গায়ের রং শ্যামলা। গোলগাল গড়ন। দেখতে ভালো। নিজের দোকান যখন ইচ্ছা খোলে, যখন ইচ্ছা বন্ধ করে। বলার কেউ নেই। এমন একটি ছেলে স্বামী হলে জীবন হবে সুখময়। অঞ্জনার সহজ সরল মন ভেসে যায় সুখের কল্পনায়।
দেখেনতো ভাই এই সেটের ব্যাটারী আছে কিনা - দোকানের কর্মচারীকে মোবাইল দেখিয়ে বলে অঞ্জনা - হবে আপা। দাম পরবে তিন’শ টাকা। - তিন’শ টাকা ? হ আপা - কিছু কমনেন। আড়াই’শ টাকা রাখেন। - না আপা এক নম্বর ব্যাটারী। ছয় মাসের গ্যারান্টি। - তাহলে কমনিবেন না - না আপা একদাম। - আচ্ছা দেন।
কর্মচারী কয়েকটি তাক খুঁজে একটি ব্যাটারী বের করে। মোবাইলের দিকে তাকায় আবার তাকায় ব্যাটারীর দিকে। অঞ্জনার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটে লাগায়। - বস্ সেট গরম হয়ে গেছে - কৈ দেখি। ব্যাটারী খুলে নির্মলের কাছে দেয়।
- ঐ ব্যাটা দেইখা লাগাবি না। ফাজিল কোনহানকার। এতদিন ধইরা দোকানে থাকছ অহন পর্যন- জানস না কোন সেটের কোন ব্যাটারী। সেটটারেতো খাইছছ। অঞ্জনার বুকের ভিতর ধপ করে বাড়ি খায়। বলে - কি ভাই কি হইছে সেটের। - না আপা তেমন কিছু হয় নাই। ব্যাটারীর পয়েন্ট মিলে নাই তাই একটু গরম হয়ে গেছে। আপা কিছু মনে করবেন না। ঘন্টা খানিক বসেন। - কেন, বসব কেন। এখন আমার লাঞ্চের সময়। ব্যাটারী দেন। - আপা নেগেটিভ পজেটিভে একটু সমস্যা হইছে। এইটা ঠিক করতে একটু সময় লাগব। - কেন কি ঠিক করবেন, আমারতো নতুন সেট। ঠিক করতে হবে কেন। আমার সেট দেন। - আপা বললামতো নেগেটিভ পজেটিভে একটু সমস্যা হইছে। এই শুয়ারের বাচ্ছায় এখনো ব্যাটারী চিনে না। চার্জিন কানেক্টর পল্টাইতে হবে। আপনি একটু বসেন আমি এখনি ঠিক কইরা দেই।
বুকের ধুকপুক কাঁপুনি নিয়ে বসে থাকে অঞ্জনা । মোবাইলের শেষ স্ক্রুটি স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে লাগাতে লাগতে তাকায় অঞ্জনার দিকে। অন্য একটি নতুন ব্যাটারী দিয়ে সেট অন করে বলে - এই ধরেন আপা। নিয়া আট ঘন্টা চার্চ দিবেন। ব্যাটারী কিনতে এসে সেটটাই প্রায় শেষ হয়ে গিয়ে ছিল। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। আচ্ছা বলে দোকান থেকে বের হয়।
সন্ধায় চার্জে লাগিয়ে রাখে সারা রাত চার্জ হয়। সেট চলছে আগের মতোই কিন্তু। দুই দিন পর সেট বন্ধ হয়ে গেছে। অন হয় না। অঞ্জনা ভাবে চার্জ নেই। তাই চার্জ দেয়। চার্জ উঠে না। চার্জার কানেকশান দেখায় না।
দেখেনতো ভাই সেট ওপেন হয় না কেন - সেট নিয়ে মিটার দিয়ে পরিক্ষা করে দেখে বলে - আপা আজ হবে না। দুইদিন পরে এসে নিয়ে যাইয়েন। - কি হইছে ? - সেট হাত থেকে পড়ে গিয়ে ছিল নাকি। - কৈ নাতো - তাহলে এমন হল কেন - কি সমস্যা - সেট ডেথ হইয়ে গেছে। - মানে - মানে সেট মরে গেছে - কি বলেন - আমার ভালো সেট - ভালো সেট নষ্ট হইতে কত ক্ষণ। ইলেক্টনিক্স জিনিসের কি কোন গ্যারান্টি আছে ? এই আছে তো এই নাই। মানুষের কি গ্যারান্টি আছে। - কত টাকা লাগবে - ঠিক হইলে বার’শ টাকা। ঠিক না হইলে কোন কাটা লাগবে না। - দিবেন কবে - দুইদিন পর আইসেন।
দুই দিন পর রাত বারটায় ছুটি হয়। আসতে পারে নাই। তার পরের দিন লাঞ্চের সময় আসে - আমার সেটটা দেন। মুখের দিকে তাটিয়ে - ও আপা আইছেন। কিন্তু সেটতো ঠিক হয় নাই। আরো দুইতিন দিন পরে আইসেন। - কি বলেন আরো দুইতিন দিন পরে। আপনি আসতে বললেন দুইদিন পরে। আজকে তিন দিন পরে আসলাম। এখন বলেন আরো দুইদিন পরে। - কি করমু আপা। ডেথ সেট সময় তো লাগবেই। পার্টস পাওয়া যায় না। কোন উপায় না দেখে বলে। আচ্ছা ঠিক আছে দুই দিন পর আসব আর কিন্তু ঘুরাইয়েন না। - না আপা হইলে তো নিয়াই যাইবেন। ওহ্ আপা আপনার আসার দরকার নাই। এই লন আমার কার্ড। ফোন দিয়েন। তাহলেই জানতে পারবেন ঠিক হইছে কি না। আপনার নামটা বইলা জান।
হ্যালো ভাই আমার মোবাইলটা কি ঠিক হইছে - কে ? - আমি অঞ্জনা । - কি নাম ? - আমি অঞ্জনা - না আপনার নাম না। সেটের নাম আর মডেল নাম্বার বলেন। - আমি নাম জানি না। চায়না সেট। - ও হা চিনতে পারছি। আচ্ছা আপনি আজ সন্ধায় দোকানে আসেন। বলে নির্মল লাইন কেটে দেয়।
সন্ধায় আসতেই অঞ্জনার জন্য বিস্কিট আর কোমল পানিয় হাজির। - না না ভাই আমি এগুলো খাব না। আমার সেট দেন। - বিস্কিট লননা আপা সেটতো দিবই। অঞ্জনা একটি বিস্কিট নেয়। - আপা আপনার সেট এখনো ঠিক হয়নি। তাই এই সেটটি আপনি নিয়ে যান। চালান আমি দেখি সেটটা ঠিক হয়কি না। এটা কারসেট আমি এটা নিব কেন। - আপা যারা একবার মোবাইল ব্যবহার করেছে তারা সেট ছাড়া চলতে পারে না। এটা সাংঘাতিক অভ্যাস। তাই আপনার জন্য আমি এটা দিলাম। আপনার সেট ঠিক হলে এটা দিয়ে যাইয়েন। একটা সেট তার হাতে ধরিয়ে দেয়। অঞ্জনার ভালো লাগে। লোকটি তাকে সেট দিয়েছে । তারটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে। নির্মল মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেয়। যোগাযোগ করার জন্য। - আপা এটা আমার পার্সোনাল নাম্বার আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না।
সপ্তাহখানেক পর অঞ্জনা ফোন দিয়ে জানতে চায় সেটের কথা। নির্মল জানতে চায় অঞ্জনার কথা। - সেটের কথা বলতে বলতে দুজনের কথাও কিছু বলা হয়। একদিন দুদিন করে বেশ আলাপ জমে। বান্ধবীদের মোবাইলে কোন সমস্যা হলেও নিয়ে আসে। ঠিক করে দেয়। আস্তেআস্তে দুজনের ভালোলেগে যায়। প্রতিদিন তাদের সরাসরি কথা না হলেও চোখো চোখি হয়। দোকানের সামনে অঞ্জনার অফিসের রাস্তায় । দেখা না হলেও কথা হয় প্রতি রাতে। অনেক কথা।
পুরুষ মহিলার প্রাকৃতিক ভাবে যেমন যৌবন আসে। যৌবন কালে প্রেম হলে প্রেমেও যৌবনের ছোঁয়া লাগে। যৌবনের কারণেই হয় শারীরিক সম্পর্ক। নতুন যৌবনে থাকে বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষন। প্রেমের মধ্যে সে সম্পর্ক এসে যায়। অনেকের মতে শারীরিক সম্পর্কই প্রেমের সার্থকতা। তাদের গভীর প্রেমের মধ্যেও হয়ে উঠে অঞ্জনার ভালবাসার সাথে নির্মলের দৈহিক সম্পর্ক।
নির্মল মোবাইলে নাম্বার টিপে। এই শোন আমরা কয়েক জন বেড়াতে যাব কক্সবাজারে - কবে - এই আগামী সপ্তাহের দিকে - কে কে - আমার কয়েক জন বন্ধুরা যাবে তাদের বৌ বাচ্ছা নিয়ে তাদের সাথে - তোমার কোন বন্ধুরা - তুমি চিনবা না। - চিনব না শুনতেওতো পারি - চিনবানা শুনে লাভ কি - তাহলে তুমিও তোমার বৌ নিয়া যাইবা - আমার বৌ ? হা হা আমার বৌ আছে নাকি যে বৌ নিয়ে যাব - বউয়ের কি অভাব একটা নিয়া যাও - তাহলে তুমিই চল - আমি কি বৌ নাকি ? - আরে বৌ না হতে কতক্ষণ - মানে ? - মানে, কোথাও গিয়ে আমি বললেইতো আমার বৌ - হুম সেই সাহস আছে ? কি কয় আছে মানে অনেক সাহস আছে অনেক - হুম একটু এদিক সেদিক ঘুরতে বললে যাও না দোকানের কাথা বলে - ঠিক আছে তাহলে তুমি চল - নিবা আমারে ? তুমি গেলেতো নিবই।
যাত্রাবাড়ি থেকে টিকেট কেটে অপেক্ষা করতে থাকে। অঞ্জনা এদিক সেদিক তাকায় কিন্তু নির্মল কারো সাথে কথা বলে না। - তোমার বন্ধুরা কৈ - তারা বলছে আগামী মাসে যাবে, আগামী মাসে আমি যেতে পারব না। এই কারণে আজকেই যাচ্ছি। - অঞ্জনারকাছে নিরিবিলি ঠিক দুজনের একটি সংসারের মতো লাগে। তার বুকে নব যৌবনের শিহরণ জাগে। জীবনের প্রথম কক্সবাজার যাচ্ছে। ভালবাসা উতলে পড়ছে। সিটে বসেই বুঝতে পারে একজন নারীর জীবনে পুরুষ কত মধুময়। পাশের লোকের কথা বলে বাড়ন করে অঞ্জনা । কিন্তু নির্মলের সাহসী হাত সে বাড়ন মানে না। সিংহের থাবার মতো খামছে ধরে অঞ্জনার স্তন । কিছুক্ষণ পর শরীর এলিয়ে দেয় অঞ্জনা । তার নিম্নাঙ্গের জামা ভিজে যায়। পুরুষের হাত পেয়ে প্রতি মুহূর্তে শিহরণ অনুভব করে। আজ তার অনেক চাওয়া সফল হতে চলেছে। স্বামী হিসাবে নির্মল খুব ভাল হবে। তার অন্য বান্ধবীদের চাইতে মধুময় সংসার হবে। অনেক শান্তি হবে। এমন ছেলেকে বিশ্বাস করা যায়। সে বার বার জানতে চায় আর কতক্ষণ লাগবে - সকাল হয়ে যাবে - সারা রাত লাগবে ? - হা সারা রাত - ঘুমাব না ? - হা ঘুমাও আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও। নির্মলের বুকে মাথা রেখে ঘুমের চেষ্টা করে। এই সেক্স পরিস্থিতে ঘুম আসে না। তবু কিছুক্ষণ পর পর হবু স্বামীর বুকে মাথা রেখে অর্ঘুম থেকে পরম সুখ অনুভব করে।
হোটেলে উঠে নাস্তা খাওয়া এমনকি হাত মুখ ধোয়ার সময়টুকুও পায় না অঞ্জনা । সারারাত ভ্রমনে শরীর ক্লান্তিতে নেতিয়ে পরা শরীরে চলে নির্মলের সম্ভোগ। অঞ্জনা আজ বৌ। স্বামীর কথার অবাধ্য সে হতে পারে না। পর পর কয়েক বার।
নির্মল ঘুম থেকে উঠে দুপুরে। তখনো অঞ্জনা স্বামী-স্ত্রীর জীবনের সুখের স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নে ছোট্ট একটি সুখের সংসার সাজায়। হাসি গান আনন্দে ভরপুর। আস্তেআস্তে ডাকে নির্মল - অঞ্জনা উঠ। কয়েক ডাকে ঘুম থেকে জেগেই শরীরে চাপ অনুভব করে। দেখে ঠিক সকালের মতো তার উপরে শায়িত নির্মল। না বলার সুযোগ নেই। ঘুমের মধ্যেই পাজামা খুখে তৈরী করেছিল। পাকা শিকারীর মতো দুহাতে ঝাপটে নিয়ে ছিল তার বুকের নীচে।
হোটেল স্বাধীন। নিরিবিলি স্থান । কোন ভয় নেই। সিংহের থাবায় বার বার লুণ্ঠিত হতে খুব বেগ পেতে হয় অঞ্জনার। কিন্তু প্রেমিক রূপি হবু স্বামীর মন জয় করে বিবাহিত স্ত্রীর মতো।
তারপর বীচে যায় ইচ্ছা মতো ঘুরে। তুলতে থাকে একের পর ছবি। ভিজা শরীরে ছবি তুলতে প্রথম আপত্তি জানালেও ছবি তোলাতে ভাললাগে। সমুদ্র স্নান সেরে ফিরে আসে রুমে।
এখন একমদম লজ্জা হীন দুজন দুজনকে আপন করে নিয়েছে। কেউ কাউকে লজ্জা পায় না। হেসে খেলে সারা রাত আনন্দ উপভোগ করতে থাকে দুজন। পরদিন। এই জামাটা একটু খোলতো - কেন ? এমনি খোল না - না - প্লিজ - না আমি দেখব - ইস্ সারা রাত দেখছ এখন আবার কি দেখবা ? - না না প্লিজ একটু খোল। একটু খোল - স্বামীর অধিকারে স্ত্রীর জামা খোলে - তখনো মেয়েলী স্বভাবসুলভ লজ্জায় একটু আঁকাবাকা হয় অঞ্জনা - কিন্তু স্বামীর কাজে বাঁধা দিয়ে রাখতে পারে না। মোবাইলে তোলে উলঙ্গ দেহের ছবি। বুক পেট এবং নিম্নাঙ্গের ছবি। ভিডিওতে ধারণ করে সঙ্গমের দৃশ্য। ভিডিওতে স্পষ্ট বুঝা যায় অঞ্জনার ছবি। আড়ালে থাকে নির্মল।
এই আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিওতো আগামী কাল। দোকানে বসে ফোন দেয় নির্মল - কেন ? - দোকানের মাল আনতে হবে - কখন লাগবে তোমার - এই সন্ধার দিকে দিলেই হবে - আচ্ছা।
কয়েকদিন এভাবে টাকা নেয় নির্মল। দোকানের কথা নিজের দরকারের কথা বলে। আরো দুএক জায়গায় ঘুরতে যায়। হতে থাকে ভিডিও। প্রথম দুএক দিন টাকা ফেরত দিলেও এখন আর টাকা ফেরত দোয় না। টাকা চাইলে নির্মল বলে - তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না ? - বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা নয়। বাড়িতে মায়ের অসুখ। ছোট ছোট ভাইবোনের লেখা পড়ার খরচ সবকিছু তো আমাকেই দিতে হয়। তাই চাইছি। খুব দরকার না হলে চাইতাম না। - আচ্ছা নিও। বলে বলেই দিন কাটাতে থাকে।
এখন মোবাইল ঠিকমত রিসিভ করে না নির্মল। মাঝে মাঝে রিসিভ করে শুধু ধমক দেওয়ার জন্য। - এই তোমাকে বারবার ফোন দিতে নিষেধ করেছি না, বারবার ফোন দেও কেন ? - বারবার ফোন দেই মানে। কেমন কথা বল, তোমাকে ফোন দিব না তো কাকে ফোন দিব ? - ফালতু প্যাচাল রাখ এই শেষ বাড়ের মতো নিষেধ করছি, তুমি আর ফোন দিবা না। আমি খুব ব্যস্ত আছি। প্রয়োজন হলে আমিই তোমাকে ফোন দিব। আর ওইযে দশ হাজার টাকা চাইছিলাম ঐ টাকাটা আগামী দুই দিনের মধ্যে যোগার কর - আমি বলছি না আমার হাতে এখন কোন টাকা নাই। বাড়িতে টাকা দিতে পারি না দুইমাস। ছোট ছোট ভাই বোন গুলো খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করছে। তোমার কাছে টাকা চাইলে রাগ করো। উল্টা আমার কাছে টাকা চাও আমি দিব কি ভাবে ? - বাজে কথা বন্ধ করো। - কি ব্যাপার এখন তুমি আমার সাথে এমন ব্যবাহার করছ কেন ? আমি কথা বললে বাজে প্যাচাল হয়ে যায়। ফোন দিতে নিষেধ কর। কান্নার সুর নির্মলের কানে যায়। - এই চুপকর। দুই দিনের মধ্যে টাকা চাই, না হলে তোমার আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না। ধমকের সাথে বলে লাইন কেটে দেয় নির্মল।
আজ সারাদিন মোবাইল বন্ধ। নির্মলকে টাকা দিতে তার খুব ইচ্ছা। কিন্তু এই অভাবের মধ্যে তা কোন ভাবেই সম্ভব না। নির্মলকে অনেক টাকা দিয়েছে। তার পরও নির্মল যত দূরদূর করে অঞ্জনা তত নত হয়। মোবাইলে না পেলে দোকানের গলি দিয়ে আসা যাওয়ার সময় তাকিয়ে চোখের জল ঝড়ায়। নির্মলের মন গলে না। কিছুতেই আগের মতো হয় না। এখন আগের নির্মল আর নেই। অনেক চেষ্টা করেও নির্মলকে দশহাজার টাকা দিতে পারে না। বাড়ির ফোনে শোনে উপোসের কথা। মায়ের অসুখের কথা।
দিন রাত চোখের পানি ঝড়ে। বুকের ভিতর আগুনের মতো ধাউ ধাউ করে জ্বলে উঠে। না খাওয়া অর্ঘুমায় শরীর শুকিয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও নির্মলের সাক্ষাত পায় না অঞ্জনা। এতদিন নির্দ্দিষ্ট তারিখে মাসিক হলেও এবার তা হয়নি। তারিখ চলে গেছে আরো কয়েকদিন আগে। তার শারীরের অনুভূতিও অন্যরকম। কারো কাছে সরাসরি বলতেও পারে না। এক সময় ঠিক বুঝতে পারে তার শরীরের পরিবর্তন।
মরিয়া হয়ে যায় দোকানে। এই কথাটা তাকে বলা খুব জরুরী - এই মাগী তরে না কইছি আমার সাথে যোগাযোগ করবি না। আমার দোকানে আসবি না। যা শুয়ারের বাচ্চা ভাগ। কোন কথা বলার সুযোগ পায় না অঞ্জনা । সাঙ্গপাঙ্গরা তাড়িয়ে দেয়। ভালো মানুষেরা কোন কথা বলার সাহস পায় না। অঞ্জনার চোখের পানি ঝড়ে। পাশের দোকানদাররা নির্মলের চরিত্র আগে জানলেও অঞ্জনা বুঝে অনেক পরে। তার মোবাইল নষ্ট হয়নি। তা ছিল বাহানা। মেয়ে মানুষ কব্জা করার একটা কৌসল। সে আরো জানে অনেক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক। সেট নষ্টের বাহানায় অনেক মেয়ের সরলতার সুয়োগ নিয়ে ধ্বংশ করেছে সহজ সরল মেয়ের জীবন। এখন সে খুব ভাল করে বুঝতে পারছে। কিন্তু ততক্ষণে অঞ্জনার অনেক দেরী হয়ে গেছে।
চোখে মুখে কোন পথ দেখে না। কি করবে তাও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ নেই। মা ছোটছোট ভাই বোন কে এই মুখ দেখাবে কি করে। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ভাই-বোনের শুকনো মুখ। মায়ের চোখ তারদিকে তাকিয়ে থাকে। অভাবী মুখ গুলো মৃত্যুর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
স্কুল কলেজের ছাত্ররা। উঠতি বয়সি ছেলেরা। গার্মেন্টসএর ছেলেরা দোকানে গান লোড করার জন্য লাইন লেগে থাকে। গানের সাথে সাথে ভিডিও। আজ গার্মেন্টেসএর ছেলেদের চোখ মোবাইল স্কিনে আটকে গেছে। সবাই কানাকানি করে। আড়চোখে তাকায়। অঞ্জনা ভাবে তার সুন্দর স্বাস্থবান শরীরটা শুকিয়ে গেছে, তাই হয়তো সাবই তাকিয়ে থাকে।
কয়েকটি ছেলে তার সাথে কথা আছে বলে মোবাইল নাম্বার চায়। বলে আপা রাতে ফোন দিব রিসিভ করবেন কিন্তু, আপনার সাথে আমার অনকে কথা আছে।
তার পাশের টেবিলে কাজ করে একটি ছেলে। সে বলে - আপা আপনার মোবাইলটা একটু দেনতো - কেন ? - এক জায়গায় ফোন করব। আমার মোবাইলে টাকা শেষ। একটু পর মোবাইল ফেরত দিয়ে বলে - আপা আপনার মোবাইলে একটা গান দিছি। রাতে গানটি দেইখেন। আর আপনার নাম্বারটা নিয়েছি। রাতে ফোন দিব রিসিভ কইরেন।
জীবন মরনের প্রশ্ন। গান শোনার সময় নাই। রাতে একের পর এক ফোন আসে। রিং বাজলেই ভাবে নির্মল। নাহ্ যাদের ফোন আসে তাদেরকে সে চিনে না। কেউকেউ তার সাথে চাকুরী করে। অন্য গুলি বাহিরের ফোন। সবাই বিশ্রী বিশ্রী বথা বলে। কেউ কেউ সরা সরি সেক্সকরার কথা বলে। বিরক্ত হয়ে কেটে দেয়। এবার রিসিভ করে শোনে - আপা গানটি দেখেছেন ? - কোন গান ঐ যে আমি আপনার মোবাইলে দিয়েছি। বলছিলাম না শুনতে। এখনো শোনেন নাই। আচ্ছা এখন শোনেন। শুইনা আমার এই নাম্বারে একটা মিছ কল দিয়েন। আর একটা কথা আমি কিন্তু আপনারে একদিনের জন্য চাই। লাইটি কেটে দিয়ে গান খোঁজে অঞ্জনা । কি সেই গান।
চোখের পানি মুছতে মুছতে কষ্টের সাগরে ভাসতে ভাসতে মনেমনে বলে। এই জন্যইতো সবাই তাকিয়ে থাকে। মোবাইলে এমন বিশ্রী বিশ্রী কথা বলে। কু-প্রস্তাব দেয়। অঞ্জনা দেখে তার বুক, তার পেট তার মুখ । ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায় সহজ সরল অঞ্জনা . . . . .
সকালে সূর্য উঠলে মানুষকে মুখ দেখাবে কি ভাবে। এই দূর্ঘটনা সামাল দিবে কি ভাবে। শরীরের এই অবস্থা । সহজ সরল অঞ্জনার পেটে তার প্রেমিকের . . . . নাহ্ আর ভাবতে পারে না অঞ্জনা ।
রাতের ঘন অন্ধকারে মিলিয়ে যায় অঞ্জনা । তারপর আর সকাল হয়নি অঞ্জনার।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ
একটি মেয়ের সরলতা এবং অতি কদর্য একজন মানুষের কাহিনী । ভালো লাগলো । তো আমদের সমাজকেও একটু পরিপক্ক হতে হবে যেন একটা ভিডিও বা ছবি প্রকাশিত হলেই যেন মনে না করে ওই ভুক্তভোগীর ব্যক্তিজীবন ব্যাহত করার অধিকার তাদের আছে । শুভ কামনা ।
জিয়াউল হক
তারপর আর সকাল হয়নি অঞ্জনার। আমরা চাই অঞ্জনার ও ভোর হোক । ব্যক্তি অঞ্জনা নিস্পাপ, সারল্য আর সহজতায় মাখা নিস্পাপ একটি মুখ । সমাজ কে যারা কলুষিত করে তাদের শাস্তি হোক , নির্বাসনে যাক তারা ......অঞ্জনা রা নয় । সুন্দর লিখেছেন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।