বৃষ্টি টা হঠাত-ই এল। ছাতা টা খুলে বাস স্টপ-এ এসে দাঁড়াল সুতৃষা। একটু দূরে চোখ পরতেই মনে মনে বলল, নতুন মেয়ে টা না। নতুন মেয়ে টা আজই কলেজে এসেছে। তবে মেয়ে টার সাথে আলাপ হয়নি সুতৃষার। ওকে দেখে মনে হল খুব গরীব ঘরের মেয়ে, তবে চোখে মুখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে। ছাতা নেই বলে হয়তো একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে আছে। ছাতা নিয়ে নতুন মেয়ে টার কাছে এগিয়ে গেল ও। মেয়ে টা ওকে দেখতে পেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। -ছাতা নেই? সুতৃষা মেয়ে টা কে জিজ্ঞেস করল। -না। -আসো আমার ছাতায় আসো। কোথায় যাবে? -আমি ভবানীপুর যাব। তোমার নাম কি? -আমি সুতৃষা। তুমি? -আমি স্বরচিতা। এই ভাবে ক্রমে ক্রমে ওদের বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল। ক্রমে ক্রমে সুতৃষা জানতে পারল স্বরচিতা-র বাড়িতে ওর মা আছেন। কিছু শারীরিক আসুবিধার কারণে ওর মা কোন কাজ করতে পারেনা। ও বাড়ির কাছে একটা বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের পড়ায়। তারপর কলেজে আসে। বিকেলে বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ায়। ওর বাবা বছর খানেক আগে মারা গেছেন। টাকার অভাবে ও আগের কলেজ টা ছেড়ে দিয়েছে। ওখানে অনেক টাকা লাগত। তারপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে। একদিন কলেজ গিয়ে সুতৃষা দেখল ক্লাস হবেনা। একজন প্রাক্তন আধ্যাপক মারা গেছেন। তাই কলেজ কতৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। ক্লাস না থাকলে ওর সবথেকে প্রিয় জায়গা কলেজ লাইব্রেরি। করিডোর ধরে লাইব্রেরি-র দিকে যাবার পথে পিছন থেকে ওর নাম ধরে ডাকল কেউ, -সুতৃষা, এই সুতৃষা পেছন ঘুরে ও নিরঞ্জন কে দেখতে পেল। ওকেই ডাকছে। নিরঞ্জন সুতৃষা-র কাছে এগিয়ে এল। -কি হয়েছে? ডাকছিস কেন? -স্বরচিতা-র খুব শরীর খারাপ। ও তোকে ফোন করে না পেয়ে আমায় ফোন করেছে। ও তোকে একবার দেখা করতে বলেছে। -হ্যাঁ আমার ফোন টা খারাপ হয়ে রয়েছে অনেক দিন। ঠিক আছে আমি ওর সাথে যোগাযোগ করে নেব। এই বলে সুতৃষা লাইব্রেরি-র দিকে চলে গেল। ভাবল ফেরার পথে একবার স্বরচিতা-র বাড়ি হয়ে যাবে। সন্ধ্যের দিকে স্বরচিতার বাড়ি গিয়ে পৌঁছল সুতৃষা। ম্লান হাসি মুখে দরজা খুলে দিল স্বরচিতা। সুতৃষা কে এই সময়ে নিজের বাড়িতে দেখে ও বোধ হয় খানিকটা অবাক-ই হয়েছিল। ম্লান হেসে ও জিজ্ঞেস করল, -কিরে তুই? -নিরঞ্জনের থেকে খবর পেলাম। আমার ফোন টা খারাপ হয়ে আছে। -আয় ভেতরে আয়। -কলেজ আসছিস না কেন? টিউশনেও তো আসছিস না। কি হয়েছে? শরীর খারাপ নাকি? -না, আমি ঠিক আছি। মায়ের শরীর টা ভাল নেই, তাই কলেজ আসছিনা। -ডাক্তার দেখাচ্ছিস? কাকিমা এখন কেমন আছেন? -ওই আছে একরকম। আমি ভাবছি এবার পরীক্ষা দেবনা। -কেন দিবিনা? -টিউশনে টাকা দিতে পারছিনা। যাব কি করে? আর মাত্র দু মাস বাকি টেস্ট পরীক্ষার। -তোর কোন চিন্তা নেই। আমি তোকে আমার সব নোট্স জেরক্স করে দিয়ে দেব। আর আমার কিছু বই-ও তোকে দিয়ে যাব। নয়ত লাইব্রেরি থেকে তোর জন্য বই এনে দেব। তুই বাড়িতে বসে পড়। টিউশন যেতে হবেনা। অত ভাবিসনা। -তুই বাঁচালি আমায়। তুই না থাকলে আমার কি যে হত। এর পর থেকে সুতৃষা ওর সব নোট্স নিজের টাকায় জেরক্স করে দিয়ে আসতে লাগল স্বরচিতার বাড়ি। কলেজের সমস্ত টাকাও ও নিজেই দিয়ে দেয়। স্বরচিতা পরীক্ষা দেয়। দু সপ্তাহ পরে পরীক্ষার ফল ঘোষণা হয়। সুতৃষা সর্বোচ্চ নম্বর পায় আর স্বরচিতা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আস্তে আস্তে স্বরচিতার মা অল্প অল্প সুস্থ হয়ে উঠলেন। অবশেষে ফাইনাল পরীক্ষার টাকা জমা দেবার শেষ দিন এসে গেল। অসুস্থতার কারণে ঠিক সময়ে টাকা দিতে পারলনা সুতৃষা। তাই অগত্যা লেট ফাইন সহ টাকা জমা দেবার শেষ দিন কলেজে উপস্থিত হল। লম্বা লাইন পরেছে কাউন্টারে। অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দেওয়ার সময়ে ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে ব্যাগে টাকা নেই। সারা কলেজে কোথাও খাম বন্দী ৫ হাজার টাকা খুঁজে পায়নি সুতৃষা। বাড়িতেও তখন কেউ ছিলেননা, যাকে বললে কলেজে টাকা নিয়ে আসবেন। সেদিন কলেজে ওর চেনা একমাত্র স্বরচিতাই এসেছিল, যার এবারের টাকাও ওই দিয়ে দিয়েছে। তাই ওর সব সন্দেহই এসে পড়ল স্বরচিতার ওপর। কিন্তু মন যা বলল তা মানতে পারলনা সুতৃষা। কলেজের অধ্যক্ষ কে অনেক অনুরোধ করে কিছু করা গেলনা। কলেজ থেকে বেরিয়ে স্বরচিতার বাড়ি গেল ও। দেখল দরজায় তালা। মানতে না চাইলেও ও বুঝল ওর সন্দেহই ঠিক। সুতৃষা বাড়ি ফিরে এল। সেই বছর ওর পরীক্ষা দেওয়া হলনা। স্বরচিতার আর কোন ফোনও এলনা তারপর থেকে। সুতৃষার এতদিনের শিক্ষা সেদিন ওকে ধোকা দিয়ে গেল। নিজের সরলতা, আন্তরিকতা, বন্ধুত্বের কোন দাম সে পেলনা। আমাদের সমাজে সরলতার কি এই পরিণাম? স্বার্থপরতার তীব্র আগুনে কেন তাকে বারবার দগ্ধ হতে হয় এভাবে। সুতৃষা জানেনা, আর জানেনা ওর মত মেয়েরা যাদের জীবনের সরলতা হিংসার পায়ে পিষ্ট হয় বারেবারে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইসমাইল বিন আবেদীন
গল্প লেখার ধরনটা ভালো তবে এই গল্পে অপূর্ণতা আছে | আর ঘটনার সত্ততা অনুমান নির্ভর হয়ে গেছে শেষটা পরিস্কার না হওয়ার কারণে | বাস্তবতা থেকেই গল্পের কল্পিত চরিত্র, ঘটনা, বর্ণনা এগিয়ে চলে | এখানে গল্পটা বাসব বা অবাস্তব বলে কিছু নেই | তবে যেখানে শুধু কল্পনায় কাজ করে সেটাই অবাস্তব | জানি অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন না কারণ এখানে শুধু শুধু প্রশংসাকারীর সংখ্যা অনেক বেশি | গল্পের জন্য ধন্যবাদ সোমা |
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।