মায়াবতী মেঘা রে!

প্রায়শ্চিত্ত (জুন ২০১৬)

রীতা রায় মিঠু
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.০৭
  • 0

হঠাৎ আওয়াজে হামিদ সাহেব চমকে উঠলেন, এ কী! কমপিউটার টেবিল এভাবে নড়ছে কেন? ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি? সে কি, কমপিউটারটা মাটিতে পড়ে গেলো যে!

-মনিকা, মনিক! ভূমিকম্প হচ্ছে, ভূমিকম্প!!

মনিকা হামিদ সাহেবের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী, স্বামীর জড়ানো কন্ঠের ডাক শুনে দ্রুত স্টাডি রুমে ঢুকলেন। হামিদ সাহেবের দিকে তাকালেন, রিক্লাইনারে হেলান দিয়ে বসা, হাতে ক্রিস্টালের ওয়াইন গ্লাস ধরা আছে, দুই চোখ বিস্ফারিত! মনিকাকে দেখে ভয়ার্ত কন্ঠে বললেন, “ মনিকা, ভূমিকম্প হয়ে গেলো, তুমি টের পেয়েছো?
-ভূমিকম্প হয়নি ত!
-কে বলেছে ভূমিকম্প হয়নি, আমার চোখের সামনে টেবিলটা নড়ছিল, কমপিউটার পড়ে যাচ্ছিলো।
-শোন, ও তোমার চোখের ভুল। তুমি আজ অনেকটা নেশা করে ফেলেছো।
-হোয়াট!! আমি নেশা করেছি? কে বলে আমি নেশা করেছি? আমার বুঝি নেশা করার সময় এটা? কি বলতে চাও তুমি?

-আমি কিছু বলতে চাইনা, তুমি আমাকে ডেকেছো, তাই এসেছি। এসে দেখছি, এত বড় বোতলের প্রায় সবটুকুই সাবাড় করে ফেলেছো, কোথাও গাছের পাতা নড়েনি অথচ তুমি ভূমিকম্প বলে চেঁচাচ্ছো।

-গেট আউট , গেট আউট ফ্রম হিয়ার! আমাকে মাতাল বলার তুমি কে হে বাপু? বেশ করেছি মাতাল হয়েছি, আমার নিজের পয়সায় কেনা মদ আমি খাই, কার কি?


মনিকা আর কথা বাড়ালোনা, স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলো কিচেনে। চূলোয় চিকেন স্যুপ ফুটছে, আর আধঘন্টার মধ্যেই হামিদ সাহেবকে ডিনার খাইয়ে বেডে পাঠাতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশ, রাত ৯টার মধ্যে যেন হামিদ সাহেবের ডিনার সারা হয়ে যায়। উনার এখন পরিপূর্ণ বিশ্রাম দরকার, নাহলে বড় ধরণের বিপদ ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মনিকা কোনভাবেই হামিদ সাহেবের বিপদ ঘটতে দিতে চাচ্ছেননা।

মনিকা যেমনি হামিদ সাহেবের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী, মনিকারও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। একটাই পার্থক্য, হামিদ সাহেব ডিভোর্সড এবং এক পুত্রের জনক, আর মনিকার প্রথম স্বামী বিয়ের দুই বছরের মাথাতেই গাড়ি একসিডেন্টে মারা যায়, প্রথম স্বামীর ঘরে মনিকার কোন সন্তান হয়নি। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরেও মনিকার কোন সন্তান নেই। বিয়ের পূর্বেই হামিদ সাহেব শর্ত দিয়েছিলেন, আর কোন সন্তান চান না। প্রায় পনের বছর হয়ে গেলো হামিদ সাহেবের সাথে মনিকার বিয়ে হয়েছে, স্ত্রীর কর্তব্য ঠিকই পালন করে যাচ্ছে মনিকা কিন্তু মনে মনে সব সময় নিজেকে বঞ্চিত মনে হয়। অথচ মনিকার অমতে বিয়েটা হয়নি।
হামিদ সাহেবের সাথে মনিকার প্রথম দেখা হয়েছিল চারুকলা ইন্সটিটিউটে, সেদিন ওখানে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব। মনিকার বান্ধবীর স্বামীর বন্ধু হামিদ সাহেব, বান্ধবীর সাথে মনিকা গেছিল চারুকলায়, সেখানেই হামিদ সাহেবের সাথে পরিচয়। এরপর আরও কয়েকবার দুজনের সাক্ষাৎ হয়, কথাবার্তা হয়, গল্পগুজবও হয়। বিয়ের প্রস্তাব দেয় মনিকার বান্ধবী, প্রস্তাব নিয়ে হামিদ সাহেব আর মনিকার মধ্যে আলোচনা হয়, নিঃসঙ্গ দুজন নর নারীর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে খুব বেশী দেরী হয়না।

হামিদ সাহেব মনিকার কাছে কিছুই গোপন করেননি, বলেছিলেন যে পারিবারিক সিদ্ধান্তেই উনার প্রথম বিয়ে হয়। প্রথম স্ত্রী সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত, স্মার্ট, ক্যারিয়ারিস্ট। বিয়ের পর হামিদ সাহেব বুঝতে পেরেছেন, স্ত্রী অন্য দশজন মেয়ের মত নরম চরিত্রের নয়, প্রখর ব্যক্তিত্ব।
ক্যারিয়ারের কথা ভেবে স্ত্রী বাচ্চা নিতে চায়নি, এই নিয়ে দুজনের মাঝে ব্যক্তিত্বের সংঘাত হচ্ছিল। হামিদ সাহেবের অশান্তির আরেকটি কারণ ছিল, উনি কোন না কোনভাবে টের পেয়েছিলেন, উনার স্ত্রী অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত। তারপরেও কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে স্ত্রী কনসিভ করে ফেলে, এবরশন করিয়েই ফেলতো যদিনা প্রেগন্যান্সীর ব্যাপারটা জানতে কিছু দেরী হতো। চার পাঁচ মাসের সময় উনারা জানতে পেরেছিলেন যে তাদের ঘরে সন্তান আসছে। সন্তান আগমনের সংবাদে উনি খুশী হলেও স্ত্রী এতটুকু খুশী ছিলেননা। গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়নি।

খুবই দূর্ভাগ্যের যে তাদের প্রথম সন্তানটি জন্মেছে ডাউন সিন্ড্রোম সমস্যা নিয়ে, অর্থাৎ প্রতিবন্ধী শিশু। সেই থেকে শুরু অশান্তি, হামিদ সাহেব প্রথম দিকে মন খারাপ করে থাকতেন, প্রতিবন্ধী শিশু জন্মানোর কারণ হিসেবে স্ত্রীকে দোষারোপ করতেন কারণ গর্ভাবস্থায় স্ত্রী নানা রকম জড়িবুটি খেয়ে অনেক চেষ্টা করেছে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে, তাইতেই হয়তো বাচ্চাটা প্রতিবন্ধী হয়েছে।
ধীরে ধীরে হামিদ সাহেব বাচ্চাটিকে ভালোবাসতে শুরু করেন, প্রতিবন্ধী শিশুটির জন্য খুব বেশী মায়া জন্মাতে থাকে হৃদয়ে। শিশুর নাম রাখেন মায়াবতী মেঘা। কিন্তু মায়াবতী মেঘার জন্য মায়ের মনে কোন তাপ উত্তাপ নেই, বিশাল চাকরি করেন তিনি, চাকরি নিয়েই ব্যস্ত। বাড়িতে আয়া রেখেছেন বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য, ব্যস! ঐ পর্যন্তই। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিখরে ওঠার স্বপ্নে বিভোর তিনি, প্রায় সন্ধ্যাতেই পার্টিতে যান, বাড়ি ফিরেন রাত দশটার পরে। সারাদিন পরে বাড়িতে ফিরেও মায়াবতী মেঘার মুখটা দেখার আগ্রহ বোধ করেননা।
হামিদ সাহেবের মনে অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে, অসন্তোষ থেকে অবিশ্বাস। মায়াবতী মেঘার চেহারায় নিজের মুখ খুঁজেন, না সারামুখের কোথাও তার চেহারার এক ফোঁটা ছাপও নেই। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী বহির্মুখী, কত পুরুষ বন্ধু। এরপর কোনভাবেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে এই শিশুটি তার ঔরসজাত সন্তান।

মায়াবতী মেঘার যখন ১৪ বছর বয়স, হামিদ সাহেবের সাথে প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্স হয়ে যায়। যে শিশুটির দিকে তার শিশুবেলায় একটুও নজর দেননি, সেই শিশুটিকে নিয়েই হামিদ সাহেবের স্ত্রী নিজের নতুন ফ্ল্যাটে চলে যায়। ডিভোর্স হয়ে গেলেও, মায়াবতীকে নিজের সন্তান হিসেবে মেনে না নিলেও হামিদ সাহেব মায়াবতী মেঘার বাবা হয়েই ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে ব্যাগ ভর্তি খেলনা নিয়ে মেয়েকে দেখতে যেতেন, বেশীর ভাগ দিনেই খেলনা দারোয়ানের হাতে দিয়ে ফিরে আসতে হতো। মায়াবতীর মা হামিদ সাহেবকে নিজের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে দিতেননা। মাঝে মাঝে আয়ার হাত ধরে মায়াবতী মেঘা বাড়ির গেটে আসতো, হামিদ সাহেব তখন মেঘাকে দেখতে পেতেন। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও মেঘা হামিদ সাহেবকে দেখামাত্র মুখ ভরে হাসি দিত। হামিদ সাহেব মনে মনে সঙ্কুচিত হয়ে পরতেন, মনের কোথাও খোঁচা লাগতো, আহারে, অসহায় বাচ্চা বাবা-মায়ের অশান্তির শিকার। বাবা মা পাপ করেছে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে অবুঝ, অসহায় শিশুটি। শিশুইতো মেঘা, ১৪ বছর হলেও ওর মানসিক বুদ্ধি দুই বছরের বাচ্চাদের সমান।




দুই

এবার আর ভুল নয়, হামিদ সাহেব স্পষ্টই দেখলেন টেবিল ধরে কেউ ঝাঁকাচ্ছে, কমপিউটারটা টেবিল থেকে পড়ে গেলো। ভূমিকম্প নয়, মায়াবতী মেঘার কাজ এটা, মায়াবতী মেঘা এসেছে, বাবার উপর খুব রাগ তাই বাবার কমপিউটার ফেলে দিলো। এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর মেয়েটা এ বাড়িতে আর আসতে পারেনি, এ বাড়িতে সে কাটিয়ে গেছিলো ১৪টি বছর। এ বাড়িতেই তার শেকড় গাঁথা হয়েছিল, বাবা-মা ঝগড়া করে ওর শেকড় ছিঁড়ে ওকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গেছে। এতকাল আসতে পারেনি, এখন সে মুক্ত বিহঙ্গ, সে এখন যেথা খুশী যেতে পারে। বাবার ঘরে এসে হুলুস্থূলু করতে পারে, বাবার কাজের জিনিস তছনছ করে দিতে পারে। গতকাল সকালে ছাদে যে চারটা ফুলের টব কাত হয়ে পড়েছিল, সেগুলোও নিশ্চয়ই মায়াবতীর কাজ। মায়াবতী জানে, ছাদের বাগান ওর বাবার নিজের হাতে গড়া, ছাদে আর কেউ যায়না, কাল ঝড় বৃষ্টিও হয়নি। এত ভারী টব এমনি এমনি পড়ে যাওয়ার কথা নয়। মেঘা ফেলে দিয়েছে, মেঘাতো এখন সবখানে যেতে পারে, মেঘা এখন মুক্ত পাখি--------


মনিকার কানে এলো হামিদ সাহেব কিছু বলছেন। হামিদ সাহেবের রাতের খাবার রেডি করে মনিকা স্টাডি রুমের দিকেই আসছিলেন। স্টাডিরুমে ঢুকে দেখতে পেলেন, কমপিউটার মেঝেয় পড়ে আছে, ভদকার বোতল শেষ, হামিদ সাহেব কমপিউটার টেবিলটা ধরে দাঁড়িয়ে টলছেন।
মনিকাকে দেখা মাত্র বললেন, “ মেয়েটা ভারী দুষ্টামি করছে। দেখো, কমপিউটারটা ফেলে দিল। আমি বিনতার সাথে চ্যাট করছিলাম, কোথা থেকে মায়াবতী এসে ধাক্কা দিয়ে কমপিউটার ফেলে দিল।“

-ঠিক আছে, আমি আলিমকে ডাকছি, ও এসে কমপিউটার টেবিলে তুলে দিয়ে যাবে। তুমি খেতে এসো।
-আমি খাবোনা, আমি খাবোনা। আমি কেন খাবো? আমার মায়াবতী মেঘার খাওয়া হয়নি এখনও, আগে ওর খাওয়া হোক।

মনিকা বড় করে শ্বাস ফেললেন। মায়াবতী মেঘা মারা গেছে আজ পাঁচ দিন হলো। মেয়েটার বয়স হয়েছিল ৩২ বছর, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণেই হোক অথবা মায়ের অবহেলার কারণেই হোক, এই বয়সে মেয়েটার নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। দিন পনেরো আগে হার্ট অ্যাটাক করে, মেঘার মা বাড়ি ছিলেননা। বাড়ির আয়া এই বাড়িতে ফোন করে হামিদ সাহেবকে জানায়। হামিদ সাহেব দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে অ্যাপোলোতে মেঘাকে ভর্তি করেন। তারও চার দিন বাদে মেঘার মা হসপিটালে এসে পৌঁছায়। মেঘার মা পৌঁছানোর পর থেকে মেয়ের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। মেঘার বাবা শুধু প্রতিদিন মেয়েকে দেখতে যেতেন, এটুকু থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়নি। মেঘা মারা গেছে ঘুমের মধ্যে, ওর বাবা বা মা কেউ পাশে ছিলনা।

সেই থেকে হামিদ সাহেবের আহাজারি শুরু। দুই দিন ধরে নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে, মেঘা নাকি এই বাড়িতে এসে বাবার প্রিয় জিনিস তছনছ করে দিচ্ছে। একজন সায়েন্টিস্ট কি করে ভাবেন যে মৃত মানুষ এসে কমপিউটার ফেলে দেয়, ফুলের টব ফেলে দেয়! মনিকার মাথা পাগল পাগল লাগে, কিন্তু মুখে কিছুই বলেননা। শুধু ভাবেন, উনার ভাগ্যটা এমন কেন? উনি দেখতে ভাল, গান শিখেছিলেন, বেতারে নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। এত ভালো একজন মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছিল, দুই বছর টিকলোনা সংসার, মানুষটাই চলে গেলো, বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে একটা সন্তানও দিয়ে গেলোনা।
হামিদ সাহেবও ভাল মানুষ, কিন্তু তার সাথে যে সংসার, এটাকে কি সংসার বলে? তার পূর্বের স্ত্রী কি অপরাধ করে গেছে, তার শাস্তি মনিকাকে পেতে হচ্ছে। মনিকা ‘মা’ ডাক শুনতে পেলোনা, মনিকা চাকরি করলোনা, বেতারে গান গাওয়া ছেড়ে দিল, এসবই হামিদ সাহেবকে নিশ্চিন্ত করতে। মানুষটা যেন সকল নারীকে অবিশ্বাস না করে, তা ভেবেই মনিকা নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তবুও স্বামীর মন পেলোনা। মনিকাকে ‘মা’ হতে দিলোনা, অথচ চলে যাওয়া সন্তানের জন্য তার কত আক্ষেপ!



তিন

আলিম এসে কমপিউটার মেঝে থেকে তুলে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে গেল। পুরু কার্পেট মেঝে জোড়া, কমপিউটার স্ক্রিন ঠিকই আছে। মনিকা দেখলো হামিদ সাহেবের ফেসবুকে লগ ইন করা ছিল, বিনতাকে দেখা যাচ্ছে চ্যাট বক্সে। তার মানে বিনতার সাথে কথা হচ্ছিল। বিনতাকে চেনে মনিকা, হামিদ সাহেবের ফেসবুক বন্ধু। মনিকার বয়সী হবে অথবা আরও ছোট। মনে হয় বেশ বুদ্ধিমতি, হামিদ সাহেবের সাথে প্রায়ই কথা হয় চ্যাট লাইনে, আগে হামিদ সাহেব বিনতার কমেন্টগুলো মনিকাকে পড়ে শোনাতো।

হামিদ সাহেবকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মনিকা স্টাডিরুমে এসেছিলেন কমপিউটার অফ করে, এলোমেলো হয়ে থাকা ঘরটাকে গুছিয়ে দিতে। কি মনে করে চেয়ারে বসলেন, হামিদ সাহেবের প্রোফাইল খোলা আছে, বিনতার বক্সে সবুজ বাতি জ্বলছে। কিছুক্ষণ আগেই বিনতা মেসেজ দিয়েছে,

-কী হলো, হামিদ ভাই, ও হামিদ ভাই, কোথায় গেলেন। শরীর এখন কেমন, আজকেও মেঘা এসেছে?

মনিকা পুরো বক্সটাই ওপেন করলেন, অন্যের লেখা পড়া উচিত নয়, কিন্তু হামিদ সাহেবকে নিয়ে সমস্যা আরও বাড়বে মনে হচ্ছে। ডাক্তার দেখছে ঠিকই, কিন্তু কোন ফল হচ্ছেনা। মনিকা দেখতে চাইলো, বিনতার সাথে হামিদ সাহেব এমন কিছু বলেন কিনা যা থেকে উনার মনের অবস্থা ধারণা করা যেতে পারে।

হামিদ ভাই, কেমন আছেন?
আজ আপনার দেয়া সেই উপহারের বাক্স খুললাম
আমি হতভম্ব
এত সুন্দর উপহার


আচ্ছা। আমার বাচ্চাটার খুব অসুখ। হাস্পাতালে। পরে কথা বলব।
সে কি?
ঠিক আছে
বাচ্চা সুস্থ হয়ে উঠুক তাড়াতাড়ি


মায়াবতী মেঘার কিডনিতে Problem. Dialysis চলছে। দোয়া কোরো। আমি সবার কাছে আমার সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাই। আল্লাহ্‌ এই মাসুম বাচ্চা, নিরপরাধ একে ভাল করে দাও।
মেঘার কষ্ট উপশম হোক, আপনার দুশ্চিন্তার অবসান হোক, ্মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে নিশ্চয়ই।
ওর বয়স কত? অনেক দোয়া বাবুর জন্য।

পরে বলব। অনেক কথা আছে। আমার অনেক কষ্ট।
ভালো মানুষদের কষ্ট থাকবেই। মন শান্ত করুন। মন শান্ত করুন। ঈশ্বর পরীক্ষা নেন। পরীক্ষা আপনি পাশ করবেন। ভরসা রাখুন ঈশ্বরের উপর।


আমি ভাল মানুষ না, আমি একজন স্বার্থপর মানুষ। নিজের আনন্দের কথা, নিজের সুখের কথা ভেবেছি সারাজীবন। এখন যাই, আমার কাঁদতে হবে। কান্না মুছতে হবে।
পূজোয় বসব। নিশ্চয়ই আপনাদের জন্য প্রার্থনা করব।

ভাল থেক, যাই।
আপনি এত নরম মনের মানুষ, আমি ধারণা করিনি।
মন শান্ত করুন। বিপদে মন স্থির রাখতে হয়

হামিদ ভাই, ্মেঘা কেমন আছে?

তেমনই আছে।Dialysis চলছে। কাউকে বোলো না। বাইরে যাই এখন।
কাউকে বলিনি
দুঃখের খবর কাউকে বলা যায়?

তাই
ওর বয়স কত?
কিডনি ফেলিউর হলো কিসের থেকে?
থাক, বলতে হবেনা

Mentally Retarded. বয়স ৩২ এর মত, কিন্তু মনের বয়স ৪/৫ শিশুদের মত। জানি না থেকে কিসের থেকে হোল।
আপনি ঘুরে আসুন

কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
যাই।
যাই বলবেননা
আসুন
ছাদের বাগান ঘুরে আসুন
গাছগুলো আপনার অপেক্ষায় আছে

বাইরে যাই। আরেক বন্ধু মারা গেছে ।
দেখতে যাব ।
ধেৎ তেরিকা
খালি দুঃসংবাদ

যাই
যাই বইলেননা
বলুন, আসি
APR 26TH, 10:49PM

মেয়ে ICU তে। আমি হাস্পাতালে
FB তে নয়। লোকে সান্তনা দেয়, আমার ভাল লাগে না।
ঈশ্বর সর্ব মঙ্গলময়। তিনি মঙ্গল করুন।

ধন্যবাদ।
MAY 1ST, 3:31AM

বাচ্চাটা মারা গেল দুঘণ্টা আগে
MAY 1ST, 6:02AM


MAY 1ST, 7:09AM
হায়! এ কী দু:সংবাদ! হামিদ ভাই, সরি কিছু বলতে পারছিনা। ঈশ্বর তার সন্তানের হেফাজত করুন
MAY 1ST, 6:18PM
হামিদ ভাই
ঠিক কিভাবে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারি?
আমি শোকে কাউকে সান্ত্বনা দিতে জানিনা

আমার কিছু বলার নাই।
MAY 3RD, 1:32AM
হামিদ ভাই, ভাবী কেমন আছেন?
আমি কী নির্বোধ! ফেসবুকে আছি এতদিন
আপনার সাথে মাঝে মাঝেই কথা হতো
অথচ আমি আপনার পারিবারিক পরিমন্ডলের কোন কিছুই জানতে চাইনি
আপনার বাড়ি বেড়িয়ে এলাম, অথচ মেঘাকে একটু মাথায় হাতঁ বুলিয়ে এলামনা

বন্ধু, আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি, পরে কথা বলব।
হায় হায়
আপনি এভাবে ভেঙ্গে পরলে সামনে অনেক সমস্যা হবেতো
হামিদ ভাই, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ, কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়
সেদিন বলেছিলাম, ঈশ্বর মঙ্গল করবেন
গত দুইদিন নিজের কাছে খারাপ লেগেছে ঈশ্বরের নামে এমন মিথ্যে আশ্বাস শুনিয়েছিলাম
কিন্তু আজ আমার অন্য কথা মনে এসেছে
ঈশ্বর সত্যিই মঙ্গলময়
মেঘা স্পেশ্যাল চাইল্ড ছিল
আপনি বুক দিয়ে আগলে বড় করেছেন
ওর বুদ্ধি বিকাশ ৪/৫ বছরের ছিল
ওর আগে যদি আপনি এবং ভাবী চলে যেতেন, ওকে কে দেখতো?
ঈশ্বর পাঠিয়েছিলেন ওকে আপনাদের কাছে
আপনারা তার যত্ন করেছেন
ঈশ্বরের মনে হয়েছে, আপনারা সুস্থ থাকতে থাকতেই ওকে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে যাবেন, তাই তিনি করেছেন
মেঘা আপনাদের কেউ ছিলনা
ঈশ্বরের সন্তান বলেই ওদের স্পেশ্যাল চাইল্ড বলা হয়

আমাকে একটু কাঁদতে দাও প্লিজ।
আপনারা ওর রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন
সরি
সরি

বিশ্রাম নিন


MAY 5TH, 10:17PM
হামিদ ভাই, আপনার জন্য খুব খারাপ লাগছে, খুব খারাপ। আপনি শোকে নিমজ্জিত, ভাবা যায়না। এমন দরদী বন্ধু সবার।
MAY 8TH, 12:11AM
হামিদ ভাই

হূ। ভাল আছ?
আপনি কেমন আছেন?
ভাবী কেমন আছে?
এই দুঃসময়ে আপনাদের পাশে থাকতে পারছিনা

আছি মোটামুটি। শ্বাসকষ্ট টা এখনো আছে। পাশে তো আছই।
খাওয়া দাওয়া তঁ কিছু করতে পারছেন বলে মনে হচ্ছেনা
কিভাবে কি হবে?

না সব ঠিক আছে। ১৩ তারিখে অনুষ্ঠান করবো।
অনেক কষ্ট
নিজের কাছেই সংকোচ লাগে আপনাকে সান্ত্বনার কথা বলতে

ঠিক কাছে । এখন চানে যাই। একটু পরে পানি থাকবে না।
আচ্ছা

ভাল থেক ।
আপনাকে বিরক্ত করি
কিছু দোষ হলে ক্ষমা করবেন
MAY 10TH, 1:37AM
হামিদ ভাই, শ্বাস কষ্ট কমেছে?

কমে বাড়ে। কমে বাড়ে - এই অবস্থা - ভীষণ অশান্তি ।
কতগুলো অস্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে।
আমার কম্পিউটার যে যেন ঠেলে ফেলে দিল।
আমার গাছ ফেলে দিচ্ছে।
রিয়েলি?

মেঘা মা রেগে আছে বোধহয় আমার উপর।
কি করব?
আপনার মনে এত গ্লানি কেন?

রাতে শব্দ করে।
আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল ।
বৌ রাজশাহী বিশ্ববিফ্যালয়ের প্রফেসার এখন।
মেঘা তাঁর মেয়ে?

সে কোনো একসময় অন্যায় কিছু করে।
হ্য তার মেয়ে।
এর পর অনেক জল গড়িয়ে যায়। তার সাথে বিচ্ছেদ হয়।
মেঘা আপনার ঔরসজাত?

মেঘা তার সাথে চলে যায়। তার সাথেই ছিল ।
সেটাই স্বাভাবিক

আমি একবার বলেছিলাম তার চেহারা আমার সাথে মিলে না, এবং মা চরিত্রহীন। আমার সন্তান নাও হতে পারে।
এর জন্যেই গ্লানি বোধ?

এ কথাটা সে খুব কঠিনভাবে নিয়েছে। মরার সময় এবং পরে বলেছে। হাস্পাতালের খরচ বা অন্য কোনো খরচ আমার কাছ থেকে নেয় নাই।
এটা সত্যি হতে পারে নাও হতে পারে।
কিন্তু বাচ্চাটাকে যে আমি পনেক পরিশ্রমে, অনেক আদরে বড় করেছি, এটা সত্য।
বললেন যে, মেঘাকে তার মা নিয়ে গেছিল

পিতা অর্থ শুধু জন্মদাতা নয়।
কিন্তু সেটা ট তার ১৪ বছর বয়সে।
তার আগে তো আমরা এক সাথে থাকতাম।
অন্নদাতা, ভয়ত্রাতা, শিক্ষা দাতা, যস্য কন্যা বিবাহিতা - এরাও পিতা।
১০০% সহমত

আমার সন্দেহ সত্য, ভালবাসাও সত্য।
মায়ের সাথে চলে যাওয়ার পরের ১৮ বছর ওকে কিভাবে কাছে পেতেন?

যেতাম তার কাছে মাঝে মাঝে। গেলে দূর্ব্যবহার করত। তারপর নানা অছিলায় যেতে দিত না। যতদ্দূড় শুনেছি, এর মাঝেও সে অবৈধ পুরুষসঙ্গ করত।
তাই প্রায়ই আমাকে যেতে মানা করত।
আসলে বউরা চরিত্রহীন হলে সন্তানের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে । কি করা?
আপনি কি এই মুহূর্তে কোন ওষুধ খাচ্ছেন?
ব্লাড প্রেশারের?

ব্লাড প্রেশার ঠিক আছে। কাল ডাক্তারের কাছে গেছিলাম। ঘুমের অসুধ দিয়েছে - খেয়েছি - কাজ হয় নাই।
তবে Drink করলে কিছুটা কমে।
কেন জানি মনে হচ্ছে, আপনার হেলুসিনেশান হচ্ছে

অনেককিছু আছে বিজ্ঞান তা বলতে পারে না।
আমার মায়ের এমন হতো। আমি তখন সবে লন্ডন এসেছি। মনে হয়তো কষ্ট হতো, ঘুম হতোনা। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছিল, তখন রাতে মশারীর ভেতর মায়ের ছোট ভাইকে দেখতে পেতো
এই ছোট ভাইটি ভীষণ অবহেলায় মারা যায় ৩৮ বছর বয়সে
মায়ের মনে ভীষণ গ্লানিবোধ ছিল, শত হলেও ছোট ভাই
আমি মা'কে বলেছিলাম ডাক্তারকে বলতে
ওষুধ পালটে দিতে বা ডোজ কমিয়ে দিতে
মা তাই করেছিল
পরে ঠিক হয়ে যায়

আমি অজানা অচেনা লোককে অনেক সাহায্য করি, নিজের সন্তানের সাথে এমন করলাম?
নিজের সন্তানের সাথেতো অন্যায় করেননি
আপনার অনুমান যদি সত্যি হয়, অথবা মিথ্যে হয়, যা কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল আপনাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে

অন্যায় করেছি । আমার বৌকে তাড়ান ঠিক হয় নাই। মানুষ ভুল করেই।
আপনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন?
নাকি তিনি নিজেই চলে গেছেন?

হ্য আমিই তাড়িয়েছিলাম - অনেক অপমান করেছিলাম । বেশ্যা বলে গালি দিয়েছিলাম।
আপনার মত ধীমান, বিনা কারণে এ কাজ করেননি
ভুল যদি হয়ে থাকে, আপনার একার হয়নি
আপনার স্ত্রীরও ভুল হয়েছিল
এর পরেও মেঘা আরও ১৮ বছর বেঁচে ছিল আপনার আদর ভালোবাসায়
এখন শোকে মুহ্যমান আপনি

অনেক কেঁদেছিলাম। কিন্তু আমার স্ত্রী অন্য লোকের অঙ্কশায়িনী, এটা সহ্য করতে পারি নাই।
কেউই সহ্য করতে পারেনা
স্বামী যদি অন্য নারীর সাথে শোয়, স্ত্রী সহ্য করতে পারেনা

সহ্য করা উচিত - সন্তানের মুখ চ্যেয়ে।
কিন্তু বাধ্য হয়ে সেই স্বামীর ঘরে থাকে
কিন্তু স্বামীর স্ত্রী যদি অন্যের সাথে ঘুমায়, তা দুজনের জন্যই অপমানের

বিশেষত এই অসহায় সন্তানের মুখ চেয়ে।
ভাই, প্রতিবন্ধী শিশুদের আয়ু কিন্তু খুব দীর্ঘ হয়না
চিকিৎসা বিজ্ঞানই তা বলে

ঠিক - অসহ্য অপমান। আমি কিন্তু তাকে অন্যের সাথে মিশতে দিতাম - অবলীলাক্রমে ।
আপনি মেঘাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন
মেঘা নিশ্চয়ই তার শিশু মন দিয়ে তা টের পেতো

হয়ত ঠিক । কিন্তু আমার যে অন্যায় - এটা ভুলি কেমনে?
শিশুরা ভালোবাসা টের পায়
কাজেই বাবু কোনভাবেই আপনার কমপিউটার ফেলবেনা
আপনি অপরাধ করেননি
দুজন ঘর বেঁধেছিলেন

কি জানি ? অপরাধ বোধ ।
সংসার টিকে থাকে পারসপরিক বিশ্বাসের উপর
আপনার স্ত্রী আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন
তাকে নিয়ে যদি সংসার করতেনও, সেই সংসারও আগুনের গোলা হয়ে থাকতো

এসব কথা আর বলতে চাই না। সে ও অনেক দাম দিয়েছে।
আগুনের গোলায় আর যাই হোক, বাবুনের সুখ হতোনা

কি জানি । সুখ তার হয় নি। সে চাকরদের হাতে থেকেছে বেশীর ভাগ সময়। তার মা নানান কাজে অনেক সময় ব্যয় করত।
একটা প্রতিবন্ধি স্কুল চালাত সে। এখনো চালায়। তার Department এ খুব active আর popular সে।
বাবুটার জন্য বিধাতা যে কদিন পৃথিবীর ভাগ রেখেছেন, বাবু্টা ততদিন পৃথিবীতে কাটিয়ে গেছে। ব্যস্ত মায়ের ব্যস্ততায় ভরা যত্নের চেয়ে বিশ্বস্ত চাকরের যত্ন কম উপযোগী নয়

কি জানি । আমার মনে হয় আমারটা আমি করি নাই।
অপরাধ বোধ কাটিয়ে উঠুন

আমার মনে হয় আমি মরে যাচ্ছি।
যিনি আছেন বর্তমান সংসারে, তার উপর নির্ভর করুন
খেয়াল করে দেখুন, পাকে চক্রে তিনি কিন্তু ইগনোরড হচ্ছেন

তাই । তুমি যেদিন আসবে আমাকে বাজারে পাঠিয়ে মিষ্টি কিনিয়েছিল সেদিন। আমাই বললাম সে বেশি খাবে না। আমাকে সে কি বকা।
আপনি প্রথম স্ত্রীকে সংসারে রাখলেও মেঘা ঠিকই নির্ধারিত সময়েই বিধাতার কাছে চলে যেত
তার চেয়ে বরং আল্লাহর কাছে বাবুর আত্মার শান্তি কামনা করি সবাই মিলে

ঠিক আছে। ভাল থেক।
আপনি এই ভাবীর কাছে সব কষ্টের কথা বলুন
উনিই আপনার কষ্টে সমব্যথী হবেন

এর মাথায় বুদ্ধি কম। সূক্ষ কিছু বুঝে না।
এরাই মমতাময়ী হয়
সূক্ষ্ম বুদ্ধিওয়ালা মানুষ মাঝে মাঝে অভিনয় করে
আমার কথা শুনুন
প্লিজ

আমি ধর্ম মানিনা, সে সারাদিন নামাজ কালাম দোয়া পড়ে।
ডাক্তারকে বলুন, আপনার ঘুমের ওষুধ পালটে দিতে
আপনার হেলুসিনেশান হচ্ছে
আপনি ধর্ম মানেননা
তিনি মানেন
সমস্যা কি?

না , আমি Agnostic .
তিনিতো হিজাব পড়ে বসে থাকেননা
রীতিমত অ্যাথলেট

তা থাকে না, কিন্তু আমাকে নামাজ দোয়া পড়তে বলে।
কখনও মন দূর্বল হলে পড়বেন
পড়তে মন না চাইলে পড়বেননা
কিন্তু তার বিশ্বাস তার থাকুক

অর ধারণা নামাজ পড়লেই সব ঠিক হবে।
হতেও পারে
আপনিই বললেন, পৃথিবীর অনেক রহস্য বিজ্ঞান সমাধান করতে পারেনি

ঠিক

ভাত খেতে যাই দশ মিনিট - ডাকছে

আচ্ছা
ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিন
আমি বলছি, আপনার মনে কোন গ্লানি রাখবেননা
আপনি হয়তো ভুল করেছেন জীবনে, কিন্তু কোন অন্যায় করেননি
আমার কথাগুলো বাণী হিসেবে গ্রহণ করুন
মায়াবতী কোথাও যায়নি, আপনার সন্তান আপনার হৃদয়ে আছে
সবচেয়ে সুন্দর, উষ্ণ, নিরাপদ স্থান

তোমার কথা বাণী হিসাবে গ্রহণ করলাম ।
MAY 11TH, 11:07PM
হামিদ ভাই, শরীর কেমন?

একটু ভাল, অষুধ খাচ্ছি ঘুমের। Whiskey খাচ্ছি - ডাক্তারই বলেছে। কিন্তু নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে মাঝে মাঝে।
একটু ভাল---শুনে ভাল লাগলো
মনের উপর নিয়ন্ত্রন আনুন
আপনাকে আমাদের অনেক প্রয়োজন

চেষ্টা করছি । স্মৃতি একটি দায় । ভেসে আসছে একটার পর একটা, কিন্তু Share করার কেউ নাই।
স্মৃতি মানেই অতীত, যার কোন বর্তমান বা ভবিষ্যত নেই
বর্তমান নিয়ে ভাবুন

চেষ্টা করি।
নিজের থেকেই আসে। বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। শড়িরের শক্তি পড়ে গেছে।
কমলদা'র ওখানে বেড়িয়ে আসুন

দেখি । ্মেঘাকে ফেলে কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না।
আবার পাগলা কথা
মেঘা আপনার বুকের ভেতরেই আছে
তাকে ফেলে যাওয়ার কথা আসে কেন?

দেখি। আমি আনন্দ করব - আর মেয়েটা কত কষ্ট পেল। আমি মানতে পারি না।
আপনি আনন্দ করবেন কে বলল?
আপনি সুস্থ হবেন
সুস্থ হওয়া দরকার
মেঘাকে আপনারা কেউ কষ্ট দেননি। মৃত্যু সহজ ব্যাপার নয়,
আপনারা ওর কষ্ট উপশমের প্রাণপন চেষ্টা করেছেন
সৃষ্টিকর্তা নিজের সৃষ্টিকে নিজের কোলে তুলে নিয়েছেন

যতটা করতে পারতাম ততটা করি নাই , মা, বাবা ঠেলাঠেলি করেছি। মায়ের উপর রাগে মেয়েটা অবহেলিত হয়েছে।
আমি আসলে ক্ষমা করতে শিখি নাই।

আমি এতদিনে বুঝেছি। শারীরিক সম্পর্কের কোনো অর্থ নেই। ভালবাসা একেবারেই মানসিক। ওটা একটা Toilet Function মাত্র। ভালবাসা ঠিকই ছিল। কিন্তু তখন আমি জানতে পারি নাই। এই Maturity হতে অনেকদিন লাগে। তখন আমি বুঝি। সুখের সংসার শেষ করেছি। বাচ্চাটার ক্ষতি করেছি ।
TUE 5:46PM

শরীর কেমন আছে এখন?

ঘুম হয় না, আজকাল আর।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
একটুও ভালোর দিকে যাচ্ছেনা?

হু। কিন্তু নিদারুণ Guilty feeling এ ভূগছি। এটাই বোধহয়, Problem.
আপনাকে বলেছি, গিল্ট ফিল করবেননা
নিজেকে ছোট ভাবছেন কেন?

এটা আমার ইচ্ছাধীন না। অবচেতন মন। সব হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি গুলি ভেসে উঠছে। সব অন্যায় স্বার্থপরতা কুরে কুরে খাচ্ছে।
SAT 10:37PM

আজ কেমন আছেন?

আছি একরকম। নিঃশ্বাসে অসুবিধা থিক হচ্ছে না।

Flash back এর মত এক এর পর এক ঘটনা আসছেই।

আসতে দিন
যদি মনে করেন জীবনে অন্যায় করেছেন, অথবা ভুল করেছেন, তাহলে এই ফ্ল্যাশ ব্যাক হতে থাকা ঘটনাগুলো দেখা জরুরী
এটাকে বলে প্রায়শ্চিত্ত
প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেলেই আপনি আবার সুস্থ হয়ে যাবেন

কত অসহায় আমরা! আরেকবার যদি সে কিছু সময়ের জন্য আসত - ইনেক আদর করতাম
অন্যায় তো অনেক বড় করেছি।
আমার আগের বউ এর সাথে বনিবনা হয় নাই। বিচ্ছেদ হয়ে গেছিল। তার সাথেই ছিল।
তারপর আবার বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আর বাচ্চা হয় নাই।
Chat Conversation End

মনিকা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললেন এতদিনের কনভারসেশান। বিনতা মেয়েটা ভীষণ বুদ্ধিমতী, কথার প্যাঁচে ফেলে হামিদ সাহেবের মুখ থেকে কত কথা বের করে এনেছে যা মনিকারও অজানা ছিল। হামিদ সাহেবের এখন রিয়েলাইজেশান এসেছে যে প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া ঠিক হয়নি? দেহের কাজগুলো টয়েলেট ফাংশান? করলেই ফুরিয়ে যায়? দ্বিতীয় বউয়ের বাচ্চা হয় নাই? কেন হয় নাই তাতো বললোনা?

মনিকার গলার কাছে কি যেন আটকে আছে, ঢোঁক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। চোখ দুটো জ্বালা করছে কেন? বুকটায় চাপ লাগছে। কী হতে যাচ্ছে তার জীবনে? তার কি করার আছে মেঘার মৃত্যু ঘটনায়?
বিনতা ঠিকই বলেছে, অন্যায় যদি করে থাকেন তাহলে এখন প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে। করেছেইতো অন্যায়, পরপুরুষে আসক্ত বউকে ডিভোর্স দেয়া যদি অন্যায় মনে হয়, তুমি যে আরেকজন ভাল মানুষকে বিয়ে করে সারাটা জনম উদাসীন, নির্লিপ্ত থেকে, বউকে মা হতে না দিয়ে অন্যায় করোনি? আমি কি নিয়ে বেঁচে আছি? আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
হচ্ছেইতো প্রায়শ্চিত্ত, প্রায়শ্চিত্ত কি শুধুই হামিদ সাহেবের হচ্ছে? গুষ্টি ধরে প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে। আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছেনা? আমি কি পাপ করেছিলাম যে আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে? ও হ্যাঁ, এই লোককে বিয়ে করাটাই ছিল আমার মস্ত বড় ভুল, এতকাল ভুলের মাশুল দিলাম। মাশুল কি আর গুনবার প্রয়োজন আছে? আর কতকাল ভুলের মাশুল গুনে যেতে হবে আমাকে? পাপের ক্ষয় আছে, আমার অপমানের ক্ষয় নেই?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শাহ আজিজ গল্পের সুর কেটে গেল ফেসবুকের দীর্ঘ চ্যাট এপিসোডে ।
ইমরানুল হক বেলাল bes apurbo ekti golpo, onek Boro golpo, somoy niye porlam, aponar lekhar maje onek kichu bujar moto ache, donnobad o sobokamna roilo,
কেতকী পড়তে খুব ভালো লাগছিল, তাই বেশ সময় নিয়ে পড়লাম। তবে একজন সায়েন্টিস্ট হয়ে ডিএনএ পরীক্ষা না করিয়ে বউকে অবিশ্বাস করাটা আমার পছন্দ হয়নি। সন্দেহ একটা মারাত্মক রোগ। বউ ক্যারিয়ারিস্ট হতে পারে কিন্তু তার চরিত্র নিয়ে নগদ প্রমান ছাড়া সন্দেহ করাটা অবশ্যই হীনমানসিকতার পরিচয় (বাস্তবে আমার পরিচিত এক মেয়ে স্বামীর এই সন্দেহে ভুক্তভোগী)। আপনার লেখা এটাই প্রথম পড়লাম। বেশ ঝরঝরে লেখা। গল্পে ভোট রইল।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.০৭

বিচারক স্কোরঃ ৩.২৭ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ০.৮ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫