রিনা ও রুমা তারা দুটি বোন, ভাই তাদের নেই। সেদিন গোধূলি বেলা রিনা ও রুমা দুজনে মাঠে খেলছিল। রিনার মা এমন সময় তাদেরকে খেলা ছেড়ে উঠতে বলল। রিনা ও রুমা তারা দুজনে খেলা ছেড়ে উঠল। বাড়িতে গেল, বাড়িতে গিয়ে দুজনে মুখ হাত পা ধুয়ে টিভি দেখতে আরম্ভ করল। রিনা ও রুমা তারা দুজনে বয়সের মাত্র দুই বছরের কম বেশি। রিনা রুমার চাইতে দুই বছরের বড়। রিনার বয়স ১৯ বছর আর রুমার বয়স ১৭ বছর। রিনার বাবা-মার একটি চিন্তা সব সময় লেগে থাকে, সেটা হল তাদের মেয়েদের বিয়ের চিন্তা। একদিন একজন ঘটক তাদের বাড়িতে আসল, এসে তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করল যে, তার বড় মেয়ের বিয়ে দিবে কি-না। রিনার মা ঘটকের কথা শুনে খুবই খুশি হল এবং তাকে বড়ীতে আসতে বলল। ঘটক রিনার পাত্র সম্বন্ধে তার মাকে জানালো যে, ছেলেটা বেশ ভাল,সে গাড়ির ড্রাইভার, ভাল পয়সা রোজগার করে; তার বাড়ীতে তিনজন মাত্র সদস্য, সে, তার বাবা এবং মা। ঘটক ছেলের ছবি তার মাকে দেখাল। রিনার মা ছবিটা দেখে ছেলেটাকে পছন্দ করল তারপর ঘটককে বলল যে, ছেলেটার ছবি তার মেয়েকে দেখাবে তারপর যদি তার মেয়ে তাকে পছন্দ করে তবেই তিনি বিয়েতে মত দিবেন। ঘটক রিনার মায়ের কথা শুনে ছবিটা রেখে চলে গেল। রিনা একটু তার বান্ধবির বাড়িতে গিয়েছিল, সে তার বান্ধবির সাথে একথা সেকথা কতযে কথার ঝুলি নিয়ে বসেছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা; গল্প করতে করতে বাত্রি প্রায় আটটা বেজে গেল, রিনা তখন তাদের বাড়ীতে গেল। তার মা তাকে বলল যে, “হাত-মুখ ধুয়ে ভাত খেতে আয়”। রাত্রির খাবার খাওয়ার পরে রিনার মা রিনাকে ডাকল পাশের একটি ঘরে। রিনা আসল এবং তার মায়ের পাশে বসল, রিনাকে তার মা পাত্রের ছবিটা দেখিয়ে বলল যে, তার পছন্দ হয়েছে কি-না। রিনা তার মাকে লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল যে, তার পছন্দ হয়েছে। রিনার মা বলল যে, এই ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ের কথা পাকাপাকি করব তোর আপত্তি আছে কি-না?
রিনা তার মাকে বলল, তার আপত্তি নাই। তার পরের দিন ঘটক আবার রিনাদের বাড়িতে আসল। রিনার মা ঘটকের জন্য নাস্তা নিয়ে এসে তাকে দিল। রিনার মা আর ঘটক দুজনে নাস্তা খেতে খেতে বিয়ের সম্পর্কে কথা বলতে লাগল। রিনার মা বলল তার মেয়ে, ছেলেটাকে পছন্দ করেছে। ঘটক একথা শুনে খুব খুশি হল। ঘটককে রিনার মা বলল, “আমাদের ত ছেলেকে পছন্দ হয়েছে কিন্তু ছেলেরকি তার মেয়েকে পছন্দ হবে”? ঘটক হাসি মুখে বলল পাত্র তার মেয়েকে দেখেছে এবং সে তাকে পছন্দও করেছে। রিনার মা ঘটককে বলল, “তাহলে ছেলের বাবা-মা আমাদের বাড়ীতে আসুুক এবং তার মেয়েকে তারা দেখে যাক”। ঘটক এই কথা শুনে বলল যে, “তাহলে আমি তাদের সাথে আলাপ করে দিন ক্ষন ঠিক করি তার পর আপনাদেরকে জানাব”। ঘটক এই কথা বলে রিনাদের বাড়ি থেকে প্রস্থান করল। ঘটকের নামটাইত বলা হলনা, যাহোক , ঘটকের নাম মিসের আলী। মিসের আলী বাড়ীতে গিয়ে গোসল করল তারপর খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় একটু আরাম করতে লাগল । এমন সময় তার বৌ তাকে রিনার বিয়ে সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। মিসের আলী তার বৌকে বলল যে , “পাত্র এবং পাত্রী তাদের উভয়ের উভয়কে পছন্দ হয়েছে এবং তাদের বিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যেতে পারে”। মিশেরের বৌ তার এই কথা শুনে খুব খুশি হল। মিশের তার বৌকে বলল যে, সে আগামি কালকে সোহেলের বাড়ীতে যাবে । সোহেলের পরিচয়টা মনেহয় দেয়া হয়নি, যাহোক, সোহেল হল রিনার পাত্র। মিসেরের বৌ তাকে জিজ্ঞাসা করল যে, সে তাদের বাড়ীতে কেন যাবে। মিসের বলল যে, ছেলের মা-বাবাকে মেয়েদের বাড়ীতে আমন্ত্রন জানাতে। মিসের আলী খুব একটা নামি দামি ঘটক নয় তবুও তাকে অনেকে চেনে। সে পেশায় একজন মুদিখানার দোকানদার ; তার দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলে দুটো বেশ বড় এবং তারা তার দোকানটি চালায়। সেকারনে মিসের আলী তার সময়াটা ইচ্ছামত ব্যায় করে। সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত্রি নেমে আসল। আলোতে ভরপুর এই পৃথিবীটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। মিসের আলী চায়ের দোকানে এক কাপ চা খেয়ে বাড়িতে আসল। মিসের আলীর একটি রোগ ছিল, যার নাম ডায়াবেটিস তাই সে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটু মানা বাছা করে চলে। মিসেরের বৌ তাকে জিজ্ঞাসা করল যে সে রাতে কি খাবে, ভাত না রুটি। মিসের তার বৌকে বলল সে দুটি রুটি খাবে। মিসেরের বৌ তার জন্যে তিনটি রুটি বানিয়ে নিল এবং একটি বাধাকপি ছিল সেটাকে অর্ধেক করে নিয়ে ভাজি বনাল। আসলে বাধাকপি ভাজি দিয়ে রুটি খাওয়ার যে কি মজা সেটা যে খায়নি , সে বুঝবেনা ! মিসের আলী পান চিবুতে চিবুতে তার বৌকে বলল , “কইগো , খাবার কি হল”? তার বৌ তাকে বলল যে, “হ্যাঁ হয়ে গেছে, খেতে দিবকি”? মিসের বলল , হ্যাঁ দাও খেয়ে নিই”। মিসেরের বৌ তাকে খেতে দিল। মিসের দুটি রুটি দিয়ে বাঁধাকপি ভাজি খুব মজা করে খেল। মিসেরের বৌ ও তার তিন ছেলে মেয়ে একসাথে রাতের খাবার খেল ; রাতে তাদের তরকারি ছিল বেগুন ও আলু ঘাটি। বেগুন আলুর ঘাটি ও খুব ভাল তরকারি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মিসের ও তার বৌ একসাথে ঘুমিয়ে পড়ল । পরের দিন মিসের সকাল বেলা সোহেলদের বাড়ীতে যাবে বলে প্রস্তুত হল। মিসেরের বৌ মিসেরকে সকালের নাস্তা দিল। মিসের সে নাস্তা খেয়ে সোহেলের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সোহেলদের বাড়ীতে গিয়ে মিসের তাদের সাথে কথা বলে একটি দিন ধার্য্য করল। দিনটি ছিল শনিবার। মিসের সোহেলের বাড়ীতে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হল। বাড়ী আসতে তার বিকেল হয়ে আসল। পরের দিন মিসের রিনাদের বাড়ীতে গেল, বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে বলল যে ছেলের বাবা- মা শনিবারে আসবে। মিসেরের মা তার কথা শুনে খুব খুশি হল।
ঠিক শনিবারে সোহেলের বাবা-মা রিনাদের বাড়ীতে আসল এবং তারা রিনাকে দেখল। তাকে দেখার পর তারা তাকে পছন্দ করল। সোহেলের বাবা-মা রিনার বাবা-মা কে বলল যে, তারা বিয়ের জন্য বেশি দেরি করতে চায়না । রিনার মা তাদেরকে দুপুরের খাবার খেয়ে যাবার জন্য অনুরোধ জানাল। সোহেলের বাবা-মা তাতে আপত্তি জানালনা। রিনার বাবা বাজার থেকে একটি বড় রুই মাছ কিনে নিয়ে আসল। দুপুরে রুই মাছটি রিনার মা খুব ভাল করে রান্না করল এবং তারা সবাই মিলে খেল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সোহেলের বাবা-মা একটু বিশ্রাম নিল। বিশ্রাম করার পর বেলা চারটার সময় তারা রিনাদের বাড়ী থেকে রওনা দিল। ঠিক পনের দিন পর রিনার বিয়ে সম্পন্ন হল। বিয়েতে অনেকে এসেছিল; বেশ ছোট একটি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে রিনার বিয়ে হল। সোহেল বিয়ের পরে রিনাকে খুব ভাল বাসত। রিনা সেই ভালবাসার অবলম্বনটুকু নিয়ে বেশ হাসি খুশিতে দিন কাটাত। সোহেলের পরিবারও রিনাকে খুব ভাল বাসত। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল দুটি বছর। রিনার কোলে এলো ফুটফুটে সুন্দর একটি সন্তান । রিনার সময় তাকে নিয়েই বেশ কাটত , এভাবে পেরিয়ে গেল আরো দুটি বছর । রিনার পুত্র সন্তানটি বেশ বড় হল। সোহেল তার ছেলেকে নিয়ে সকালে মাঝে মাঝে বাইরে বের হত। শিতের দিন সকাল বেলা সোহেলের মা ভাপা পিঠা তৈরি করছিল এবং সেখানে সোহেল ও সোহেলের ছেলে উভয়ে বসে পড়ল ; বসে বসে তারা ভাপা পিঠা খেল। দুপুর বেলা সোহেলের মোবাইলে রিং বাজল, তার মহাজনের। মহাজন তাকে রাত্রে ট্রাকে করে ঢাকায় টমেটো নিয়ে যেতে বলল। সোহেল বলল ট্রাক নিয়ে টমেটো বোঝায় করতে যাবে কি-না। মহাজন বলল বিকেলে টমেটো বোঝায় করতে। সোহেল তাতে সম্মত হল। দুপুরে খাবার পরে তার স্ত্রী এবং বাবা-মার কাছে বিদায় নিয়ে টমেটো বোঝায় করতে গেল। টমেটো বোঝায় করতে করতে রাত্রি আটটা বেজে গেল; তার পর সোহেল ট্রাক স্টার্ট করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সোহেলের সাথে চারজন হেলপার ছিল। ঘন কুয়াশা যেন আকাশের মেঘ মালা ভেঁসে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। সোহেল যথারিতি ট্রাকের হেড লাইট জ্বালাল এবং হলুদ লাইটও জ্বালাল। সোহেল ধিরে ধিরে গাড়ী চালাচ্ছিল কিন্তু রাস্তার একটি জায়গায় একটু বাঁকা ছিল সেখানে অপর দিক থেকে আসা একটি ট্রাক সোহেলের ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। ট্রাকের মালামাল সবগুলো রাস্তায় আছড়ে পড়ে, বিভৎস একটি দৃশ্য ; উভয় ট্রাকের ড্রাইভার সেই এ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। হেলপার গুলোর মদ্ধ্যে অনেকে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং নিকটবর্তি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোহেলের বাবাকে সোহেলের একজন হেলপার এই দুঃসংবাদটি দেয়। সোহেলের বাবা এবং তার পরিবারের সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সোহেলের মৃত দেহ তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয় এবং যথারিতি তাকে কবর দেয়া হয়। রিনার স্বামী মারা যাবার পরে সোহেলের মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলনা বরং তারা আরো কাছে টেনে নিয়েছিল। সোহেলের পরিবারের ব্যয় যা হত তার সিংহভাগই সে যোগান দিত কিন্তু সোহেল মরে যাবার পরে তাদের সংসারে টানাপোড়েন দেখা দিতে লাগল। সোহেলের স্ত্রী রিনা দর্জি বা সেলাইয়ের কাজ শিখল তারপর তার বাবার কাছে একটি সেলাই মেসিনের জন্য আবদার করল। তার বাবা তাকে সেলাই মেসিন কিনে দিল। এখন রিনা সেলাই মেসিনে ভাল আয় করে। তার আয়ের কিছু অংশ তার পরিবারের জন্য খরচ করে আর কিছু অংস জমায় ভবিষ্যতের জন্য। রিনা তবুও সুখিনা; যখন সে তার স্বামীর ছবিটা দ্যাখে তখন তার দুচোখ বেয়ে অস্রু গড়িয়ে পড়ে। এই হৃদয়ের ব্যাথার বুঝি অবসান নেই।
ইতি
১৫ মার্চ - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪