বুড়িগঙ্গা তীরে শাঁখারি বাজার পাড়া ,কত রকম জিনিসের সমাহার এর মাঝে খোকা বাবু কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এই দোকান ওই দোকান কত খোজা খুঁজি কোথায় খোকা বাবু নেই কতই বা বয়স তার চার পাঁচের মাঝামাঝি । খোকার মা ভগবান নাম স্মরণ করছে আর তার খোকাকে খুঁজছে, তার মাথা দিয়ে গাম পরছে সে এই দোকান ওই দোকানে তার ছেলের কথা বলছে ,কেউ কি তার খোকাকে দেখেছে ? খোকার পরনে ছিল লাল পায়জামা সাদা ছেঁড়া সেন্টু গেঞ্জি, সকাল গড়িয়ে দুপুর খোকাকে খুঁজেই পাওয়া যায় নি ,হঠাৎ পূর্ব দিক থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসল রুপার কানে ,মাগি কই গেলি ? এদিক আয় , রুপার কলিজা পানি নাই , রুপা কি হইছে ? মাগি পোলাটারে সামলাইয়া রাখতে পারস না। আমার লগে লগে নৌকা ঘাঁটে চইলা গেছি-লগা ভাগ্য ভাল যে জব্বার মাঝি দেখছিল না হইলে তোর পোলার খোদমা আর দেখা লাগতও না ।রুপা কাঁপা কাঁপা অবস্থায় ঘর থেকে উঠানে বেরিয়ে আসল ,রুপা খোকার মাথায় চুমু খেয়ে বলল, বাবা আমারে ফালাইয়া তুই কই গেছিলি ভাগ্য ভাল যে তুই ফিরাআইছস নাইলে তো আমি মইরা যাইতাম,তোরে ছাড়া এই দুনিয়া আমার কি আর কেউ আছে ,ছেলে কে নিয়ে ঘরে চলে গেল রুপা, তার এক বছরের মেয়ে কে দুধ খাওয়াতে, সারা দিন কিছু খায়নি মেয়েটি । ৭ মার্চের ভাষণের পর দেশের অবস্থা খুবই খারাপ । শেখ মুজিবের কথা সারাদেশ চলছে ,শিক্ষিত সমাজ এই বিষয় নিয়ে বড়ই চিন্তিত ,গরিব মানুষের আবার কিসের চিন্তা দিন আনে আর দিন খায়, এমনি এক জন রুপার জামাই রবি , সদরঘাটে নৌকা চালায় দিনে এক টাকা থেকে তিন টাকার মত উপার্জন করে ।এই দিয়ে কোন মতে সংসার চলে, ২৫ মার্চ রাতে,রবি আকিজ বিড়ির মাল ডেলিভারি দিতে সদরঘাটে ,রুপা তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে, যখন তার ঘুম ভাঙ্গল তখন সে দেখতে পেল আগুন আর আগুন তার সাথে প্রচণ্ড চিৎকার, বাঁচাও !! বাঁচাও !! পাকিস্তানি সেনারা আগুন ধরিয়া দিয়েছে শাঁখারি বাজার পাড়াতে সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলনা ।
এর মধ্যে জ্বলন্ত একটা বাঁশ এসে পরল তার শিশু মেয়ের উপর, সে বাঁশটা ধরার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না ,এর মধ্যে খোকার ঘুম ভাঙ্গল সে বলল মা কি হইছে ? আগুন কেন ? তখন তার চোখ পরল তার বোনের দিকে, মা টুম্পার কি হইছে বলার সাথে সাথে রুপা কেঁদে উঠল ,তার মেয়ের লাশ কোলে নিয়ে ঘরের বাহিরে এসে দেখল সবাই ছুটোছুটি করছে, এর মাঝে সাদিয়ার মা এসে বলল বাচতে চাইলে পালাও পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করেছে । সে রবির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো, রবি আসছেনা ,কিন্তু সে আর অপেক্ষা করতে পারলনা সে ও দৌড় শুরু করল ।এর মাঝে রবি এসে দেখল তার ঘর আগুনে জ্বলছে ,সে খোকা বলে চিৎকার করতে লাগল , কিন্তু তার খোকা যে আর নেই ,সে কি করবে বুঝতে পারল না । সে স্থির হয়ে বসে রইল । এর মাঝে রুপা তার ছেলে কে নিয়ে পৌঁছে গেল পোস্তগোলা নৌকা ঘাঁটে ,নৌকা জন্য সবাই অপেক্ষা করছে একটা নৌকা দিয়ে পারাপার চলছে ,এর মাঝে নৌকা চলে এসেছে, রুপা তার ছেলে কে নিয়ে নৌকা উঠল । নৌকা যখন ঘাঁটে আসল তখন পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করল , রুপা তার ছেলে কে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করল কিন্তু পালাতে পারল না, পাকিস্তানি এক সেনা তার শাড়ির আঁচল ধরে রাখল এবং সে দৌড় দিতেই শাড়ি খুলে গেল এটা দেখ
সব সেনারা হাঁসতে শুরু করল । সেই সেনা খোকা বাবুকে একটা বুটের জুতা দিয়ে লাথি দিল এতে সে মাটিতে পরে গেল এবং কাঁদতে লাগল । রুপা ও চিৎকার করতে লাগল কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা তাকে ক্যাম্পে নিয়ে গেল ,ওই দিকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে রবি ধরা পরল ,তাকে বুড়িগঙ্গা নদীর কিনারায় ফায়ারিং জোনে রাখা হল ।এই নিয়ে তিন জনকে গুলি করে মারা হয়েছে ,এবার তার পালা । এর মাঝে এক জন এসে বলল আমদের তো একজন বাবুর্চি দরকার ওর চেহারা দেখে তো বাবুর্চি মনে হয় ওকে বাবুর্চি কাজের জন্য রেখে দেওয়া যায় , কিরে তোর নাম কি ? আমার নাম হাবিব মিয়া , বাবুর্চি কাজ পারস ? জি পারি ,তাহলে তুই ওর সাথে যা, তার কলিজা পানি চলে আসল ,এবং পাকিস্তানি সেনার সাথে ক্যাম্পে চলে গেল, ক্যাম্পের পূর্ব দিকে মহিলা জোন ,যেখানে ধর্ষিত মেয়েদের রাখা হয় ,এই ঘরটার দিকে তার নজর পরল এর মাঝে একজন তাকে বলল ,এই ঘরে আকাম করার জন্য মেয়ে মানুষ রাখা হয় তর যদি মনে চায় তয় আমারে কবি ।এর মাঝে রবি রান্না ঘরে চলে গেল ,একদিন রাতে ওই ঘরে কি তা দেখার জন্য রবি গেল , গিয়ে দেখে কেউর পরনে কিছু নাই সবাই নেংটা ,হঠাৎ সে দেখল তার বউ রুপাকে , সে রুপাকে জিজ্ঞাস করল, আমার খোকা কই ? কিন্তু রুপার মুখ দিয়ে কিছুই বের হল না ।তখন তার হাতে থাকা বটি দিয়ে একটা কোপ বসিয়ে দিল রুপার গলায় ।