বর্ষার মৌসুমে ঝড়-তুফান তেমন না হলেও প্রবল বেগে বৃষ্টি বর্ষণ ঠিকই হয়। মাঝে মধ্যে ঘর-বাড়ীর উপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে বাতাসও বয়ে যায়। কোন কোন সময় তীব্র বাতাসে অসহায়-গরীবদের ঘর-বাড়ী উড়িয়ে নিয়ে যায়। বর্ষার মৌসুমে যেমনি বৃষ্টি হয়, তেমনি গরমের উত্তাপও বেশী। উত্তাপ গরমে মানুষ আবিস্কৃত ফ্যান চালিত বাতাসে গরম থেকে কিছূটা রেহাই পায়, কিন্তু আরামদায়ক নয়। তবে আল্লাহ পদত্ত এ প্রচন্ড গরমে বৃষ্টিভেজা সুশীতল নাতিশীতোষ্ণ বাতাসে তনুমনে প্রশান্তি পায়। যে আরামের শেষ নেই। ঘুম পাড়ানো সুশীতল সংমিশ্রিত মৃদু বৃষ্টির কোমল ছোঁয়ায় চোখের পাতা দু’টি মেলে না। শুয়ে শুয়ে এক বেহেশতী পরিবেশের পরমানন্দের সুখ পাচ্ছি। মাঝে মধ্যে চোখের পাঁতা মেলে বৃষ্টির অবলীলাখেলা দেখছি। বর্ষার নিরিবিলি বৃষ্টিতে নদ-নদীর যৌবনে পরিপূর্ণতা এসেছে। টানা বর্ষনে নদীর পানির স্রোত তীব্র বেগে বয়ে চলছে অজানা দিগন্তে । তার শেষ কোথায় নদী নিজেও জানে না। গাছ-পালা, তরুলতা তার সজীবতা ফিরিয়ে দিয়েছে বর্ষার কোমল বৃষ্টির ছোঁয়ায়।
পুরো আকাশটা সর্বক্ষণ নীল না থাকলেও দিনের কোন এক সময় নীল হতে দেখা যায়। আর বর্ষা মৌসুমে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকাটাই স্বাভাবিক এবং তার সৌন্দর্য্য । দিবানিশি বৃষ্টিতে গ্রামগুলোর গলায় গলায় পানি। এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রামে যেতে হলে গ্রাম্য ছোট্ট নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। নৌকার মাঝি অল্প জায়গা পার হতে আগের তুলনায় এখনকার সময়ে ১টাকার স্থলে ৪টাকা ভাড়া নেয়। বর্ষাতে এভাবে পারাপারে গ্রামীন মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। তারপরও সংগ্রামী জীবনবাজি মানুষেরা এটাকেই স্বাদরে বরণ করে নিয়েছে। এই দুর্দিনে দূর-দূরান্তের মানুষগুলো প্রতি হাট-বাজারে এক সপ্তাহের বাজার করে ঘরে রেখে দেয়। বৃষ্টিতে ভিজে বাজারে আসতে জামা-কাপড় ভিজে নষ্ট হয়ে যাবে সেই ভয়ে ।
আমি কিন্তু বৃষ্টিভেজাকে ভয় করি না। বরং আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণ ভাল লাগে। আর সেদিন অফিস থেকে বাড়ী ফেরার পথে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ী ফিরেছি। বাড়ীতে এসে কাপড়-চোপড় খুলে বিছানায় পিঠ লাগিয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছি। প্রচন্ড গরম। ঘরের কোন দিক দিয়েই বাতাস বইছে না। গরমের তীব্রতায় জানালা খুলে দেই। বাতাস নেই বললেই চলে। তবে একটু পরই গরম হাওয়া বইয়ে যাচ্ছে অনুভব করতে লাগলাম। মনে হল বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে ভাল হবে। কারণ, আজ সকালে গোসল না করেই অফিসে চলে গিয়েছিলাম। আর আমার ছোটবেলা থেকেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে গোসল করার পুরনো সখ। এ সখটা এখনো শেষ হয় নি। আজও মনে সখ জাগে বৃষ্টির পানিতে ভিজে গোসল করতে। এ কথা বলতে না বলতেই পৃথিবীজুড়ে মেলানো ছাতা থেকে অঝোরে বৃষ্টি বর্ষিতে লাগল। সেই সাথে মৃদু হিমেল হাওয়াতে আমাদের উত্তপ্ত ঘরটি ক্ষণিকের মধ্যেই শীতল হয়ে গেল।
মাকে ডেকে বললাম। আম্মা আমি বৃষ্টির পানিতে ভিজে গোসল করতে চাই। যাব কি? আম্মা বলল, বাপু বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি-জ্বর হবে, জাসনে। আমি মাকে মিথ্যে শান্তনা দিয়ে বললাম, আম্মা আমার কিছুই হবে না। তবে যাই। এ কথা বলে দৌড় দিয়ে উঠুন প্রাঙ্গনে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গোসল করতে থাকি। কি যে আরাম! আহ্! যে কেউ এটা অনুভব করতে পারবে না। বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে গোসল করছি আর উঠুনে মনের আনন্দের আতিশয্যে লাফালাফি করছি। চিত্তবিনোদনের মাঝে এটাও একটা উপকরণ মনে করি আমি।
আমার শরীর বৃষ্টির পানিতে পুরোটা ভিজে নাই। অমনি দেখি বৃষ্টিপড়া বন্ধ। আমার মনে হল বৃষ্টিদাতা মহান প্রভূ আমার সাথে অভিমান করে এ কাজটা করেছে। বন্ধুর অভিমানে আমিও অভিমানী হয়ে গেলাম। বন্ধু মুচকি হেসে বলে আরে বন্ধু এত অভিমান করলে কি হয়? আমি বন্ধুকে বললাম তুমি কেন আমার পুরো শরীরটা ভিজার আগেই বৃষ্টি থামিয়ে দিলে? তুমি বৃষ্টি দিলে আমি অভিমান ছাড়ব। অন্যথায় অভিমানের শেষ কোথায় আজ দেখে নেব। এই বলে আমি অভিমান করে উঠুনের কর্দমাক্ত মাঠিতে বসে পড়ি। চোখ দু’টি বন্ধ করে মাটির দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে রাখি। একটু পরেই দেখি শাঁ শাঁ শব্দ করে বৃষ্টি নেমে এসেছে। ক্ষণিকের মুহুর্তেই আমার সারা বদনখানি পানিতে ভিজে শীতল হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করার মজাই আলাদা। আর আজকের অভিমানী বৃষ্টির পানিতে গোসল করা কতটুক মজা পেয়েছি, তা শুধু আমি ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না।
অঝোর ধারার বৃষ্টির ফাঁকে সহসা দেখি বৃষ্টির সাথে রোদের মাখামাখি হচ্ছে। যাকে আমি রোদেলা বৃষ্টি বলে জানি। রোদে মেঘে কোলাকোলি শিয়ালের বিয়ে এ কথার বাস্তবতা আজ স্বচক্ষে দেখতে পেলাম। এতদিন শুধু পাঠ্যপুস্তকে পড়তাম। আর শুনতাম। কোনদিন দেখিনি। আজ দেখলাম। বৃষ্টিতে ভিজছি আর এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছি। এ বর্ষাতে অনেক সময় পাড়ার ছেলেদের সাথে বৃষ্টিভেজা পুকুরের পানিতে গিয়ে গ্রাম্য ভাষায় “মুড়ি ফুটানো”র খেলা খেলতাম। আষাঢ়ের বর্ষাতে রিমঝিম বৃষ্টিতে অদূর মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলেছি। আজও পুকুরে খেলার জন্য গিয়েছিলাম। আম্মার নিষেধ পুকুরে বেশীক্ষণ থাকা যাবে না ভেবে বাড়ীর উঠুনে ফিরে আসি। উঠুন চত্বরে এসে ফুটবলের মত কিছু একটা নিয়ে ফুটবল খেলছি। আমি একাই। সাথে কেউ নেই। কারণ, আমাদের বাড়ীর মানুষদের পর্দার গুরুত্ব বেশী। তাই বাড়ীতে এনে কাউকে নিয়ে খেলার মত দুঃসাহস আমার হয় না। আজও হয় নি। বাড়ীর লোকদের এক্সারসাইজ বুঝিয়ে একটু খেলার সাহস করি। আমাদের পরিবারে খেলাকেও সমর্থণ করে না। কারণ, পা-টা যদি ভেঙ্গে যায় সেই ভয়ে বাড়ীর লোকজন আমায় খেলতে বাধা দেয়। আরও নানা কারণে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি তো আর এক হয় না, তাই।
চতুর্দিকে দেয়ালবেষ্টিত আমাদের বাড়ী। কোন আজেবাজে লোক আসতে মানা। আর আমার দাদুজি আল্লাহওয়ালা মানুষ। পরহেযগার। সব সময় নামাজে কালামে থাকেন। আমাদের বাড়ী ছিল কাকাইলছেও গ্রামের পার্শ্ববর্তী শরীফপুর গ্রামে। সেই বাড়ীর পড়শীরা সারাদিন অসহ্য ঝগড়া-ঝাটিতে লেগে থাকত। ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যাঘাত ঘটত বিধায় আমরা শহুরী গ্রাম কাকাইলছেওয়ে চলে আসি। এখানকার পরিবেশ খুব ভাল। শান্ত সুষ্ঠ। আবহাওয়া মানানসই। অনুকুল পরিবেশে থাকার পরও আমরা দেয়াল দেই শুধু আমাদের মুরুব্বী দাদুজির ইবাদতের সুবিধার্থে। তবে দেয়ালের দিকে মাথা উচিয়ে পার্শ্ববর্তী পাড়া পড়শীদের অবস্থা ঠিকই অবলোকন করতে যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে।
হঠাৎ আমার আনমনা দৃষ্টি আমাদের পাশের বাড়ীতে পড়ে। একটি সুন্দর যুবতী মেয়ে তার নাম জমিলা সেও আমার মত বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করতে আনন্দ পায়। তাই সে বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করছে। তাকে বৃষ্টিভেজা শরীরে দেখে খুব সুন্দর লাগছে। মসৃন চেহারা এবং দু’ঠোটের ফাঁকে মুক্তঝরা সুন্দর দাঁতের হাসি। আকাশের দিকে মুখ তুলে গায়ে পড়া ফরগের নীচটা ছাতার মত মেলে দিয়ে এক অসাধারণ সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। নেচে নেচে কি যেন গাইছে আর মৃদুভাবে কোমল পা দু’টি জমিনে রাখছে। আমি এক কোণে বসে তাকে দেখছি। আর চিন্তা করছি, কি সুন্দর! আল্লাহর সৃষ্টি জগত। আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আকাশ প্রান্ত থেকে এক ভয়াবহ আগুনী বিজলী দিয়ে চোখের পলক ফেলতে ফেলতেই বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এরপর আমি কিছইু বলতে পারিনি। দেখি আমি ঘরে বিছানায় জীবন্ত লাশ হয়ে শুয়ে আছি। শরীর কেমন কেমন করছে। কোন শক্তি পাচ্ছি না। উঠে দাঁড়াতেও পারছি না।
আস্তে আস্তে শুয়া থেকে উঠে মাকে বলি আম্মা আমি এখানে কি করে এলাম। মা বলল, বাবা তুই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে। কেমনে আম্মা? ভূলে গেছিস, তুই না বৃষ্টির পানিতে ভিজে গোসল করতে বের হয়েছিলে। এখন তুর কিছুই মনে নেই। না আম্মা আমার তো কিছূই মনে পড়ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করার সময় বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে তুই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে। এখন শুয়ে পড়, পরে এমনতেই সবকিছু মনে পড়বে। আচ্ছা আম্মা বলে আমি খাটের উপর শুয়ে পড়ি।
ঘুম থেকে উঠি বিকেল ৫টায়। মাথা ব্যাথা করছে ভেবে মাথায় হাত দেই। আমার মাথা ঘুরছে, সাথে মনে হচ্ছে পৃথিবীও ঘুরছে। পরক্ষনেই আমার ঘটে যাওয়া কাহিনী স্মৃতিপঠে ভেসে উঠে। মনে পড়ছে একেরপর সব কথা। সব শেষে মনে পড়ল আমাদের পাশের বাড়ীর মেয়েটির কথা। মনে মনে ভাবছি, না জানি কি হয়েছে? তার। কিন্তু কিভাবে খবর নেব। আর আম্মাকেই বা কিভাবে বলি। এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। ভাবি তাদের বাড়ীতে গিয়ে খবরটা জেনে আসব। সবেমাত্র কয়েকদিন হয়েছে তারা এসেছে কিভাবেই যাই। গেলে তারা অন্যকিছূ মনে করবে না তো? না থাক্। আম্মাকে বলার দুঃসাহসই বা দেখাই কি করে।
একটু আকটু পাহাড় সমান বুকে সাহস বেঁধে আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা আমাদের পাশের বাড়ীতে সবেমাত্র যারা এসেছে তাদের বাড়ীর মেয়েটির অবস্থা কেমন তুমি জান? সেও তো আমার মত বাড়ীর উঠুনে বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করছিল। আম্মা আজ রাগ করেন নি। যটফট উত্তর দিয়ে দিল এবং বলল সেই বাড়ীর মেয়েটি তুর মত বজ্রপাতে অসহ্য বিকট আওয়াজে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। মেয়েটি গুরুতর আহত হয়েছে। সে এখন হাসপাতালে আছে।
মেয়েটিকে এক নজর দেখে আসার জন্য আম্মাকে বললে আম্মা দু’চোখ রক্তলাল বর্ণের করে আমাকে বলে, সে তোর কি যে তাকে তুই দেখতে যাবে? আর সে তো বেগানা মেয়ে। তাকে দেখা তুর জন্য জায়েজও হবে না। আম্মার কথা এবং বেগতিক অবস্থা দেখে আমি আর কোন কথা বাড়িয়ে চোখের আড়াল হয়ে দূরে সরে যাই। মায়ের অবাধ্য হতে চাই না ভেবে মেয়েটির সাথে আর দেখা হল না। আজও জমিলা সুন্দরীর কথা মনে পড়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
M.A.HALIM
বর্ষার আমেজ, বৃষ্টিতে ভিজা, বজ্রপাতে অজ্ঞান হওয়া, জমিলাকে ভালো লাগা মায়ের শাসন মেনে চলা, সব কিছু মিলিয়ে বেশ সুন্দর। ভোটের মাধ্যমে অভিনন্দন।
বিন আরফান.
সিলেট বন্ধু সভা করার দায়িত্ব আপনি নিবেন. সার্বিক সহযোগিতা আমি করব. স্থান ও খরচ আমার. কোথায় করতে চান শুধু জানাবেন. তবে এমসি কলেজ বা জালালাবাদ সেনানিবাস হলে ভালো হয়.
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।