ছবিতে আমার বাবা

বাবা (জুন ২০১২)

বিদিতা রানি
  • ৩৮
  • ৯৬
আমার জন্মের পর বাবাকে দেখিনি। মা’র আদরে শাসনেই বড় হয়েছি। মা দাদুর বাড়িতে মাত্র এক বছর ছিলেন। পদে পদে অপমান সইতে হয়েছে বাড়ির লোকের কাছে, এমন কি প্রতিবেশীদের কাছেও। মা প্রায়ই বলতেন, তোমরা কেন এমন কর তা আমি জানি। তোমরা অর্ধেক জমি নিয়ে যাও চাষবাস কর খাও আমি কোন দিন দাবী করব না। তবু আমার মান সম্মান নষ্ট করনা।

বাবার মৃত্যু সংবাদ দাদীর কানে পৌঁছাতেই না না ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। তার ছেলের জন্য যতটুকু কান্না তার চেয়ে বেশী অকথ্য ভাষায় গালী শুনতে হয়েছে মা'কে। চাচা চাচীদের অত্যাচারে মা বুজতে পারেন এখানে আর থাকা যাবে না। এখানে থাকলে আমি বাঁচতে পারব না। আমি পৃথিবীতে না থাকলেই ওদের জন্য ভালো। তাদের আশা পূর্ণ হবে। আমাকে মেরে ফেলতে পারলেই আমার আনাগত সন্তান পৃথিবীর আলোর মুখ দেখবে না। সব সম্পত্তি ওদের হয়ে যাবে। প্রতিবেশীদের দিয়েও বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করতে শুরু করে।

মা একদিন দাদীকে বলল মা আমি বাবার বাড়িতে চলে যাব। এখানে আমাকে দেখবে কে। অমনি দাদী মাকে গালাগালী শুরু করল। কি আমরা তোকে দেখি না। আমার এতো গুলো নাতী নাতনী ওরা কি না খেয়ে বড় হয়েছে। আমি কি কোলে নেইনি। এমনি এমনি বড় হয়েছে। তুই এক পা বাড়ির বাহিরে দিবি তো পা ভেঙ্গে ফেলব। তোর পেটে যে আছে ওটা তোর কেউ না। আমার পুতের বংশের বাত্তি। ঠিক ঠিক মতো জন্ম দিয়ে তার পর এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি। আর কোন দিন এদিকে পা রাখবি না। পোলাপান পেটে নিয়াতো আমার ছেলেরে খাইলি। ছেলেটা সন্তানের মুখ দেখল না, পেটের সন্তান ও তার বাবার মুখ দেখল না। ডাইনি। বাবার বাড়ি যাইব।

মা বুঝতে পারলেন শাশুড়ী তার বংশের প্রদীপ চান। আমাকে দেখেতে পারেন না। দেবর ভাসুররা চান না আমার সন্তান পৃথিবীতে আসুক তাই আমাকেই পৃথিবী থেকে বিদাই করে দিতে চান। তাদের ফন্দি ফিকির কম হয় না। অন্য বাড়িতে গিয়ে মিটিং করে গভীর রাত পর্যন্ত। এ কয়েক দিনে তাদের নমুনা কানা ঘোষা আঁচ করতে পেরে একদিন ডাঃ এর কথা বলে পালিয়ে এসেছেন নানুর বাড়িতে। নানুর বাড়িতে এসে যেন নতুন প্রাণ পেলেন। তার অনাগত সন্তান ও বেঁচে গেল।

দাদী আর চাচারা যখন জানল তখন চাচারা দাদীকে নিয়ে এসেছিল মাকে নিয়ে যেতে। নানু মা’র কাছে অনেক কথা শুনেছেন। সবি জানেন। নানু বলেলন। বেয়াইন আপনার নাতী নাতনী যাইহোক সে তো আপনাদের, আমার কোন দাবী নাই। জন্মের পরই নিয়ে যাইয়েন। এই মুহূর্তে আমার মেয়েকে আমি যেতে দিব না। তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।

মা নানুর হাত ধরে বলেছিলেন। বাবা আমি যদি মারা যাই আমার সন্তানকে ও বাড়িতে দিও না। ওরা আমার সন্তানকে মেরে ফেলবে। নানু মা’র মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতেই দুজন মহিলা এসে মা’কে ট্রলিতে করে ওটিতে নিয়ে যায়। আমি পৃথিবীর আলো দেখি। মা’ও বেঁচে যান।

নানুর বাড়িতে আমাদের কোন অভাব নেই। তার পরও মা চাকুরি করেন আমার সুখের জন্য। আজ আমি বড় হয়েছি বাবাকে দেখিনি, আমার জন্মের তিন মাস আগে আমার বাবা মারা যান। মা’র কাছ থেকে অনেক কথা শুনেছি। মা’র বিয়ের সময় থেকে আমার জন্মের সময় পর্যন্ত অনেক দুঃখের কথা। বাবার কথা প্রায়ই শুনি। দাদুর বাড়িতে মা মাত্র এক বছর ছিলেন। সেখানে তার সুখের তেমন কোন স্মৃতি নেই। মা’র জীবনের সব দুঃখ কষ্ট আমাকে পেয়ে ভুলে গেছেন। আমাকে নিয়েই মা’র সুখের সংসার। মাই বাবার আদর ভালবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছেন। বাবার কোন স্মৃতি আমার জানা নেই। শুধু ছবি দেখি। ছবি নিয়েই বাবাকে স্মরণ করি, অনুভব করি অন্যদের বাবাকে দেখে। আমার বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে কোলে নিতেন আদর করতেন। বাবার হাত ধরে একটু একটু করে আমি হাটতে শিখতাম। বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। অনেক বায়না ধরতাম, বাবা আমাকে আদরে আদরে কোলে তুলে নিয়ে সব আবদার পূরণ করে দিতেন। মা আমি বাবা তিন জনের সুখের সংসার। বাবার কথা ভাবতেই আমার চোখে জল আসে, আজ যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতেন।

দাদুর বাড়ির পাশের এক জন সম্পর্কে আমার দাদু হন। সে একদিন নানুর বাড়িতে এসে নানুর সাথে সাক্ষাত করে আমার বাবার সম্পর্কে অনেক কথা বলে যান। ড্রয়িং রুম আমার রুমের পাশে। সব কথাই আমি শুনতে পাই। মা তখনো অফিস থেকে ফিরেন নি। বেয়াই আপনার জামাই ছিল আমাদের এলাকার মধ্যে খুব ভদ্র। আমারও সন্তান আছে নিজের ছেলেদের সমন্ধে এত গৌরব করে কথা বলতে পারি না। কিন্তু আপনার জামাই কে নিয়ে গৌরব করে কথা বলেতে পারি।
যদিও আমাদের বাড়ির পাশের বাড়ি তার পরও আমরা সে বাড়িতে খুব একটা যাই না। একটি কথা আমি শুনতে পেলাম। আপনার নাতিনকে আপনার বড় পুত্রার ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে আলোচনা চলছে ঐ বাড়িতে। আরেকটা কথা তো বেয়াই আপনারা জানেন না। এখনো সবার কাছেই গোপন রয়েগেছে। আপনার জামাইকে ডাকাতে মারেনি। তার ভাইয়েরাই তাকে মেরেছে, বাজার থেকে আসার সময় ডাকাতের হাতে নিহত হয়েছে এই কথা তারাই প্রচার করে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। নানু এতক্ষণ কোন কথা বলেন নি, এখন শুধু মাত্র একটি প্রশ্ন করলেন। ভাই হয়ে ভাইকে খুন করবে কেন ? আর তা আপনি জানেন কি ভাবে? বেয়াই কোন কথাই গোপন থাকে না। আপনার জামাই বিদেশে গিয়ে কর্ম দক্ষতায় অল্পদিনেই সুপারভাইজার হয়ে যায়। বেশ ভালো বেতন পায়। সেদেশের লোকদের মাধ্যমে দুটি দোকান করে কর্মচারী রেখে ব্যবসা করে। প্রায় দশ বছর পর যখন বিয়ে করতে দেশে আসে তখন তার পাঠানো টাকায় যে জমি গুলো কিনেছে তা দেখতে চায়। তার ভাইয়েরা তাকে নিয়ে জমি দেখিয়ে বলে এই জমিগুলো কিনেছি। প্রায় চল্লিশ বিঘা জমি। আপনার জামাইকে বাদ দিয়ে তারা তিন ভাইয়ের নামে সব জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। জমির দলিল দেখতে চাইলে আছে দেই দিচ্ছি বলে দিন পার করতে থাকে। এক পর্যায় ভাইদের সাথে তার ঝগড়া হয়। তখন বিয়ের ঝামেলায় সেদিকে আর খোঁজ নিতে পারে নি। এদিকে তার তিন মাসের ছটি শেষ হয়ে যায়। বিয়ের একমাস পর চলে যায় বিদেশে। তার সন্তানের মুখ দেখার জন্য বাচ্চা জন্মের তিন মাস আগেই ছ’মাসের ছুটি নিয়ে দেশে চলে আসে। এ দিকে তার ভাইয়েরা নগত টাকা স্বর্ণ অলংকার ও জমি গুলো হাতিয়ে নিতে তাদের পূর্বের প্লান অনুযায়ী বাড়িতে আসার মাত্র তিন দিন পরই রাতে বাজার থেকে আসার সময় বড় দিঘির দক্ষিণ পাড়ের নির্জন স্থানে তাকে খুন করে। তার পর ডাকাতের হাতে খুন হয়েছে বলে প্রচার করে। তাঁরা আইনের হাত থেকে বেঁচে যায়। নানু তখন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তার সাথে সাক্ষি যোগার করার ব্যাপারে অনেক কথা বলে।

মা অফিস থেকে ফিরে এসে যখন বাবার এভাবে মৃত্যুর কথা শুনতে পান তখন মা আর স্থীর থাকতে পারেন না। বাবার স্মৃতি মনে করে আমাকে তার বুকে নিয়ে চোখ মুছতে থাকেন আর কোন কথা বলতে পারেন না। আমিও মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ম্যারিনা নাসরিন সীমা গল্প কবিতার ভুবনে স্বাগতম ! তোমার লেখা মন ছুঁয়ে গেল ।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
সানাউল্লাহ নাদের মন ছুঁয়ে গেল । বঞ্চনা সংগ্রামী আটুট প্রেরণা হয়ে থাকুক এই কামনা। আমরা সবাই বঞ্চিতের অকৃত্রিম সহযাত্রী । মাযের জন্য অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
স্বাধীন সুন্দর গল্প আর শেষের দিকে মৃত্যুর কারন মানে ভাই কর্তৃক হত্যার কথা প্রথম দিকে কিন্তু বুঝাই যায়নি।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি besh valo laglo .....agamite aro valo hobe asha kori...............dhonnobad bidita...............
Mohammad Alvi আত্মকথন কিনা জানি না, তবে সাবলিল ভাষায় আবেগের অসাধারণ প্রকাশ করেছেন... ভালো লাগলো
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম তোমাকে মা বলেই ডাকলাম । কেননা আমার ছেলের জন্মদিন ১ লা এপ্রিল ১৯৯২ । জানিনা এটা লেখকের নিজ জীবনের গল্প কি না । ধন-সম্পদোর লোভ মানুষকে কতটা অমানুষ তৈরী করে, ছোট্ট এই লেখক তা আমাদেরকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে । একটা বাচ্চাকে নর পশুরা তার বাবার আদর থেকে চিরদিনের তরে বঞ্চিত করেছে । এই ধন সম্পদের মুখে থু -- থু । মা, তোমার গল্পটা পড়ে আমি কান্না চেপে রাখতে পারিনি। তোমার কলম চলূক , মূল্য বোধ, আদর্শ আর ন্যায়-নীতিকে প্রতিষ্ঠার জন্য । ভাল থেক ।
চাচা গল্পটি আমার নিজের নয়। সারা দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে। সম্পদের লোভে হত্যা, পরকিয়ায় অথবা অন্যকোন কারণে। এমন অনেক ঘটনা লোক মুখে অথবা পত্রিকায় পাই। এই ঘটনা গুলির জন্য আমার মনে অনেক কষ্ট লাগে। তাই আমি চেষ্টা করেছি যে সব বাচ্চারা বাবার আদর পায় না তাদের নিয়ে একটি গল্প লিখতে। আপনার মন্তব্য পড়ে সমাজের এরকম চিত্র আরো ভালো ভাবে তুলে ধরার ইচ্ছা করছে। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।
হাবিব রহমান অন্যরকম গল্প............সবালিল ভাবে অনেক বড় একটা গল্প ছোট করে উপস্থাপন...
শাহ আকরাম রিয়াদ স্বার্থপর পৃথিবীতে নিষ্ঠুরতা এতটা ছুঁয়ে গেছে যে এদের কোন কিছু করতে আর হাত কাঁপে না। আপন মা বাবা ভাই বোনকে স্বার্থের জন্য যারা হত্যা করে তারা আর যাই হোক তারা কখনো মানুষ না। ধন্যবাদ ।
সূর্য সুন্দর গল্প, ভাল হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে গল্পগুলোও আর সাবলীল হয়ে উঠুক তোমার।

০৮ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪