শ্রমাঁধারা

শ্রম (মে ২০১৫)

মবিন সরকার
  • 0
  • ৩২
জমির উদ্দীন কাপড় মেলছে।।।। আমি তাকে বললাম , “চাচা কাপড় মেলছেন ক্যান”? তিনি আমাকে বললেন, “ সবই আমার কপালরে বাবা , সবই আমার কপাল, পোলা দুইডাও হইসে , সব কাম আমারে করন লাগে। আমি ভাবসিলাম যা, তা হয় নাই। জমি জমা এসব আমার কিছুই আছিলনা। অনেক কষ্ট কইরা চলসি, ভি¶া কইরা পর্যš— চলসি, আইজ হ্যারাই আমারে দ্যাহেনা। আমি কাগো লাইগা এসব করসি, তাগো লাইগাইত”। জমির উদ্দীন ছোট বেলায় তার মা-বাবাকে হারিয়েছিল। সে , তার চাচার বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবৎ ছিল, তার পর তার চাচা মারা যায়। তার চাচা মারা যাবার পর সে , সেবাড়িতে আর থাকতে পারেনি। তারপর সে খুধা ও যন্ত্রনায় কাতরিয়েছে, তাকে কেউ সাহায্য করেনি। জমির উদ্দীন তার চাচাকে সাত বছরে হারিয়েছে। জমির উদ্দিন কোন কুল না পেয়ে অন্যের কাছে হাত বাড়াতে শুর“ করে। অন্যের কাছে হাত বাড়ীয়ে যে আয় করত তা দিয়ে সে কোন রকমে খেয়ে বাঁচত । তার কাপড় চোপড় কেনার মত পয়শা জুটতনা। একদিন এক ব্যাক্তি তাকে দেখে বলল, “ কিরে বাবা এত ছোট বয়সে ভি¶া করিস ক্যান”? জমির বলল, “আমার বাবা-মা নেই তাই ভি¶া করি, ভি¶া করে পেট চালাই”। লোকটি বলল, “তুই আমার কাছে , আমার বাড়ীতে থাকবি”? জমির উত্তর দিল হু থাকব। লোকটি তাকে বলল, “তোকে এমনি এমনি থাকতে দিবনা , তোকে কাজ করে খেতে হবে”। জমির উত্তর দিল, “কি কাজ করতে হবে”? লোকটি তাকে বলল, “আমার কিছু ছাগল আছে , সে ছাগল গুলো তোকে চরাতে হবে, পারবি”? জমির উদ্দীন উত্তর দিল হ্যাঁ পারব। লোকটি বলল, “তিন ব্যালা খাবার পাবি এবং কাপড় পাবি কিন্তু টাকা পাবিনা, কিরে কাজ কি করবি”? জমির উদ্দীন উত্তর দিল হ্যঁ করব। লোকটির নাম সমের আলী। সমের আলী লোক হিসেবে বড় মনের, সে একটু রাগি কিন্তু তবুও তার মনটা ভাল ছিল। সমের আলি জমিরকে নিয়ে তার বাড়ীতে গেল; তার বাড়ীর সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসা করল যে ছেলেটি কে? সমের উত্তর দিল যে, মা –- বাবা হারা একটি ছেলে আমি তাকে নিয়ে আসলাম ছাগল চরানোর জন্য; সে ভি¶া করছিল। সমের আলীর স্ত্রী জমিরকে জিজ্ঞাসা করল যে, “কিরে ছাগল চরাতে পারবি”? জমির বলল হ্যাঁ পারব। জমিরের বয়স তখন নয় বছর। সমেরের স্ত্রী তাকে বলল চুরি টুরি করে পালাবি নাতো? জমির বলল, “চুরি করে খেলে ভি¶া করতামনা, চুরি করেই খেতাম”। সমেরের স্ত্রী তার এ কথা শুনে আশ্চর্য হলো; এই ভেবে যে, এতটুকু ছেলে এমন কথা বলতে পারে? সমের আলী তার ছিঁড়া প্যান্ট দেখে তার জন্য হাটে প্যান্ট কিনতে গেল। হাটে গিয়ে জমিরের জন্য দুটি প্যান্ট কিনল আর কিছু তরকারী কিনল তারপর পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরল(যেহেতু পাকা রা¯—া ছিলনা আর দিনটি ছিল বর্ষার)। জমিরের বাবা ছিল অত্যš— গরীব, সে কাজ করে যা উপার্যন করত , তা দিয়ে কোন রকমে তার সংসার চলত(নুন আনতে পানতা ফোরায় অবস্থা)। জমিরের বাবার নাম কেরামত আলী। তিনি অত্যš— সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তার স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যায়। কেরামত আলীর বয়স যখন ষাট বছর তখন সে স্ত্রীকে হারায়। কেরামত আলী কাজে কর্মে ভালই ছিল , তার সুঠাম দেহ ছিল। হঠাৎ করে একদিন তাকে বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়, তখন সে জমিতে কাজ করছিল। কেরামত আলী জমি থেকে বাড়ীতে আসতে আসতে পথেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। গ্রামের মানুষ তাকে দেখে ধরাধরি করে তার বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং তারা তার মাথায় পানি ঢালে এবং মুখে পানির ছিটা দেয়। কিন্তু কেরামত আলীর কোন সাড়া পাওয়া যায়না। গ্রামের লোকজন দিশা না পেয়ে ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হয়। ডাক্তার তার বাড়ীতে গিয়ে দ্যাখে যে, সে মৃত। পরিশেষে ডাক্তার সবাইকে বলল যে, সে মারা গেছে। তারপর গ্রামের সবাই মিলে তাকে কবর দিয়ে দেয়। জমির এভাবে তার মা-বাবাকে হারায়। ছোট্ট ছেলে জমিরকে দেখে তার চাচা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং সে তাকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। জমির যেহেতু ছোট ছিল সেহেতু তার চাচা তাকে কোন কাজ করতে দিতনা। সে আদর যতেœ সেখানে থাকতে থাকে। তার চাচা মারা যাবার পর তাকে বাড়ী ছাড়া হতে হয়। তারপর তাকে তার জীবনের কঠিন একটি অধ্যায় পার হতে হয়। যাহোক জমির সকাল বেলা ছাগল নিয়ে বের হল , এই কাজ তার প্রথম দিনের। ছাগল গুলো মাঠে নিয়ে চরাতে থাকে, তার মাত্র একটি কাজ ছিল। সমের আলী তার চরানো দেখে অত্যš— খুশি হত(কেননা সে ছাগল গুলোকে পেট পুর্তি করে খাওয়াত)। ছাগল চরাতে চরাতে তার আর ভাল লাগেনা, তার কিছু করতে ইচ্ছে করে। সে মাঝে মাঝে পাতার বাঁশি বানিয়ে গাছের ছায়ায় আনমোনে বাজাতে থাকত। পাতার বাঁশি বাজাতে তাকে খুবই ভাল লাগত। একদিন সমের আলী তার স্ত্রীকে বলল, যে, জমিরকে স্কুলে ভর্তি করে দিলে কেমন হয়। সমেরের স্ত্রী বলল, যে, “সে কাজ করবে না স্কুলে যাবে”। সমের আলী তাকে উত্তর দিল যে, তাকে নাইট স্কুলে ভর্তি করে দিবে। নাইট স্কুলে পড়লে দুটোই হবে, কাজও হবে আবার পড়াও হবে। সমেরের স্ত্রী তাতে মত দিল। সমের কয়েকদিন পরে জমিরকে স্কুলে ভর্তি করে দিল। জমির সে স্কুলে হাতে খড়ি দেয়। জমির সারাদিন কাজ করার পরে রাত্রে স্কুলে পড়তে যেত এবং সেখান থেকে সে পড়া শোনা শিখতে লাগল। জমির যখন ক্লাশ এইটে পড়ে তখন সমেরের স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রাš— হয়। জমির কাজের মাঝে মাঝে সমেরের স্ত্রীরও সেবা করতে থাকে । সমের আলীর বয়স তখন প্রায় ষাট বছরের কাছাকাছি। সমের আলী তার স্ত্রীর জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছিল কিন্তু তার ব্যাধি সেরে উঠেনি। ডাক্তার কবিরাজ বেশ অনেককেই সমের দেখিয়েছিল কিন্তু কোন কাজ হয়নি। একেবারে শেষ অবস্থায় সমের আলী জানতে পারেন যে, তার স্ত্রীর ক্যানসার হয়েছে। একথা শোনার পর সমের অত্যš— চিš—া যুক্ত হয়ে পড়েন। তার নাওয়া খাওয়া ঠিকমত হতনা। কিছুদিন পরে সমের আলীর স্ত্রী মারা যায়। সমের আলী বিছানাগত হয়ে পড়ে , তারপর তার সেবা জমির করতে থাকে। সমের আলীর দুটি মেয়ে সš—ান ছিল। তাদের বিয়ে হয়েছিল পার্শবর্তি গ্রামে। তারা তাদের বাবার এই অবস্থা দেখে সমেরের বাড়ীতে চলে আসে এবং তাদের বাবার সেবা করতে থাকে। দেখতে দেখতে পেরিয়ে যায় আরো দুটি বছর। জমির তখন দশম শ্রেণীতে পড়ত। একদিন সমের তার কন্যাদেরকে ডেকে বলল যে, জমিরকে সে কিছু জমি লিখে দিতে চায়। তার কন্যারা তাকে প্রশ্ন করেছিল যে, তিনি তাকে কত বিঘা দিতে চান। সমের তাদেরকে বলে যে সে দুই বিঘা দিতে চায়। তার কন্যারা তাতে দ্বিমত করেছিলনা। সমেরের মোট কুড়ি বিঘা জমি ছিল। সমের জমিরকে দুই বিঘা জমি লিখে দ্যায় এবং তার মেয়ে দুটিকে সমান সমান করে নয় বিঘা করে দ্যায়। সমের আলী তার কিছুদিন পরে মারা যায়। জমির সেই দুই বিঘা জমিতে ফসল ফলাতে থাকে এবং সেই বাড়িতেই থাকতে থাকে। সমেরের দুই কন্যা কিছুদিন পর জমিরকে সেই বাড়ীটি লিখে দেয়। আরো কয়েকটি বছর কেটে গেল, জমির বিয়ে করে সেই বাড়ীতে নিয়ে এল ফুট ফুটে একটি বউ। সমেরের পরস্পর দুটি পুত্র সš—ান হল । জমির উদ্দিনের বয়স যখন চলি­শ বছর তখন তার স্ত্রী মারা যায়। সে রান্না বান্না করে তার সš—ানদের খাওয়াত। জমির উদ্দীনের ছেলেরা নাইট স্কুলে পড়ত এবং সেখান থেকে পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়। ছেলেরা যে আয় করত তাও বন্ধ হয়ে গেল। জমির উদ্দীন তার ছেলেদের আয় থেকে যে পয়শা জমা করেছিল সেটা দিয়ে সে কিছু জমি কিনতে পেরেছিল। জমির উদ্দীন সেই জমি জমাগুলো আবাদ করত। তার দুটি ছেলে চাকরি পেয়ে বিদেশে চলে যায়। জমির এখন একাকি।।


ইতি

চরিত্রঃ সমের আলী, তার স্ত্রী ঃ কমেলা। জমির উদ্দীন, তার বাবাঃ কেরামত আলী।

নামকরনের সন্ধি বিচ্ছেদঃ
শ্রমাঁধারা= শ্রম+আঁধার+আ ।
আ= জমির উদ্দীন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাসরিন চৌধুরী আপনার লেখা এভাবে ভেঙ্গে গেছে কেন? ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবেন। শুভেচ্ছা রইল।লেখাটি ভাল লেগেছে।
নাইমুল খান ভাল লাগল । ভোট দিয়ে গেলাম ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
সোহানুজ্জামান মেহরান ভাল হয়েছে, শুভ কামনা ও ভোট রইলো।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।

১৫ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪