ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র আবির।নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান।এতটাই নিম্নবিও যে ঘরে ফ্যান নেই।বাবা পান দোকানদার ।মা একটি মেসে রান্নার কাজ করে। টিউশনি করে অনেক অনেক কষ্টে পড়া লেখার খরচ চালায়।সে বিশ্বাস করে এই কষ্টের ফল তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। একদিন অনেক টাকা হবে।সবার আগে ঘররের জন্য একটা ফ্যান কিনবে।আবির প্রায় সময় ভুলে দুপুরে ঘরে এসে মাকে বলে ফ্যান ছাড়তে।তার মা হাত পাখা নিয়ে এগিয়ে আসে।ব্যপারটা আবির বুঝতে পেরে বলে মা তোমার বাতাস করতে হবে খুব বেশি গরম পড়েনি।দু জনের চোখ জলে ভরে যায়।প্রচণ্ড গরমে ফ্যান ছাড়া ঘুমাতে হয়। মানবতার জীবন যাপন করে। তার নিজের জন্য কষ্ট হয় না।বাবা মা এত কষ্টে জীবন যাপন করে সইতে পারে না ।তার বাবার ঋণের ভার গলা পযন্ত ডুবানো ।কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও সাহস হয় না। এভাবেই আবিরের জীবন ছুটে ছলে।থেমে থাকে না । আবির বাবা মাকে বলে তোমাদের খুব কষ্ট হয় না? ছেলে হয়ে তোমাদের শান্তি দিতে পারি না। তার মা বলে তুই আমাদের একটি মাএ ছেলে তরে শান্তি দিতে পারি না।দুই বেলা খেলে এক বেলা উপোষ। তবুওে লুকোচুরি ভাল থাকার ভান করা। আবির বলে মা বাবা দেখো একদিন আমাদের সব হবে সব। শুধুই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এদিকে কিছু দিন পর পর পাওনাদার এসে তার বাবাকে মারধর করে যায় টাকার জন্য অসহায় হয়ে সব দেখতে হয়। না পারে মারধর বন্ধ করতে না পারে টাকা শোধ দিতে।ছেলের সামনে বাবাকে মারধর কেও সইতে পারে না ।কিন্তু সহ্য করতে হয় এটাই আবিরের জীবন ।শুধু পারে ফাও কিছু চোখের জল ফেলতে।যা পাওনাদারদের কাছে মূল্যহীন ।টাকার মূল্য কত খানি পৃথিবীতে এক মাত্র আবিরই জানে। যারা বলে টাকা মূল্যহীন তাদের কাছে পেলে নিশ্চিয় আবির কিল ঘুসি দিয়ে বসতো। ভাগ্যিস তারা বেঁচে নেই বলে অন্তত একজন আবিরের কাছ থেকে বেঁচে গেল। আবিরকে মহল্লার এক বড় চিনতো জন ভাই সে রাজনীতি করে। আবির কে ডেকে বলে তুমি আমাকে ৪/৫ জন ছাত্র যোগাড় করে দে যারা কিনা টাকা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে চায়। প্রতি জন এক লাখ টাকা দিলে আমি ভর্তি করে দিবো। বিনিময়ে তুই পাবি ৩০০০০ টাকা। আবির তিন জন খুঁজে পায়।সে টাকা ও তিনজনকে নিয়ে বড় ভাই এর কাছে যায়। কিছু দিন পরে ঢাবির ফলাফল দেয়।কিন্তু ঐ তিন জন চান্স পায় না। টাকা নিয়ে বড় ভাই পালিয়ে যায় । এটা যে প্রতারণা ছিল তা বুঝতেই আজ আবির জেল হাজতে। বাবা মা এর কষ্ট পূরণ করতে পারবে কিনা জানে না। সে জানে এক দিন তার সব হবে।জেলে বসে পাগলের মত বলে এক দিন তার সব হবে সব। এই বলতে বলতে প্রতি দিন নিদ্রা যায়।
এভাবেই অনেকটা দিন অতিবাহিত হয় জেলে।আবিরের বাবা মা প্রতিদিন এসে তাকে দেখে যায়। কিছুই করতে পারে না শুধুই চোখের জলের বিনিময় হয়।আবিরকে জেল থেকে বের করে আনে সেই প্রতারক জন ভাই।তার হাতে ৫০০০০ টাকা দেয়।তাদের সাথে কাজ করলে এই টাকা কিছু না। পরিবারের জন্য ফ্যান ফ্রিজ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে।বাব মা ও ছেলের মনের মাঝে শীতল বাতাস বয়ে যায়।আবির অপরাধ জগতের নাম লিখায়।জন ভাইদের লিডার বাদশা ভাই অস্ত্র নিয়ে ধরা খেয়েছে থানায় আছে।তাকে থানা থেকে বের করে আনতে হবে।এটাই আবিরের প্রথম মিশন।কাজটি শেষ করতে পারলে দুই লাখ টাকা পাবে। মিশনে যাবার আগের দিন লিডারের পজিশন দেখে আসে।আবির সহ আরো তিন জন বোরখা পড়ে থানার সামনে ঘোরাঘুরি করে মিশনের দিন।আরেক জন গাড়ি অপেক্ষা করছিলো। থানার সামনে মাঠ ছিল ।সেখানে জব্ধ করা গাড়ি রাখা থাকতো।সেখানে বোমা মারা হয়।থানার বেশির ভাগ পুলিশ বোমার শব্দ পেয়ে ছুটে যায়। এই ফাঁকে আবির থানায় ঢুঁকে ধুয়ায় অন্ধকার করে দেয়। লিডারকে নিয়ে গাড়ি করে পালিয়ে আসে।আবির দুই লাখ টাকা পায়।তার পরিবাবারের জীবন পাল্টে যায়। সবার মন জয় করে নেয়।যে থাকে অস্ত্র নিয়ে ধরিয়ে দেয় সেই চেয়ারম্যান উপর প্রতিশোধের ছক আকেঁ লিডার বাদশা ভাই।চেয়ারম্যানের মেয়ে পলি গ্রামের স্কুলে পড়ে।তাকে কবজা করার দায়িত্ব দেয় আবিরকে। সেই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে আবিরকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিছু দিনের সব ছাত্র ছাত্রীর প্রিয় স্যার বনে যায়।বিশেষ করে মেয়েরা তার ভক্ত হয়ে যায়।পলি প্রেমের স্বপ্ন দেখা শুরু করে আবিরকে নিয়ে। আবির ক্লাস শেষে গরিব ছেলে মেয়েদের পড়াতো তার বাসায়।গ্রামে ভাল নাম ডাক হয়ে যায় সেই সুবাদে।আবিরের ডাক পড়ে পলিকে পড়ানোর জন্য। পলিও মুখিয়ে আছে তাকে পাবার জন্য। পলিকে পড়ানো শুরু করে।তাদের মধ্যে ভাব হয়। পড়ার ক্লাস থেকে তারা প্রেমের ক্লাস চলে যায় ।পলি তরুণী ভরা যৌবন।প্রেমের মোহে অস্থির হয়ে থাকে।তার কামনার চোখ ঢেউ এর মত আঁছড়ে পড়ে আবিরকে দেখে। আবিরও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে আসল উদ্দেশ্য হাছিল করতে নিবে।
আবির একদিন পলির দুটি গালে হাত দিয়ে বলে তুমি কত সুন্দর তোমাকে ভালবেসে সারাদিন জড়িয়ে রাখতে মন চায়।তোমাকে একান্ত কাছে পেতে চায় এই মন।আমার যন্ত্রণাদগ্ধ শরীর আর সইতে পারে না। শুধু তোমার জন্য পলি শুধু তোমার জন্য ।এমন প্রেমের ডাকে পলি আবিরকে কথা দেয় তারা একান্তে কিছু সময় কাটাবে ।আবির বাড়ি চলে যায়।পলির প্রথম প্রেম।তার কাছে সব কিছু রঙ্গিন মনে হয়।মনের সব টুকু অংশ জুড়ে শুধু আবির।মনে মনে গান গায় পাখির মত ঘুরে বেড়ায়।আবির তাকে পড়ানোর সময় হাত পা গাল ছুঁয়েছে মধুর স্মৃতি ভাবে আর হাসতে থাকে।তাকে আন্দলিত করে । আবিরের প্রলোভনে পলি সাড়া দেয়। এক বিকেলে পলি আবিরের বাসায় চলে যায় ।আবির আগে থেকে ক্যামেরা ফিট করে রাখে।বিকেলের সব দৃশ্য ভিডিও করে রাখে পলির অজান্তে।কিন্তু আবিরের নৈতিকতায় বাজে না ।যেখানে টাকা মৌ মৌ করে সেখনে নৈতিকতা ফিকে হয়ে যায়।পলি ও আবিরের প্রেম চলতে থাকে।তারা সিনেমা দেখতে যায়।মেলায় ঘুরে বেরায়।পাশের গ্রামের সবুজ পথ দিয়ে পিঠে পিঠ রেখে অনেক সন্ধা পার করে। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের তারিখ ঠিক হয়।পলির বাবা ও লিডারের বড় ভাই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। লিডার জানে পলির বাবাকে কখনো হারাতে পারবেনা তার ভাই।প্রতিশোধ ও নির্বাচনের জয়ের জন্য পলিকে বেছে নেয় অস্ত্র হিসেবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ।ভোটের দুই দিন আগে পলির বাবাকে মেয়ের ভিডিও পাঠায়।নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে না হলে ভিডিও ফাঁস করে দিবে।পলির বাবা নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।বিপুল ব্যবধানে লিডারের ভাই জিতে।কথা মত ভিডিও ফাঁস করে না।ফাঁস করবে কি ভাবে কপিটা আবিরের কাছে থাকে।পলির বাবা ও মার ঝগড়ার এক পর্যায় পলি বিষয়টি জানতে পারে।পলি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যায়।পলির বান্ধুবী রুমা সে দেখেছে পলি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করছে খবরটা গ্রামের সবার কাছে জানায়।নদীতে অনেক খুঁজাখুজির পরও লাশ পাওয়া যায় না।আবির প্রচুর টাকা পায়।পরিবার নিয়ে গোপনে অন্য জায়গায় চলে যায় ।আবিরের বাড়ির ঠিকানা ভার্সিটির এক বন্ধু ছাড়া আর কেউ জানে না।বাড়ি গাড়ি কিনেছে।আবিরের মা বাবা তার জন্য পাত্রী দেখতে যায়।
আসার সময় দুজন গাড়ি এক্সসিডেন্টে মারা যায়।যাদের জন্য এত কিছু করা আজ তারাই নেই।শুধু তার টাকা আছে। টাকাই তার এক মাত্র সঙ্গী। সাড়া দিন বাসায় পড়ে থাকে। পলির সাথে মধুর দৃশ্যগুলো ভাবতে থাকে। এই জীবনে আরেক বার কাছে পেত তাকে বিয়ে করে সুখের সংসার করতো।অপরাধ বোধের জন্য অনুশোচনা করে। আবিরের লিডার পলির বাবাকে নারী পাচার মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। কিছু বাজে মেয়ে এক রুমে জড় করে।কৌশলে পলির বাবাকে ডেকে এনে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশ কাছে ধরিয়ে দেয়।পুলিশ এতে অনেক টাকা পায়।মেয়েগুলো সাক্ষী দেয়।পলির ভাই নিপু তার বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। অনেক কষ্ট করে আবিরের ঠিকানা যোগাড় করে।নিপু আবিরের ক্লাসমেট ছিল। তার বাসায় গিয়ে হাজির।নিপু পরিচয় দেয় সে তার ক্লাসমেট ।ভার্সিটিতে শুনে ছিলামম তুমি প্রতারণার জন্য অনেক দিন জেলে ছিলা।তুমি এই লাইনের লোক ।আমার বাবাকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাও । যত টাকা লাগে আমি দিবো। আবির বুঝতে পারে তার বোন কি জন্য আত্মহত্যা করেছে সে জানে না। নিপুর বাবাকে রক্ষা করে তার কাছে ক্ষমা চাইবে।তার বোনের আত্ম হত্যার জন্য সে দায়ী খুলে বলবে । আবির লিডারকে ফোন করে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বলে। লিডার রাজি হয় না।তার সাথে যত প্লান করা হয়ে সে রেকর্ড করেছে।মামলা প্রত্যাহার না হলে সব ফাঁস করে দিবে হুমকি দেয়। লিডার ভয় পায়।তার ভাইকে দিয়ে অনেক দেনদরবার করে মামলা তুলে নেয়।নিপুর বাবা মুক্তি পাবার পর আবির সব রেকর্ড ফাঁস করে।ঘটনা টের পেয়ে লিডার ও লিডারের ভাই গ্রাম থেকে পালিয়ে যায়। নিপু আবিরকে টাকা দিতে আসে ।আবির তার বোনের আত্মহত্যার ঘটনা বলে কেঁদে ক্ষমা চায়। নিপু টাকা রেখে দৌড়ে চলে যায়।মানুষের সব চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে তার মৃত্যু ছাড়া পথ থাকে না।তাই বলেই হয়তো নিপুকে আটকায় না।নিপু তার বাবাকে খবরটা দিলে আবিরকে ধরে আনে। জঙ্গলের গাছের সাথে বেঁধে রাখে।আবিরকে হত্যা করার জন্য নিপুর বাবা পিস্তল নিয়ে এগিয়ে আসে। তখন বাবা বলে চিৎকার করে দৌড়ে আসে একটি মেয়ে।সবাই তাকিয়ে দেখে মেয়েটি পলি।পলি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।আবির গুলি করতে না করে।পলি বাবা বলে কিরে মা তুই বেঁচে আছিস?হ্যাঁ বাবা।আমি যখন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যাই তখন রুমা আমাকে বাঁচিয়ে গোপন করে রাখে।আর সবার কাছে ও বলেছে আমি মারা গেছি।পলি দৌড়ে গিয়ে আবিরকে চড় মারতে থাকে।তুমি আমার সাথে কেন এমন করলে? আবির স্তব্ধ । কথা না বলে চড় খাওয়া তার কাছে উওম মনে হচ্ছে।আবির তার কাছে আরেকটা সুযোগ চায়।মেয়ে জাতির বড়ই নরম মনের হয়।
তাইতো আবিরকে ক্ষমা করে জড়িয়ে ধরে দুজনে কাঁদতে থাকে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা গাছের পাতায় ঝমঝম শব্দ দুটি মনের মাঝে নতুন মাত্রা যোগ করছে। রাত কে পেরিয়ে নতুন ভোরের দিকে ছুটে চলছে আর ঝম ঝম শব্দে পুরতন সুখটা কে নতুন করে ঝালাই করে নিচ্ছে বেঁচে থাকার সন্ধি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
বুঝার সময় অনেকেই বুঝতে পারে না যখন বুঝে উঠে তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়। পলি আবিরকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ দিলেও কি সব আগের মতো হবে? হয়? ছোট গল্পের চেয়ে কাহিনীর ব্যাপ্তীটা কিছু বড়। অনায়াসে এটার চিত্ররূপ দিলে সুন্দর একটা মুভি তৈরি করা যাবে। ভালো লাগলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।