ক্ষুৎপীড়িত

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

বিন আরফান.
  • ১০০
  • ৭৪
মোরগটা তখনো ডাকেনি। জোনাকি ঝি ঝি শব্দ কানে ঠিকই আসছে। সূর্য উদিত না হলেও আকাশের অন্ধকার ভাব কিছুটা কেঁটেছে। ছয় বাই ছয় চোঁখের জোড়ে আলো কিঞ্চিত দেখা যায়। কয়লা দিয়ে দাত ঘষতে ঘষতে পুকুর ঘাটে কাঠের সিঁড়িতে বসে মুখ ধৌত করলেন ত্বহা ত্বসীনের বাবা। সহধর্মিনীর আচলে থাকা চাবির শব্দে তার বুঝতে বাকি রইল না সে তার পূর্বেই ওঠেছে। ভাবল ঘরে দানা পানি কিছু তৈরী হচ্ছে। তাই কুলিটা গড়গড় করেই করে নিলেন। লাউ পাতা দিয়ে শিং মাছের ঝোল সকালে খেতে তার ভাল লাগে। নাকে তেমন একটি ঘ্রাণ পেল। জিবে জল আসা যাকে বলে তার চেয়েও বেশী তৃপ্তি হবে বলে অনুভব করে হাতটা এঁটেল মাটি নিয়ে ভালভাবে কচলাতে লাগল।

আলো অন্ধকার, আশে পাশে কেহ নেই তাই ভেবে লুঙ্গিটা উপরে তোলে মুখটা আলত মুছে নিল। ঘরে বিদু্যৎ নেই। বিদু্যৎ অবশ্য আগেরমত আর প্রতিনিয়ত যায় না। লোডশেডিং এখন তেমন একটা হয় না বললেই চলে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বলে কথা। এখন বিদু্যৎ মাঝে মধ্যে আসে। তাই কুপিটা ঘরের মেঝেতে জ্বালানো আছে।

পুকুর পাড়ে যে সুঘ্রানটি নাকে হানা দিয়েছিল ঘরে এসে কেরোসিন পোড়া গন্ধ ছাড়া নাক বার বার টেনেও নাকে সেই ঘ্রাণ ধরাতে পারল না।

তার স্ত্রী অতি মহিয়সী। বিদ্যা, পর্দা, ধর্ম, কর্ম আর স্বামীর প্রতি যত্নে যার কমতি নেই। প্রেমের বিয়ে কিনা তাই। ভালবাসা সে গুনের নাম, তার সব কটি গুনই তার মধ্যে বিদ্যামান। নামটিও মধূর কোহিনুর । পৃথিবীর মূল্যবান রত্ন পাথরের নাম। দেখতেও বেশ। রাতের আঁধারে তজবীহ দানা যেভাবে আলো ছড়ায়ে ফুটে থাকে তেমনি তার দেহ খান বটে। যাকে বলা যায় অতিব সুন্দরী। এ চামড়া সাদা সুন্দর নয়, রূপে-গুণে-মনে সুন্দর বলতে যা বুঝায়। তাই অলংকার ছাড়াই তাকে খুব মানায়। যদিও অলংকার নেই।

সামান্য নুপুরের ঝংকার স্ত্রীর পা থেকে সে কোন দিন শুনতে পায়নি। তাই ঘরে ঢুকে তাকে না দেখে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে বধুটি কোথায় ? রান্না ঘরে প্রবেশ করল, যেখানে পাওয়া যায় কিনা। সেথায়ও নেই। চুলার উপরে পলিথিন মোড়ানো। মোড়াতেতো হবেই, বৃষ্টি হলে যে রান্না ঘরে পানি প্রবেশ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। ভাবল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেছে কিনা ? একটু উকি দিয়ে দেখে ছোট ঘরের পাটের চটটির তিন কোনা খোলা। তাহলে গেল কোথায় ?

এমতাবস্থায় কন্তুরীর গন্ধ নাক দিয়ে কলিজা পর্যন্ত বিধে গেল। সে বুঝতে পারল বউটি এসেছে। তাকিয়ে দেখে তাই। কিন্তু ললনার চাঁদ মুখে চাঁদের ন্যায় দাগ চিহ্ন আবিস্কার করতে পেরে ভুরু কোচকাতে লাগল। ময়না পাখি কোথায় ফুল কুঁড়াতে গিয়েছিল জানতে চাইতে না চাইতেই খই ফোটা শব্দ না করে চোখে আলত চাপে নাকের সাথে চোখের কোনে বৃষ্টির ফোটা প্রদর্শনসহ আলপিন মাটিতে পড়লে যে আওয়াজ তেমন মৃদু স্বরে বলল-পাশের বাড়ির চাচীর নিকট গিয়েছিলাম। শিং মাছের ঝোল পাক করেছে বুঝতে পেরে। তুমিতো সেটা পছন্দ কর তাই। এছাড়া কি খেয়ে বের হবে ঘরে শুকনো চালও নেই। চোঁখে মুখে না করে দিল। জানিয়ে দিল এখনও সে পাক বসায়নি। না দেখার ভান করে চলে এলাম।

ত্বহার বাবার খাওয়ার আকাঙ্খা আকাশে উড়ে গেল। বধূকে বুকে টেনে সুধালো খেয়ে যে স্বাদ পেতাম তার চেয়ে শতগুণ স্বাদ পেয়েছি তুমি আমাকে বুঝতে পারায়। আর ক্ষুধা সেতো তোমাকে দেখলেই নিবারন হয়ে যায় এই বলে কপালে সোহাগ দিয়ে সালাম জানিয়ে আল্লাহর নামে বের হল কর্মের সন্ধানে। কোহিনুর জানিয়ে দিল সকাল সকাল ফিরতে। নতুবা ছেলেরা না খেয়ে ক্ষুধায় তাকে যন্ত্রণা দেবে। যদিও খুব শান্ত । যারা জানে না তাদের ধারণা এই ঘরে আটকুড়া ও বন্ধা দুইয়ের বসবাস। জমজ দুই ছেলে থাকলেও কোন চিৎকবার চেচামেচি নেই। যেন দু'টি টুনটুনি পাখি। তবে অনাহারে থাকার মাত্রাটা যখন অতি মাত্রায় পরিনত হয় তখন একটু টুন টুন করে, তবে কাঁদে না। আচল ধরেও টানে না।

গাঁয়ের মসজিদ ফজরের আযান আল্লাহু আকবার শব্দদ্বয়ের জবাব দিতে না দিতেই ত্বহা ত্বসীন সমস্বরে জানতে চাইল বাবা চলে গেছে ? হ্যা বোধক উত্তর দিলে নরম স্বরে আবারো জিজ্ঞাসন না খেয়ে গেছে, তাই না? মা তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- হাত মুখ ধুয়ে পরিস্কার হয়ে তৈরী হয়ে নাও কোরআন শিখতে মক্তবে যাবে। বিলাতি ইদুরের ন্যায় দ্রুত চলে গেল মায়ের আদেশ শুনে। কি আশ্চর্য বাবার প্রতি অদ্ভূত ভালবাসা। নিজের খাওয়ার খাবর নেই বাবার জন্য অস্থির।

ত্বহা ত্বসীনের বাবা তথা নোয়াদ্দা সাহেব হেটেই চলতে শুরু করলেন পাঁচ কিলোমিটার পথ। উদ্দেশ্য শহর। নোয়াদ্দা অবশ্য তার দাদির দেয়া নাম। সনদ নাম ভিন্ন তা নাইবা বলি। নোয়াদ্দা হাটছেন আর মনে মনে জপছেন - হে খোদা একটা কাজ মিলায়ে দাও। হে খোদা একটা কাজ মিলায়ে দাও। তার হাটার গতি খুব দ্রুত । শহরে পৌঁছলেন। হাপিয়ে গেছেন বোধ হয়। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে তৈরীকৃত যাত্রী ছাউনীতে বসলেন। সীট ফাঁকাই ছিল। অন্যদের বসার আগ্রহ নেই। সকলেই বাসের অপেৰায় দণ্ডায়মান। যাত্রীর তোলনায় বাসের হার কম, যদিও গাড়ির তুলনায় রাস্তা ফাঁকা কম। তবে সেগুলো নবাবী গাড়ি। যার নিকট দশ লক্ষ থাকে সেই নবাব। আর প্রথমেই কিনে গাড়ি। থাকে অবশ্য ভাড়া বাড়ি।

নোয়াদ্দার বিশ্রাম আর তড়ান্বিত করা যাবে না। কর্ম সন্ধান যে তার মূল লক্ষ্য । ওঠবে মনস্থির করলে এমন সময় টাই স্যুট পড়া এক ভদ্রলোক তার নিজের ফাইলটি নোয়াদ্দার নিকট দিয়ে কনিষ্ঠ আংগুল উচিয়ে বুঝাতে সৰম হয়ে আড়ালে চলে গেল। জল রঙের প্লাস্টিক ফাইলের উপরেই ছিল ভদ্রলোকটির এমবিএ সনদ। টিস্যু চেপেই লোকটি ফিরে এল। হয়তো সন্দেহে ছিল যদি চলে যায়। সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশ্বাস শব্দটি এখন শুধু বই পুস্তকেই পাওয়া যায়।

নোয়াদ্দা লোকটির নিকট কোথায় যাবেন জানতে চাইলে উত্তরে সে বলে তার একটি মৌখিক পরীক্ষা আছে। সে বাড়ির বড় ছেলে, চাকুরীটা না হলে লেখাপড়া করানোর জন্য তার বাবার করা ঋণ পরিশোধ হবে না। অপরদিকে ভরণ পোষণতো আছেই। এদিকে বাস নেই, পরীক্ষার এক ঘন্টা বাকি। এখান থেকে যেতেই প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে যাবে। যেভাবেই হোক পরের বাসে ওঠবে বলে ফাইলটি নিয়ে চলে গেল রাস্তার উপর।

ভাগ্য ভাল রাস্তায় দাড়ানো মাত্রই বাস চলে এল। বাসের মধ্যে যাত্রীদের জনসমূদ্র। ভিতরে হাত ঢুকানোর জায়গা নেই, গেইটে পা ফেলারও। তবুও বাসটি থামালো, কেননা একজন নামবে। ভদ্র লোকটি জরুরী বিধায় বাসের গেটের সিঁড়িতে কোন মতে এক পা দিয়ে হাতলে ধরে বাদুরের মত ঝুলে রইল। এমনি সময় এক নবাবের মাইক্রো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলেও ফুটপাত ঘেষে বা পথে চালিয়ে দ্রুত চলে গেল। বাসটিও ছেড়ে দিল।

ঝুলন্ত ভদ্রলোক নীচে পড়ে রইল। মাথার খুলি একদিকে শরীর আরেক দিকে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন। কর্তব্যরত পুলিশ তাৎৰনিক লাশটি সরিয়ে নিল। এটা যে তাদের দায়িত্বে পড়ে তাই।

এমবিএ করা চাকুরী সন্ধানী লোকটির মগজ রাস্তায় পড়ে রইল। নোয়াদ্দা বিস্মিত হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। প্রায় আধা ঘন্টা শব্দহীন এক স্থানেই স্থির হয়ে দাড়ানো। হঠাৎ যা দেখে তিনি আল্লাহু আকবর পড়লেন তা হলো- জনতার পায়ের নীচে পড়তে পড়তে এমবিএ করা মগজটি ধূলিতে পরিণত হল। ভেজা ভেজা চিহ্ন থাকলেও রোদ্রের তাপে তাও শুকিয়ে গেল। নোয়াদ্দা হায়রে জীবন বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রওয়ানা দিলেন আপন কর্ম সন্ধানে।

অ'তে অজগর থেকে চন্দ্রবিন্দু চাঁনসহ দুই এক কলম লেখাপড়া জানতো বেচারা। একের পর এক কারখানায় টিনের সাইন বোর্ডে শিল্পির তুলিতে বর্ণ সাজানো আছে কর্ম খালি নাই পাঠ করে অন্যত্র ছুটে। কোন কাজ না করেও ক্লান্ত পরিশ্রান্ত । একেবারে হাপিয়ে পড়েছে। তাতো চলবেনা। অন্ন সংগ্রহ না করে বাড়িতে ফেরা, তা কি করে হয়। সিদ্ধান্ত নিল কাঁচা বাজারে কুলির কাজ করবে। সেখানে সাহেবগণ কুলি ডেকে তার হাতে বাজার ধরিয়ে ধরিয়ে ক্রয় সম্পাদন করে। এক বোজা গাড়িতে তুলে দিলে পাঁচ টাকা। এরূপ বিশটি পেলেই একশত টাকা।

মনে মনে কি খুশি। কাজ পেয়ে গেছে। সে এই জানতো না বোজা বহন করার জন্য যে পাত্র প্রয়োজন তা তার কাছে নেই। তার পরেও কাজ একটি পেয়ে গেলেন। পঞ্চাশ কেজী ওজনের একখান চালের বস্তা এক ভদ্রলোকের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। পাঁচ নয় বিশ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু নোয়াদ্দার ধারণ ক্ষমতা বিশ কেজী। হালকা বাজারের মিনতি কাজ করার লক্ষ্যেই সে এসেছে। তাতে কি টাকা তো বিশটা। মনের জোড়ে মাথায় তুলে নিল।

হাটছে আর ভাবছে এরকম দশটা টিপ দিতে পারলে দুইশত টাকা। আধা কেজী গরুর মাংশ কিনে নিয়ে যাব। গত শুক্রবার ছেলে দু'টি খেতে চাইছিল।

সে এক মজার কাহিনী। নোয়াদ্দার ছেলে দুইটিকে গত শুক্রবার পাশের বাড়ির একখালা নিয়ে যায়। ওরা খুব কিউট কিনা তাই। ছেলেরা ঐ বাড়িতে থাকা অবস্থায় দেখে সে বাড়ির রান্না ঘরে অন্য একজন গরুর মাংশ পাকাচ্ছিল। কী সুঘ্রাণ যেন জি্ববে জল এসে যায়। স্বাদ অনুভব করে ঢোগর গিলতে লাগল। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসও করেছিল গরুর মাংশ পাকাচ্ছে কিনা। অবশ্য মহিলাটি তাদের মনে খাই খাই লোভ দেখে এক টুকরা সেদেছিল। ওরা খায়নি। কেননা মা বাবার অনুমতি ছাড়া অন্যের দেয়া খাবার তারা খায় না। ছেলেরা বাড়ি ফিরে কেঁদে কেঁদে মা'কে জানালো মাংশ পাকের কথা, ওদের নাকি খেতে খুব ইচ্ছে করছিল। একবার খেতে বলেছিল, চক্ষু লজ্জায় না করেছে। আর একবার বললে খেত। কিন্তু বলেনি। মায়ের কাছে জানতে চাইল বাবা আমাদের জন্য গরুর মাংশ আনবেনা ? ঐ বাড়িতে রেধেছে খুব মজা। কোহিনুর বলল- অন্যদের খাবার দেখে লোভ করা ঠিক না। অপদার্থ নোয়াদ্দা কথোপকথন শুনে আমতা আমতা করে বললো তোমাদের তো এলার্জি, মাংশ খেলে তা বেড়ে যাবে। ছেলেরা বুঝতে পারালো সত্যিইতো তাই।

নোয়াদ্দা ছেলেদের মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়েই পুকুর পাড়ে চলে গেল। ঘন ঘন মুখ ধৌত করছে যেন চোঁখের জল কারো নজরে না পড়ে। এই ভাবনা শেষ করতে না করতেই নোয়াদ্দা রাস্তা সংলগ্ন ড্রেনে পা পিছলে পড়ে গেল। চালের বস্তাটিও ময়লা পানিতে। বিশ টাকা তো বহুদূর চালের দাম দিয়ে আসতে হয় নাই সেটা তার সৌভাগ্য। চোর ধরার মত হালকা পাতলা যে কয়টা চায় চটকনা খেয়েছে কালো শরীরে তা ভেসে না আসলেও কান গরম অনুভব করছে। পিপাসা সে তো উত্তম-মাধ্যম খাওয়ার সময়ই পেয়েছে। কিছু খেলে ডাক্তার বলে বেশি বেশি পানি খেতে হয়। নোয়াদ্দাও ব্যতিক্রম কিছু করেনি। ডাক্তারের উপদেশমত চলে বলেও মনে হলো।

এক কর্ম সম্পাদনে সে সুনাম অর্জন করেছে এই বাজারে আর কেহ কাজ দেবে বলে তার মনে হলো না। বাজার বাজারান্তর শুরু হয় কর্ম খোঁজা। তার সমস্ত চিন্তা চেতনা উপলব্ধিতে শুধু একটাই বারংবার, ঘরে বৌ বাচ্চারা কী খাবে ? টিউবওয়েলে থাকা রঙ স্বাদ গন্ধ বিহীন তরল খাবার ছাড়া ঘরে তো আর কিছুই নেই। এরই মধ্যে এক ভিক্ষুক সামনে এসে হাজির। কাব্যের ছন্দে ভিক্ষুক ভিক্ষা চাচ্ছে। অন্যের পকেটের টাকা নিজের পকেটে আনা, দিল নরমের একটু বেপার সেপার আছে না। তাই ভিক্ষা চাওয়ার ধরনটা এরূপ ছিল-
'দিবেন বাবা দিবেন ? যাহা চায় মন,
ঘরে ক্ষুধায় কাতর মোর বাছাধন।'

কি তামাশা নোয়াদ্দাও তালে তাল মিলায়ে-
'কীযে বলি তোরে বাপ! তুমিও যেমন
সেই একই ব্যথায় আমিও স্বয়ং।'

সেয়ানে সেয়ানে বাক বিতর্ক। ভিক্ষুক লজ্জা দেয়ার জন্য তার থলে থেকে আধখান রুটি বের করে দিয়ে বলল তাহলে রুটিটা আপনি খেয়ে নিন। আমি শেখ বাড়িতে দুপুরে পোলাও খাব। সেখানে দাওয়াত আছে।

তামাশা করার ছল দেখিলে নোয়াদ্দা রুটিটি খেয়ে নিয়ে বলল- যাও এবার খুশিতো ? ভিক্ষুক চলে গেল। নোয়াদ্দা ঢেগর তোলে খোদার শোকরিয়া করল আলহামদুলিল্লাহ পেটে কিছু পড়ল তাহলে। সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপা। কোন প্রাণীকেই না খাইয়ে রাখেন না। একভাবে না একভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকেন। শরীরের বল ফিরে পেয়েছে। নিজেকে স্বতেজ অনুভব করল। আবারো কর্ম সন্ধানে মনোনিবেশ করল।

সারাদিন কর্ম সন্ধান করতে করতে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। নোয়াদ্দার ভাগ্যে আজ আর কর্ম ধরা দিল না। হতাশায় আকাশ পানে এক পলক তাকিয়ে খালি হাতে ফেরার দুঃখ মনে নিয়ে হাটা শুরু করল। সন্তান স্ত্রীর কথা ভাবছে আর হাটছে। দামি দামি শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে গা ঘেষে পাশ কাটিয়ে গেলেও তার ঘাম শরীরে ঝড়েই চলেছে। নানান তারকা চিন্হিত হোটেল রেস্তোরা হতে খাবারের ঘ্রাণ নাকে আসলেও তার ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে বলে মনে হলো না।

অনাহার আর ক্লান্তির ছাপ সমস্ত শরীর জুড়ে। ফেরার পথে এক বন্ধুর সাথে দেখা। প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের বন্ধু। তেমন চলাফেরা এখন নেই। বন্ধুটি কুশল বিনিময় করলে নির্লজ্জের মত সুযোগে পঞ্চাশ টাকা ধার চেয়ে বসল নোয়াদ্দা। আগামীকাল ফেরত দেবে যদিও পারবে কিনা নিশ্চিত নয়, তবুও তাই জানালো। বন্ধুটি পঞ্চাশ টাকা নয় ত্রিশ টাকা আছে বলে পকেট থেকে বের করে দিল।

ঈদে চাঁদ ওঠা দেখে যত না আনন্দিত হই তার চেয়ে বেশী আনন্দিত নোয়াদ্দা। এক সের চাল আর আধা কেজী পটল কিনে রওয়ানা দিল বাড়ির অভিমুকে। সূর্য ডুবার পূর্বেই ঘরে ফিরলেন।

হাতের বাজার দেখে ছেলেরা মহা আনন্দে মাতোয়ারা। যেন অমাবস্যার চাঁদ দেখতে পেল। কী মজা হবে। রাতে পটলের খোসা ভর্তা ! দুপুরে পটল ভাজি ! সকালে যে খেতে হয় তা অবশ্য তারা ভুলে গেছে।

কোহিনুর আচল ভিজিয়ে নোয়াদ্দার ঘর্মাক্ত কপালের ঘাম মুছে দিতে আলত পরশ দিলেই নোয়াদ্দার চোঁখ হতে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের ন্যায় গাল বেয়ে পানি ঝড়তে লাগল। আচল গরম অনুভব করে স্ত্রীও দুই এক ফোটা ফেলে মাথাটি বুকে রাখবে এমন সময় নোয়াদ্দার চাচা ঘরে এসে হাজির। কিছু টাকা ধার দিতে পারবে কিনা জানতে চাইল। সেই সাথে তার নামে একটি নালিশ এসেছে সেটাও বলল। নালিশটি এই যে, নোয়াদ্দা নাকি তার বাবা মার ভরন পোষণে কোন খোঁজ খবর নেয়না। তারা খুব কষ্টে আছে এই তথ্যটি নোয়াদ্দার নিকট জানালে নোয়াদ্দা কোনটার উত্তর কিভাবে দেবে ভাবছে।

বিঃদ্রঃ গল্পটি আমার লেখা জগতের প্রিয় বন্ধু যার অনুপ্রেরণায় লেখা চালিয়ে যাওয়া জনাব ধীমান বর্সাক কে উৎসর্গ করলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম বড় নিঠুর বাস্বতা ! নোয়াদ্দাকে আর কি বলব, একজন ১ম শ্রেণীর সরকারী অফিসার ১১০০০ টাকা বেতন পায়।৩০ বা ৩১ দিন এই টাকা দিয়ে সে খাবে কি ? ২ টা বাচ্চার উপায় কি ? বউটা না হয় তার সাথে পানি খেয়েই কাটাল । কেননা এই বেচারার চেয়ারে ঘুষের কোন ব্যবস্থা নেই। সেখানে এই লোকের বাবা মায়ের হাতে যখন বেতন পেয়ে একটা টাকা দিতে পারে না, তখন বলে, এভাবে বেৌ এর আচলের তলায় গেলিরে নপুংসক ? থূ --- । এর চেয়ে তার শেখের বাড়ি দাওয়াত খাবার সাথী হলেই তো ভাল হত । এ লজ্জা রাখবার কোন জায়গা আছে ? ধন্যবাদ আপনাকে ।
বিন আরফান. ভোটিং বন্ধ ছিল অথচ পয়েন্ট ৫. দারুন লাগছে.
মোঃ শামছুল আরেফিন তীব্র আবেগ আর বেদনা স্পর্শ করে গেলে যেন। প্রতিটি লাইনই খুব ভাল লেগেছে। বাস্তবতার করুন এক নিদর্শন আপনার গল্পটি।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Fatema Tuz Johra আরো একবার কঠিন বাস্তবতাকে মনে করিয়ে দিলেন...ভালো লিখেছেন.
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
খোরশেদুল আলম সকালের নাস্তা ভুলে যাওয়াটা অভাবের একটা মহৎ গুণ হিসাবেই নিলাম কারণ এই পৃথিবীতে খাদ্যের স্তুপে ডুবেও বিত্তবানরা মরছে তাই সেখানে উনি এই মহৎ সুযোগ পান না। যথেষ্ট ভালো মানের এবং খোলাখুলি প্রাণবন্ত একটি গল্প। ভোট বন্ধ রেখেছেন তাই শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
বিন আরফান. ইনশা-আল্লাহ আপনার আদেশমত চলব বোন dr.suraiya helen
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ডাঃ সুরাইয়া হেলেন আপনার গল্প লেখার হাত ,আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে ।চর্চাটা রাখবেন আশা করি ।শুভকামনা ।
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
বিন আরফান. শুকরিয়া সহযাত্রী হবার জন্য. তবে রুটি কিন্তু দেবনা. @ রোদেলা শিশির (লাইজু মনি )
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
বিন আরফান. আমার দ্বারা ভালো কাজ কোনদিন অয়ও নাই . হা হা হা. এসেছেন এতেই খুশি.
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ওবাইদুল হক ভোট বন্ধ রিখি কাজটা ভাল করেন নাই । আমি মনে করি ।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪