ঠিক রাত তিনটার দিকে সুন্দর আলীর ভাব এলো। এরপর কবিতাটা নামাতে লাগলো মাত্র নয় মিনিট। সবশেষে কবিতার চেহারা দাঁড়ালো অনেকটা এ রকম।
কুক্কুর কু
-সুন্দর আলী
আমার চাপার কোনার দাঁতে
কুক্কুর কুক্কুর করে,
ঠাণ্ডা পানি খাইতে গেলে
শির শিরাইয়া ধরে।
পাকনা কলা নরম কতো
তাতেও চাবান দিলে,
দাঁতের ব্যথার চোটে আমার
চমকে ওঠে পিলে।
তুমি সখা দন্ত নিয়া
কত্ত পড়া পড়ো,
আমার দাঁতের কুক্কুরানির
একটা কিছু করো।
দাঁতের কুক্কুরানি পরে
এবার আসি মনে,
মনেও কুক্কুর কুক্কুর করে
লাগবে সুন্দর কনে।
থাকলে রাজি, ডাকব কাজি
কুক্কুর কুক্কুর কু,
জানি লাবিউ করো আমায়
আই লাবিউ ঠু।
১ বৈশাখে, রমনা পার্কে
আমি সুন্দর আলী,
থাকব তোমার অপেক্ষাতে
নিয়ে পুষ্প ডালি।
পার্কে এলে বুঝব সোনা
প্রেমে তুমি রাজি,
আর দেরি নয়, ডাকতে যাবো
বিয়ে পড়ার কাজি।
আমার মনের কুক্কুর কু
থামবে তার পরে,
যখন তুমি ঘোমটা দিয়ে
আসবে আমার ঘরে।
ভয় পেয়ো না, কলা বাবা
দিবেন গরম ফুঁ,
আমার মনে ডাক দিয়ে যায়
কুক্কুর কুক্কুর কু।
এবার ঘটনাটা খুলে বলি। সুন্দর আলী যে মেসে থাকেন, তার পাশের বাসায় এক সুন্দরী ললনা বাস করে। বন্ধুমহলকে দিয়ে ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর পর সুন্দরী ললনা সম্পর্কে যে সকল তথ্য উদ্ধার করা গেছে তার মধ্যে আছে, ললনার নাম আকলিমা খাতুন, ডেন্টাল কলেজে পড়ে। বাবার একমাত্র সন্তান এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্য হলো বাবা বেশ বড় লোক। এদিকে সুন্দর আলীর পকেট গড়ের মাঠ। বন্ধুদের কাছ থেকে কর্যে হাসানা বাবদ নগদ ক্যাশ নিয়ে বেঁচে আছেন। দিনে দিনে কর্যে হাসানার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে আকলিমা খাতুনের মতো সুন্দরী বৌ আর বড় লোক শ্বশুর যদি এক সাথে পাওয়া যায় তাহলে জমবে ভালো। সব তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পর সুন্দর আলীর মনে হলো তার সামনে গভীর প্রেমের গর্ত উপস্থিত হয়েছে। অগত্যা নির্দ্বিধায় তিনি সে গর্তে ঝাঁপ দিলেন।
এবার সমস্যা দাঁড়ালো অন্যখানে। বর্তমান বাজারে একতরফা প্রেমের কোন মূল্য নেই। সুন্দর আলী যে ডেন্টিষ্ট আকলিমা খাতুনের প্রেমে পড়েছেন সেটা তো তাকে জানাতে হবে। কিন্তু ডেন্টিষ্ট মেয়েদের খুশি করে কিভাবে প্রেমপত্র লিখতে হয়-জানা নেই সুন্দর আলীর। অনেক ভেবে ঠিক করলেন, মনের কথা আকলিমা খাতুনকে জানানোর জন্য কাব্য প্রতিভার প্রয়োগ করবেন। এরপরই সুন্দর আলী ‘কুক্কুর কু’ রচনা করেন।
এবার পালা প্রেমময় কাব্যখানা আকলিমা খাতুনের কাছে পৌঁছানো। এক্ষেত্রে সুন্দর আলী একটু প্রাচীন পন্থা বেছে নিলেন। রাস্তা থেকে এক টুকরা ইট সংগ্রহ করলেন। ইটের সাথে অমর কাব্যখানা সুতা দিয়ে বাঁধলেন। তারপর সর্বশক্তি দিয়ে আকলিমা খাতুনের জানালার দিকে ছুঁড়ে দিলেন। এক টিপেই লক্ষ্য ভেদ হলো। অভিযান শেষ করে সুন্দর আলী নিজের মেসে ফিরে গেলেন। এবার অপেক্ষার পালা ১ বৈশাখের।
রমনা পার্ক। সুন্দর আলী সুন্দর পোশাক পড়ে মান্দার গাছের ছায়ে বসে আছেন। হাতে এক হালি গোলাপ ফুল। সারা শরীর থেকে মেশক এ আম্বরের মতো সুবাস বের হচ্ছে। আকলিমা খাতুন আসে, কি না আসে, সেই টেনশনে তার মন কিছুটা বিক্ষিপ্ত। এমন সময় সাদা বর্ণের কি যেন একটা তার দিকে উড়ে এলো। নতুন প্রজাতির পক্ষী জাতীয় কোন প্রাণী কি না- সবে এ জাতীয় চিন্তা আরম্ভ করেছেন, তার আগেই সাদা বস্তুটা সুন্দর আলীর চান্দি বরাবর এসে লাগলো। তিনি চিত হয়ে পড়লেন। বস্তুটা মাথার যেখানে আঘাত করেছে মুহূর্তেই সেখানে আলুর জন্ম হলো। সুন্দর আলী কোন রকমে মাটি থেকে উঠে বসলেন। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখেন খানিক দূরে আকলিমা খাতুন দাঁড়িয়ে আছেন। তার মাথায় ব্যান্ডেজ।
সুন্দর আলীর নজর এবার পাশে পড়ে থাকা সাদা বস্তুটার দিকে গেল। সাদা বস্তু আর কিছু নয়, ইটের টুকরায় পেঁচানো একটা চিঠি। সুন্দর আলী চান্দির আলু ডলতে ডলতে ইট থেকে চিঠি খুললেন। সেখানে কবিতা লেখা।
জবাব
- আকলিমা খাতুন
আমার মাথায় ঢিল মেরেছিস
এত্ত সাহস তোর?
এবার সোনা দেখবি রে তুই
আমার কত জোর।
জামাই আমার থানার ওসি
দেবর র্যা বে আছে,
কানা মতিন, বড় মামা
মার খাবি তার কাছে।
কুক্কুর কুক্কুর বন্ধ হবে
একটু সবুর কর,
দোস্তরা সব কোথায় আছিস?
ধর শালারে ধর।
পুনশ্চ: এরপরের ইতিহাস বড় করুন। মামার মাইর আর পুলিশের ধোলাইয়ের পর সুন্দর আলী বর্তমানে র্যা বের কাষ্টাডিতে আছেন। তাকে ক্রসফায়ারের আওতায় আনার জোর চেষ্টা চলছে।
০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪