সন্তানসম্ভবা

অবহেলা (এপ্রিল ২০১৭)

রীতা রায় মিঠু
ডাঃ নার্গিসের আজ ক্লিনিকে আসার কথা ছিলনা। সপ্তাহের শনি মঙ্গল ও বৃহস্পতি, এই তিন দিন তিনি লেক ভিউ মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে আসেন। ঢাকা শহরে লেক ভিউ মাদার এন্ড চাইল্ড ক্লিনিকের সুনাম আছে। ক্লিনিকের সুনামের পাশাপাশি ডাঃ নার্গিসেরও সুনাম আছে। ধাত্রীবিদ্যায় বর্তমান সময়ে হাতে গোনা যে ক’জন ডাক্তারের নাম সকলের মুখে মুখে শোনা যায়, ডাঃ নার্গিস তাঁদের অন্যতম। বিদেশী ডিগ্রী আছে বলেই নয়, তিনি সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত উঁচুমানের চিকিৎসক। চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা করা নয়, প্রতিটি রোগীর প্রতি তিনি খুবই যত্নশীল, রোগীর পরিবার পরিজনের সাথেও দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার করেন। দামী ক্লিনিকে চিকিৎসা খরচ যদিও অনেক বেশী, তারপরেও অনেক সময় রোগীদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি চার্জ অনেক কম করেন। গরীব বলে কোন রোগীকে অবহেলা করেন না।

আগামীকাল মঙ্গলবার ডাঃ নার্গিসের পর পর দুটো সিজারিয়ান অপারেশানের তারিখ আছে। দুটোর মধ্যে একটি অপারেশানের সময় নিয়ে ডাঃ নার্গিস কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। ২০৩ নাম্বার কেবিনের মেয়েটি খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে। ডিউ ডেট ছিল এপ্রিলের ২ তারিখ, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং বাচ্চার কথা ভেবে পনের দিন এগিয়ে সেটা ১৮ই মার্চ করা হয়েছে। ২০৩ নাম্বারের মেয়েটির নাম তৃষিতা, শান্ত স্নিগ্ধ চেহারার মিষ্টি একটি মেয়ে। বয়স খুব বেশি নয়, ২৬/২৭ এর মাঝামাঝি। বিয়ে হয়েছে চার বছর হলো, এখনও বাচ্চা হলো না! একটা বাচ্চার জন্য তার সে কী আকুলতা!
ডাঃ নার্গিস খুব অভিজ্ঞ গায়নোকোলোজিস্ট, যত জটিল কেস নিয়ে রোগীরা উনার কাছে আসে। রোগীরা মনে করে, ডাঃ নার্গিসের কাছে গেলে আর কোন চিন্তা নেই। উনার এপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার জন্য কত মেয়ে ছয় মাসও অপেক্ষা করে। তৃষিতা নামের মেয়েটিও অনেক চেষ্টা করে এপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিল। সব রোগীর বেলায় হয় না, দুই একজন রোগি আসে যাদের মুখের দিকে তাকানো মাত্রই রেহনুমা নার্গিসের মন ভালো হয়ে যায়। ইচ্ছে হয়, রোগীর সমস্ত কষ্ট দূর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে। তৃষিতাকে দেখে ঠিক তেমন মনে হয়েছিল।
তৃষিতার ব্যাপারটা খুবই জটিল। এই মেয়ের জন্ম থেকেই একটি ওভারি, সাথে থাইরয়েডের সমস্যা আছে। অবাক কান্ড, কত মেয়ে দুই ওভারি নিয়েও কনসিভ করতে পারেনা, আর এই মেয়ে এক ওভারি নিয়েই এবার নিয়ে তৃতীয়বার কনসিভ করেছে। প্রথম দুইবার অন্য ডাক্তারের অধীনে ছিল। প্রথমবার তিন মাসের সময় মিসক্যারেজ হয়ে যায়, দ্বিতীয়বারে ডাক্তারের একটু বেশী যত্নশীল হওয়া উচিৎ ছিল। একটা মাত্র ওভারি, থাইরয়েড প্রবলেম আছে যেখানে, তার উপর একটা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে, এমন রোগীকে কোন ডাক্তারেরই অবহেলা করা উচিত নয়। তৃষিতার সমস্ত রিপোর্ট দেখে রেহনুমা নার্গিস অবাক হয়ে গেছেন, প্রথমবার নাহয় মিসক্যারেজ হলো, দ্বিতীয়বারের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আট মাসের সময় তৃষিতার জটিলতা দেখা দেয়। সেবার তৃষিতার নিজেরই মারা যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল।
বাচ্চা হবে তাই একটু অতিরিক্ত আরামের কথা ভেবেই তৃষিতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাপের বাড়িতে ছিল, মা চাচী বৌদিরা খেয়াল করেনি ওর শরীরে পানি জমে সারা শরীর ঢোল হয়ে যাচ্ছিল। সবাই ভেবেছে, বাচ্চা পেটে আসার পর বেশি আদর যত্ন পেয়ে মেয়ের ওজন বেড়েছে। একদিন প্রচন্ড মাথা ব্যথা, শরীর অস্থির করছে, ব্লাড প্রেশার মেপে দেখা গেলো ১৮৫/১৩০। মেয়ের যে ব্রেইন স্ট্রোক করেনি সেটাই ভাগ্য। মেয়ের বড় চাচা পুরানো দিনের ডাক্তার, উনি আন্দাজ করেছেন প্রি এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণ, তখনই ওকে শহরের এক ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়, কিন্তু দুই দিনেও মেয়ের ব্লাড প্রেশার কমানো যায়নি, বাচ্চা পেটেই মারা যায়। এরপর শুরু হয় পেট থেকে মরা বাচ্চা বের হওয়ার অপেক্ষা, মেয়ের প্রেশারও নামেনা, অপারেশান করে বাচ্চা বের করার অবস্থা নয়, এপিডোরাল দিয়ে লেবার পেইন তুলতে যাওয়া আরও ঝুঁকিপূর্ণ। শেষে যা আশংকা ছিল, মেয়েটিরও খিঁচুনি উঠে চোখ মুখ উলটে মারা যাওয়ার অবস্থা হয়। কিভাবে ও বেঁচে গেছে তা একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানেন। সন্তান হারিয়ে মেয়েটি খুব শকড ছিল, প্রথম যেদিন ডাঃ নার্গিসের কাছে আসে, নার্গিস ম্যাডাম প্রথমেই ওকে সাইকোলোজিস্টের কাছে রেফার করেন।

কিছুদিন পর তিনি ওর চিকিৎসা শুরু করেন। যে সমস্ত টেস্ট করতে দিয়েছিলেন, রিপোর্ট দেখেই তখন জেনেছেন ওর থাইরয়েডের সমস্যা আছে, ব্লাড হিমোগ্লোবিন নীচের দিকে, ব্লাডে প্লাটিলেট কাউন্টও নরমালের চেয়ে কম ছিল।
উনি যখন বলেছেন, “ তুমি এখন অনেক বেশী সুস্থ, আগের চেয়ে অনেক শক্ত সমর্থ। তোমরা ইচ্ছে করলে আরেকবার বাচ্চার জন্য ট্রাই করতে পারো”।
এর তিনমাস পরেই তৃষিতা তৃতীয়বার কনসিভ করে এবং ডাঃ রেহনুমা নার্গিসের স্পেশ্যাল তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের লিস্টে স্থান পায়, ফলে শুরু থেকেই তৃষিতার প্রতি ডাক্তারের সজাগ দৃষ্টি ছিল। একবার এক্লাম্পশিয়া হয়েছিল যখন, এর ঝুঁকি মাথায় রেখেই প্রতিটি স্টেপ নিয়েছেন।

তৃষিতার শারীরিক কন্ডিশন মোটামুটি ভালোই আছে, হেমাটোলিজস্টের সুপারিশ অনুযায়ী অপারেশানের ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার অপারেশান, তৃষিতাকে সোমবার ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলা হয়েছে। অপারেশানের আগে চব্বিশ ঘন্টা ওর শারীরিক অবস্থা মনিটর করা হবে। ডাঃ নার্গিস তাঁর এসিস্ট্যান্ট জুনিয়র ডাক্তার ঋক’কে বলে গেছিলেন, রোগীর প্রেশার চার্ট এবং ব্লাডের সিবিসি রিপোর্ট যেন উনাকে জানানো হয়। ডাঃ ঋক ঘন্টাখানেক আগেই সমস্ত রিপোর্ট ম্যাডামের কাছে ফ্যাক্স করে দিয়েছে। রিপোর্ট খুব ভাল নয়, ডাঃ নার্গিস পনেরো মিনিট আগে ক্লিনিকে এসে পৌঁছেছেন। পৌঁছেই ওটি রেডি করতে বলেছেন। এরপর হেমাটোলোজিস্ট, এনেসথেসিস্ট, কার্ডিওলোজিস্ট নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়েছেন। বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়, আজই সিজারিয়ান অপারেশান করে ফেলতে হবে। কারণ আজ ব্লাড প্রেশার হঠাৎ করেই জাম্প করেছে, এদিকে ব্লাড প্লাটিলেট কাউন্টও আশি হাজার থেকো আটান্ন হাজারে নেমে গেছে। আর দেরী করলে ঝুঁকি বাড়বে। রোগীর দেহে এখনই চার ব্যাগ প্লাটিলেট দিতে হবে, ব্লাড প্রেশার নামাতে হবে যে করে হোক। রোগিকে কোনভাবেই ফুল এনেস্থেশিয়া দেয়া যাবে না, স্পাইনাল কর্ডে এপিডোরাল দিয়ে অপারেশান করতে হবে। সব দিক থেকে আঁটঘাট বেঁধে নামতে হবে। কোথাও যেন কোন ভুল না হয়।

দুই

আজ সকালে যখন তৃষিতাকে নিয়ে সায়ন ক্লিনিকে এসেছে, তখনও তৃষিতা দিব্যি হাসিখুশীতে ভরপুর ছিল। গতরাতে ওদের বাসায় উৎসব উৎসব ভাব ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তৃষিতার বাড়ির প্রায় সকলেই এসেছে, তৃষিতার শ্বশুর শাশুড়িতো দুই সপ্তাহ আগেই চলে এসেছেন। আগের বাচ্চাটা বাঁচেনি, এই নিয়ে দুই বাড়িতেই সবাই মনোকষ্টে ছিল। তবে সেবার তৃষিতাকে বাঁচানোটাই অনেক বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তৃষিতাকে ফিরে পেয়ে সকলেই বাচ্চার শোক ভুলে গেছিল। তৃষিতার শাশুড়ি ভয় পেয়েছিলেন, যদি ভয় পেয়ে বৌমা আর ছেলেপিলে না নেয়, তাহলে বংশ রক্ষা হবে কেমন করে? তৃষিতার মা ভয় পেয়েছিল, মেয়ে যদি আবার বাচ্চা নেয়ার জন্য পাগল হয়, এবার আর বাঁচা নাই।

তৃষিতা নিজেও একতা বাচ্চার জন্য আকুলি বিকুলি করেছে। ও বাচ্চা খুব ভালোবাসে। সায়ন অনেক বুঝিয়েছে, “ তুমিই যদি মরে যাও, আমার বাচ্চা দিয়ে কি হবে? কত মেয়ে আছে, বাচ্চা হয়নি, তাতে কি তারা ভেসে গেছে?”
কিন্তু তৃষিতার একটাই কথা, “ আমি মরি আর বাঁচি, বাচ্চা একটা আমার চাইই চাই। আমি মরে গেলে আমার বাচ্চার মধ্যেই আমাকে রেখে যাব”।

গতকাল সারাদিন সবাই মিলে খুব আনন্দ ফূর্তি হয়েছে। বাজী ধরা হয়েছে, ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে? ঘর ভর্তি মানুষের মধ্যে সায়ন আর টুকটুকি ছাড়া সবাই বলেছে ছেলে হবে। সায়ন অবশ্য ছেলে বা মেয়ে কোনটার পক্ষেই কিছু বলেনি। টুকটুকি দিদির মেয়ে, ছয় বছর বয়স। ও বলেছে, “ছোটমাসীর বোনবাবু হবে।“
টুকটুকির কথায় কেউ খুশি হয়নি, দিদি শুধু বলেছে, “ টুকি মা, তুমি কুশলদাদার সাথে খেলা করো যাও, এখানে বড়রা কথা বলছে”।
তৃষিতার খুব মায়া লেগেছে টুকটুকির জন্য। ও কত আশা নিয়ে বলেছে বোনবাবু হবে, কেউ ওর কথায় পাত্তা দিলো না। তৃষিতার অবশ্য আলাদা কোন চাওয়া নেই, সুস্থ একটা বাচ্চা পেলেই ও খুশি। ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক, জন্ম দিতে কষ্টতো একই হচ্ছে। সেবার ছেলে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়েতো ও মরেই গেছিল, এবার তাও রক্ষা নার্গিস ম্যাডাম পাশে আছে।

নার্স এসে বলল, -ডাক্তার ম্যাডাম আজকেই সিজার করবে বলছে। আপনাদের বাড়ি থেকে কেউ আসবেনা?

-আজই অপারেশান করবে শুনে তৃষিতা চমকে গেছে!-সিস্টার, আজই কেন অপারেশান করবে? কোন সমস্যা? বাচ্চার সমস্যা হচ্ছে? বাচ্চা নড়ছেনা? বাচ্চার হার্ট বিট পাওয়া যাচ্ছেনা? কি হয়েছে বলেন?
-আপা, এত উতলা হইয়েন না। ম্যাডাম থাকতে কুন চিন্তা নাই। সব ঠিক আছে, আপনের প্রেশার একটু বেশি, আরও বেশী বাড়ার আগেই ম্যাডাম আজই অপারেশান করে ফেলবে। বাচ্চার হার্টবিট ভাল আছে।
-নার্স আপা, আরেকবার স্ট্যাথো দিয়ে দেখেন না, আমার হাজব্যান্ডকে একটু খবর দেন প্লিজ! যদি মারা যাই, সায়ন জানতেই পারবেনা।

-ওরে আল্লা রে, কি ভেজালে পড়লাম। আপনি মারা যাবেন কেন? আপনারে মারা যাইতে দিলে তো? ম্যাডামই এসে বলবে যা বলার। অপারেশানের আগে আপনারে রেডি করতে হবে, এইজন্য কথাটা আগেই আমি বলে ফেলছি। এখন দেখি আপনারে বইলা ভুল করছি।

-আমার হাজব্যান্ডকে একটু খবর দিবেন?

-আপনার হাজব্যান্ডের সাথে ম্যাডাম কথা বলতেছে। আপনার হাজব্যান্ড খুব সাহসী মানুষ। আপনার মত ভীতু না। আমি মনে করছিলাম, আপনি খুব সাহসী। দাঁড়ান, স্ট্যাথো আপনের কানে লাগায়ে দেই, নিজের কানে বাচ্চার হার্ট বিট শুনেন। তাইলেই মন শান্ত হইব।






তুলিকারা তিন ভাই, দুই বোন। তুলিকা ভাইবোনদের মধ্যে তৃতীয়। ওর বড় দুই দাদা ত্রিদিব এবং তুহীন, এরপর তুলিকা, তার ছোট তৃষিতা এবং সকলের ছোট ভাই তুষার। ভাইবোনদের নামের আদ্যক্ষর তাদের বাবার নামের আদ্যক্ষরের সাথে মিল রেখে ঠিক করা হয়েছে।

তুলিকার বাবার নাম তড়িৎ মুখার্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুখার্জি বাড়ির কণিষ্ঠ পুরুষ। মুখার্জি বাড়ির অন্যান্য শরিকরা দেশভাগের সময় ভারতে চলে যায়। রয়ে যায় তড়িৎ মুখার্জি আর তাঁর জেঠতুত বিপত্নীক দাদা প্রণব মুখার্জি। জ্ঞাতি ভাই হলেও প্রণব মুখার্জি ছোট খুড়তুতো ভাই তড়িৎ মুখার্জির সাথেই আছেন। প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার সময় উনার স্ত্রী নিভারাণী মারা যান, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে। সেই থেকে আপনার জন বলতে ছোট ভাইয়ের পরিবারই তাঁর সব।
ছোট ভাই তড়িৎ মুখার্জির পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিজের সন্তানের মত আদর স্নেহে বড় করেছেন। ভাইদের মধ্যে তুলিকার বড়দাদা পেশায় চিকিৎসক, স্ত্রী আর দুই পুত্র নিয়ে লন্ডন থাকে। মেজদা তুহীন স্ত্রী আর এক কন্যা নিয়ে থাকে গেন্ডারিয়া, সে একটি এনজিও চালায় এবং ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি করে। ছাত্র জীবনে সে ছাত্র ইউনিয়ন করতো, এখনও রাজনীতির নেশা পুরোপুরি ছাড়তে পারেনি। কমিউনিস্ট পার্টির গেন্ডারিয়া শাখার সভাপতি সে। আর তুষার বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, এখন ওর থার্ড ইয়ার চলছে।

তুলিকা আর তৃষিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। দুজনেরই শিক্ষিত ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। পেশায় সু জামাইই ইঞ্জিনিয়ার। দু বোনের মধ্যে লেখাপড়ায় তুলিকার চেয়ে তৃষিতা বেশী তুখোড় ছিল, বাস্তব জীবনে তুলিকা বিসিএস পরীক্ষা পাশ করে সরকারী কলেজে অধ্যাপনা করছে, আর তৃষিতা ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। সে বিসিএস দেয়নি, চাকরি বাকরি করার ইচ্ছেও নেই। তুলিকার এক মেয়ে, সবাই আদর করে যাকে টুকটুকি ডাকে। তৃষিতার সন্তান আজ বা কালের মধ্যেই ভূমিষ্ঠ হবে।



তৃষিতার শ্বশুরবাড়ি তুলিকার শ্বশুরবাড়ির তুলনায় সবদিক থেকে উন্নত, টাকা পয়সা, বংশ পরিচয়, শিক্ষা রুচী সর্বক্ষেত্রে। তুলিকার শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলো আগের দিনের অত্যাচারী মোড়লদের মত। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলে কি হবে, তুলিকার বরের স্বভাব গ্রামের মোড়লদের মত রগচটা। পান থেকে চুন খসলেই সংসারে অনর্থ বাঁধায়।
এই হলো মুখার্জির বাড়ির বাহ্যিক পরিচয়।



তিন

‘অপারেশান থিয়েটার রেডি, পেশেন্ট নিয়ে যেতে এসেছি’ বলে দুজন স্টাফ নার্স তৃষিতাকে পনের মিনিট আগে অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে গেছে। যদিও তৃষিতা সকলের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটেই ওটির দিকে গেছে, তবুও তুলিকা জানে তৃষিতার শারীরিক অবস্থা খুব বেশী ভাল নয়। গত কিছুদিন থেকে ব্লাড প্রেশার আপ এন্ড ডাউন করছে। প্রেশার আপ যখন হয়, তৃষিতার মুখ চোখ লাল হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এটা গর্ভের শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর, মায়ের শ্বাসকষ্ট হলে বাচ্চা অক্সিজেন কম পায়। অক্সিজেন কম পেলে ব্রেন সেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাচ্চার জন্য এটি তৃষিতার তৃতীয়বার চেষ্টা, বাচ্চা একটা চাইই চাই, নাহলে শ্বশুরবাড়ির বংশ রক্ষা হবে না। বাচ্চা হতে গিয়ে তৃষিতা যদি মরেও যায়, তবুও তাদের বাচ্চা একটা চাইই চাই। গেলোবার তৃষিতা প্রায় মারা গেছিলো, মেয়েদের প্রাণ নাকি কই মাছের মত, সহজে মরে না। তৃষিতার বাচ্চাটা মরে গেছিলো মায়ের পেটের ভেতরেই। আহারে! ওটা ছেলে বাচ্চা ছিল। তুলিকা একটা বড় দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক পীড়াদায়ক দৃশ্য! তৃষিতাকে নিয়ে যমে ডাক্তারে টানাটানি চলছে, তৃষিতার বাবা মা ঈশ্বরের নাম জপছেন, তৃষিতার বর সায়ন ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে, তৃষিতার শাশুড়ি আর ছোট ননদ নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে।
সায়নের কাছে জানতে চেয়েছিল ডাক্তার, “ যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে”। সায়ন বলেছিল, ‘তৃষিতাকে বাঁচান”।
সায়নের কথা শুনে তুলিকার চোখে জল চলে এসেছিল। তৃষিতা তুলিকারই বোন, অনেক আদরের বোন, তৃষিতার বর তৃষিতার জীবন চাইছে, তুলিকার খুশী হওয়ার কথা। খুশী হয়েছে তবে মনের কোথায় যেন একটু একটু খোঁচা লেগেছে। তুলিকার বরকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো, মা এবং বাচ্চা, যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে। কাকে চান? বাপি বলে দিত, “ বাচ্চা চাই”! [আসলেই কি বাপি বলতো, বাচ্চা চাই? কে জানে! তুলিকার কাছে কিছুই অসম্ভব মনে হয়না। বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থাতেও বাপি ওকে দুই দিন পিটিয়েছে, একদিন শোয়া অবস্থাতেই কোমরে লাথি মেরেছিল, তাল সামলাতে না পেরে তুলিকা খাট থেকে মাটিতে পড়ে গেছিলো!]


কিছু বকশিস পাওয়ার আশায় আয়া গোছের এক মহিলা দৌড়ে এসে তুলিকার মায়ের সামনে গিয়ে বলল, “ মা, ভগবানরে ডাহেন। আপনেগর মাইয়া খালাস পাইছে। এইমাত্র ডাক্তার মেডাম আপার প্যাট থিকা মরা পোলা বাইর করছে। আপার খিঁচানি বন্দ হইয়া গ্যাছে। আলহামদুলিল্লাহ। এহন চউখ বুইজ্জা শইল এলাইয়া রইছে, দুইডা দিন বেজায় কষ্ট পাইতেছিল।

মা দুই হাত জোর করে ভগবানের ঊদ্দেশ্যে প্রণাম জানালো। আস্তে করে বলল, “ আমার মাইয়া বাঁইচা আছে? তুমি ভাল কইরা দেখছ?

-মা, আমি লেবার রুমেই আছিলাম। এহন ফিরা যাইতে হইব, ময়লা কাপড়চোপড় সরাইয়া লেবার রুম ফিনাইল দিয়া মুছতে হইব। নার্স আপায় ওষুধ দিতাছিল, ঐ ফাঁকেই আমি দৌড়াইয়া আইছি। জানিতো আপনেরা সবতে টেনশনে আছেন, তাই মনে করলাম আগে তাগোর মাইয়ার খবর দিয়া আহি।

তৃষিতা বেঁচে আছে, এই আনন্দে তুলিকা কত বার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। বাচ্চাটাকেও যদি বাঁচাতে পারতো, তাহলে সোনায় সোহাগা হতো! থাক, মা বেঁচে থাকলে আবার বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে। যেখানে আর কোন অপশন ছিলনা, হয় মা নয়তো বাচ্চা, সুস্থ মনের যে কোন মানুষ চাইবে মা’কে রক্ষা করো।


তুলিকা এগিয়ে গিয়ে বলল, “ বোন, আপনি আমাদের কাছে সবার আগে এসে ভাল সংবাদ দিলেন, আপনাকে ভাল একখানা শাড়ি দেব।

আয়া হলেও মেয়েটির বিবেকবোধ আছে, সে বলেছে, “ বাচ্চা বাঁচলোনা, শাড়ি চাই ক্যামতে? তাও আবার পোলা বাচ্চা, যা সুন্দর।


একটা ট্রেতে করে নিষ্প্রাণ দেবশিশুটিকে উপস্থিত সকলের সামনে নিয়ে আসা হলো, সেই আয়া এসেছিল ট্রে হাতে। মৃত বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে তৃষিতার শাশুড়ি এমন বিলাপ শুরু করেছিলেন, বুঝা যাচ্ছিলনা কার জন্য বিলাপ করছেন! তৃষিতার কথা ভেবে নাকি মরা নাতির কথা ভেবে! বাচ্চাটা যদি মেয়ে বাচ্চা হতো, তৃষিতার শাশুড়ি কি এভাবে কাঁদতেন? ছি ছি, এসব কি ভাবছে তুলিকা! তৃষিতার শাশুড়ি ভাল মানুষ, উনার সম্পর্কে এমন ভাবা বোধ হয় অন্যায় হচ্ছে!


তুলিকার খুব টেনশান হচ্ছে। তৃষিতা ওর ছোট বোন, বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছরের উপর হয়ে গেছে, বাচ্চা হয়নি। বাচ্চা হয়নি মানে, তিষু যতবার কনসিভ করছিল, ততবারই মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওয়েইটিং রুমে বসার জন্য অনেকগুলো চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে, তবুও তুলিকা বসতে পারছে না। লম্বা করিডোরের এ-মাথা ও-মাথা হাঁটাহাঁটি করছে, আর একটু পর পর জেঠামণির পাশে দাঁড়াচ্ছে। ওদিকটায় তুলিকার বাবা –মা পাশাপাশি চেয়ারে জবুথবু হয়ে বসে আছে। জেঠামণি এখানে আছেন বলে মা মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে রেখেছেন। ঘোমটার আড়ালে দেখা যায় মায়ের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখটা।

“ জেঠামণি, সব ঠিকমত হবে তো? তোমার মন কি বলে? তিষুর সুস্থ বাচ্চা হবে তো? সেবারের মত হবেনা তো? জেঠামণি, আমার হাত পা কাঁপছে”।

তুলিকার জেঠামশায় তুলিকাকে বার বার একই কথা বলছেন, “ ঈশ্বরকে স্মরণ করো, তিনিই সবকিছুর রক্ষাকর্তা। তুই একটু বোস, এমন উতলা হলেই কি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? চিন্তা করিসনা, ঈশ্বরকে ডাক, সব ঠিক হয়ে যাবে”।

-জেঠামণি, এতদিন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি, তিষুর যেন ছেলে হয়, মেয়ে যেন না হয়! অন্যায় করেছি, বড্ড অন্যায় করেছি। নিজে মেয়ে হয়ে, নিজে কন্যার মা হয়ে, নিজে শিক্ষক হয়ে কেমন করে এমন বৈষম্যমূলক প্রার্থনা করেছি? আমার অপরাধেই কি ঈশ্বর তিষুকে আবার কঠিন পরীক্ষায় ফেললেন?

-মা রে, এখন এসব ভাবিসনা। মানব জন্ম অনেক মূল্যবান, পুত্রই কি, আর কন্যাই কি, সুস্থ সুন্দর সন্তান হওয়াটাই বড় কথা।

তুলিকা কাঁদতে শুরু করেছে,- জেঠামণি, বলি কি আর সাধে? আমার জীবনটা দেখো, মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলেই তো আজ আমার এত লাঞ্ছনা।

-মামণি, উতলা হয়ো না। তুমি মেয়ে হয়েও কারো চেয়ে কম নও। তুমি অধ্যাপনা করো, ছাত্র ছাত্রীদের জ্ঞানের আলো দান করো। তুমি এত ভেঙ্গে পড়লে চলে? শ্বশুরবাড়িতে তোমার এত লাঞ্ছনার কারণও ওটাই, তোমার যোগ্যতা। মানুষের এটা রিপুর দোষ, বুঝলি মা। যোগ্য ব্যক্তিকে অনুসরণ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার পরিবর্তে যোগ্য ব্যক্তির যোগ্যতাকে হিংসে করে, তার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।

-জেঠামণি, আমি যদি বাবার আরেক ছেলে হয়ে জন্মাতাম, তাহলেও আমি সরকারী কলেজের অধ্যাপকই হতাম, আর নইলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতাম। বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে শাশুড়ি ননদ স্বামীর কিল ঘুষি খেতে হতো না।

তুলিকার জেঠামণির বুকটা মুচড়ে উঠেছে তুলিকার কথায়। তুলিকার হাতটা আলতো টান দিয়ে পাশের ফাঁকা চেয়ারটায় বসালেন, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, “ মা, আজ আমি বলছি, যারা আজ তোমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে, একদিন তারা তোমার সামনে এসে হাত জোড় করে দাঁড়াবে।

-তাতে আমার কী উপকার হবে? আমার ছোট শিশু কন্যাটির সামনেই ওর বাবা চড় দেয়, পায়ের থেকে স্যান্ডেল খুলে পেটায়। ওর সামনেই ওর ঠাকুমা আর পিসী বলতে থাকে, “ বেডি মাইনষের চাকরি করা ঠিক না, পরপুরুষে আসক্তি জন্মায়। ক্যান, তোর কি বউরে ভাত দেয়ার মুরোদ নাই? কাইল থিকে বউর চাকরি করা বাদ দিতে ক”।
আমাকে বাবার বাড়িতে নিজের বাপ মা গায়ে হাত তোলেনি, তুমি জেঠু সবসময় আমাদের ভাইবোনদেরকে বুকে লেপ্টে রেখেছো। এখন পরের বাড়িতে মার খাই, শরীরে ব্যথা যতখানি পাই, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যথা পাই মনে। আমার টুকটুকি ছোট থেকেই দেখছে মায়ের হেনস্থা। ওর কাছে আমি কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। সংসার ছেড়ে বের হয়ে আসতেই পারি, কিন্তু ওখানেও টুকটুকিই বড় বাধা। মেয়ে আমারে যেমন ভালোবাসে, বাপেরেও ততটাই ভালোবাসে। আমারে মারধোর করলে কি হইব, মেয়ের বেলায় বাপ পুরাই সেয়ানা। এজন্যই চাইছিলাম, তিষুর যেন মেয়ে না হয়ে ছেলে হয়।

-মা রে, আচ্ছা ধর তিষুর ছেলে হলো, সেই ছেলে বড় হয়ে যদি বাপির মত বউ পেটায়, সেটা কি ভাল হবে? নাকি তিষুর মেয়ে হলে সেই মেয়ে তোর মত মেধাবী, স্মার্ট হয়ে ওঠে, সেটা ভাল হবে!

-আমি স্মার্ট না কচু! স্মার্ট হলে কি স্বামীর হাতে এভাবে নিগৃহীত হতাম?

-তুলি, ছেলে ছেলে করছিস, তোর টুকটুকিই বড় হয়ে একদিন তোর পক্ষে দাঁড়াবে। তোর প্রতি ওদের সকল অপমানের জবাব দেবে। তুই শুধু ওর প্রতি যত্ন নে, মেয়েটাকে ভাল শিক্ষা দিয়ে বড় কর।

-কে জানে! মেয়ে আদৌ ভাল শিক্ষা কতখানি পাবে। যা বাপ অন্তঃপ্রাণ! বাপ ঘরে থাকলে বাপের গায়ে লেপটে থাকে। আমিতো সারাক্ষণ ওকে কাছে পাইনা। বাপ মায়ের ঝগড়ায় মেয়ে হয়তো বাপের দোষ দেখবে না। তাছাড়া আমি সারাদিন কলেজে থাকি, তুমি কি ভাবছো টুকটুকির ঠাম্মা আর পিসী টুকটুকির কাছে আমার নামে হেঁজি পেঁজি কথা বলে না? একেকটা অশান্তির সময় টুকটুকি ভয়ে কাঁপতে থাকে, জোরে জোরে কাঁদতে থাকে, “মা’কে মেরো না, বাপী মা’কে মেরোনা” বলে।

মারধোর সাঙ্গ করে বাপ মেয়েকে কোলে নিয়ে বের হয়ে যায়, মেয়ে আইসক্রিম খেতে ভালোবাসে, মেয়েকে আইসক্রিম কিনে দেয়, মেয়ে কিছুক্ষণ আগের দেখা দৃশ্য ভুলে যায়! বললাম যে, স্ত্রীকে নিগ্রহ করলে কি হবে, মেয়ের বেলায় জ্ঞানের নাড়ী টনটনে। মেয়েকে খুশি রাখতে দুনিয়া এনে হাজির করে মেয়ের সামনে।

- জীবনটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র, এখানে জেতার জন্য লড়াই করতে হয়। জয় পেলে যেমনি আনন্দ হয়, মাঝে মাঝে পরাজয়টাকেও মেনে নিতে হয়। ঐ যে বললাম, মেয়েকে ভাল শিক্ষা দিয়ে বড় কর, ভুলেও বাপ ঠাকুমা সম্পর্কে মেয়ের কাছে অভিযোগ করবি না। ওকেই সব দেখে নিজের বিবেক দিয়ে ভাববার সুযোগ দিবি।
মানুষের দিন সমান যায় না, আজ তোর দিন খারাপ যাচ্ছে, কাল ভাল দিন আসবে। মন্দের কাঁধে চড়ে ভালো আসে। আর ভালোর পেছনেই মন্দ দাঁড়িয়ে থাকে, যারা বুদ্ধিমান তারা এটা মাথায় রাখে, ভালো পেয়েই বেপোরোয়া হয়ে ওঠেনা তোর শাশুড়ির মত। ভাল একটা বৌমা পেয়েছে, কোথায় বৌমাকে আদর সমাদর করে রাখবে, তা নয় সারাক্ষণ কুচুটেপনা।

-জেঠামণি, অনেকক্ষণ হয়ে গেলো তো তিষুকে ওটিতে নিয়েছে, এখনও কোন সংবাদ নেই কেন? এই দেখো, আমার হাতের তালু ঘেমে গেছে। গতবারের মত ঘটনা হবে না তো!

-না, আমি বলছি, সব ভাল হবে। তিষু এবং তিষুর সন্তান, দুজনেই ভাল থাকবে। কত অভিজ্ঞ ডাক্তার তিনি, ক্লিনিকটাও কত আধুনিক। কিচ্ছু ভয় নেই।

প্রণব মুখার্জি দুই চোখ বন্ধ করলেন। আবছা আবছা মনে পড়ছে পঞ্চাশ বছর আগের কথা।
** সন্তানসম্ভবা স্ত্রী গেছিলো বাপের বাড়ি বেড়াতে, আট মাসের গর্ভ নিয়ে নিভারাণীর তখন হাঁসফাঁস অবস্থা। এক বৃষ্টিভেজা সকালে নিভারাণী উঠোন পেরিয়ে কলতলার দিকে যাচ্ছিল। গ্রামদেশের উঠোন, বৃষ্টিতে ভিজে কাদা হয়ে ছিল। কলতলায় পৌঁছার আগেই পা পিছলে নিভারাণী পড়ে যায়। বাড়ির সকলে ধরাধরি করে ঘরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়, ঐ শোয়াই শেষ শোয়া। অসময়ে প্রসব বেদনা উঠে, গ্রামদেশে বর্ষাকালে চারদিক জলে থৈ থৈ। কোথায় গাড়ি, কোথায় ঘোড়া। নিভারাণীর স্বামী প্রণব মুখার্জি এল এম এফ ডাক্তার, কত মরা রোগীকে বাঁচিয়ে তোলে, অথচ ডাক্তার বদ্যির অভাবে প্রণব মুখার্জির প্রথম সন্তান স্ত্রী নিভারাণীর গর্ভেই মারা যায়। দাই একজন আনা হয়েছিল, মৃত সন্তান জোর করে প্রসব করাতে যেয়ে দাই শেকড় বাকর দিয়ে প্রসূতির যোনীপথে খোঁচাখুঁচি করে, তাইতেই ধনুষ্টংকার হয়ে নিভারাণী মারা যায়। প্রণব বাবু যখন সংবাদ পেয়ে ছুটে গেছেন শ্বশুরবাড়িতে, নিভারাণীর শেষ অবস্থা। নিভারাণীর মাথাটা কোলে তুলে নিতেই নিভারাণী চোখ মেলে তাকিয়েছিল স্বামীর মুখের দিকে, এরপরেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। **


তুলিকা গেছিলো সংবাদ জানতে। জেঠামণির পাশের চেয়ারে বসে বলল, --কিছুই জানতে পারিনি। আয়া বা নার্সের দেখাও পাইনি। জানিনা, ভেতরে কি হচ্ছে। আচ্ছা জেঠামণি, একা তো আমিই চাইছিনা তিষুর ছেলে হোক, তোমরা সকলেই চাইছো।

-না মা, তোমরা বলিস না। আমার কাছে পুত্র কন্যা সবই সমান। সন্তান প্রসব করা তো চাট্টিখানি কথা নয়। মেয়েদের জন্য এটি এক অগ্নিপরীক্ষা। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিটি মেয়ে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ায়। সুস্থ মা, সুস্থ সন্তান হওয়াটাই বড় কথা, বোকারা পুত্র কন্যা নিয়ে ব্যস্ত হয়। তোর জেঠাইমার কথা মনে হলেই নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হয়। আমার সন্তানের মা হতে গিয়ে মেয়েটা নিজেই মারা গেলো।

-সরি জেঠামণি, তোমায় দুঃখ দিতে চাইনি। একটা ঘটনা আমার মনে অনেক যন্ত্রণা হয়ে বিঁধে আছে। দুই সপ্তাহ আগে তিষুর সাধভক্ষণ অনুষ্ঠানের দিন আমার ক্লাস ছিল, তাই ঐ সময়ে এসে পৌঁছাতে পারিনি। পরে যখন বাড়ি গেলাম, গিয়ে দেখি বাড়ি ভর্তি আত্মীয় কুটুম্ব, বাচ্চারা সকলেই হুটোপুটি করছে কিন্তু টুকটুকির মুখখানা গোমড়া। কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে জিজ্ঞেস করলাম,

-কী ব্যাপার, মুখ কালো করে আছো কেন মামণি? ওরা সবাই খেলছে, তুমি খেলছো না যে! মাসীকে পায়েস খাইয়ে দিয়েছো?

-মাম্মা, কুশল দাদা আর প্রিয়ম ছোটোমাসিকে চামচে করে পায়েস খাইয়ে দিয়েছে। আমি খাইয়ে দিতে গেছি, দিদুন আর মামী আমাকে খাইয়ে দিতে দেয়নি। বলেছে, মাসির একটা ভাই বাবু হোক, তুমি ভাইবাবুকে খাইয়ে দিবে।

মামী বলেছে, তুমি কি চাও, মাসীর একটা ভাইবাবু চাও নাকি বোনবাবু চাও?

আমি বলেছি, বোনবাবু চাই।

মামী বলেছে, এই না না, বোনবাবু নয়, বলো ভাইবাবু চাই।
- ভাইবাবু কি আমার সাথে রান্নাবাটি খেলবে? তাহলে ভাইবাবু চাই।

মামী বলেছে, হ্যাঁ, ভাইবাবু তোমার সাথে রান্নাবাটি খেলবে। এজন্যই তো আমরা সবাই চাই, মাসীর একটা ভাইবাবু হোক। তুমি মেয়েতো, তুমি পায়েস খাওয়ালে মাসীর ভাইবাবু হবেনা, বোনবাবু হবে। এজন্য কুশল আর প্রিয়ম মাসীকে পায়েস খাইয়ে দিয়েছে।

আমি বলেছি, বোনবাবুও ভাল, বোনবাবুও আমার সাথে রান্নাবাটি খেলবে।

জেঠামণি, আমি তখন টুকটুকিকে অন্য কথা দিয়ে ভুলিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আজ যখন ও শুনেছে, মাসী হসপিটালে গেছে বাবু আনতে, আমাকে বলে দিয়েছে, “ মাম্মি, তুমি কি আজ পায়েস রান্না করবে? মামী বলেছিল, ভাইবাবুকে আমি পায়েস খাওয়াব। আজকেইতো ছোট্টমাসীর একটা ভাইবাবু হবে, তাইনা?

জেঠামণি, আসলে আমার দূর্গতি দেখেই বোধ হয় সবাই মেয়ে সন্তানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
-কী যে বলিস। মাথাটা তোর গরম আছে, সেই তখন থেকে যত রকমের এলোমেলো চিন্তায় অস্থির হয়ে আছিস।
-জেঠামণি, আমাকে বলতে দাও। যদি এক বর্ণ মিথ্যে বলি তবে যেন আমার মুখে পোকা পড়ে। শ্বশুরবাড়ির কথা বাদই দিলাম, বাবার বাড়িতেই আমার কোন মূল্য ছিল না।

-হা হা হা ! বিজ্ঞানের যুগে মিথ্যে কথা বলছিস কিনা তা লাই ডিটেক্টার দিয়েই প্রমাণ করা যায়, মুখে পোকা মাকড় পড়বার দরকার হয় না।

-তা হোক, আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী নই। এই যে মনে করিয়ে দিলে, তোমার কথা থেকেই শুরু করছি। ভাইবোনদের মধ্যে লেখাপড়ায় আমি সবসময় পেছনে ছিলাম বলে তোমরা সকলেই আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে। আমি অংকে ভাল নই, সায়েন্স আমার দ্বারা হবেনা। এদিকে সায়েন্স না পড়লে নাকি জীবনটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে! ঘরে বসিয়ে রাখা যাবেনা তাই আমাকে মানবিক বিভাগে যেতে বললে। তোমাদের কথামত গেলাম মানবিক বিভাগে অথচ আমার ইচ্ছে ছিল বাণিজ্য বিভাগে যাওয়ার। ভয়ের চোটে মুখই খুলিনি। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তিষুর কত প্রশংসা, দুই দাদাকে নিয়ে প্রশংসা, এমনকি কড়ে আঙ্গুলের সমান ছোট ভাইটাকে নিয়েও প্রশংসা। নিজেকে এত ছোট মনে হতো, কত আশা ছিল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়বো, কিন্তু শেষে পড়তে হলো বাংলায় অনার্স। তবুও কপাল ভাল যে কলেজে অধ্যাপনা করার সুযোগ পেয়েছি। নাহলে তোমাদের খোঁটা শুনে নাকের জলে চোখের জলে কত বার ভাসতাম।
-পাগলী আজ ক্ষেপেছে! মা রে, দ্যাখনা একটু এগিয়ে গিয়ে, কোন খবর টবর জানতে পারিস কিনা। মেয়েটার শরীরটা এত দূর্বল সেই ছোটবেলা থেকেই!

-তিষু এবার ঠিক পারবে, সব ঠিক থাকবে এবার। আমি স্বপ্নে দেখেছি কাল রাতেই, তিষু সুন্দর একটা বাবুর হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করছে বাগানে।

-বাবুটা নিশ্চয়ই ছেলে! তাইনা? হা হা হা হা!

-হ্যাঁ, ছেলে। আমি মনপ্রাণ দিয়ে চাইছি তিষুর ছেলে হোক। তাহলে তিষুর আদর থাকবে বাবার বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, দুই বাড়িতেই।

-তোর অনেক চাপা দুঃখ আছে আমি বুঝি।

-জেঠামণি, নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলা্‌ম, বামুনের মেয়ে কেন সাহা ছেলেকে বিয়ে করেছি, এই নিয়ে তোমরা এতটাই আপসেট হয়েছিলে যে ব্রাহ্মণের চেয়ে জাতে নীচু বলে আজ পর্যন্ত আমার শ্বশুরবাড়িতে তোমাদের কেউ অন্নগ্রহণ করোনি, আমার শাশুড়ির দেয়া জলের গ্লাসে মা চুমুক দেয়নি। এই নিয়ে আজও শাশুড়ি খোঁটা দেয়, ননদ খোঁটা দেয়। আমি মুখ বুজে থাকি। বাপি এমনিতেই ঘাড় ত্যাড়া টাইপের মানুষ, কিন্তু এমন রগচটা তা বিয়ের আগে বুঝিনি। বিয়ের আগে তো সবকিছু বুঝাও যায় না।

রেগে একদিন বলেছিল, “ বামুনের মেয়েরা মুসলমান ছেলে বিয়ে করে মুসলমানের হাঁড়ির ভাত খায়, আর আমরা সাহা বলে বামুনবাড়ির ঠাকুরেরা আমাদের বাড়িতে জলও স্পর্শ করেনা, কি আমার ভগবান এসেছে! এমন শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় কোন শালা”?
ঠিক এমন করেই বলে সে। জেঠামণি, মানুষ মাত্রেই ভুল করে। আমিও নাহয় ভুল করেছি নীচু বংশের ছেলেকে বিয়ে করে, কিন্তু তোমাদের কাছে মেয়ের জীবন, মেয়ের সম্মানের চেয়ে জাত ধর্ম বড় হয়ে গেলো? অথচ মেজদা যে কায়েতের মেয়ে বিয়ে করেছে, কই, কায়েত বৌমার রান্না তো ঠিকই হাত চেটে পুটে খাচ্ছো। তখন জাত যায় না? বাপি পাজি, কিন্তু এত পাইজ্জামি হয়তো করতোনা যদি তোমরা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ওকে হাসিমুখে গ্রহণ করতে।



ওটি রুমের দরজা ভেতর থেকে কেউ খুলছে। হ্যাঁ, একজন জুনিয়র ডাক্তার বেরিয়ে এসেছে। কী ব্যাপার! প্রণব মুখার্জি যদিও এককালে ডাক্তারি করেছেন, তবুও চোখের সামনে এমন নামী দামী ডাক্তার দেখলে সংকুচিত হয়ে যান। ইনারা কত বড় ডাক্তার, কত বিদ্যে বুদ্ধি, বিদেশী ডিগ্রী! ইনাদের কাছে প্রণব বাবুর দাম পাঁচ টাকার ময়লা ছেঁড়া নোটের সমান। নিজে একজন পুরনো দিনের ডাক্তার হিসেবে নয়, চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে যেতে লাগলেন, ডাক্তারের কথাগুলো শুনতে চান।

ডাক্তার সরাসরি তৃষিতার বর সায়নকেই বললেন, “ আপনি তো মিঃ ভৌমিক?

-হ্যাঁ, আমি সায়ন ভৌমিক।

-ম্যাডাম এখনই অপারেশান শুরু করবেন। পেশেন্টের ব্লাড প্লাটিলেট কাউন্ট তেমন বাড়েনি। ব্লাড প্রেশারও আগের মতই আছে, তবে আর বাড়েনি এটা পজিটিভ দিক। আরও চার প্যাকেট ব্লাড লাগবে, ডোনার রেডি করুন।

-সায়নের মুখের চেহারায় কাঁপন শুরু হলো, খুব দ্রুত দুই হাতে মুখ ঢেকে সায়ন ফ্লোরেই বসে পড়লো। সায়ন কাঁদছে, ওর শরীর কাঁপছে। ডাঃ ঋক অপ্রস্তুত হয়ে গেছিলো, কয়েক মুহূর্ত। নীচু হয়ে ঝুঁকে সায়নের কাঁধে হাত রেখে বলল, “ মি ভৌমিক, আপনি এত ভেঙ্গে পড়েছেন, সম্ভব হলে আপনাকে ওটিতে নিয়ে যেতাম। আপনার স্ত্রী দারুণ সাহসী, দারুণ কো অপারেটিভ। উনি এতটুকু ঘাবড়াননি। ঘাবড়াবে কেন, সে জানে একটু পরেই সে একজন থেকে দুজন হয়ে যাবে, আপনাকে সাথে নিলে তিনজন, সবার সাথে মিলে অনেকজন। আমাদের সাথে কত হেসে হেসে গল্প করছে। এটি পজিটিভ লক্ষণ। আপনি শুনতে চান, আপনাদের ছেলে হবে নাকি মেয়ে বেবী হবে?

-নাহ! আমি শুনতে চাইনা কিছুই, আমি দেখতে চাই, তৃষিতা আমাদের সন্তান বুকে নিয়ে হাসছে। সে সন্তান ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক, সন্তানটিকে তো আমরা দুজনে মিলেই পৃথিবীতে নিয়ে আসছি। আমাদের সন্তান আমাদের কাছে মহা মূল্যবান।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী প্রথমে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানবেন দিদি... এই গল্পটা আমার মন ছুঁয়ে গেছে। এটাতে অনেক কিছু শেখার আছে। যেমন- ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তানের বৈষম্য। আরও অনেক। সত্যি আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি পুরো গল্পটা পড়ে। এক কথায় বলবো অসাধারণ। সর্বোচ্চ ভোট দিলাম। জাল ভোটের সিস্টেম থাকলে আরও কয়েকটা মেরে দিতাম.....। এমন অসাধারন গল্প রেখে পাঠকেরা দেখি আবি - জাবি গল্প নিয়ে টানা ছিড়া করে.....!! শুভকামনা, ভোট ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো....
নূরেআলম, ভাইসোনা তোমাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। সন্তানসম্ভবা গল্পটি পড়ে যে কমেন্ট করেছো, কমেন্ট পড়ে বুড়ো বয়সেও টুকটুকির মত খুশি লাফাতে ইচ্ছে করছে। আমি তোমার লেখা পড়েছি, ভোটও দিয়েছি।
আহা রুবন 'তুমি মেয়েতো, তুমি পায়েস খাওয়ালে মাসীর ভাইবাবু হবেনা, বোনবাবু হবে। এজন্য কুশল আর প্রিয়ম মাসীকে পায়েস খাইয়ে দিয়েছে।' ছেলের জন্য আমরা কতই না উদ্ভট কর্ম করি! ছেলে শিশুর আশায় মেয়ে শিশুকে অবহেলা! আমাদের আপাত ভদ্র লোকদের লুকোনো কুৎসিত চেহারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। দিদির গল্পের পাঠক কম কেন? হাবিজাবি লেখায় দেখি পাঠক হুমড়ি খেয়ে পড়ে...
রুবন, আমার লেখা তেমন কেউ পড়েনা। তবুও লিখি মনের তাগিদে। তুমি যে পড়েছো, তুমি যে অসঙ্গতি ধরতে পেরেছো, এটাই আমার প্রাপ্তি। ভালো থেকো।
দিদি আমি সব সময়ই পড়ি। একটু বড় লেখা লেখেন বলে মোবাইল ফোনে সুবিধা মত পড়ি। মন্তব্যটি পরে করি। লিখবেন; কম হলেও কিছু পাঠক আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকে। নব বর্ষের শুভেচ্ছা জানবেন দিদি।
ইমরানুল হক বেলাল আমাদের সমাজের অবহেলিত নারীদের নিয়ে দুর্দান্ত হয়েছে গল্পটা । দিদি সত্যিই বলেছেন, কবিতার চাইতে আপনার গল্পের ধারাবাহিকতা অনেক গভীর । ভোট এবং মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম । আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
বেলাল, আমি তো কবিতা বুঝিই না, লিখবো কি! আর গল্পও লিখিনা, চারপাশে যা দেখেছি, যা দেখছি তারই কিছু বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করি মাত্র। অনেক কৃতজ্ঞতা এত সুন্দর কমেন্টের জন্য।
Jasim Ahmed কন্যাসন্তান আজও আমাদের সমাজে কতখানি অবহেলিত, তার এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে এই গল্পে। আমার নিজের আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও এই ধরণের মানসিকতা সম্পন্ন কিছু মানুষ আছে। অসাধারণ গল্প।
জসিম, তুমি আমার গল্পের নিয়মিত পাঠক, এই জানাটুকুতেই আমি আপ্লুত।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪