উত্তর আফ্রিকার বালির সাগর ঠেলে ইবনে বতুতার অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল। হলফ করে বলা যায়, এই অভিযাত্রা হাল যামানার কোন আনন্দ ভ্রমন ছিল না। স্রেফ এক জ্ঞানের অভিযাত্রা। ইবনে বতুতারা সভ্যতার পবিত্র ধূলি সারা গায় বহন করেন, এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতায় পৌঁছে দেন। অভিযাত্রিকদের এই সব ধূলিময় পদযাত্রা বিশ্বজ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে সন্দেহ নেই।
একুশ শতকের পৃথিবী এক ঝলমলে দুনিয়া, করপোরেট দুনিয়া। বিশ্বজ্ঞানের প্রকৃত রূপটা আজ ঢাকা পড়তে বসেছে এই করপোরেট জগতের প্রহেলিকায়। নতুন সহস্রকের নতুন পৃথিবীর ঘাড় থেকে সিন্দবাদের এই নব্য করপোরেট ভুতটা নামানো দরকার। দরকার আলেয়া-প্রলুব্দ্ধ পৃথিবীকে কক্ষচূত করা। আমাদের চিরচেনা দুনিয়াটা দিনদিন কেমন যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছে। তাই সমস্ত পৃথিবীকে নতুন করে আবিষ্কার করা প্রয়োজন। প্রয়োজন ইবনে বতুতা, মার্কো পোলো, হিউয়েন সাং, ফাহিয়েন ও ডেভিড লিভিং স্টনদের নিরলস পদযাত্রার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিডিং ক্লাব পরিবার এই মহৎ কর্মের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে মাত্র। এই ধারাবাহিকতা, এই পবিত্র তীর্থ যাত্রার নাম ‘নলেজ ওয়াক’।
পৃথিবীতে অসংখ্যা বেয়াড়া শক্তি এলোমেলো ঘুরে বেড়ায়। এই বন্য শক্তিকে লাগাম পরাতে পারলে মানুষের উপকারে আসে, সভ্যতার চাকা গতিশীল হয়। মানুষের মাঝেও অদম্য কর্ম শক্তি আছে। সেই অপ্রতিরোধ্য শক্তিকে পোষ মানিয়ে রিডিং ক্লাব আমাদের নিয়ে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, জ্ঞানের অভিযাত্রায়, নলেজ ওয়াকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও যাওয়া হয়েছে অনেক বার। তবে এ যাওয়া সে যাওয়া নয়। এতে ভিন্ন মাত্রা আছে, আছে অবর্ণনীয় তৃপ্তিবোধ। সুবাদার ইসলাম খাঁ, রাজা হরিষ চন্দ্র, পরিযায়ী পাখি, সেলিম আল দীন প্রভৃতিকে একেবারি আনকোরা আাবিষ্কার করতে হয়েছে এ যাত্রায়। ইবনে বতুতার উত্তরসূরীরা তাদেরকে অন্ধকারের মাটি খুঁড়ে বের করে এনেছে এই আধুনিক যুগে।
ক্যাম্পাস জীবনে শিক্ষা সফরে যায়নি এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম বলা চলে। কিন্তু এসব শিক্ষা সফরে শিক্ষা দীক্ষার চেয়ে বিনোদনই বেশি হয়ে থাকে। তাই হাল-জামানার শিক্ষা সফরকে 'বিনোদন-সফর' বলাই ভাল। রিডিং ক্লাব আয়োজিত শিক্ষা সফর সে রকম কিছু ছিল না। এখানে সেলফি তোলা কিংবা ক্লিকবাজীর কোন সুযোগ নেই। প্রত্যেক সফর সংগীকে একেক জন ক্ষুদে বুদ্ধিজীবি কিংবা ক্ষুদে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে হয়ে ছিল। যেমন, আমার উপর দায়িত্ব বর্তে ছিল পরিজায়ী পাখি নিয়েমানসম্মত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় পরিজায়ী পাখি কেন আসে, হাজার হাজার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে তারা কেন পথ হারায় না, এর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি, জলবায়ু পরিবর্তনে পরিজায়ী পাখিদের উপর কি প্রভাব পড়ছে, এসব প্রশ্নের বিজ্ঞান সম্মত উত্তর চাওয়া হয়ে ছিল আমার প্রবন্ধে। শিক্ষা সফরের এক সপ্তাহ আগে থেকে আমাকে এ নিয়ে পড়াশুনা করতে বলা হয়েছিল। কি বই পড়তে হবে, নেটে জগতের কোন কোন সাইট ঘাটতে হবে, তা বলে দেয়া হয়েছিল আগে থেকে। জাহাঙ্গীরনগর কিভাবে জাহাঙ্গীরনগর হয়ে উঠল, সেই রাজনৈতিক ইতিহাস উপস্থাপনের দায়িত্ব ছিল আরেক জনের উপর। এভাবে সুবাদার ইসলাম খাঁ ও রাজা হরিষ চন্দ্রের ইতিহাস যে জীবন্ত হয়ে উঠছিল ক্ষুদে বিশেষজ্ঞদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মনে এলে 'গ্রাম থিয়েটারে'র প্রবক্তা নাট্যকার সেলিম আল দীনের নামও অজান্তে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। সেলিম আল দীনের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনের দায়িত্ব ছিল আরেক সাহিত্যানুরাগীর। এভাবে আমাদের শিক্ষা সফরটি সত্যিকারের শিক্ষা সফর হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন স্পট হেটে হেটে ভ্রমণ করা হয়েছিল বলে আমাদের শিক্ষা সফরের নাম রাখা হয়েছিল 'নলেজ ওয়াক'। প্রবন্ধ উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। হলরুম কিংবা জমকালো কোন অডিটোরিয়ামে প্রবন্ধ উপস্থাপনের আয়োজন করা হয়নি। প্রাসঙ্গিক স্পটে ঘুরে ঘুরে প্রবন্ধ পাঠ করা হয়েছিল। যেমন, যে জলাশয়ে সবচে বেশি পরিযায়ী পাখির আনাগোনা, সে জলাশয়ের পাশে পরিযায়ী পাখি নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করতে হয়েছিল আমাকে। এভাবে সুবেদার ইসলাম খাঁ, রাজা হরিষ চন্দ্র ও সেলিম আল দীনের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ক্ষুদে প্রবন্ধকাররা প্রবন্ধ পাঠ করে শিক্ষা সফরের নতুন এক মডেল উপস্থাপন করেছেন।
নলেজ ওয়াক মানে হল নিশ্চুপ প্রকৃতির কাছে যাওয়া। আর প্রকৃতি হল এক বিস্তর পাঠাগার। এর প্রতিটি পাতায় পাতায় জ্ঞানের সমাহার। বোবা প্রকৃতির নানাবিধ ভাষা আছে, এই ভাষা যত রপ্ত করা যাবে তত বাস্তব জ্ঞান অর্জিত হবে, মানুষ ও প্রকৃতির মিথস্ক্রিয়ার মাত্রা বেড়ে যাবে। ম্যূক প্রকৃতির একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য হল- নিরবে কাজ করে যাওয়া। প্রতিদানের মাধ্যম ও প্রতিবাদের একমাত্র ভাষা- নিরলস কর্ম, নিশ্চুপ কর্ম। একটা আমগাছ সম্পর্কে যতই ভালো-মন্দ বলা হোক না কেন আম গাছ এর দাঁত ভাঙা জবাব দেয় মিষ্টি আম উপহার দিয়ে- অন্য কোন ভাবে নয়। এবারের নলেজ ওয়াকে নিরব প্রকৃতির কাছ থেকে হয়ত এটাই আমাদের প্রধান শিক্ষা।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এটা স্রেফ একটা ভ্রমণ কাহিনী। ছোটখাট একটা ট্রাভেলগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিডিং ক্লাব আয়োজিত শিক্ষা সফরের বর্ণনা।
০৪ আগষ্ট - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪