এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট কিনে আনার জন্য বাড়ীর দারোয়ানকে টাকা দিয়ে দোকানে পাঠালেন জামাল সাহেব। যদিও তিনি ধুমপান করেননা। জামাল সাহেবের দুই ছেলে। বড় ছেলের নাম জহির। আর ছোট ছেলের নাম জমির। স্ত্রী, দুই ছেলে ও বড় ছেলের বউসহ একই ফ্লাটে থাকেন জামাল সাহেব। বাড়িটা নিজের। ছয় তলা। তারা থাকেন তৃতীয় তলায়। প্রতি তলায় ২৮০০ স্কয়ার ফিটের বিশাল ফ্লাট। বড় ছেলে জহিরের মেয়ে জামাল সাহেবের একমাত্র নাতনী চার মাস বয়সের শিশু নাবিলা। ও এখনো বসতে শিখেনি। দারোয়ান চাচা যখন সিগারেটের প্যাকেট হাতে ফিরলেন তখন গেইটের সামনে জামাল সাহেবের ছোট ছেলে জমির দেখে বলল, চাচা বেনসন সিগারেট কার জন্যে? : তোমার আব্বা আনতে পাঠালো। উত্তর দিলেন দারোয়ান চাচা। : জমির এবার প্রশ্ন করলো, বাসায় আব্বার কোনো গেষ্ট আসছে নাকি? : দারোয়ান চাচার উত্তর, কাউকে দেখতি পেলাম নাতো। ও আচ্ছা ঠিক আছে যান দিয়ে আসেন এই বলে জমির মনে মনে ভাবছে, 'আব্বা তো ধুমপান করেননা। তাহলে সিগারেট কার জন্য আনাইলো? কাহিনী কি? নাকি আব্বায় লুকাইয়্যা লুকাইয়্যা সিগারেট খায়? হ্যা মনে হয় লুকাইয়্যা লুকাইয়্যা সিগারেট খায়। আর আমগো কাছে সাদু সাজে।' এসব কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ী থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় জমির।
ওদিকে জামাল সাহেব সিগারেটের প্যাকেট হাতে পেলেন। পকেটে ঢুকালেন প্যাকেটটা। ঘড়ির কাটায় বেলা সাড়ে বারোটা। ছেলের বউ টুম্পা এবং নিজের স্ত্রী দুজনেই রান্না ঘরে ব্যস্ত। দুই ছেলেই বাড়ীর বাইরে। তবে বড় ছেলে ফেরার সময় হয়েছে। বড় ছেলের ঘরে গিয়ে জামাল সাহেব দেখতে পেলেন চার মাস বয়সি নাতনী বিছানায় আরাম করে ঘুমোচ্ছে। তিনি সিগারেটের প্যাকেট থেকে সবগুলো সিগারেট বের করলেন। সিগারেট গুলো বিছানায় নাতনীর চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখলেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে নাতনীর ঘুম ভাঙ্গে। খুব শান্ত শিশু ঘুম ভাঙ্গার পর অন্যান্য শিশুদের মতো কান্না করেনা। জামাল সাহেব বারান্দায় দাড়িয়ে বড় ছেলে জহিরকে দেখতে পেলেন রাস্তায় সিগারেট টানতে টানতে বাড়ীর দিকে আসছে। তিনি তারাহুরা করে ছেলের ঘর থেকে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলেন।
জহির ফিরল। নিজের ঘরে গিয়ে দেখল, তার মেয়ের চারিদিকে সিগারেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অবুজ শিশুটি বিছানায় গড়াগড়ি করছে আর সিগারেট দিয়ে খেলছে। হাত দিয়ে সিগারেট চটকাচ্ছে। একটি সিগারেট মুখের ভেতরে ঢুকিয়েছে। এমন দৃশ্য দেখে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে টুম্পা.....টুম্পা....আম্মা....আম্মা....বলে চিত্কার শুরু করে জহির। চিত্কার শুনে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে আসে টুম্পা সাথে আম্মাও এলো। কি হয়েছে প্রশ্ন করল? পাশের ঘর থেকে জামাল সাহেবও এলেন। বললেন, কিরে কি হয়েছে? ঘরে এসেই এমন চিল্লা চিল্লি শুরু করলি কেন? জহির বলল, এখানে এতো সিগারেট কিভাবে এলো? নাবিলা সিগারেট মুখেও দিয়েছে। জামাল সাহেব বললেন, 'তোর মেয়ে একটা দুইটা সিগারেট মুখে দিয়েছে এতেই তোর এই অবস্থা। তোর খারাপ লাগছে, যার জন্য চিল্লাইয়া পুরা বাড়ী মাথায় তুললি। আর তুই যে এতো বছর ধরে প্রতিদিন এতগুলা কইরা সিগারেট টানিস আমাদের কেমন লাগে? সন্তান কি জিনিস বুঝতে পেরেছিস? তোর সন্তানকে সিগারেট খেতে দেখে তোর ভিতরটা যেমন পুড়াচ্ছে। আমার সন্তানের জন্যেও আমার এরকম পোড়ায়।' জামাল সাহেবের এসব কথা শুনে জহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না কাজটা কে করেছে। কেন করেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
বাহ! সুন্দর এবং শিক্ষনীয়...ভিন্ন ভাবনার গল্প...ভালো লাগলো....
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
আপনার গল্পটা এ মাসের সংখ্যার সঙ্গে সরাসরি প্রাসঙ্গিক না হলেও, ছোট্র এই গল্পটার মাধ্যমে আপনি আমাদের যে শিক্ষা দিলেন, হতেও পারে এই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতেও পারি । সে জন্যে আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ । ভোট রেখে গেলাম ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।