লাশের মিছিল

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

sakil
  • ৫৪
  • 0
  • ৫৬
ছনের ঘরের চালের ফাঁক গড়িয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে শুকিয়ে যাওয়া ঝর্নার ধারার মত।বাইরে বৃষ্টি ততোটা জোরালো নয়। আকশে মেঘের ঘনঘাটা,নিকষ কালো অন্ধকার চারদিকে। মাঝেমাঝে বয়ে যায় ঝড় হাওয়া।কেরোসিনের কুপিটা নিভু নিভু করছে কেরোসিনের অভাবে।কুপির উপরে আগুনের শিখার কাছে কয়েকটা লালফুল ফুটে আছে সলতের মাঝে। অনেকে বলে যে বাড়িতে এই ফুল ফুটে সে বাড়ীতে নাকি কারো বিয়ে হয়। নিভু নিভু কুপিটার দিকে তাকিয়ে অন্য কথা ভাবছে নুর হোসেন। আজ কয়েকদিন কোন কামকাজ নাই।ছেলে মেয়ে গুলো ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে কেঁদে ভুখা শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। বর্ষার মৌসুমে কাজ তেমন মিলে না । যদি ও মেলে তাতে ভাল পয়সা মেলে না।কেউ আবার নগদ টাকা না দিয়ে অন্য কিছু দেয় । এভাবে আর কতদিন চলবে ।কিছু মানুষ কত খাবার ফেলে দেয় , আর কিছু মানুষ না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকে তার ছেলে মেয়েদের মতন। আল্লাহ পাকের সৃষ্ট দুনিয়ায় কত খেলা । পাশের পাড়ার আবু মুনশীর কত টাকা । সে টাকা খাবার মত তার কেউ নাই।একে একে চার বিয়ে করেছে কিন্তু উপরে ওয়ালা তাকে কোন সন্তান দেয়নি আজ পর্যন্ত । আর তার নিজের ছয় জন ছেলে মেয়ে । তার ছয় ছেলে মেয়ে না খেয়ে থাকে , আবু মুনশীর কত সম্পদ কত খাবার ফেলে দেয়। একেই হয়ত বিধির লীলা খেলা বলে।
শরীরে মাঝে বৃষ্টির পানির ছোয়া লেগে জেগে যায় সুফিয়া খাতুন। ঘুম জড়ানো চোখে দেখে তার স্বামী নিভু নিভু কুপিটার সামনের ঝাপসা আলোয় বসে কিসের চিন্তায় মগ্ন।উঠে স্বামীর কাছে গিয়ে বসে সন্তপর্ণে । সুফিয়া কে উঠে আসতে দেখে নুর হোসেন বলে ঊঠে –
কি হল । জেগে গেলে যে।
কি ভাবছ ? এতরাতে বসে বসে।
কি আর চিন্তা করব।পোলাপান গুলো না খেয়ে শুয়ে গেছে।তাই ভাবছি। ভাবছি গ্রাম ছেড়ে চলে যাব।তুমি কি বল।
আমি আর কি বলব। আমার নিজের কাছে কি ভালো লাগে । পোলাপান গুলো না খেয়ে শুয়ে আছে।কস্টে আমার বুকটা ফেটে যায়। তোমার যা ভাল লাগে কর।ছেলে মেয়ে গুলো না খেয়ে কেমন হয়ে গেছে । আল্লাহ আমাদের এত গরীব বানাইছে কেন?
রূপা"র মা তুমি কোন চিন্তা করো না । একদিন আমাগো সব কস্ট দূর হয়ে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাইখ।
(২)
চট্রগামের বটতলি স্টেশন। অনেক মানুষের ভীড়।পা ফেলার জায়গা নেই।ভীড়ের মাঝে ঠেলাঠেলি করে বউ আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক কস্টে বেরিয়ে এল নুর হোসেন।বড় মেয়ে বার বার প্রশ্ন করছে বাবা কোথায় এসেছি। এত্তবড় বাড়ী।এত্তমানুষ এটার নাম কি, এমন অনেক প্রশ্ন। নুর হোসেন এক ধমক মারে । ধমক খেয়ে সবাই চুপচাপ নুর হোসেনের পেছনে হাটে সন্তপর্ণে ।
একটা সি,এন, জি তে উঠে ফয়েজলেক যাবে বলে। চালক ফয়েজলেকের দিকে গাড়ী ছোটায় । চালক আড়চোখে নুর হোসেনের দিকে তাকায় এবং প্রশ্ন করে –
ভাইজান কি চিটাগাং এ নতুন এসেছেন
হ্যা।নতুন এসেছি,তাতে তোমার কি?
না আমার কিছু না , প্রতিদিন কত মানুষ আসে যায় , এমনি বললাম। আর উঠবেন কোথায়।
এক ভাই আছে তার কাছে যামু।তার পর একটা কাম কাজ দেখে নিমু।
কি কাম জানেন ভাইজান।
কামলা খাটতে পারি রিকশা চালাইতে পারি। ঠেলা ঠেলতে পারি।
আমার মোবাইল নাম্বারটা নেন ভাই। কোন কাম না পাইলে আমারে ফোন দিয়েন।
ঠিক আছে ।দাও।
কিছুক্ষণের মধ্যে সি,এন,জি ফয়েজলেকের বস্তিটার পাশে এসে থামল । সবাই নেমে রাস্তার ফুটপাতে উঠে এল।
ও বাজান আর কত দূর। বড় মেয়েটা বলে উঠল।
এইতো মা এসে গেছি। অনেকটা শান্ত গলায় বলে উঠল নুর হোসেন।
রাস্তার পাশের ছোট দোকানের পাশে গিয়ে নুর হোসেন মিয়ার দলটা দাড়াল।সুফিয়া বেগম তার থলে খুলে তার থেকে মূড়ি আর আখের গুড়ের পোটলাটা বের করে বসে পড়ল। দেখাদেখি নুর হোসেন ছাড়া আর সবাই মায়ের পাশে বসে শুকনো মুড়ি গুড় দিয়ে চিবুতে লাগল অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে। সবার খাওয়া দেখে নুর হোসেন ও বসে পড়ল মাটিতে। তার নিজের ও অনেক ক্ষুধা লেগেছে। রাস্তার পাশের টিপ কল থেকে হাতের আজল দিয়ে পানি খেল সবাই। এবার নুর হোসেন লুঙ্গির গিট থেকে দুমড়ানো মোচড়ানো একখান কাগজ বের করে সামনের দোকানে বসা ছেলেটাকে বলল
ভাই বলতে পারেন এই ঠিকানাটা কোনদিকে ।
এই যে সামনের গলিটার পেছনে।

খালেক মিয়া নুর হোসেনের গ্রামের মানুষ। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে চট্রগ্রাম এসেছে । গ্রামের একজনের কাছ থেকে খালেক মিয়ার ঠিকানা জোগাড় করে নুর হোসেন চট্রগ্রাম এসেছে।খালেক মিয়া তাকে একটা কাজের ব্যাবস্থা করে দিবে এই বিশ্বাস তার আছে । আটজন মানুষের দল যখন খালেক মিয়ার ঘরের সামনে গিয়ে দাড়াল । তখন তাদেরকে দেখার জন্য ছোট খাট একটা ভীড় জমে গেল।খালেক মিয়া দুপুরের খাবার খেয়ে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কে নিয়ে খাটে শুয়ে আরাম করছিলেন।ঘরের বাইরে মানুষের কথাবার্তা শুনে জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে সাত আটজন অচেনা মুখ তার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনিচ্ছা সহকারে ঘরের বারান্দায় এসে দাড়াল।
নুর হোসেন কে চিনতে একটু সময় লাগল । নুর হোসেন এগিয়ে এসে খালেক মিয়ার হাত ধরে কেঁদে উঠল –
খালেক ভাই আমারে বাঁচান । গ্রামে কোন কামকাজ নাই পোলাপাইনরে ঠিকমতো খানা দিতে পারি না , তাই আপনার কাছে চলে এসেছি। আপনি যা কিছু একটা বন্দোবস্ত করে দেন ।
ঠিক আছে হোসেন , এসেই যখন পড়েছ তখন ব্যাবস্থা একটা তো করে দিতে হবে। তবে সবাইরে না নিয়ে এলে বোধহয় ভালো করতে। এখন চিন্তা করে লাভ নাই । আমার ঘর তো দেখছিস কত ছোট । এখানে তোদের থাকতে দিলেও থাকতে পারবি না। তবে এখন আয় ঘরের ভিতরে । বিকালের মধ্যে তোরে একটা থাকনের বন্দোবস্ত করে দিমু। টাকা-পয়সা এনেছিস কিছু ?
এনেছি শ"পাচেক।
ভালো করেছিস। টাকা ছাড়া ঘর পাওয়া বড় কঠিন এই শহরে। এইডা আমাগো গ্রাম না , বুঝেছিস।
সেদিন বিকালে খালেকের দৌরাত্নে বস্তির মাঝে একটা ঘরের ব্যাবস্থা হয়ে গেল। ভাড়া মাসে ৭০০ টাকা। ৩০০ টাকা অগ্রিম। খালেক বলল কি কাজ করবি ?
আপনে যেইডা দেন ।
আরে আমি কি দিমু ।
রিকশা চালাইতে পারিস?
হ্যা পারি । তয় এইহানের পথঘাট তো ভালমতো চিনি না।
এইডা কোন সমস্যা নয় । প্যাসেঞ্জার রাস্তা বইল্লা দিব। তোর অসুবিধা নাই। আয় আমার লগে । আমি না গেলে তোরে কেউ রিকশা দিব না।
চলেন । ভাই
সেদিন থেকে নুর হোসেনের শুরু হল শহরে জীবন। যে জীবন অনেক কস্টের এবং পরিশ্রমের। অতি কস্টের বিনিময়ে যে টাকা পায় তাতে কোনমতে তার সংসার চলে। সুফিয়া প্রথম প্রথম বস্তির সংসার নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। একদিন পাশের ঘরের রহিমার মা বলল
এইভাবে থাকলে কি চলবে। তুমি নিজে ও কোন কামকাজ কর।
আমি আর কি কাম করুম । আমারে কে কাম দিব।
তুমি যদি করতে চাও তাইলে আমারে কইও।
নুর হোসেনের কস্ট দেখে নিজে আর সহ্য করতে পারে না । ছয় জন ছেলে মেয়েরে ভরন পোষন করা এত সোজা না শহরের মাঝে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল রহিমা আপারে দিয়া একটা কামের ব্যাবস্থা করব।পরদিন সকাল বেলা লাইনের পানির জন্য দাঁড়িয়ে থাকার সময় দেখল রহিমা আপা আসছে।রহিমা আপা সবসময় সুফিয়ার খোজ খবর নেয় । আজ রহিমা আপা কে দেখে সুফিয়া নিজে এগিয়ে গিয়ে বলে বুবু
আমারে একখান কামের ব্যাবস্থা করে দেন।
কি-লো এতদিন কামের কথা কইলে কও , ভাইবা দেখবা ।আজ নিজেই কামের খোজে কি ব্যাপার –মিয়া সাবে কিছু কইছে নাকি।
আরে না বুবু । আপনি যে কি কন।মানুষটা একলা একলা খাইটা মরে তাই ভাবছি আমি কিছু চেস্টা কইরা দেহি।
এতদিনে বুঝতে পাইরছ তাহলে। তোমার লাইগা একখান সহজ কাম আমার দেখা আছে । ব্যাস সকাল বিকাল যাইতে হইব।
অসুবিধা নাই।আপনি আইজ আমারে নিয়া চলেন।
আস্তে আস্তে। বিয়ালে যামুনি।

জীবন প্রবাহের সাথে পাল্লা দিয়ে সময় দ্রুত বয়ে যায়। যেমনি করে নুর হোসেনের দিনগুলো বেশ চলছিল।একদিন বস্তির ভাড়াটিয়া এসে বলল। ভাসা ভাড়া বেড়ে গেছে। তাই আগামী মাস থেকে ১৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। আর না পারলে এই মাসের মধ্যে ঘর খালি করে দিতে হবে।
একথা শুনে নুর হোসেন মিয়ার মাথায় যেন আবার বাজ পড়ল।কি করবে চিন্তা করে উঠতে না পেরে খালেক মিয়ার কাছে ছুটল। বিপদে আপদে সবসময় খালেক মিয়াই নুর হোসেনের ভরসা। সব শুনে খালেক মিয়া বলল-
তুই কোন চিন্তা করিস না , আমি তোরে অন্য জায়গায় বাসা ঠিক কইরা দিমু। এহন যা রিকশা চালা।
বয়স দিনে দিনে বেড়ে চলছে । রিকশা চালাতে নুর হোসেনের অনেক কস্ট হয়। শুকনো মৌসুমে কোন সমস্যা হয় না । কিন্তু বর্ষা এলে বেশ কস্ট হয়। পাকা রাস্তা ছেড়ে কাচা রাস্তার মাঝে প্রতিটি প্যাডেল চাপতে অনেক পরিশ্রম হয়। কিন্তু কাকে বলবে। নিজের বউটা ও তো দোকানের মসলা পিষে টাকা কামাই করছে। রাস্তার দুপাশে কাদার মাঝে রিকশা হাতে টেনে নিয়ে যায়।আর শহুরে বাবু গূলো বেশ আরাম করে বসে থাকে। সেদিন একটা গান শুনে বেশ হাসি এসেছিল
এই কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে , এই বাবু পারবে কি কোনদিন জানতে?
কলকাতার কোন এক গায়কের গান খালেক ভাই বলেছিল।
শেষমেস একটা সস্তা দামের ঘরের সন্ধান পাওয়া গেল।ভাড়া খুব কম আগের মত ৭০০ টাকা। রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুলের পেছনে বাটালীহিল এলাকায়।পাহাড়ের গা ঘেষে। বিকালে পরিবার নিয়ে চলে এল নতুন আবাসে। অনেকগুলো ঝুপড়ি ঘর।বাশের বেড়া দেওয়া । কোন কোন ঘরের উপর টিনের একচালা,কোন্টির উপর প্লাস্টিকের তেরপালের চাল। খুটি গূলো অতবেশী মজবুত নয়। মনে হয় জোরাল হাওয়া এলে বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। নূর হোসেনের মত অনেক পরিবার এখানে আগে থেকেই বাস করছে দেখে কিছুটা সস্তি পেল নুর হোসেন। আসলে গরীবদের জন্য এই দুনিয়ার কোথায় ও ঠাই মেলা সহজসাধ্য নয় ।
দেখতে দেখতে কয়েক মাস চলে গেল । প্রচণ্ড গরম আর খরার মাঝে গ্রীস্ম শেষ হল। নুর হোসেনের মাঝে মাঝে ভয় লাগে পাহাড়ের পাদদেশে এই বাড়ী গুলোর জন্য। এই বুঝি পাহাড় ধ্বসে সব মরে গেল। না এই পর্যন্ত আল্লাহ কোন বিপদ আপদ দেয় নাই। এছাড়া কি করবে নুর হোসেন কোথায় পাবে ভাল একটি বাসা বাড়ি। যাও দু এক্টার সন্ধান মেলে ভাড়া অনেক বেশী। ইদানিং বড় মেয়েটা স্কুলে যাবার বায়না ধরেছে। বাকি ছেলে পুলে লেখাপড়ার দিকে কোন ঝোক নাই । সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। এখন বয়স হয়নি যে কোন কাজে লাগিয়ে দিবে। ছেলে গুলো নুর হোসেনের ভরসা। একদিন ছেলেরা কামাবে বুড়ো-বুড়ী মিলে আরাম করে খাবে । মাঝে মাঝে এসব স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় নুর হোসেন। তখন তাকে বেশ সুখী মানুষ মনে হয়।
আজ কয়েকদিন বেশ বৃষ্টি রিকশা নিয়ে বাইরে গেলে ও ক্ষেপ মিলে না । গত দুইদিন বৃষ্টিতে ভিজে শরীরে একটু একটু জ্বর বোধ করছে।আজ সকাল থেকে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। তাই রিকশা নিয়ে বাহির হয়নাই।সন্ধা হয়ে গেছে বৃষ্টি থামার নামটি পর্যন্ত নাই। ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য করতে না পেরে এই বৃষ্টি ঝরা সন্ধ্যায় রিকশা নিয়ে বাহির হল নুর হোসেন।পরিবারের বাকী সবাই তখন নিদ্রা দেবীর কোলে নিমজ্জিত হয়ে আছে। কাউকে কিছু না বলে সারের কাগজটা মাথায় পেছিয়ে বেরিয়ে পড়লেন নুর হোসেন।

রাস্তায় নেমে দারুন একটা ক্ষেপ মিলে গেল নুর হোসেনের। মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাল। আজ তাহলে ছেলে মেয়ে গূলো নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে না। একঘন্টার মধ্যে বেশ কয়েকটা ক্ষেপ মিলে গেল। সেই সাথে হাতে ৫০ টাকার মত হয়ে গেল। এবার বাসার দিকে ফিরল নুর হোসেন। পথের মাঝের মুদি দোকানের সামনে রিকশা থামাল কিছু কেনার জন্য।দুইটা শুকনো পাউরুটি আর একদজন কলা নিয়ে যেই রিকশার কাছে এল তখন দেখতে পেল , ফায়ার সার্ভিস আর সেনা বাহীনির অনেক গুলো গাড়ী সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলল বাটালীহিলের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে মনের মাঝে কেমন যেন করে উঠল।গামছা দিয়ে শুকনো পাউরুটি আর কলা পেছিয়ে রিক্সার সীটের নিচে রেখে বাসার দিকে ছুটল। যতই কলোনীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ততই মানুষের ভীর বাড়তে লাগল। কি হয়েছে বুঝতে পারছে না। এক লোক গলা ফাটিয়ে বলে উঠল সবশেষ হয়ে গেছে।কেউ কিছু বলার আগেই নুর হোসেনের চোখ গেল পাহাড়ের খাড়া দেয়ালের উপর । কিন্তু সে এসব কি দেখছে পাহাড়ের দেয়ালটা তো নিজের জায়গায় নাই। আর কিছু মনে করতে পারলো না নুর হোসেন সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। অনেকে দৌড়াদৌড়ি করে ছুটে এল এবং স্থানীয় লোকজন নুর হোসেন কে চিনতে পেরে সেবা করতে লাগল। কেউ বলে উঠল নুর হোসেনের পরিবারের সবাই পাহাড় ধ্বসের নিচে চাপা পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের এবং সেনা বাহীনির লোকের উদ্ধার তৎপরতায় সামান্য কয়জনকে বাঁচানো গেলে ও নুর হোসেনের পরিবারের কাউকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পাহাড় ধসে নুর হোসেনের পরিবারের সবায় চির নিদ্রায় চলে যায়। নুর হোসেন ছাড়া ও আর যারা সেখানে থাকত পয়সার অভাবে তারা হারিয়ে ফেলেছে তাদের অনেক স্বজন ।সেনা বাহীনির উদ্ধার কারি দল একের পর এক লাশ বের করে নিয়ে আসছে কাদা মাটির তলা থেকে। শাড়ী পেঁচিয়ে , কাদা পানি আর মাটি খেয়ে লাশের পেট গুলো ফুলে উঠেছে বীভৎস ভাবে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য হয়ে দেখা দিল। মানুষের কান্নায় পাহাড়ের আকাশ ভারী হয় উঠতে থাকল দ্রুত।
সাতটি লাশ নিয়ে সকাল ১১ টার দিকে নুর হোসেন নন্দীপুর নিজের গ্রামে ফিরে আসে তিন বছর পর। এলাকার হাজার হাজার মানুষ নুর হোসেন এবং তার মৃত পরিবারের সবাইকে দেখতে আসতে থাকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে।এই বৃষ্টি একদিন নুর হোসেন কে শহরে নিয়েছিল একবুক আশা নিয়ে , সেই বৃষ্টি আজ নুর হোসেন কে উপহার দিয়ে গেল সাতটি লাশ।
জায়গায় জায়গায় স্বজন হারা মানুষ নিহতদের লাশগুলো নিয়ে সমাধীর ব্যাবস্থা করছে নিজ নিজ এলাকায় ।
গ্রামের সকলে দাপনের ব্যাবস্থা করে ফেলল দ্রুত। একসাথে সাতটি লাশ বয়ে নিয়ে চলল এলাকার লোকজন । বাড়ীর আঙিনায় বসে সেই লাশের মিছিলের দিকে ছেয়ে রইল নির্বাক নুর হোসেন।
বিঃদ্রঃ বর্তমান পাহাড় ধ্বসে চট্রগ্রামে ৬০ জনের অধিক মানুষ নিহত হয় কিছুদিন আগে। আমার গল্পের থিমটি সেখান থেকে নেওয়া। যদি কারো সাথে এই গল্পের কাহিনী মিলে যায় এটা অনভিপ্রেত কাকতলীয় মাত্র। আমি শুধু বাস্তবাতার নির্যাস দিয়ে গল্পটি দাড় করানোর চেস্টা করেছি এবং তাতে কিছু চরিত্রের বিন্যাস ঘটিয়েছি। সেই সাথে পাহাড় ধ্বসে নিহত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি । সেই সাথে স্বজন হারা পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sakil অনেক ধন্যবাদ @ কবির সিদ্দিকী ভাই . আপনার জন্য অনেক ভালবাসা রইলো
sakil অনেক অনেক ধন্যবাদ @ রওশন জাহান আপু আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য . হা আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে .
কবির সিদ্দিকী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বার বার বিজয়ী হউন এই কামনা করি।
রওশন জাহান লেখার ক্ষেত্রে আপনার ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং আবেগ প্রসংশনীয় . দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা সত্যি আমাদের অনেক আশা যোগায়. আপনার লেখায় প্রাণ খুঁজে পাই আমি যা এখানকার অনেক আলোচিত লেখকের লেখায় আমি পাইনা.ভবিষ্যতেও আপনার এরকম লেখা আশা করছি. অনেক শুভকামনা আপনার জন্য .
sakil অনেক ধন্যবাদ সৌরভ শুভো কৌশিক
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) লাশের মিছিল,ভালো না হয়ে পারে /মিছিল নয় ,গল্পটি ,বলছি বারে বারে /
sakil অনেক অনেক ধন্যবাদ @ KHondokar Nahid Hossain আপনার জন্য রইলো অনেক ভালবাসা এবং ঈদের আগাম শুভেচ্ছা .
sakil @ বিন অরফান ভালো লাগুক আর নাই লাগুক কষ্ট করে পড়েছেন . আর সেই সাথে ঈদের শুভেচ্ছা দিয়েছেন তাতে বা কম কি . আপনার জন্য রইলো আগাম ঈদের শুভেচ্ছা .
বিন আরফান. ও আরেকটি কথা গল্পটি কিন্তু হৃদয় ছুয়েছে.
বিন আরফান. ভালো লাগে নাই ভাই গল্পকার. তবে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা রইল.

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪