রুপালী ঝলমলে রূপবতী মেয়ে। ওর সর্বাঙ্গ জুরে ঝলমল করছে রূপের আলো। সেই সাথে একফালি ঝরঝরে হাসি ঠোঁটে ভেসে উঠতেই অসম্ভব এক ভালোলাগা তৈরি হয়। রুপালী এসবে নজর নেই। সে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে অজানা দ্বীপে হেঁটে চলে। বালুকাবেলায় তার নরম পায়ের ছাপ জল আসার আগ পর্যন্ত জানান দেয়, এই তো আমি।
আবিদ শুধু দেখেই আকাশ-পাতাল মুগ্ধ। ওর ছোট ছোট চোখ দুটো এত মুগ্ধতা ধরে রাখার জন্য জন্ম নেয়নি। চোখ দুটো আপনাতেই বন্ধ হয়ে যায়। কি যেন ভর করে, আবিদ সে অনুভূতি টের পায়। চুপ করে এই আবেশটুকু শুষে নিতে সে মুখিয়ে থাকে, চেয়ে থাকে।
রুপালি হাওয়ায় তার আঁচল উড়িয়ে হেঁটে চলে। সীমাহীন পদচারণয় ঐ আকাশ, সমুদ্র, পাহাড়কে ছোঁবে বলে ছুটে যায়। সমুদ্র গুনগুন করে গান ধরে, বাতাস এসে কবিতা শোনায়। পাহাড় এক রূপবতী সমুদ্র-কন্যাকে ছায়া দেবার অপেক্ষায় প্রহর গোনে।
সে প্রহর কি শেষ হবে!
অপেক্ষায় অপেক্ষায়-
কোনদিন কি শুনতে পাবে হাসি,
জলরঙ্গা কান্না, মর্মরে দীর্ঘশ্বাস-
কেউ?
শেষ হবে কি পথ চলা!
উদাসী পথিক,
হেঁটে এসে ছায়া পেলেই জেনে যাবে
ঐ আকাশটা শুধু তার ছিল,
ভালোবাসায়।
রুপালী পাষাণ নয়, অবুঝও নয়। সে জানে বহুদিন আগেই সমুদ্র তার প্রেমে পড়েছে, বাতাস আর পাহাড়ও কম যায় না। আর এদিকে এক আকাশ জোড়া বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা আবিদকে দেখে তার মায়া হয়। আহা, বেচারা। রুপালী ধরা দেয় না। তবে সেও কি প্রেমে পড়েনি! সাগরের জলে, বাতাসের কবিতায়, পাহাড়ের মায়ায়, আর ঐ পাগল মুগ্ধ দুটি চোখ তাকে অতল জলে ডুবিয়ে ফেলেছে। রুপালী জানে এ প্রেমে শুধু মরে যেতে হয়। ভালোবাসার সার্থকতা তো সেখানেই। তবু রুপালী এত সহজে ধরা দেয় না। সে এগিয়ে চলে। উদাসী পথিক হয়ে সমুদ্রের গানে নিমগ্ন হয়ে হেঁটে চলে। কোনদিন সে ক্লান্ত হতে চায় না। ক্লান্ত হতে চায় না আবিদ কিংবা রুপালীর দু’চোখ। এদিকে বাতাস রুপালীর আঁচল উড়িয়ে নিয়েছে। দূর থেকে সে এক গভীরে ডুবন্ত ভালোবাসার নিশান হয়ে ওড়ে। রুপালী জানে, আবিদ এবার ডুব দেবে।
খানিকটা আলো-ছায়ার খেলা না থাকলে জীবন বড় পানসে হয়ে যায়। আবিদ এই কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মানে। দিন দিন সে যে রুপালীর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে, গভীর থেকে গভীরে ডুবে যাচ্ছে, এ কথা দিব্যলোকের মত সত্যি। কিছুতেই মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে পারে না এক মুহূর্তের জন্যও। সমুদ্র-কন্যাকে ভুলে যাওয়া সহজ কাজ নয়। সম্ভব নয়।
এক ছাদের নীচে একসাথে বাস করে এত সব পাগলামি সহ্য করা সম্ভব নয়। আলো সহ্যের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে আছে। সব সময় তার ঝলমলে মুখখানি অন্ধকারে ডুবে থাকে। কাজকর্ম কিছু নাই, সংসার ধর্ম কিছু নাই। নিজের কথা কথা বাদ, ছেলে-মেয়ে দুটোর কথা তো ভাবতে হবে। ওদের দিকে একরত্তি খেয়াল নেই। সারাক্ষণ পোড়ামুখী রুপালী, রুপালী। আলোর গা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। ডাইনীটার ভুত ঘার থেকে ঝাড়িয়ে নামাতে হবে। আবিদের এসবে খেয়াল নেই। আলোর দেখে-শুনে মনে হয়, কেউ চোখের সামনে তার মুখে তুলে দিচ্ছে বিষ। আর সে বিষে সে জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে তার সোনার সংসার।
আবিদ এসবে পাত্তা দেয় না মোটেই। কোন কাজে তার মন বসে না। চোখ খুললে রুপালী, চোখ বন্ধ করলেও একটাই মুখ, রুপালী। রুপালীর মায়া ভরা মুখ। এত মায়া সে কারো মুখে দেখেনি। আবিদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। বাতাসে শাড়ীর আচলে মুখ ডুবিয়ে রুপালীর মায়ায় স্নান করে নিতে চায়। রুপালী সব বোঝে। এত বোকা মেয়ে সে নয়। রহস্যময়ী চোখে সে বুঝে নিতে চায় আবিদের মনের সকল ইচ্ছা। এত সহজে সে কি ধরা দেয়। তাই, প্রজাপতির মত সে এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যায়। মায়ার খেলা করে। ভালোবাসার মায়ার খেলা।
আবিদের মনে হয়, ঠিক যেন কোন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর পটে আঁকা ছবির মত রুপালীর লালাভ অবয়ব। নিঃসঙ্গ সমুদ্র-পাড়ে, বাতাসে উড়ছে এক অসম্ভব রূপবতী নারীর শাড়ির লাল আঁচল, উড়ছে ভেজা চুল। সে হেঁটে চলে যায় দূর পাহাড়ের দেশে। কোন জড়তা নেই, নেই পিছুটান ফিরবার। সমুদ্রের জল এসে মুছে দেবার আগেই বুনে যায় ভালোবাসার মায়া। গোপনে জানান দেয়, এই তো আমি।
আবিদ সে মায়ায় মরে গেছে অজান্তেই,
আচমকা ভালবাসার শব্দে
ভেঙ্গে যায় ঘুম, আর
নিরপরাধ একফালি আলস্য।
মায়ার বিছানায় মনের সমর্পণে
সহমরণের যন্ত্রণা-
ভুলে থাকবার কোন পথ্য নেই।
প্রেম ছাড়া কোন বোধ নেই,
কোন বোধ নেই-
সব থেমে গেছে সন্ধেবেলা।
সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরতেই আবিদ দরজায় আলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। রুপালীর মত লাল রঙ্গে শাড়ীতে আলো ঝলমল করছে। মুখে খানিকটা ঝুলে থাকা অভিমান।
- আজো কি লেখা শেষ হয় নাই?
আলোর থমথমে মুখ। অনেক জোরালো এক ঝড়ের পূর্বাভাস।
- না হলে নাই, আমি আজ সব আগুনে পোড়াবো।
আবিদ হাসে। আহারে, পাগলীটা বড্ড খেপেছে আজ। ভালোবাসার পাগলামিতে মুগ্ধ আবিদ, হাসে। আজ সে লেখাটা শেষ করতে পেরেছে। রুপালীর সাথে দীর্ঘ লুকোচুরির পর আজ সে ধরা দিয়েছে। আবিদ আলোর দু’গালে দু’হাত রেখে মুখ তুলে বলে,
- রুপালীরা এত অভিমান জানে, জানা ছিল না।
০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৬৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪