মা’র শাড়ী

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

বিদিতা রানি
  • ৩৫
  • ৫৬
যে ছবিদুটো দেয়ালে টাঙ্গানো আছে তার একটি বাবার। বিদেশে থাকার সময়কার। বাকী ছবিটা মা’র বিয়ের সময়ের। বাবার পাশে লাল শাড়ী পড়া। সেই শাড়ীটি এখনো মা স্মৃতি হিসেবে আগলে রেখেছেন পরম যত্নে।

বাবাকে দেখেনি তাই মাকে নিয়েই আমার শৈশব কৈশোর। এখন পর্যন্ত মা’ই সব। বাবার ছবি দেখে বাবাকে অনুভব করি কল্পনায়। মায়ের কাছে বাবা মা দুজনের ছোঁয়া পাই বাস্তবে। বাবা খুন হওয়ার পর। মা যখন রঙ্গিন শাড়ীর আঁচলে চোখ মোছেন তখন, দাদীর মুখে ছিল গালী। হাতে ছিল একটি পুরোনো সাদা কাপড়। মায়ের মুখের উপর ছুড়ে দিয়ে বলে, আমার ছেলেরে তো খাইলি রাক্ষসী। এখন রাক্ষসীর কাপড় পর। এই কাপড় যেন তোর মরনের কাপড় হয়।

নাক কান খালি হয়। কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে উঠে বালা। রঙিন শাড়ী হয় সাদা কাপড়। মার কান্নায় গলেনি কারো মন। কেউ অনুভব করেনি স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর দুনিয়াতে আর কিছুই থাকে না। তাকে শান্তনা দেওয়া কতটা প্রয়োজন। কিন্তু মা আমার কথা ভেবে সব মুখবুজে সহ্য করেন। কারো কথার প্রতি উত্তর না করে।

আমাকে বাঁচানোর জন্য মা ঐ বাড়ি থেকে পলিয়ে আসেন। আসার সময় চাদরের নীচে ছিলাম আমি দুটি ছবি আর ছিল একটি শাড়ী। আমি দুনিয়ার আলো তখনো দেখিনি। এ ছাড়া মা আর কিছুই আনেন নি। ধরা পড়ার ভয়ে। মা বুঝতে পেরেছিলেন পালিয়ে আসার সময় ধরা পড়লে সাথে সাথেই তার প্রাণ যাবে। তার পেটের সন্তানটিও কোন দিন দুনিয়ার মুখ দেখতে পারবে না।

জমি গয়না আর নগত টাকা হস্তগত করার জন্য। তার দেবর ভাসুররা যে কত হিংস্র মা’র তা জানার বাকী নাই। মানুষের সামনে তারা প্রসংসা করে বলে সে তো খুব ভালো মানুষ। এ বাড়িতে তার কোন অসুবিধা হবে না। তাদের মুখে লোক দেখানো ভালো ভালো কথা। একমার পেটের ভাইকে তারা খুন করছে। আশপাশের সবাই এখন আসল ঘটনা জানে। দাদুর কানে এ সংবাদ এলেও তিনি বিশ্বাস করেন না। উল্টো মা‘কে বলে তোর জন্যই আমার ছেলের মরা মুখ দেখতে হল। নিজের ভাইকে যারা খুন করে, তারা অন্য মানুষকে কিনা করতে পারে। শুধু একটু সময়ের ব্যাপার মাত্র। হয়তো তাদের প্লান অনুযায়ী কাজটি করতে একটু সময় লাগছে। তরকারী বদলে আলু ভর্তা আর লবন দিয়ে বলে এর বাইরে আর কিছু খাবি না। তোর কপালে অন্য আর জুটবে না। দাদু মাকে গালীগালাজ করলেও খাওয়ায় কষ্ট দিলেও প্রাণে মারতে চান না। তিনি চান তার ছেলের বংশধর। বাবা খুন হওয়ার পর, মা এই কয়দিন থেকেছেন খুব সাবধানে। মা তাই আর কালক্ষেপন না করে দাদুর সাথে ভালো ব্যবাহার করে বুঝিয়ে ডাঃএর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। বাড়ির সিমানা ছাড়িয়ে এসে মৃত্যু কূপ থেকে মা দু’টি প্রাণ বাঁচান।

নানুর বাড়িতে এসে মা অনুভব করলেন এ পালিয়ে আসা নয়। নতুন জীবন ফিরে পাওয়া। কাঠের ফ্রেমে কাঁচ দিয়ে বাঁধানো ছবি দুটো মার শোয়ার ঘরে টাঙিয়ে দেন। শাড়ী রেখেদেন ওয়্যারড্রপে। তার পর একদিন আমি দুনিয়াতে আসি। মা’র মুখে হাসি ফোটে। সব কষ্ট ভুলে যান। নানুর বাড়িতে কোন অভাব নেই। আমার ভবিষ্যত গড়তে মা কষ্ট করতে থাকেন। নানু মাকে বলেন মা তোমার চাকরির কি প্রয়োজন আমারতো আর অভাব নেই। আমার অবর্তমানে আমার সম্পত্তিতে তোমাদের কোন দিন অভাব পড়বে না। নানুর বাড়ন সত্ত্বেও মা চাকুরী করেন ।

শাড়ীটিকে এখনো মা অনেক যত্ন করেন। যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখেন। মার অনেক কাপড়। কাপড় পড়েই অফিস করেন। সবুজ কালো নীল হলুদ খয়েরী সব রঙের কাপড় আছে। কিš‘ লাল শাড়ী আর একটিও নেই। দাদুর ছুড়ে দেওয়া সাদা কাপড় আমি কোন দিন মাকে পড়তে দেখিনি।

সযত্নে রেখে দেওয়া শাড়ীটি মা মাঝে মাঝে বের করেন। হাত বুলিয়ে কাঁদেন। আমি বলি, মা এই শাড়ীটি ধরে যদি তুমি কাঁদো, তাহলে এই শাড়ীটা তুমি আর কোন দিন বার করবা না। মা প্রতিবার একি উত্তর দেন। এই শাড়ীটি স্মৃতি। জীবনের অংশ। তোমার বাবার স্মৃতি। এটি শুধু আমার পড়নের কাপড় নয়। তার চাইতেও অনেক বেশী কিছু। জীবনে অনেক কাপড় পড়েছি। বেঁচে থাকলে আরো পড়ব। কিন্তু এই শাড়ীরমতো আর কোন শাড়ী হয়নি, হবেনা কোনদিন। একজন মানুষের জীবনে এই শাড়ীটি একবারই আসে। প্রথম আর শেষ বারের মতো। আমার জীবনেও এই শাড়ীটি প্রথম আর শেষ বারের মতো এসেছে। কথা গুলো বলার সময় মার চোখে টলটল করে পানি। আমার মনের কষ্টগুলো বেশী করে মোচড়াতে থাকে।

আমি ততটা বুঝি না, যতটা মা বুঝেন। আমি ততটা ভাবী না, যতটা মা ভাবেন। ততটা অনুভব আমি করি না, যতটা মা করেন। অন্য ছেলে মেয়েরা যখন বাবার কোলে উঠত তখন আমি মা’র কোলে উঠেছি। কারো বাবার সাথে যখন কেউ বায়না ধরত, তখন আমি মাকে জড়িয়ে ধরেছি। মা’র আঁচল ধরে পিছু পিছু ঘুরেছি। মা বাবার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই আমার কাছে। কারণ, মা বাবার আদর স্নেহ দুই পেয়েছি মা’র কাছে।

আজ মা আমাকে শাড়ীটি পড়তে দিয়েছেন। আমি কাপড় পড়ি না, পড়তে পাড়ি না। মা তা জানেন। নিজ হাতে আমাকে শাড়ীটি পড়িয়ে দিয়ে অনেক ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মার বুকে অনেক কষ্ট চেপে রেখে, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলেন। লাল শাড়ীতে আমার মায়ের মতো সুন্দর লাগছে। চোখে টলমল করা জল নিয়ে মা বলেন পাগলী মেয়েটার জন্য আমি কিছুই করতে পারি নি। তোমার বাবা বেঁচে থাকলে তোমার জন্য অনেক কিছুই করতেন। যা আমি মা হয়ে করতে পারিনি। জীবনে সুখি হও। মাকে জড়িয়ে ধরে আমি কেঁদেফেলি। মাও তখন আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি। চোখের জলে ভিজে মা’র শাড়ীর আঁচল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী গল্পের বুনন সুন্দর। কাহিনীও নতুন। ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
Azaha Sultan অনেক সুন্দর গল্প....বাস্তবতার ছবি দেখলাম....
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ওবাইদুল হক চোখের জলে ভিজে মা’র শাড়ীর আঁচল। আসলে মা সন্তানের জন্য এক অনন্য ভূমিকা । যা পৃথিবীর কোন কিছুই মায়ের মত আপন হয়না । অসাধারণ ভাবনা শুভকামনা রইল । আর গোপনটা রেখে গেলাম ।
আশিক বিন রহিম conotkar golpo, joy hok apnar kolomer
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জহির চোখের জলে ভিজে মার শাড়ীর আচল- ভালো লাগলো
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
তানি হক হৃদয় ছোয়া কাহিনী.. অনেক আবেগ আর কষ্টের মিশেল ...খুব ভালো লাগলো ..শুভকামনা বন্ধুর জন্য
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২
প্রিয়ম দারুন দারুন দারুন ......................................|
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২
নিলাঞ্জনা নীল অনেক মমতা আর ভালবাসা মাখা অনুভুতির প্রকাশ...
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মোহসিনা বেগম অনেক সুন্দর গল্প আপু ।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মাসরুর মুস্তাফি আস্ত একটা বেদনার্ত গ্রাম তুলে এনেছেন এ গল্পে। i'm smashed with what u drawn up...চোখের পানি আটকাবে কে ? অসাধারন একটি গল্প। অন্তক্ষরা সমীহ রইলো।
ভালো লাগেনি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

০৮ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪