকাল ওয়েব জার্নাল ঘাঁটছিলেন বিকেল বেলায় ছুটির আগে।
প্রতিদিনই তিনি জার্নাল দেখেন । কিন্তু গতকাল যখন তিনি জার্নাল খুলে দেখছিলেন তখন বারবার একটা ইয়েলো পেইজ উনি স্ক্রিনে লক্ষ্য করেন । ব্যাপ্যারটা প্রথমে তিনি গুরত্ত দেননি । কারন প্রতিদিন নানা সাইট থেকে বিভিন্ন ভাইরাস আসে । কিন্তু সেগুলো কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির হয় , এবং কম্পিঊটার স্বয়ংক্রিয় ভাবে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কিন্তু গতকালের সেই ইয়েলো পেইজটাকে অত্যাধুনিক কম্পিউটার নিষ্ক্রিয় করেনি দেখে তার আগ্রহ জমল সেটা খুলে দেখার। তাই আজ সকালে সকল কাজ ফেলে তিনি সেই ফাইলটা খোলা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন । কিন্তু একের পর এক পেইজ আসছে কিন্তু কিছুই পাচ্ছেন না । কিন্তু তাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আর ভেতরে প্রবেশ করুন। তাও আবার বাংলা ভাষায়।
মোটামুটি বিরক্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে অফিসের এবং রাষ্ট্রীয় অনেক কাজ জমে যাচ্ছে একের পর এক । কাজে ফাঁকি তিনি কখনো দেননা । কিন্তু নিজের কৌতূহল ও মেটাতে পারছেন না । বর্তমানে দেশে শতভাগ শিক্ষার হার । যে যার ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করে বেরুলেই চাকুরী মেলে যায় । চাকুরীর জন্য কাউকে কোন অফিসে ধর্না দিতে হয়না । প্রত্যোকটি কোম্পানি সরকারের বিশেষ ডাটাবেস থেকে তথ্য নিয়মিত ভাবে পান । আর নিজেদের দরকারে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী প্রদান করেন । বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক এখানে চাকুরী করেন । কিন্তু প্রত্যোক কোম্পানির জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে আগে নিজের দেশের লোক নিয়োগ দিতে হবে পরে বাহিরের দেশ থেকে শ্রমিক আনা যাবে। কোন ক্ষেত্রেই দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া যাবে না । আর যদি দুর্নীতিতে কেউ প্রমাণিত হয় তাহলে ডিজিটাল বিজনেস লাইসেন্স এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। তবে গত একশ একুশ বছরে এমন কাউকে দুর্নীতি গ্রস্থ হিসাবে চিহ্নিত করা যায় নি । সততা এবং নিষ্ঠা নিয়ে সকলে একযোগে কাজ করছে নিরলস ভাবে।
দেশের মেরুদণ্ড বলে বিবেচিত তিনটি সেক্টর অত্যান্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে । এরা সবাই সকল ক্ষেত্রের অপকর্ম এবং দুর্নীতির উর্দ্ধে। এখানে ও সততাই মুল পুঁজি । একনাম্বারে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট , তারা অত্যান্ত বন্ধুসুলভ এবং পরোপকারী।সারাদেশের সকল সন্ত্রাসী দের কে এরা নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাঝে রাখে । সন্ত্রাসী বলতে এখানে শুধুমাত্র ইলেক্ট্রো সন্ত্রাসীদের বুঝানো হয়েছে । তবে তাদের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা । এরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কম্পিঊটার গুলো হ্যাকিং করার চেষ্টা করে । পুলিশ এদের ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর । এছাড়া অন্যান্য অপরাধ চুরি, ডাকাতি, খুন , রাহাজানি এসব এখন আর এই দেশে নাই বললেই চলে । হয়তো কয়েকশ বছর আগে এসব এই দেশের প্রধান সমস্যা ছিল কিন্তু এখন নয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে ডাক্তার । তারা তাদের সেরা চিকিৎসা রুগীকে দেওয়ার চেষ্টা করেন সবসময় । প্রতিটি হাসপাতালে সবসময় অতিরিক্ত কয়েকজন ডাক্তার অবস্থান করেন । কোন ডাক্তার রোগীর কাছ থেকে কোন পয়সা নেন না । সকল নাগরিকের জন্য বিশেষ কার্ড সরকার প্রবতন করেছেন । সেই কার্ডের মাধ্যোমে সকলে চিকিৎসা সেবা পান বিনামুল্যে । তবে সেজন্য প্রত্যোক নাগরিককে তার আয় অনুযায়ী সরকারী ফি দিতে হয় বছরের শুরুতে । কিন্তু দারিদ্র মানুষ যে চিকিৎসা সেবা পাবে একজন ভি।আই।পি ও তেমন সুবিধা পাবেন । তবে কোন ভি আই পি ইচ্ছে করলে দেশের বাইরে তার চিকিৎসা করতে পারবেন । তবে নিজের দেশের এত উন্নত সেবা ফেলে খুব কম লোক দেশের বাইরে যায়। আর তৃতীয় হল শিক্ষা ব্যাবস্থা । অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর সেরা সকল শিক্ষক দিয়ে জাতিকে শতভাগ শিক্ষা উপহার দিয়ে যান প্রতিনিয়ত। নাই কোন প্রাইভেট টিউশন। নাই কোন কোচিং সেন্টার । শিক্ষা কে কেউ ব্যাবসার সাথে জড়াতে পারে না আজ পঞ্চ বিংশ শতাব্দীতে ।
এমন সময় তালহার স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার পুরোপুরি সাধা হয়ে গেল এবং সাথেসাথেই চালু হয়ে গেল । সেই সাথে ভেসে এল গুরুগম্ভীর একটা শব্দ। তালহা নড়েচড়ে বসল। পাশে রাখা মেমোরি ডিভাইস স্বয়ংক্রিয় ভাবে চালু হয়ে গেল।
সন্মানীত সুধী। আপনাকে এতক্ষণ পর্যন্ত কৌতূহলের মাঝে রাখায় দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি ডঃ আরমান। আর আমার সাথে আছে একদল তরুন এবং মেধাবী একটা দল। আমাদের অস্তিত্ত এখন আর নাই। কিন্তু আমরা এই ডিভাইসের মাধ্যমে আপনার কাছে বেঁচে আছি এবং আগামী একঘন্টা আপনাকে আমি নিয়ে যাব বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে । আশা করি আপনি আমাদের সাথে থাকবেন। একটানা কথাগুলো বলে চুপ করলেন কিছু সময়। ধীরে ধীরে কম্পিউটারের মিডিয়া প্লেয়ারে একটা ঝাপসা প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল। বৃদ্ধ একটা লোক । ছোট একটা হলরুম। আশেপাশে বসা হাস্যেজ্জল কিছু তরুন।

আমি আপনাকে যে বিষয়ে বলছি সেটা হল " প্রজেক্ট বাংলাদেশ "
সেই বিংশশতাব্দীর সময় বাংলাদেশের অবস্থা কি হয়েছিল আপনাকে বুঝিয়ে না বললে বুঝতে ও পারবেন না । আমি এবং আমার সহকর্মীরা সবাই জানি আজ যে দেশে আপনি বাস করছেন , সেই সময়ে এই দেশে বাস করার মত অবস্থা ছিল না বললেই চলে। আজ সোয়া চারশ বছর পর আপনি আমাদের এবং আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন । আমি নিশ্চিত আপনি শুনছেন । কারন সেই সময়ে আমার কম্পিঊটার এক্সপার্টরা তাই বলেছিল আমাকে । আর সেই কারনে তৈরী হয়েছিল প্রজেক্ট বাংলাদেশের ভার্সন। যা শুধু মাত্র স্বয়ংক্রিয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধের পাঁচশত বছর পর একবার এবং একহাজার বছর পর একবার দেশের সর্বচ্চ পদে আসীন ব্যাক্তির কম্পিউটারে দেখা যাবে এবং শুনা যাবে। তাহলে শুনুন সেই সময়ের কথাগুলো ।

বিংশশতাব্দীর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের অবস্থার চরম অবনতি ঘটতে থাকে। দিনে সন্ত্রাস রাহাজানি খুন এগুলো নিত্যদিনের মুখ্য খবর হয়ে পড়ে পত্রিকার পাতায়। আমরা তখন দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়ছি। শুধু আমি না আমার মত অনেকেই তখন দেশের বাইরে। সরকার নিজেরা আইন বহির্ভূত হত্যা কান্ড চালাতে থাকে সেই সময়ে ঘঠিত একটি সরকারী বাহীনি দ্ধারা। এর আগে বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার সামরিক ভাবে ক্ষমতা দখল করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। দেশ স্বাধীন হবার পনের বছরের মাথায় দেশে দুই বার সামরিক শাসন আসে। এরপর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৯১ সালের সাধারন নির্বাচনের মাধ্যমে। দেশের জনগন স্বৈরশাসক থেকে মুক্তি পেয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু জনগনের সেই শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি । সেই সময়ে দেশের প্রধান দুই বিরোধী দল একে অন্যকে কাবু করতে ছোট দলগুলো নিয়ে জোট তৈরী করে। জনগনের কল্যান তখন তাদের কাছে অতি নগন্য । নিজেদের ক্ষমতার জন্য তারা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে বিনাবিচারে হত্যা করতে লাগল নির্বিচারে । দেশের সাধারন মানুষ কিছু ক্ষমতা লোভী'র কাছে জিম্মী হয়ে পড়ল অত্যান্ত অসহায় ভাবে।
পুলিশ সবচেয়ে বেশি ঘুষ খেতে লাগল । সাধারন মানুষের জন্য আর আইন রইল না । যাদের কাছে ক্ষমতা আছে তারা আইনের সুবিধা ভোগ করতে লাগল । আর সাধারন মানুষ নিজের জীবনের নিরাপত্তা পেল না। সকল মানুষ একটা আতঙ্কিত অবস্থার মাঝে দিন যাপন করতে লাগল সেই সময়ে। ডাক্তার , উকিল , সেনাবাহিনী , সরকারি আমলারা সকলে ঘুষ খেতে লাগল । সেই সাথে করতে লাগল দুর্নীতি । তাদের দমন করার মত কেউ রইল না । ২০০০ সালের পর থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার দুর্নীতিতে প্রথম হল। আমি এবং আমরা বেশ কয়েকজন মেধাবী তরুন দেশের বাইরে থেকে এসব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম প্রতিনিয়ত।
আপনার কম্পিউটারের বামদিকে ছোট কিছু নাম্বার দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়। সেই সময়ের কিছু বীভৎস ভিডিও দেখতে চাইলে আপনি ক্লিক করতে পারেন । একনাগাড়ে কথাগুলো শুনছিলেন মন্ত্রী পরিষদের প্রধান তালহা। কম্পিউটারের বামদিকে কিছু দুর্বেধ্য নাম্বার দেখতে পেলেন । সেখানে ক্লিক করলেন তালহা । সেখানে বেশকিছু কমান্ড আসতে লাগল । এরপর বলা হল আপনি আপনার কাছে যে লেজার ডিটেকশন মেশিন আছে সেটা চালু করেন।
কথাটি শুনে তালহা আশ্চায্য হলেন। এই অত্যাধুনিক মেশিনটি আবিস্কার হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হল। সেই সময়ের একদল প্রতিভাবান মানুষ সেটা জানত । এই মেশিনের সাহায্য বাতাসে ভাসমান শতশত বছর পূর্বের ভিডিও চিত্র দেখা যায় অনায়াসে। সেজন্য প্রয়োজন হয় এক বিশেষ লেজার রশ্নির । তবে নির্দিষ্ট কোন ভিডিও দেখতে হলে তার কোড লাগে। তাতে সেই ভিডিও টি সরাসরি দেখা যায়। কম্পিউটারে নির্দেশিত কোড অনুসারে তিনি তার লেজার ডিটেকশন মেশিনে প্রতিস্থাপন করে সার্চ করতে লাগলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্য লেজার ডিটেকশন মেশিনের উপরে একছটা আলো দেখা দিল এবং মিলিয়ে গেল। ধীরে ধীরে আধার সরে দিয়ে চারকোনা একটি স্ক্রিনের অভায়ব বেশে উঠল। সেই সাথে আসতে লাগল একের পর এক ভয়ঙ্কর এবং বীভৎস চিত্র গুলো। অবাক হয়ে সেই সব চিত্র গুলো দেখতে লাগলেন তালহা। তার শরীরের রোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল সেই সব ছবি দেখে । মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে তা এসব ছবি না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না ।
হঠাৎ করে খসখসে একটা শব্দে তালহা যেন বাস্তবে ফিরে এলেন। আপনি নিশ্চয় ছবি গুলো দেখে বেশ হতাশ হচ্ছেন । এখানে তো ব্যাস ছবি । একসময় আমি এবং আমার সহকর্মীরা এসব দেখে সহ্য করতে পারিনি । তাই আমরা একটা মিটিং ডাকি। তাতে প্রাথমিক ভাবে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় । সেই পরিস্থিতিতে আমরা কে কি করতে পারি তাই নিয়ে আলোচনা হয়।দেশকে রক্ষা করার জন্য গঠিত হয় "প্রজেক্ট বাংলাদেশ" । আমরা প্রথমে কিছু জিনিস নিয়ে এগুনোর চেস্টা করি। আমাদের এই দলে যুক্ত করার আগে আমরা বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে সদস্য নির্বাচন করতে লাগলাম । প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম কাজটি বেশ দুরুহ হবে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখলাম তার উলটো চিত্র। আসলে মানুষ এমন একটা সময়ের অপেক্ষায় ছিল। আমরা প্রতিটি গ্রামে কমকরে হলে একজন সৎ এবং আদর্শবাদী প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারলাম খুব সহজে। আসলে দুর্নীতি গ্রস্ত দেশের মাঝে ন্যায়ের পক্ষে অনেক লোক ছিল । এছাড়া আমাদের দলের একজন সাইন্সটিস্ট জনাব বরাকাত উল্লাহ তিনি সেই সময়ে অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী ছিলেন । তিনি নতুন একটি সিরাম আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সিরামের সবচেয়ে ভাল গুন হল সেটা মানুষ কে অন্যায় এবং অসৎ কাজ থেকে দূরে রাখে । অতীত ভুলের জন্য মস্তিস্কে এক ধরনের পীড়া দেয়। তা থেকে মুক্তির জন্য ভাল কাজ করতে হয়। তখন তার মস্তিস্কে শান্তি আসে। সেই সময়ের এই আবিষ্কার বরাকাত উল্লাহ কাউকে জানাননি। যখন তিনি আমাদের মিটিং এ এলেন তখন তিনি সে সম্পরকে একটা লেকচার দিলেন এবং বললেন যেভাবেই হোক এই সিরাম একটা করে বাংলাদেশের সকল দুর্নীতি বাজের শরীরে পুশ করতে হবে। আমি সেই দায়িত্ত নিলাম। দেশের সকল হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে আমার নিজেদের লোকের মাধ্যমে সেই সিরাম ছড়িয়ে দিলাম দুসপ্তাহের মধ্য।
প্রবল দুর্নীতিবিদরা খুব সহজে কাবু হল। তারা সকলে ভাল কাজ করতে শুরু করল। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে সময় লাগল । আমরা সারা দেশে যোগ্য প্রতিনিধি খুজে বের করলাম । দেশে সাধারন নির্বাচন হল ২০৫০ সালে । ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম ভিন্ন একটি অপরিচিত দল ক্ষমতায় এল আমাদের প্রতিনিধি হয়ে । তখন আমরা শুরু করলাম আমাদের মুল কাজ।
আমরা প্রথমে জোর দেই দুর্নীতি দমনের দিকে । আমরা বেশ কিছু খাত চিহ্নিত করে এগুতে লাগলাম । প্রথমে শিক্ষা নীতির পরিবর্তন করে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিতের দিকে এগুলাম। এরপর সকল ডাক্তার কে আমরা জাতীয়করন করে জনগনকে সল্প টাকায় চিকিৎসার আওতায় নিয়ে এলাম। প্রত্যেক ডাক্তারকে তার যোগ্যাতা অনুযায়ী বেতন প্রদান করা হল। সকল প্রাইভেট ক্লিনিক সরকারের তত্তাবধানে চলে এল। জনগন খুব সহজে চিকিৎসা সেবা পেতে লাগল। এরপর আমরা দৃষ্টি দিলাম দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান পুলিশ বাহীনির দিকে। আমরা জানি পুলিশ যদি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে তাহলে দেশের অনেক দুর্নীতি একদিনে কমে যাবে। ঢেলে সাজানো হল পুলিশ বাহিনিকে । মেধাবী এবং সৎ লোককে চাকুরী প্রদান করা হল। ধীরে ধীরে দুর্নীতি কমতে লাগল । এরপর বিশাল জনসংখ্যা কে কিভাবে জনশক্তিতে রুপান্তর করা যায় সে নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হল। প্রথমে সিদ্ধান্ত হল প্রতি অর্থ বছরে সরকার নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় কমপক্ষে দশটি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত করবে। যেই ভাবনা সেই ভাবে কাজ শুরু হয়ে গেল । সরকার অনেক মোটা অঙ্কের টাকা রাজস্ব আদায় করল এবং সেই টাকা দিয়ে দেশে গঠিত হল । অনেক শিল্প কারখানা। প্রতিটি জেলায় খোলা হল বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী । ২০৬০ সালের মধ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসাবে পরিচিতি পেল বাংলাদেশ। সেই সময়ে বিশ্বের নানা দেশ থেকে অনেক নামকরা কোম্পানী ছুটে এল এই দেশে । সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব চুক্তিতে তাদের কাজ করতে দিল তবে শর্ত বেধে দিল তাদের পন্য বাংলাদেশে সস্তা দামে বিক্রী করতে হবে। আমি সেই সময় প্রজেক্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এরপর আমার এবং আমার সহকর্মীদের উদ্দ্যেগে এই ভার্সনটি বানাই। আমি চেয়েছিলাম যখন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে তখন যেন আমাদের কথা তোমরা ভুলে না যাও। কিছুক্ষণের মধ্য আমার কথা এবং ছবি অদৃশ্য হয়ে যাবে । আশা করি তুমি এবং দেশের নতুন প্রজন্ম আমাদের " প্রজেক্ট বাংলাদেশ " সম্পর্কে জানবে। আর তোমাকে শেষ বারের মত একটু চমকে দেই মিস্টার তালহা । সাথে সাথে কম্পিউটার স্ক্রীন আধারে ঢেকে গেল। তালহা অনেক আশ্চায্যের সাথে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে গেল । তাহলে তারা জানত আমার কি নাম হবে।সত্যি বিচিত্র এবং অনেক জ্ঞানী ছিল সেই মহান মানুষগুলো।


অনেক শ্রদ্ধা আর গর্বে তালহার চোখে জল এসে গেল । একদল নিবেদিত প্রান লোক এই দেশটির জন্য যা করে গেছেন , তাদের সেই অবদানের কল্যানে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।
আগামীকাল ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের ৫০০ শত বর্ষ পূর্তি । পুরোদেশ বিচিত্র রঙ্গে সেজেছে। পাড়ায় পাড়ায় আনন্দের বন্যা। তালহা সিদ্ধান্ত নিল এই বছর বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গর্বিত ভাবে স্মরণ করা হবে " প্রজেক্ট বাংলাদেশের " নাম। সেই সকল মেধাবীদের কে স্মরণ করা হবে গর্বভরে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা অনেক কঠিন । আর সেই কঠিন কাজটাই করে গেছে " প্রজেক্ট বাংলাদেশ" । এছাড়া এই বছর বিশেষ লেজার পিডিয়া ভার্সনে যুক্ত হবে আর একটি নতুন ইতিহাস " প্রজেক্ট বাংলাদেশ"। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে গর্ব বলেই বিবেচিত হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আর ভাষা শহিদদের মত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sakil মনির খলজী এবং নাহিদ ভাইয়া দুজনকে অনেক ধন্যবাদ
খন্দকার নাহিদ হোসেন শাকিল ভাই, বলতেই হয় বুকে সাহস লাগে এই সময়ে এমন একটা সপ্ন দেখার জন্য। গল্প পড়ে রীতিমতো মুগ্ধ হলাম। জয় হোক আপনার স্বপ্নের।
মনির খলজি সমসাময়িক বাস্তব চিত্র, ভবিষ্যত কল্পকাহিনীকে রূপকথার আদলে এনে, তথ্য প্রযুক্তির মিশেলে নিজ ভাবনাকে একটা ফ্রেমে আবদ্ধ করেছেন লিখক...এটাকে ঠিক গল্প বলা যাবেনা ! মানুষ স্বপ্ন যদি দেখেই তবে অতি কাল্পনিকটা দেখতে অসুবিধা কোথায় ? স্বপ্নে মঙ্গল, মিল্কিওয়ে ইত্যাদি ঘুরে আসতে তো আর কোনো আর্থিক ব্যায় হয়না .....লিখককে ধন্যবাদ জানাই এধরনের স্বপ্ন দেখানোর জন্য ....শুভকামনা রইল !
sakil onek dhonnobad saleh mahomud vaiya .
সালেহ মাহমুদ একটি অসাধারণ স্বপ্ন, এ রকম স্বপ্ন দেখতেও অনেক ভালো লাগে। এ রকম স্বপ্ন দেখানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
sakil প্রজাপতি মন , @ আহমাদ মুকুল ভাইয়া @ দিগন্ত রেখা আপনাদের তিনজনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
দিগন্ত রেখা অনেক শ্রদ্ধা আর গর্বে তালহার চোখে জল এসে গেল । একদল নিবেদিত প্রান লোক এই দেশটির জন্য যা করে গেছেন , তাদের সেই অবদানের কল্যানে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।
আহমাদ মুকুল কল্পকাহিনী...যাতে বৈজ্ঞানিক যুক্তি কিংবা বাস্তবভিত্তিক ভাবনার চেয়ে দেশপ্রেম, দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আবেগ প্রাধান্য পেয়েছে। আসলেই তাই, সবখানে যুক্তি খাটে না। ভাবতে কার না ভাল লাগে, এমনটি যদি হত! অনেক ভাল লিখেছ, তৌহিদ। খুব খুব ভাল।
প্রজাপতি মন ভবিষ্যতের গল্পটা ভালোই লাগলো। যদি সত্যিই এমন হতো।
sakil dhonnobad @ nafis @ nur @ asha ebong dipok sahake

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪