সব সময় মনে থাকে অথচ আজ এত প্রয়োজন কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছেনা। ৩৮৯১ দিয়ে দেখি...নাহ ভুল। মনে হয় ৫৩২২ হবে... এটাও তো দেখছি ভুল। তাহলে তাহলে তাহলে...মনে পড়েছে, ১২৩৪...এ্যঁ স্ক্রিনে এটা আবার কি লেখা উঠলো,'পরপর তিনবার ভুল পিনকোড দেবার জন্য আপনার এটিএম কার্ডটি জব্দ করা হলো। ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।'
রিজভির মাথায় যেন বাজ পড়লো। ঘন্টাখানিকের মধ্যে নন্দিনী চলে আসবে অথচ পকেটে আছে মাত্র তের টাকা। নন্দিনী রিজভির প্রেমের সম্পর্কের বয়সও তের দিন। এমন কাঁচা প্রেমের সময়ে টাকার সমস্যা কোন ভাবেই মানা যায় না। ঘণ্টা হিসেবে ঠিক করা এক ঘণ্টা রিক্সা ভাড়া ষাট টাকা, ভ্রমনান্তে হালকা পানাহার খরচ দুইশত টাকা, আর ফিরে যাবার সময়ে ওর মোবাইলে রিচার্য করতে হবে একশো। আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে পাঁচশো টাকার মামলা অথচ পকেট ঠনঠনাঠন। নন্দিনীর কাছে ইজ্জত এবার বুঝি আর থাকলো না।
রিজভী এটিএম বুথ থেকে বেরিয়ে কি করা যায় ভাবতে লাগলো। পাশেই এক নতুন বন্ধুর বাসা আছে। ওর নাম রাসেল। মোটামুটি বড়লোকের ছেলে। রিজভি রাসেলের বাসায় যাবার জন্য রিক্সায় উঠে পড়লো।
রাসেলেদের বাসায় বিল্ডিং বানানোর কাজ চলছে। সবে দেতালার ছাদ ঢালাই দেয়া হয়েছে। রিজভিরা সেখানে নেই, কোন দারোয়ান বা মিন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে না যে জানতে চাইবে ওরা কোথায় থাকে। অগত্যা রাসেলকে ফোন করলো।
: দোস্ত রাসেল, আমি রিজভী। তুই কোথায়?
: আমিতো হালায় বাড়ির কাজ ধরচি। হের লাইগ্যা সিমিট কিনবার আইচি, তুই কই?
: দোস্ত আমি তোর বাসায়। এখানে এসে দেখলাম বাড়ির কাজ চলছে। তা আসবি কখন?
: তুই আমগো বাইত্যে আইছোস ঘটনা কি? আহনের আগদিয়া পুনতো দিবার পারতি।
: আসলে হঠাৎ করে চলে আসছি, একটু সমস্যায় পড়ছিতো তাই।
: তর আবার হালায় কি ছমছ্যা।
: আসলে দোস্ত, তোর ভাবি আসতেছে আমার সাথে দেখা করতে। অথচ পকেটে টাকা নাই। হয়েছে কি এটিএম কার্ডটা...
: আমার ভাবি তর লগে দেহা করতে আইবো! হালায় কছ কি? ভাবি তো এক মাছ আগে আমরিকা গেল ভাইয়ের লগে, দেছে আইলো কবে?
: আরে তোর আপন ভাবি না, আমি যার সাথে প্রেম করি মানে নন্দিনী, তোর সেই ভাবি?
: হেইডা ক, আমি ডরাইয়া গেছিলাম গা। তা আমি তো হালায় বহুত দূরে, তোর টেকা কখন লাগবো?
: এখনই লাগবে। ও আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
: আচ্চা দারোয়ানের কাছে ফোন দে, ওর কাছে মেস্তরিগো মজুরির কয়ডা টেকা আছে। ওইহান থেইকা লয়া যা।
: দোস্ত তোর দারোয়ান তো দেখতাছি না। এইখানে কেউ নাই।
: হালার দারোয়ানডা ভি বিরাট ফাঁকিবাজ পড়ছে। তুই ওইহানেই খাড়া, দারোয়ান মনেলয় মুততে গেছে। অখনই আইয়া পড়বো। আইলে ফোন দিছ। রাখলাম।
অগত্যা কি আর করা, রিজভী দারোয়ানের টুলে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো। দুই মিনিট যায়, পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায়, রিজভীর আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হয় না। সময় নেই, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নন্দিনী চলে আসবে। তারপর অপেৰা করবে। রাস্তায় একা একটা মেয়েদের দাড়িয়ে থাকার যন্ত্রণা অনেক। সে আবার রাসেলকে ফোন দিল।
: দোস্ত, তোর দারোয়ানের তো খবর নাই, কি করব?
: এমন ফাঁকিবাজ দারোয়ান আর দেহি নাইক্যা। তুই আরেকটু বয়। দারোয়ানডা না আসা পর্যন্ত বাড়িডা পাহারা দে। ও আইলে টেকা নিয়া যাইসগা কেমুন?
: দোস্ত আমার সময় নাই।
: তাইলে হালায় আমি কি করুম তুইই ক?
কথা বলতে বলতে রিজভীর চোখ গেল বিল্ডিংয়ের ভিতরে রাখা ভাঙ্গাচোরা টুকরো রডের দিকে। রড দেখে তার মাথায় আচমকা এক বুদ্ধি খেলে গেল। সে রাসেলকে বললো...
: দোস্ত তোর বিল্ডিংয়ের নীচ তলায় ভাঙ্গাচোরা রডের কোণা মোনা পড়ে আছে। ওগুলো তো ব্যবহার করবি না। তুই বললে ওখান থেকে দশকেজি তুলে রিক্সায় করে ভাঙ্গারির দোকানে নিলে পাঁচ ছয়শো টাকা পাওয়া যাবে। ওতে আমার বেশ চলে যাবে।
: আইচ্চা ঠিক আচে, তোর উপকার হইলে নিয়া যা, আমার কোন আপত্তি নাই। তয় টেকাডা তাড়াতাড়ি ফেরত দিস। বুঝোসইতো বাড়ির কাজে হাত দিচি, টেকার টানাটানি।
: আচ্ছা ঠিক আছে। দোস্ত রাখলাম।
ফোন রেখেই রিজভী রডের টুকরো নিয়ে টানাটানি শুরু করলো। তখনই চলে এলো দারোয়ান। রিজভীকে দেখে দারোয়ান চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করলো। মুহূর্তেই লোকজন জড়ো হয়ে রিজভীকে খুঁটির সাথে বেঁধে ফেললো। রিজভী কোন কিছু বলার আগেই পিঠের উপর পড়লো উত্তম মাধ্যম। মাইরের চাপ যখন একটু কমে এলো তখন রিজভী দেখলো বাইরে ঝুম ঝুম করে তুমুল শিলা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তার মোবাইলটাও বেজে উঠলো তখনই। নন্দিনী ফোন করেছে। সে ফোনটা রিসিভ করলো।
: জান তুমি কোথায়? বাইরে কি বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখেছো। এই বৃষ্টিতে আমি আসতে পারবো না, আব্বু বকা দিবে। তুমি বৃষ্টি থেকে সাবধানে থেকো। ভিজলে জ্বর আসবে।
: তুমি চিন্তা করো না। আমি সাবধানে এক বাড়ির ভিতরে আছি। বৃষ্টি লাগার কোন চাঞ্চই নেই।
মহান বৃষ্টি রিজভীকে নন্দিনীর কাছে এবারের মতো ছোট হবার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল।
০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪