কোরবানী

ত্যাগ (মার্চ ২০১৬)

রীতা রায় মিঠু
  • ৪৮
নিপার বাপের বাড়ি ময়মনসিংহ, শ্বশুরবাড়ি নওঁগা। নিপারস্বামীকালামসাহেবরাজশাহীবিশ্ববিদ্যালয়েঅধ্যাপনা করেন, সেইসুবাদে নিপারাবিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রফেসারকোয়ার্টারেআছেদীর্ঘসময়ধরে।তাদেরএকমেয়েদুইছেলের জন্ম হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছেলেমেয়েরমধ্যেমেয়েটুসিসবারবড়, বুয়েটে চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী,দুইছেলেরমধ্যেবড়সুস্মিতপড়ছেরাজশাহীক্যাডেটকলেজেআরছোটসুহৃদ বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলেক্লাসনাইনে পড়ছে।
টুসিরবিয়েহয়েগেছে, ওরশ্বশুরবাড়িঢাকাতেই।বিয়ের আগে টুসি হোস্টেলে থাকতো, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে থেকে ক্লাস করে। টুসির শ্বশুর-শাশুড়ি খুবই ভালো মানুষ, টুসিকে অনেক ভালোবাসেন। এত অল্প বয়সে মেয়ে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে ছিলনা, কিন্তু আজকালকের ছেলেমেয়ের রকম সকম বুঝা কঠিন। লাজ লজ্জা কম ওদের, টুসি নিজেই মায়ের কাছে আবদার করেছে বিয়ের জন্য। চোখ মুখ না ফুটতেই মেয়ে প্রেম করে বসে আছে। মেয়ের মুখে বিয়ের কথা শুনে নিপা অবাক হয়ে গেছিলো। বুয়েটে পড়ছে মেয়ে, জি আর ই দিয়ে স্টেটসে যাবে তা নয়, মেয়ে বলে “ মা আমি বিয়ে করতে চাই”।
টুসির বর আদিব ছেলে হিসেবে খারাপ নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে নিজেই ফার্ম খুলেছে, বাবা-মা আর ছোট ভাই নিয়ে ঝরঝরে পরিবার। বংশ পরিচয় থেকে শুরু করে ওদের সব কিছুই নিপার পছন্দ হয়েছে। আদিব দেখতে শুনতেও ভালো, বাবা-মা চেয়েছে ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনতে। এজন্যই টুসির এখনই বিয়ের তাড়া। আদিবের সাথে টুসির কবে কোথায় আলাপ হয়েছে কে জানে। যাহোক, দুই পরিবারের সম্মতিতে আদিবের সাথে টুসির বিয়ে হয়। বিয়ের পর মেয়ে-জামাইকে দেখে নিপার মনে শান্তি লাগে, দুটিতে দারুণ মানিয়েছে।


আজ সকালে টুসি ফোন করেছিল,ওর সাথে কথা বলার পর থেকে নিপার সামনে পৃথিবী দুলতে শুরু করেছে। টুসি খুব স্পষ্ট গলায় বলেছে, ওরা নাকি আর সংসার করবেনা। একথা শোনার পর নিপা বুঝে উঠতে পারেনি মেয়েকে কি বলা উচিত। টুসির সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, এ কেমন কথা, ও নাকি ডিভোর্সের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছে। টুসি বাপ মায়ের একমাত্র কন্যা, মাত্র এক বছর আগেই জাঁকজমক করে বিয়ে হলো,তাও নিজের পছন্দের পাত্রের সাথে। তাহলে এখনই ডিভোর্স কেন? কি হয়েছে ওদের মধ্যে?


আজ বৃহস্পতিবার, আগামীশনিবারপনেরোদিনেরজন্যনিপাঢাকাযাবে। টুসি এবং আদিব, দুজনের সাথেই কথা বলবে। যদি ওদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানো যায়, জিনিস ভাঙ্গা সহজ, একবার ভেঙ্গে গেলে আর জোড়া লাগবেনা। পনেরো দিনের জন্য ঢাকা যাবে, একটু সময় হাতে নিয়েগোছাগাছকরাদরকার। হাতে বেশ কিছু টাকা নিতে হবে, টুসির বাবা আজ ফেরার পথে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনবে। নিপার নিজের কিছু সঞ্চয় আছে, রান্নাঘরে বিস্কুটের টিন, ওয়ার্ড্রোবে জামাকাপড়ের ভাঁজে,আরও খুচরো জায়গায় টাকা রাখা আছে। সবই সাথে নিবে,ঢাকা গিয়ে নিপা সরাসরি বড় ফুফুর বাড়িতে উঠবে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি ওঠবার ইচ্ছে নেই। ফুফুর বাড়িতেও কেউ থাকেনা, কেয়ারটেকার বাড়ি পাহারা দেয়। ফুফুর বাড়িতে কেউ না থাকুক, পাশের বাড়িতে অনুপম আছে। অনুপমের চেয়ে আপনার জন নিপার আর কে আছে। এসময় অনুপমকে পাশে রাখা দরকার।
জামাকাপড়নেয়ারসময়ওয়ারড্রোবেরজামাকাপড়েরভাঁজেকিছুটাকাপেয়েগেলো, প্রায়হাজারতিনেক, আরও পাওয়া যাবে।এগুলোওরগুপ্তধন।হাতঢুকিয়েকাপড়হাটকেআরওটাকারসন্ধানকরতেলাগলো।
ঢাকানিপারখুবপ্রিয়শহর, ছোটবেলায়বাবারহাতধরেকতবারঢাকাগিয়েছে।ঢাকা বলতে নিপা বুঝতো ধানন্মন্ডি,ধানমন্ডিতেনিপারবড়ফুফুথাকতেন।ফুফুরদুইছেলে, কোনমেয়েসন্তানছিলনা।একটা মেয়ে সন্তানের জন্য ফুফু খুব আহাজারি করতেন। নিপাকেমেয়েরস্নেহেভালোবাসতেন।ফুফুর বিয়ে হয়েছিল অনেক ধনী বাড়িতে, ফুফার ছিল জাহাজের ব্যবসা। কিন্তু ফুফা বেশীদিন বাঁচেননি,অনেকঅল্পবয়সে ফুফুবিধবাহয়েছিলেন। তবে মনের জোর খুব বেশী ছিল ফুফুর, ফুফার রেখে যাওয়া সম্পত্তি সামলেদুইছেলেকেলেখাপড়াশিখিয়েছেন,ছেলেরাআমেরিকাপ্রবাসীহয়েযাওয়ারপরধানমন্ডিরবাড়িতেফুফুঅনেকবছরএকাথেকেছেন।ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যেতে নিপার নিজেরও খুব ভালো লাগতো।
বড়হওয়ারপরফুফুরবাড়িতেযাওয়ারজন্যনিপারমনেঅন্যএকটানজন্ম নেয়, অনুপমেরজন্যটান।অনুপমফুফুরভাসুরেরছেলে। ছোট্টবেলা থেকেইনিপারজন্যপাগলছিল, অনুপমকেনিপারওখুবভালোলাগতো। ছোটবেলায়দুজনেএকসাথে খেলেছে, বড়বেলায়বুড়িগঙ্গারতীরে, তুরাগনদীরতীরেবেড়িয়েছে। বড়বেলায়অনুপমকবিতাআবৃত্তিকরতো, নিপাগানগাইতো। এভাবেই ওরা টের পায় একজন আরেকজনকে পাগলের মত ভালোবাসে, এর নামই বোধ হয় প্রেম।কিন্তুপ্রেমপরিণতিরদিকেগড়াতেপারেনি।ভাসুরেরপরিবারেরসাথেফুফুরছিলপারিবারিকবিরোধ, দুবাড়িরকেউইওদেরসম্পর্কমেনেনিতেরাজীহয়নি। ফুফুর পছন্দেএকদিননিপারবিয়েহয়েযায়কালামসাহেবেরসাথে,দুঃখে বিরহেঅনুপমহেঁটেবেড়ায়পথেপথে।
বিয়েরপরবরকেনিয়েনিপাবাপেরবাড়িবেড়াতেনাগিয়েফুফুরবাড়িতেইবেশীবেড়াতেযেত।অনুপমেরসাথেকালামসাহেবেরপরিচয়করিয়েদিয়েছিলনিপা।তিনজনেমিলেআড্ডাদিত, রেস্টুরেন্টে খেতো, তুরাগ আর বুড়িগঙ্গার তীরে বেড়াতো, হই হই রই রই করে সময় কাটাতো। নিপা ভাবতো কালাম সাহেব সরল মনের মানুষ, অনুপম-নিপার প্রেমের ব্যাপার কিছুই বুঝতেন না।
কিন্তু আড্ডার মধ্যে নিপার মুখের দিকেঅনুপমেরতৃষ্ণার্তএবংবেদনার্তচোখজোড়ারদৃষ্টিকালামসাহেবেরনজরএড়াতোনা।অনুপমকেকালামসাহেবেরমনেধরেগেলেওউনিবুঝতেপারতেননিপাকেনবাপেরবাড়িনাগিয়েফুফুরবাড়িতেআসে।কিন্তুকালামসাহেবকিছুনাবোঝারভাণকরতেন।
বড়ফুফুমারাগেছেনবছরপাঁচেকআগে।ফুফুরছেলেরাদেশেএসে মূলবাড়ি বাদ রেখে বাকীবাড়িঘরবিক্রিকরেআবারআমেরিকাফিরেগেছে।অনুপমশেষ পর্যন্ত বিয়ে করে সংসারী হয়েছে, দুটি ছেলের বাবা হয়েছে, তবুও নিপাকে ভুলতে পারেনি। ফুফুর মৃত্যুর পর নিপা ফুফুর বাড়ি আসার কোন উছিলা খুঁজে পায়নি, তাই অনুপমের সাথে দেখা হয়নি। মুঠোফোনেই দুজন দুজনের কুশল বার্তা বিনিময় করতো।

মনটাঅস্থিরলাগছে, অন্যসময়হলেঢাকাযাওয়ারকথায়নিপাখুশীতেডগমগহতেপারতো।কিন্তুএবার সময়টা অন্যরকম, খুশীর বদলেমনমরেআছে। কেন এমনটা হলো? এ কেমন প্রেম ছিল দুজনের যে বিয়ে হতে নাহতেই প্রেম শেষ? কই, অনুপমের প্রতিতো নিপার ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি। অনুপমের সাথে যদি নিপার বিয়ে হতো, তাহলে কি ওদের প্রেমও ফুরিয়ে যেত? প্রেম কি বিয়ের পর ফুরিয়ে যায়? তাহলে তো প্রেম করে বিয়ে না করাই ভালো। প্রেম মানে শুধুই ভালোবাসা, বিয়ে মানে দায়িত্ব। দায়িত্ব কি প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বি? টুসি আদিবের বিয়ে হলো মাত্র এক বছর, দায়িত্ব নেয়ার সময় তো হয়নি। তাহলে?

বিয়েরপরটুসিভালোইছিল, আদিবকেনিয়েআহ্লাদেরসীমাছিলনা।বর-বউদুজনদুজনকে ‘হানি’, ‘বেবি’ বলেসম্বোধণকরতো।শ্বশুরবাড়ীরলোকজনকেওনতুনবউয়েরব্যাপারেবেশখুশীমনেহয়েছে।কিন্তুবছরনাঘুরতেইনিপাখেয়ালকরেছে, টুসিআদিবকেহানিডাকেনা, আদিবওটুসিকেবেবিডাকেনা।আদিবপ্রসঙ্গেটুসিরমুখগম্ভীরথাকে।

জামাকাপড়হাতড়েনিপাআরেকটিকাগজেরভারীখামপেয়েবেশখুশীহয়। মোটা পরিমান টাকা পাওয়ার আশায় চোখ চকচক করে,কিন্তুখামটিচোখেরসামনেধরারপরবুকেধাক্কাখায়।অনুপমেরহাতেলেখাশেষপ্রেমপত্র, ফুফু মারা যাওয়ার এক বছর পর মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুপমের সাথে শেষ দেখা, সেখানেই পত্র বিনিময়।এরপরঅনুপম নিপাকেআরকখনওলিখেনি।

নিপাচোখবন্ধকরেইবলতেপা্রবেচিঠিতেকিলেখাআছে।
আজ থেকে চারবছরআগেফুফুরমৃত্যুবার্ষিকীতেনিপাঢাকাগেছিল,বেশকিছুদিনফুফুরবাড়িতেথাকতেহয়েছিল।চলেআসারআগেরদিনঅনুপমএসেছিল, নিপারহাতেচিঠিগুঁজেদিয়েচলেযায়।চিঠিহাতেনিয়েনিপাদাঁড়িয়েছিলঅনেকক্ষণ, এরপরচিঠিরভাঁজখুলেপড়তেশুরুকরতেইওরবুকথরথরকরেকেঁপেউঠেছিল। কত বছর পেরিয়ে গেছে, দুজনেই আজ সংসারী, সন্তানের পিতা মাতা, তবুও অনুপম নিপাকে হৃদয়ের মণিকোঠায় সযত্নে রেখে দিয়েছে।
“ নন্দিনী, সত্যি করে বলো তো আমায় ছাড়া কেমন আছো তুমি, আমায় ছাড়া কেমন কাটে তোমার। তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা ভেবেছিলাম, কিন্তু বেঁচে আছি। কেমন করে বেঁচে আছি বলো তো? তোমায় রেখেছি নয়নতারায়, তোমায় রেখেছি নয়নধারায়, নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছো যে ঠাঁই। নন্দিনী, চাচী চলে গেলেন বলে ভেবোনা ঢাকায় তোমার কেউ নেই। আমি আছি, আমি ছিলাম, আমি থাকবো তোমার জন্য। তুমি আসবে, বার বার আসবে, গানে গানে আসবে, প্রাণে প্রাণে আসবে। তোমার স্পর্শ ্দাবী নাকরতে পারি, প্রেমের পরশটুকু তো পাবো! কী গো, আসবেনা? আমায় দেখা দিতে আসবেনা তুমি? আমায় না দেখে তুমিই বা ভালো থাকবে কি করে? এসো, আমরা সবাই ভালো থাকি। আমার বাড়ির দরজা দিনে খোলা রাতে বন্ধ থাকে, বাড়ির দরজা বারোয়ারী মানুষের জন্য থাকুক, তুমি আসবে বলে আমার হৃদয়ের দরজা তোমার জন্য দিনরাত খোলা রেখেছি। তুমি এসো, আমার জীবনে এসো, মরণেও এসো। আমি তোমাকে পলে পলে অনুভব করি।---তোমার অনুপম “

নিপা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। টুসির সংসারের ভাঙ্গন ঠেকাতেই হবে, নিজের সর্বস্ব দিয়ে হলেও ভাঙ্গন ঠেকাবে।

নিপা খাম খুলে চিঠি বের করলো, শেষবারের জন্য পড়লো। দু চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল, “ খোদা, তুমি রহম করো। অনুপমকে ভালোবেসেছিলাম কৈশোরে, অনুপমই আমার প্রথমএবংএকমাত্র প্রেম।খোদাতোমারতোকিছুইঅজানানেই, তুমিজানোআমিআমারস্বামীরপ্রতিকর্তব্যেএতটুকুহেলাকরিনি। স্বামীরকাছথেকেসত্যিকারেরভালোবাসাপেয়েছিকিনাতাআজওজানিনা। কিন্তুস্বামীরবিরুদ্ধেআমারকোনঅভিযোগনেই। বাবা-মাযারহাতেআমায়তুলেদিয়েছিলেন, আমিতারসেবাতেইনিজেকেনিয়োজিতরেখেছি। আমাদেরতিনসন্তানেরপ্রতিআমিএতটুকুঅবহেলাকরিনি। মায়েরকর্তব্যেত্রুটিকরিনি, শ্বশুর-শাশুড়িরপ্রতিকর্তব্যপালনকরেছি। তবুওআজকেনআমারজীবনেএইদূর্দিনএলো! আমারএতকষ্টেসাজানোসংসা্রেকেনআজবিচ্ছেদেরসুরবাজছে? খোদা, তোমারকিছুইঅজানানেই, তুমিজানোঅনুপমেরপ্রতিআমারভালোবাসা, দূর্বলতাআজওঅটুটআছে, কারোপ্রতিভালোবাসাবাঁচিয়েরাখাকিপাপ? অনুপমএবংআমি, আমরা কেউ কাউকে প্রতারণা করিনি, বড় মানুষের রেষারেষিতে আমাদের প্রেম সার্থকতা পায়নি, কিন্তু তাই বলে আমাদের প্রেমের বিশুদ্ধতা এতটুকু মলিন হয়নি। আমার সেই বিশুদ্ধ প্রেম আজও আমার কাছে সবচেয়ে দামী সম্পদ।এটাইকিআমারঅপরাধ? আমারএইঅপরাধেরকারণেইকিআমারকন্যারজীবনশুরুতেই তছনছযাচ্ছে? আমিকিকরলেআমারটুসিরসংসারঅটুটথাকবে? কিকরবোবলো? আমিজীবনেরপ্রিয়কিছুউৎসর্গকরলেযদিআমারটুসিরসংসারবেঁচেযায়তোআমিতাইকরবো। গত কদিন ধরে আমার কন্যার দাম্পত্য সুখের জন্য প্রিয় কিছু উৎসর্গ করতে চাইছিলাম।এতদিনঠিকবুঝেউঠতেপারছিলামনাকোনজিনিসটাআমারঅত্যন্তপ্রিয়।খোদা, তুমিতোজানো সোনা গয়না, বাড়ি গাড়ি কোন কিছুতেই আমার আকর্ষণ নেই।এরকোনটাইআমারপ্রিয়জিনিসেরমধ্যেপড়েনা। তোমার কাছে লুকোনোর কিছু নেই, আমার স্বামী, সন্তান, বাবা মা সকলেই আমার প্রিয় জন, কিন্তু সবচেয়ে প্রিয় অনুপমের প্রতি আমার ভালোবাসা। আজ এই ভালোবাসাটুকুই উৎসর্গ করে দিচ্ছি। অনুপমের এই চিঠিখানিই আমার কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ, এর চেয়ে প্রিয় আর কিছু খুঁজে পেলামনা। এই প্রিয় সম্পদই আজ তোমার কাছে কোরবানী দিচ্ছি। আর কোনদিন আমি অনুপমের সাথে দেখা করবোনা, অনুপমের সাথে যোগাযোগ করবোনা। দৈবাৎ দেখা হয়ে গেলে মনকে সংযত রাখবো। এই চিঠি এই মুহূর্তে ছিঁড়ে ফেলছি, অনুপমের শেষ চিহ্ন। আমার কাছে অনুপমের আর কোন স্মৃতি থাকবেনা। এই কোরবানীর বিনিময়ে তুমি আমার টুসির সংসার বাঁচিয়ে দাও”।
নিপা চোখ খুলল, চিঠির কাগজটি দুই গালে ছোঁয়াল, ছিঁড়ে ফেলার আগে চিঠিতে আলতো করে চুমু খেলো, এরপর একেক টানে পরতে পরতে চিঠি ছিঁড়তে লাগলো। এক সময় কাগজের টুকরোগুলো জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে উড়িয়ে দিল।
ওয়ারড্রোব থেকে ইস্ত্রি করা শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট নিয়ে স্যুটকেসে সাজালো। স্যুটকেস গোছানো শেষ, স্যুটকেসের ডালা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মেঝেতে ছোট কাগজের টুকরোর দিকে নজর গেলো। ছেঁড়া চিঠির এক টুকরো, জানালা দিয়ে টুকরোগুলো ফেলার সময় এই টুকরোটি হয়তো মেঝেয় পড়ে গেছিল। বিষণ্ন মনে কাগজের টুকরোটি তুলে জানালার বাইরে ফেলার আগে টুকরোর লেখাটুকু পড়ার ইচ্ছে হলো। চিঠির প্রতিটি শব্দইতো ওর মুখস্থ আছে, এই টুকরোর মধ্যে কোন শব্দ লেখা আছে কে জানে। টুকরোর দিকে নজর দিয়ে নিপা স্তব্ধ হয়ে গেলো। ওখানে লেখা আছে, “তোমার অনুপম”।
কাগজের টুকরোটি বাইরে ফেলতে গিয়েও ফেলা হলো না। ইচ্ছে হলো ‘অনুপম’কে শাড়ির ভাঁজে রেখে দেয়ার। শাড়ির ভাঁজে রাখতে গিয়েও নিপা থমকে গেলো, একটু আগেই ও আল্লাহর কাছে ওর প্রিয় জিনিস কোরবানী দিতে চেয়েছে, এখন যদি এই কাগজের টুকরো শাড়ির ভাঁজে রেখে দেয় তাহলে কোরবানী সম্পূর্ণ হবেনা, ওর টুসির সংসারও জোড়া লাগবেনা। ওর নিজের জীবন পেরিয়ে গেছে, অনুপমও বুড়িয়ে গেছে, এই জনমে ওদের মিলন হলোনা। টুসির জীবন মাত্র শুরু, ওর জীবন পূর্ণতা পাক। ওরা নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে, এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসার অপমৃত্যু হলে পৃথিবীতে বিশুদ্ধ প্রেম বলে কিছুই থাকবেনা। ভালোবাসা বাঁচুক, ভালোবাসার মানুষগুলো বাঁচুক, জীবন সুন্দর হোক।
‘তোমার অনুপম’ লেখা কাগজের টুকরোটি হাতে নিয়ে নিপা বাগানে গেলো। টবে লাল গোলাপের গাছে এখনও দুটো গোলাপ ফুটে আছে। পাশের ডালে আরও তিনটি কলি আছে। গোলাপ গাছের গোড়ার মাটি একটু আলগা করে ‘তোমার অনুপম’ লেখা কাগজটি আলতো করে রেখে উপরে ঝুরো মাটি ছড়িয়ে দেয়ার সময় নিপা বিড় বিড় করে বলল, “ অনুপম, তোমার নন্দিনী তার অনুপমকে ফেলে দিতে পারলোনা, তুমি বেঁচে থাকো গোলাপের নির্যাস গায়ে মেখে। এই জনমে আমরা আলাদা ছিলাম, পরের জনমে আমরা একত্র হবো। আমায় ভুল বুঝোনা, তুমি
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লাগল। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
মিলন বনিক দলদল বরাবরের মতই ভালো লাগা...তবে পড়তে খুভ কস্ট হচ্ছিল....ভালো থাকবেন...
মোজাম্মেল কবির পড়তে বেশ কষ্ট হয়েছে দিদি...
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ আপনার লেখার হাত আগাগোড়াই পরিপক্ক । এবারের গল্পও তার ব্যতিক্রম নয় । প্রাপ্যটা রেখে গেলাম ।
ইমরানুল হক বেলাল বেশ সুন্দর গল্প। পড়ে ভালো লাগলো। ভোট রেখে গেলাম। আমার গল্প কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
ফয়েজ উল্লাহ রবি ফন্ট এর জন্য পড়তে অসুবিধে হয়েছে, ভোট রইল।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,আমার কবিতা ও গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল।ভোট রেখে গেলাম।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী