এ দিগন্ত আমার নয়!

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

হাবিব রহমান
  • 0
  • ৩৮
সড়কে দাড়িয়ে দূরে তাকাল আসগর। এমন দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সচরাচর দেখা যায়না আজকাল। আক্কাসের ক্ষেতের নাড়ায় আগুন দেয়া হয়েছে। পুড়ে যাচ্ছে আক্কাসের ফসল, সম্বল। আগুনের হল্কা বাতাসে দাপিয় উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে। তারপর ধুয়ার কুণ্ডলী। আক্কাস নিজ হাতে তার ক্ষেতে আগুন দিয়েছে। ধুয়ার আবরণের ফাঁকে ফাঁকে ক্রুদ্ধ আক্কাসকে দেখা যাচ্ছে। এ আবাদি তুলে নিয়ে বিক্রয় করা সম্ভব নয়। ফসল তুলে নিয়ে বিক্রি করার খরচও উঠবে না বিক্রি করে যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে।

আক্কাস ভোটের সময় খুবই মন খারাপ করেছিল। ভোটাভুটি হলো কিন্তু তার এলাকায় ভোট হলো না। অন্য প্রার্থী নাই। প্রার্থী বিনা ভোটেই পাশ। এইটা কোন কথা হলো। মিছিল নাই, হাটে বসে আড্ডা নাই, ছেলেপুলেদের হুল্লোড় নাই, অফুরান চা-বিড়ি নাই কিন্তু নির্বাচন শেষ। আক্কাসের বউ এরও মন খারাপ। ঠিক করছিল নতুন শাড়ী পড়ে কেন্দ্রে যাবে। মার্কা আগেই ঠিক করা। সেইখানে সিল মেরে আসবে। ঠিক করেছিল আক্কাসকে বলবে একটা লিপস্টিক কিনে দিতে। কিছুই হলো না।
এই সব কষ্টের কথা আসগরকে বলেছিল আক্কাস।
: আজগড় বাই এইডা কোন কাম হইলো, এইডা কি পদের ভোট হইলো?
: ভোট হইলো নাকি না হইলো তোর কামের কি?
: না আজগড় বাই কামডা বালা অয় নাই।
: ভোটতো আগেও দিছিলি, কোন কাম হইছে? বেবাকতে একই। সব পিয়াইজের এক গুয়া। আমরা নাইচা কুইদা ওগোরে পাশ করাই। পাশ করনের পর হেগোরে আর পাওন যায় না। নে চা খাবি?
: হ! ওই বল্টু দুইডা কড়া কইরা চা বানা দেখি।

আসগর, আক্কাস বা আক্কাসের বউ ভুলেই গিয়েছিল ভোট না দিতে পারার সেই কষ্টের কথা। ভোটের জন্য এবার অবরোধের ডাক দিসে রাজনৈতিক দল গুলো। আক্কাস মনে মনে ভাবলো ঠিকই আছে। ভোট দিতে না পারা কেমন হলো। এবার মনে হয় ভোট হবেই। আসগর কেউ বলেছিল ও। হাটে চায়ের দোকানে বসে বিড়ি টানছিল আসগর। আক্কাসকে সামনে দিয়ে যেতে দেখে ডাকলো,
: আক্কাছ, কই যাসরে? এ দিকে আয়। চা খাবি?
: হ আজগড় বাই। কড়া কইরা একটা চা দিতে কও।
বসে আয়েস করে চুমুক দিয়ে বলল, "ওই বল্টু এইডা চা অইলোরে। দুধ চিনি বাড়াইয়া দে।"
: আজগড় বাই হাটে তো কোন পাইকার নাই। ফুলকফি তো সব পচতাছে।
: পাইকার আইবো কই থিকা, রাস্তায় গাড়ি চলতে পারতাছে? গত কাইল টেরাকে আগুন ধরাইয়া দিছিল। টমাটু, কফি সব রাস্তায় গড়াগড়ি। হেল্পারটা পুইড়া মরলো। আহারে কোন মায়ের পুত।
: আমার কফি গুলাও উঠাইতে হইবো। বেচুম কই। কি সুন্দর কফি হইছিল।
: তুইলা খরচ বাড়াইবি কেন? আল্লার ওয়াস্তে বিলাইয়া দে।
: সমিতির বেডা ঘুরঘুর করতাছে। টাহা দিমু কেমনে? গতকাইল বিহান বেলা থিকা বৈকাল পর্যন্ত বইসা আছিল। আমি বাড়িত যাই নাই। বাবুর মায় সরমিন্দা হইছে। টাহার জোগাড় রাখতে কইছে। কি করি কও দেহি?
: হে বেডা সমিতির চাকরি করে। টাহা না নিয়া গেলে, গাইল্লায়। হে কি করবো?
: ফলন বেচতে না পারলে আমি টাহা দিমু কইত্থিকা?
: আমরা গরিব মানুষ! আমগো কথা কইয়া ওরা রাজনীতি করে। আমগো মাইরাই ওরা আমগো কথা কইয়া গলাবাজি করে।
: ভোট কইরা দিলেইতো সব ঠিক হইয়া যায়।
: ভোট দিয়া আমগো কি? ওগোর কাছে আমগোর কোন দাম আছে? আমগো দেখাইয়া গদি ভাগাভাগির কারসাজি।
: তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝি না। এই সব শেষ হইবো কবে?
: জানি না। চল বাইত যাই।
ফিরে এসেছিল আসগর আর আক্কাস।

সেই রাতে খাবার খেয়ে বিছানায় গা বিছিয়ে দিতেই বল্টুর বাড়ি থেকে মরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল আসগর। ধরমর করে উঠে বসলো। আসগরের বউ ওর দিকে ভীত চোখে তাকালো। দুই জনই ঘরের ছিটকিনি লাগিয়ে বল্টুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।
গ্রামের অনেকেই এর মধ্যে বল্টুর বাড়িতে চলে এসেছে। ছোট উঠানে গড়াগড়ি করে কাঁদছে বল্টুর মা। আসে পাশের বাড়ির বউরা ধরে রাখতে পারছেনা মহিলাকে। বিলাপের মধ্যে... ওরে আমার মানিকরে, ওরে আমার সোনারে বলে কণ্ঠ হারিয়ে ফেলছে, বল্টুর মা।

বল্টুর বাপ মারা যাওয়ার পর বল্টুর চাচারা ওদের ভিন করে দেয়। সালিশ করে বল্টুর বাবার ভাগের জমিটাতে ওঠে ওরা। একটা ছাপরা ঘর আর ছোট একটা উঠান। মা-ছেলের ওই সম্বল। বল্টু তখন হামাগুড়ি দিয়ে হাটে। বল্টুর মা বড়বাড়ির ফুট ফরমাস খেটে কোন রকমে দিন পার করেছে। বল্টুর বয়স এখন তের। পড়া লেখা করতে পারে নাই। এখন হাটে চায়ের দোকানে কাজ করে।

আক্কাসকে এক কোনে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো আসগর। আক্কাসের দিকে এগিয়ে গেল সে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। আক্কাস বলল, "রাইতে টেম্পু দিয়া বাইত আইতাছিল বল্টু। করা যেন পেট্রল বোমা মারছে। বল্টু আর একজন ওই খানেই মারা গেছে আরো তিনজনরে সদরে হাসপাতালে নিছে। হেগোর অবস্থাও বালা না।"


আসগর সড়কে দাড়িয়েই দেখছে আক্কাসের জমিটা পুড়ছে। আসগরের চোখ আগুনের শিখায় আটকে আছে। আগুন নাচছে। আসলে আগুন নাচে, নাকি শয়তান? বারংবার আক্কাস ওর জমিতেই শয়তানকে খেলতে দিবে। নিজ হাতে শয়তানকে আমন্ত্রণ করবে। শয়তান মহা উল্লাসে আক্কাস, আজগর বল্টুদের ভবিষ্যৎ ভস্মীভূত করে ললাটে তিলক নিবে।
আসগর সড়ক থেকে জমিতে নেমে আসে। নতশিরে হেটে চলে দিগন্ত জোড়া মাঠের মুকুট হীন অসহায় নৃপতি।

আক্কাসের কাছে এসে দাড়ায় আসগর। আক্কাসের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে অশ্রু। বলে, আজগড় বাই, এই ক্ষেত আমার না! এই দেশ আমার না! এই ভোট আমার না!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শেখ শরফুদ্দীন মীম ভালোলাগা ও ভোট রেখে গেলাম । সময় করে আমার কবিতাটি( আলোর সন্ধানে) পড়বেন।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
মনজুরুল ইসলাম বল্টুর মেতা অেনেকই এই িদগন্ত েছেড় অন্য িদগেন্ত পািড় জমােচ্ছ। িবষয়টা খুবি কষ্টকর।ভঅেলা িলেখেছন। শুখ কামনা।
রুহুল আমীন রাজু অনেক বাস্তব একটি গল্প .....ভালো লাগলো .(আমার লেখা 'কালো চাদ ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো )
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ চলমান পরিস্থিতির উপর লেখা চমৎকার গল্পটা খুব ভাল লাগল । ভোট রেখে গেলাম ।

১৬ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪