চটিলতা (চটি বিষয়ক জটিলতা)

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

পন্ডিত মাহী
  • ৫৫
  • ৩৮
বড়’দা মজলিশে সবার সামনেই বললেন
-দাও তো, একটা চটি দাও

বিচ্ছুগুলো্র চোখ মুখ পাকা লঙ্কার মত লাল আর নতুন বৌএর মত নিচু হয়ে গেলো। লজ্জায় কেউ কেউ দেয়ালে, কেউ পাশের জনের মাথা ঠোকা দিল। ফার্মের মুরগির মত ফ্যাকাশে হয়ে গেল রঞ্জু। মজনু বরাবরই লাজুক আর মুখচোরা। সেও রবীন্দ্রনাথের গানের ছন্দে হিক্কা তুলতে লাগলো। শুধু মোটা কুদ্দুস মুচকি একটা হাসি দিয়ে হিমু টাই্প একটা জটিল কুটিল রসালো গালগল্প সাইনবোর্ডের নায়িকাদের চানাচুর ধরার মত করে তুলে ধরলো।
-ভাই, এইটা দিবো
-দাও।
বড়’দা বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা নাড়েন চাড়েন। পৃষ্ঠা গোনেন। পৃষ্ঠার মাঝে লাইন গোনেন। ত্রিশটা। এবার লাইনের শব্দ। সেখানে মোটে এগারো। তাহলে কত! ত্রিশ এগারোতে সোজা হিসাব তিনশত ত্রিশ মাত্র।
বিচ্ছুগুলোর রাতের শরম দিনেও যায় না। ভাবে চটিতে কয় পৃষ্ঠা আর কয়টা লাইন থাকে। আর লাইনে কি শব্দ কম পড়েছে?

মোটা কুদ্দুস ফুটপাতে হু.আজাদ’ইয় টাইপের চটির লাইন গুলো মনে করতে চেষ্টা করলো। কি যেন একটা কবিতা ছিলো! আহ্, আহ্, উহ্, ইস্ টাইপের নাম। এমন শব্দ দিলে তো লাইনে বেশী শব্দ হইতো। মোটা কুদ্দুস ধরা খাইলো। বহুত তিড়িং বিড়িং করছে একটু আগে। নিজের রুপবানের মত চেহারার পেলব নরম হাতটা ঘসতে লাগলো। চীনের প্রাচীরের মত পেটের ভূরিতে অজানা সুরসুরি অনুভব করলো। এইবার কি হবে! বড়’দা যদি আবার চটি চায়!!

রঞ্জু বাবুর্চীর কাজটা ভালোই শিখেছে। এখন শুধু ঘরমোছা আর কাপড় ধোয়া শেখা বাকি। তাহলেই ও বিয়ের পরীক্ষায় পাশ করবে। খুন্তি হাতে দরজার কাছে দাঁড়ানো বাবুর্চী রঞ্জু বড়’দার চটি বিষয়ক আকাঙ্ক্ষার কথা শুনে চমকে গেল। আর তাতে মজনুর জন্য আনা বুড়ো গরুর গোশতের টুকরোটা খুন্তি থেকে হাই জাম্প দিয়ে ধুলোয় গড়াগরি করলো। মজনুকে দিয়ে লবণ চাখানো হলো না। রঞ্জুর প্রথমেই মনে পরলো মজনুর নতুন কবিতা উথিত শিশ্নের কথা। বড় লজ্জার। ফোনালাপে সিদ্ধ জনৈক বড় ভাইয়ের কবিতার সাথে অবৈধ প্রেম নিয়ে কবিতাটি পড়লে মনে দেহে জোয়ার আসে। রঞ্জুর খুন্তি কেঁপে উঠলো।

মজনুর কোন ভাবান্তর নেই বললেই ভলে। ওর হিক্কা তোলা বন্ধ হয়েছে। এখন জীবনানন্দের মত বাংলার মুখ দেখিয়াছি টাইপের মুখ করে আছে। মানে সেও চটি চিনে। সেও চটির মুখ দেখেছে। কিন্তু পৃষ্ঠার লাইন আর শব্দ গুনে গুন করে গুনফল বের করে কি হলো সে বুঝতে পারে না। ভাবলো এটা আসল চটি কিনা তা বোঝার নতুন কৌশল। শিখতে হবে, সেদিন পাড়ার পেপারওয়ালা চটির কথা বলে রাম ঠোকানো ঠকাইছে। মজনু বেশ উৎসাহের সাথে বড়’দার এভারেষ্টের মত প্রতিভাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। মাথা চুলকালো, কিভাবে জিজ্ঞেস করা যায় বড়’দা কে। প্রথমে কিছু সোজাপথ খুঁজলো তারপর বাঁকাপথ। শেষে কোন উপায় না পেয়ে পায়ের কাছে থাকা রঞ্জুর খুন্তি থেকে পড়ে যাওয়া গোশতের টুকরোর দিকে নজর দিলো। আহ্ পেটে ছুঁচো দৌঁড়াচ্ছে। মজনু দেরী করলো না, একফাঁকে পা চুলকানোর ভান করে আলতো করে গোশতের টুকরোটা তুলে পকেটে চালান করে দিল। যাক্, পরে খাওয়া যাবে।

এসব দেখে শুনে সুরুজ মিয়ার কান চুলকানো বেড়ে গেল। নাকের বড় বড় লোমগুলো পট পট করে ছিড়তে লাগলো। তাল পাতার সেপাই টাইপ শরীরটাকে বার বার ঝাকুনি দিতে লাগলো, দু’একবার হেঁচকিও তুললো। এতক্ষণ ধরে সে সাতদিনের পুরানো বাশেঁর শলা দিয়ে দাঁতের চিপায় থাকা অবাধ্য ষাঁড়ের অবাধ্য গোশতের হলুদ আশগুলো খুঁচিয়ে প্রায় নরম করে এনেছিল। এখনি বের হবে হবে, আর সেটা কিনা হেঁচকির সাথে গিলে ফেলেছে! চটি!! সুরুজ মিয়া বুঝেও না বোঝার ভান করে টাসকি মারতে চাইলো,বলতে চাইলো- আরে আমি তো কাইল রাতে চটি বিছায়া ২টা জ্যাঁতা পুঁটি ধরছি।
কিন্তু বলার আগেই কথাটা বিয়ে করা বউয়ের মত গলায় আটকে গেলো। নামেও না, উঠেও না। তার মুখ এখন লালায় লোলুপ্ত। পুঁচকে মজনু আগে থেকেই বেয়াদপ। গণি মিয়ার মাঠের সব নারী দর্শকের মন জয় করার নানা রকম তাল-বাহানা করে সারাদিন। অনেক সহ্য করা হয়েছে, আর না। কিন্তু এবার যে হাতে-নাতে চুরি। সুরুজ মিয়া পরে থাকা গোশতের টুকরায় নিজের নাম দেখতে পেয়েছিল। আর সেটা কিনা মজনু পকেটে তুলেছে। সুরুজ মিয়া ডাঙ্গায় তোলা তেলাপিয়ার মতো তপরাতে থাকে।

-নাউযুবিল্লাহ্।
না কেউ শোনে নাই। বিচ্ছুগুলোর মামা পাশেই বসা। মহাগুরুজন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, কাযা নাই। বড় ভালো মানুষ। কিন্তু নির্বাচনে ভোটের গড়ের জন্য নাকি এদিক সেদিক নিজের পোস্টার ছেড়েন।যাতে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে সকলের সামনে আসা যায়।
মামা দাড়িতে ঘন ঘন হাত বুলায়। কি সব শোনা যায়, তিনি বুঝতে পারেন না। ছোটবেলায় তিনিও চটি পড়েছেন। লাইলী-মজনুর কাহিনী, শিরী-ফরহাদের কাহিনী। কিন্তু চটি শুনে পোলাপান হাসে ক্যান? ঘটনা কি? নাকি জমিলার বাড়িতে স্নো-পাউডার দেবার সময় ধরা খাওয়ার কাহিনী জাইনা গেলো! আহারে, সোমুন্দি কি মাইরটাই না দিছিল।

এদিকে নতুন শ্বশুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসা মন্টু মিয়া চটির কথা শুনে হা করে থাকেন। মনে মনে শুধু বললো, জানলো কি করে! হা করে থাকাতে, তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে পাশের বাড়ির কন্যাদের মত দু’একটা মশা গালের ভিতর রেস খেলে গেল। শ্বশুর বাড়ি থেকে এবার ঈদে শাশুরির কাছ থেকে একখান নতুন লাল ফিতেওয়ালা চটি পেয়েছে, সেটার কথা মনে পড়ে যায়। চটিটা পায়ে দিয়ে হাটতে বহুত শান্তি লাগে। বগলের তলায় হাত দিয়া মন্টু মিয়া দেখলো চটি জোড়ার স্ব-অবস্থান। নাহ্, আছে কিন্তু কিসের কোন চটির কথা শুনে পোলাপান গুলা হাসে! শাশুরি উপহার দিছে বলে কি হাসতে হবে!! মন্টুর মিয়ার গাল ফুলে যায় অভিমানে। আজ গিয়ে বউকে বিচার দিতেই হবে।

শেষ ধাক্কাটা খেলেন সহজ সরল আক্কু ভাই। চটি’র কথা শুনে সে চমকে যায়, এত বড় মানুষ এগুলো কিতান কয়। মনে মনে ভাবে সে। তার মন চলে যায় পূবাইলের শুটিং স্পটে, দেড়মনী কোন বলগা হরিণীর কোমর দোলানো নাচে। আহা, কি সোন্দর, কি টান টান চর্বির প্রাচীর, বুলেটপ্রুফ।
কিন্তু আক্কু ভাই বড়’দার চটি বিষয়ক কথা-বার্তা শুনে আক্কেল গুড়ুম। বিচ্ছুগুলোরে কিছুক্ষন আগেই পূবাইলের সেই নাচের গীত শুনিয়েছেন। বেলুনের খনির কথাও বলতে ভুলেন নাই। কিন্তু কি মসিবত! চটির আর কি প্রয়োজন, বেলুনের কথা জানলেই তো হয়। মাথা নাড়েন আক্কু ভাই। কথায় আছে না, বাচঁতে হলে জানতে হবে। চটি পইড়্যা কি আর কিছু জানবো। দেশটা শ্যাষ হইয়্যা গেল।

বাকি আর যারা ছিলেন তারা কেউ হা করেই মুখ বন্ধ করলেন মশা-মাছির ভয়ে। কেউ শুনলেন, কিন্তু ভাব দেখালেন শুনি নাই। আমার কানে প্রবলেম আছে, বলি নাই?
বড়’দা তার প্রতিভাটি এভারেষ্টের মত দাড়া করালেন পিছনে আলতো হেলান দিয়ে। সবার মুখ দেখে যা বোঝার বুঝে নিলেন। গলা খাকারি দিয়ে হাতের বইটা মোটা কুদ্দুসের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন, বাঁশের চটা চিনস্?
একথা শুনে মোটা কুদ্দুস ভয়ে হাঁপাতে লাগলো, তার রুপবানের মত মুখটা সাদা থেকে লাল হয়ে গেলো।
বড়’দা আবার হা করলেন, গর্দভ। বাঁশের চটার মত পাতলা বই দিতে কইছি। মনে রঙ লাগছে নাকি! চটার বাড়ি পশ্চাদেশে পড়লে ঠিকই চিনতা চটি কি জিনিস।
বড়’দার কথা শুনে সুরুজ মিয়ার মুখ লজ্জায় বিদেশী পুঁটির মত সাদা হয়ে যায়। গত মজলিশের পশ্চাদেশের বিখ্যাত ছবি এখনো গনী মিয়ার মাঠে টানানো আছে। ওদিকে মজনু বেশ আশাহত হয়। চটির ভুবনে বড়’দার পা না পড়াতে। আবার ভয়ও পায়, বাঁশের চটার মধুর আঘাতের কথা মনে পড়াতে।
রঞ্জুর খুন্তি আবার কেঁপে উঠলো। এবার ভয়ে। মামুর মুখ দিয়ে শুধু বের হলো, সুবাহানাল্লাহ্।
কি মিয়া আপনের লাগবো নাকি, বড়’দা মামা কে বললেন। দিমু নাকি দুই ঘা…
-নাউযুবিল্লাহ্!!


অনেক রাতে আসর ভাঙ্গে। যাবার সময় হয়ে এসেছিল। বড়’দা বড় একখান লেকচার দিলেন এইসবের উপর। কিভাবে মানুষের মন নিচু থেকে নিচুতে চিন্তা করছে। সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পারলো। বিচ্ছুগুলো মনে মনে তওবা করা শুরু করলো। ছি্ আর করবো না। তবু বড়’দাকে আশাহত মনে হলো। মনে মনে ভাবলেন, এই যদি হয় যৌবণের গান, তাজা প্রাণ গুলো যে কুটিল জগতে খাবি খাবে। কে ধরবে হাল! এখন নওযোয়ানের দল রগরগে বইয়ের প্রেমে মশগুল। দেশের জন্য প্রেম- শুধু কি মুখের বুলি হয়েই থাকবে?
বড়’দা আকাশের দিকে মুখ তুলে চাইলেন, খোদা মোদের জ্ঞান দাও, সুস্থ বুদ্ধি দাও।
মামা পাশে এসে বড়’দার কাঁধে হাত রাখলেন, পাশে আক্কু ভাই। অস্ফুট স্বরে বললেন, আমীন।



**বি.দ্রঃ এ গল্পের সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। তবু এ গল্পের কোন চরিত্রের সাথে বা ঘটনার সাথে কেউ কোন মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই লেখকের ইচ্ছাকৃত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) এটা যে হাসির গল্প তুমি বলায় জানলাম ,তুমি হাসশো জেনে আমি অনেক বেশি হাসলাম /
পন্ডিত মাহী এটা যে হাসির গল্প এটা বুঝতে পেরেছে সবাই, তাই আমার অনেক হাসি পাচ্ছে... হে হে হে হে হা হা হা হা হো হো হো হো... সবাইকে ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য...
জাকিয়া জেসমিন যূথী **বি.দ্রঃ এ গল্পের সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক। তবু এ গল্পের কোন চরিত্রের সাথে বা ঘটনার সাথে কেউ কোন মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই লেখকের “ইচ্ছাকৃত”।…. এ ধরনের লেখায় তো সবসময়েই দেখি “লেখকের অনিচ্ছাকৃত” থাকে! এখানে রয়েছে তার উল্টো। হাহাহা!!!! ... বয়স আন্তাজে লেখা অনেক গুরুগম্ভীর। ভালো লাগলো। তিন দিন লেখাটা পড়েছিলাম। আজ কমেন্ট দিলাম।
আসন্ন আশফাক ওই বিচ্ছু ঘটনা টা আমারে কিন্তু খুইল্লা কইতে হইব, যাই হোক আমার যা ছিল সব কিন্তু এখানে ঢেলে দিসি ;-)
মোঃ শামছুল আরেফিন গল্পের নাম চটি বিষয়ক জটিলতা। অথচ গল্পে কোন জটিল কুটিল রূপ কিছুই দেখিতে পাইলাম না। শুধুই চোখ বুলাইলাম আর চোখ বন্ধ করে হাসিতে লাগলাম। গল্পের শেষে আসিয়া আবার একটু কষ্টও পাইতে হইল। বিচ্ছুদের সবাই সে আসরে ছিল। আমি কি তখন ব্রাজিলের ফুটবল মাঠে ঘাস কাটিতেছিলাম যে আসরে নেওয়া হইলনা।
অবিবেচক দেবনাথ ভালো লাগল..........
প্রজাপতি মন ভালো লাগলো.
Azaha Sultan মাহি, অনেক সুন্দর গল্প......হাসতে বেশ হয়েছে.......খুব একটা সময় নেই বিধায় বেশি লেখা পড়তে পারছি না এখন.......তবে বড়দাদের দোয়া অবশ্য পাবে......
মেহদী ভালৈত লাগলো
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি চটি বিষয়ক রসিকতা মন্দ লাগেনি। এগিয়ে যান মাহিভাই।ধন্যবাদ....................

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪