এক চিলতে আকাশ

ভোর (মে ২০১৩)

তাহমিদ-উল-ইসলাম
  • 0
  • ৪৯
শহরের একেবারে কোনায় দিলুর বাড়ি । না, ভুল বললাম, ভাড়া বাসা । ছোট্ট একটা রুম । আর ছোট্ট একটা জানালা । এই জানালাটাই তার সম্বল । তার দুনিয়া । আচ্ছা ফরহাদের জীবনটা কেমন ? তার আকাশ নিশ্চয়ই অনেক বড়, যেখানে শরতে সাদা মেঘের আনাগোনা, বর্ষায় অবিস্রোত ধারা ।
তার সাথে ফরহাদের বিয়ে হয়েছে তিন মাস । এই তিন মাসে তাদের সম্পর্ক যেন বাইরের লোকেদের মতো । রাত করে ফরহাদ বাসায় ফেরে, চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়ে । মাঝে মাঝে বিদেশি ম্যাগাজিন এনে পড়ে । আবার মাঝে মাঝে টেবিলে বসে কাজ করে । দিলুর সাথে কথা বলার অবকাশ তার হয় না ।
দিলু কয়েকদিন ধরে একটা স্বপ্ন দেখছে । বারবার । আর প্রতি ভোরেই সে উঠে পড়ে । বুক ধড়ফর করে । সে দেখে তার ব্লাউজের হুকটা খোলা । আর ফরহাদ . . .
সকালে উঠে ফরহাদের জন্য নাস্তা রেডি করা, আর টিফিনের জন্য ভাজি রুটি বানানো । এভাবেই সকালটা কেটে যায়, এরপর অলস দুপুরে খাটনি । রাতের আর দুপুরের রান্না একসাথে করা হয় । অবশ্যি ফরহাদ এ নিয়ে কিছু বলে না ।
কলিংবেল । এই নিয়ে দুবার । দরজা খুলে দেখা গেল রোকসানা ভাবি । কি আনন্দেই না আছে তাদের পরিবার । রোকসানার স্বামী বাংলা সাহিত্যের মাষ্টার । কলেজ থেকে এসে হৈ হল্লা করে বেড়ান । সপ্তাহান্তে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যান । মাসে একবার জেলার বাইরে । কিন্তু ফরহাদ ? আচ্ছা আল্লাহ কেন তাকে এই অপূর্নতা দিয়ে তৈরি করেছেন । সে তার পেছনে তার ননদ-জাদের বলতে শুনেছে, ‘বাঁজা মেয়েছেলে’ । বড় কষ্ট হয় দিলুর ।
দিলুর বয়স যখন পনের তখন তার বাবা মারা যান । মা বাবাকে পাগলের মত ভালোবাসতেন । তাই, বাবা মারা যাওয়ার পর সিজোফ্রেনিক হয়ে গেলেন । গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান, সে নাকি দিলুর বাবার কথা শুনতে পারেন । মাঝে মাঝে বলেন, তোর বাবা বলে কিনা আমাদের খুব মিস করে সে । তার পাগলের মতো ভালোবাসার ফল হল পাগলা গারদে যাওয়া ।
দিলুর মামারা তাকে আগে কতোই না ভালোবাসতো ! কিন্তু তার বাবা মারা যাওয়ার পর সব ভালোবাসা কর্পূরের মতো উবে গেছে । আচ্ছা মানুষ কেন এতো তাড়াতাড়ি বদলে যায় ? ফরহাদের মত ভালো ছেলে পাওয়ায়, তারা দেরি করলেন না । ঝামেলা মিটিয়ে ফেললেন । বিয়ে হল কাজী অফিসে ।
ভাদ্র মাসের তালপাকা রোদ্দুর পড়েছে । ভ্যাপসা গরম । তবে এর মাঝে রোকসানা ভাবির কথা শুনতে ভালোই লাগছে । তারা গত মাসে তাজমহল ঘুরে এসেছে । সেখানে কি রকম কাটিয়েছে সে গল্প ।
‘বুঝলেন ভাবি, তাজমহল হল দেখার মতো একটা চীজ । স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা যে এতো গভীর হতে পারে তা না দেখে বোঝা যায় না . . .’
আচ্ছা ফরহাদ যদি তাকে শাহজাহানের মতো নয়, তার চাইতে একটু কম ভালোবাসতো তবে কি হতো ?
জীবনটা বড় দুর্বিষহ হয়ে উঠছে । মাঝে মাঝে দিলুর মরে যেতে ইচ্ছে করে । মৃত্যুর পর কি হয় ? সে যদি বেহেশতে যায় তবে কি ফরহাদ তাকে ভালোবাসবে ?
সে তো কবিতা লিখতে পারে, আচ্ছা সে কি ফরহাদকে একটা কবিতা লিখে শোনাবে ?

যে প্রেম নয়, সে যে নশ্বর,
কিন্তু. . .
প্রেম সুধা সত্যিই অবিনশ্বর ।

২.
ফরহাদ এসেছে বেশ সকাল সকাল । তার হাতে মিষ্টির প্যাকেট ।
বলল, ‘দিলু, আমার প্রোমশন হয়েছে’ । দিলু ভাবলো এবার হয়তো ফরহাদ তাকে জড়িয়ে ধরবে । কিন্তু কই ? ফরহাদ তো বেসিনে হাত মুখ ধুচ্ছে ।
সে রাতে অনেক ভালো ঘুম হল । সেই একই স্বপ্ন দেখল সে । সকালে পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙল । এই ফ্ল্যাট বাড়িতে পাখি আসবে কোথা থেকে ?
নিজেকে দিলু আবিষ্কার করলো একটা বড় বাড়িতে । সবে আলো ফোটা শুরু করেছে । বড় জানালা দিয়ে উদীয়মান সূর্য দেখা যাচ্ছে । চার পাশে গাছ পালা । চড়ুই, বুলবুলি, দোয়েল হাজার পাখি । দিলু যেন বহুদিন পর আকাশ দেখল । কি সুন্দর ভোরের রূপ !
ফরহাদ তার পাশে হাসিমুখে, সাদা ট্রাউজার আর আসমানি রঙের হাওয়াই সার্ট পরা,
‘পছন্দ হয়েছে বাড়ি ?’
দিলু ভাবল তার স্বপ্ন এখনো শেষ হয় নি ।
‘ভালো লাগছে’ দিলু অস্ফুট স্বরে বলল ।
‘দেখ আমাদের ছেলেমেয়ে নেই ঠিকই, কিন্তু সুখের উপকরণের কিন্তু অভাব নেই, তাই না ?’
‘হুম’
‘তোমার জন্য এটা আমার উপহার । সুখী হতে আমাদের আর কিছু দরকার নেই’
শাহজাহান হয়তো মমতাজকে এতোটা সুখী করতে পারেনি । কি আনন্দ বুকের মাঝে ! মনে হল এতো দিন যে অংশটা খালি ছিল তা পূর্ন হয়েছে ।

ফরহাদ দিলুর বুকে হাত দিল । খুলতে লাগলো ব্লাউজের হুক । সবুজ শাড়ি ছাপিয়ে বের হল রূপ ।
আচ্ছা এটা কি স্বপ্ন ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সুন্দর গল্প...ভালো লাগলো...
সূর্য "দিলু কয়েকদিন ধরে একটা স্বপ্ন দেখছে " এই অংশটার পরেতো পুরো ঘটনাটাই মনে হলো স্বপ্নে। না হলে তিন মাসেই ননদ জা রা কেন বলবে বাঁজা মেয়ে। তার পর ফরহাদ অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে, খেয়ে হয় ম্যাগাজিন পড়ে নয় শুয়ে পড়ে কথা বলারও অবকাশ থাকে না। গল্পের শেষটা অতৃপ্ত এক নারীর স্বপ্ন হতেই পারে। পাঠককে ঘোরের মধ্যে রাখার জন্যই গড়ণটা এমন। সুন্দর গল্প।
স্বাধীন শেষের দিকটা ঘোর লাগা "আসলেইকি এটা স্বপ্ন?" ভাল লাগল গল্প।
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটি। শুভেচ্ছা রইলো।
জাকিয়া জেসমিন যূথী ভালো লিখেছেন। লেখার ধরন ভালো। এগিয়ে যান আপনি সেই শুভকামনা রইলো।
তাপসকিরণ রায় একলা নিজের পাশে দেওয়াল তুলে রাখলে কেউ দেখতে আসবে না আপনাকে।সবাইকে স্বাগত জানান--সবার লেখা পড়ে দেখতে চেষ্টা করুন।তবেই তো আপনার লেখাটি অনেকে পড়ে দেখবে ! আপনি ভালো লেখেন,সেটুকু আমি বুঝেছি,ভাই !

২৬ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪