১।
- ''শুয়োরের বাইচ্চা! তোর এক মাস ধইরে কচ্ছি! বউ তোর। শাসন কিডা করবে? তুই করবিনে? ওই খানকির বাচ্চা এই কুকাম করার জন্যিই আমার বউডা তাড়াই দিয়েচে। বিদেশ থেইকে ১৮ লাখ টাকা দিচি । এক টাকারও খবর নেই! আমার শুতি দেয় রান্না ঘরে! আর ওই খানকির বাচ্চারা ঘুমোয় ছাদের ঘরে! একন বুজতি পাচ্চি, লটরপটর করার জন্যিই আমার ঘরে শুতি দেয়না!''
- মুক সাইমলে কতা কবি রাছেল!
- কিসির মুক সামলাবো। আমার বাপ তো আধ-পাগল! কত লোক সাক্কী দেচ্চে দেকচিস নে?
- যারা দেইকেচে তারা ধরিনি ক্যান?
- মেম্বার তোর খাটে শুয়েছিল ক্যান? এই ভোরবেলায় তোর কাচে কী কাজ মেম্বারের?
পাশ থেকে একজন বলে উঠল, আমি দেকিচি বেশ কয়েকদিন। তোর মার সাথে মেম্বারের শুয়ে থাকা অবস্থায়! লজ্জায় কিচু কোতি পারিনি। আরেকজন বলে উঠল, এই ঘটনা আইজ থেইকে ঘটায়না উরা! বহু আগে থেইকে ঘটাচ্চে। তোর আব্বা মাজে মাজে রাতির বেলা চোর চোর কোয়ে কেকায়ে ওটে, জানিস? ওই চোর অইন্য কেউনা। ছ্যাঁচড়া মেম্বার!
রাছেলের সমস্ত শিরা ফুলে উঠেছে! লজ্জায় আর অপমানে মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা! এইবার খেঁকিয়ে উঠলো সে, এতদিন তালি কেউ কিছু কইস নি কেন? আমি তো মাস খানিক আগেত্তে বুজদি পারিচি।
উপস্থিত লোকদের মাঝে একজন বলে উঠলো, কিভাবে কবে? মেম্বার মানুষ! ওগের পিচনে লাগা কি এতো সুজা!
শোরগোলের মাঝেই এসে হাজির হল, চেয়ারম্যানের ডান হাত। এসেই বলল, কি হচ্চে এই জাগায়? একদম চুপ! সবাই একদম চুপ! রাছেল! তুই এতো কেকাচ্চিশ ক্যান? মেম্বারের একটা মান-সনমান আছেনা? যা হয়েচে, চেইপে যা।
২।
কানাকানি চলছিলো যে, রাছেলের মা তার বাবাকে ফুঁসলিয়ে সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে করে নিবে। রাছেলকে একটুকরো জমিও দিবেনা। সারাদিন যাওয়ার পর রাতের বেলা হঠাত করেই হইচই শুরু হল। রাছেলের মা রাছেলের বাবাকে নিয়ে বাপের বাড়ি পালিয়ে গেছে। আশেপাশের লোকজন ছুটে এলো। সারারাত ধরে চললো এই কথা, সেই কথা।
পরের দিন বিচার বসলো। সাবেক মেম্বার চায়ের দোকানে বসে লুডু খেলে। আর রাছেলের টাকা পয়সা নিয়ে বিচার চলে গ্রামে। হইহুল্লোড় আর উত্তেজনার মাঝে কোনও রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বিচার। কারণ, রাছেলের মা-বাবাকে ধরে নিয়ে আসলেও কোন এক অজুহাতে চোখের আড়াল হয়েই আবার পালিয়েছে! বিচার বাদ দিয়ে তাদের খোঁজা শুরু হল। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না!
৩।
কয়েকমাস পরের কথা। রাছেল তার পাওনা বাবদ বাবার কাছ থেকে ভিটে-বাড়ি বুঝে পেয়েছে। তার মা-ও বাড়ি ফিরে এসেছে। যেন কিছুই হয়নি! সবকিছুই স্বাভাবিক।
সেদিন রাত তিনটা। একটা ছায়ামুর্তি এসে উঠলো রাছেলদের বাড়ির বারান্দায়। এদিক-ওদিক তাকিয়ে নেমে হেঁটে চললো পরিত্যাক্ত ঘরের দিকে। তার পিছু পিছু নেমে এলো আরেকটা ছায়ামূর্তি। পরিত্যাক্ত ঘরটায় গিয়ে দরজা ভেজিয়ে দিলো অতি সন্তর্পনে।
হঠাত করেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো রাছেলের। কিছুতেই ঘুম আসছেনা। ঠিক তখনই কিছু একটা পড়ার শব্দ কানে এলো। কান খাড়া করে শব্দের উৎস নির্ণয়ের চেষ্টা করতে লাগলো রাছেল। কোন চোর-ছ্যাঁচড় এলো নাতো আবার? নিঃশব্দে এগিয়ে চলল শব্দের উৎসের দিকে। জানালার ফেটে যাওয়া কাঠের ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলো দুটি দেহ একসাথে জড়িয়ে আছে। মুহুর্তেই থমকে গেলো রাছেল। বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেউ যেন হাতুড়িপেটা করছে! নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে যাচ্ছে!
দ্রুতই ওপাশ ঘুরে জানালা দিয়ে দেখল তার বাবার পাশে মা নেই! দরদর করে ঘামছে রাছেল। মনে হচ্ছে, তার পায়ের তলায় মাটি নেই! অসীম শূন্যতায় সে ভেসে বেড়াচ্ছে! কী করবে এখন সে? ধরিয়ে দেবে? চীৎকার করে উঠবে? সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। যা ভাবার দ্রুত ভাবতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। রাছেল আস্তে করে ঘরের ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো। পাশের বাড়ির কয়েকজনকে মোবাইল করে দ্রুত আসতে বলল। সব ঘটনা খুলে বলল তাদের।
ভোর হল। ফজরের নামাজ শেষে লোক জমতে লাগলো রাছেলের বাড়ি। এখনই এর বিচার হবে। কিন্তু রাছেল কই? রাছেল কোথায়? রাছেলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলোনা!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
মা! কত নিষ্পাপ একটা শব্দ! কিন্তু সেই মা যদি সন্তানের শত্রু হয়ে যায়, পরিবারের সম্মান নষ্ট করার খেলায় মেতে ওঠে তখন সন্তানের জন্য দুনিয়া জাহান্নামে রূপ নেয়। সব কিছু অর্থহীন হয়ে যায়, নিজেকে অপরাধী ভাবতে শেখায়, বিশাল এক শূন্যতা বিরাজ করে সেই সন্তানের মাঝে। সবকিছুই থাকে, তবু কিছুই থাকে না- কিছুই নেই। চারিদিকে শুধু বিশাল এক শূন্যতা থেকে যায়!
২৩ জুন - ২০১২
গল্প/কবিতা:
২৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।