মাতৃভাষা

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

সোমা মজুমদার
  • ১৫
  • 0
  • ৫৪
'আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আরও একবার নিজের মাতৃভাষা কে স্মরণ করার ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। মাতৃভাষার অবমাননা বন্ধ করে তাকে আরও মহিমান্বিত করে তুলুন।' হলুদ ক্যানভাসে, সবুজে তুলি বুলিয়ে লিখছিল তুলিকা। হাতের লেখা ভাল বলে বোর্ড লেখার দায়িত্ব পড়েছে তারই ওপর। বোর্ড-এ লেখা সম্পূর্ণ করে, তুলিকা, শ্যামল কে ডাকল,
"এই বোর্ড টা টাঙিয়ে দে, জায়গামত"। আজ ভুবনডাঙায় 'মাতৃভাষা দিবস' উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উদযাপন করবে পাড়ার 'আমরা বন্ধু' সংঘ। তারই প্রস্তুতি পর্ব চলছে। পাড়ার বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করবে। তাই আকাশও বোধহয় আজ মহাফৃর্তিতে। সকাল থেকেই রোদ ঝলমল করছে।
অবশেষে সকাল ফুরিয়ে বিকেল এল। শীতের শেষের একটা আবগ মাখানো আমেজ জড়িয়ে আছে গোটা শহর টাতে। আকাশের সূর্য টা কমলা হয়ে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে আজকের মত। ক্লাবের হলঘরে আস্তে আস্তে বাচ্চারা জমা হতে শুরু করেছে বাবা মায়ের সাথে। ক্লাবের একজন সদস্য মাইক ঠিক করার কাজে ব্যস্ত। বাড়তি আলোয় ক্লাব এখন ঝলমল করছে। তার সাথে
পাড়ার কচিকাচা মিলে ক্লাব এখন গমগম করছে। এই মাত্র সভাপতি মহাশয় এসে উপস্থিত হলেন। ইনি এখনকার একজন বেশ নামকরা কবি। এখনকার প্রায় সব জনপ্রিয় বাংলা ম্যাগাজিন-এই এনার কবিতা বেরোচ্ছে আজকাল। ক্লাবের সব ছেলেরা এগিয়ে গেল। ওনাকে সাথে নিয়ে আসনগ্রহণে সাহায্য করছে কিছুজন। একটু পরেই মূলপর্বের অনুস্ঠান শুরু হবে। তাই সবাই যে যার
কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত। ঠিক ৬টায় অনুস্ঠান শুরু হবার কথা। আর মাত্র ১৫ মিনিট বাকি আছে।
হলঘরের বড় পুরোনো ঘড়িটা ছ'বার ঢং ঢং শব্দ করে ঘোষনা করে দিল সন্ধ্যে ৬ টা বেজে গেছে। সভাপতি মহাশয়ের সংক্ষিপ্ত ভাষন দিয়ে শুরু হল অনুস্ঠান। অনুস্ঠানের দু'টো পর্যায়। ১০ বছর পর্যন্ত একটা বিভাগ আর ১৬ বছর পর্যন্ত আর একটা বিভাগ। প্রথম শ্রেনীর একটি মেয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু হল প্রথম পর্যায়ের অনুস্ঠান। মাইকে মাইকে সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
"সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান....."। আস্তে আস্তে একের পর এক বাচ্চারা গান বা কবিতা শোনাচ্ছে। সুরের মনোরম আবেশে ভরে উঠছে মাতৃভাষা দিবসের সন্ধ্যে টা। সকলের হাততালির শব্দে মুখরিত ক্লাবঘর। কখনো শোনা যাচ্ছে "উঠো গো ভারত লক্ষ্মী......", কখনো বা "ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা......"। এই ভাবে প্রায় পঁচিশ জনের কবিতা আর গানে মুখরিত
হল আজকের এই বিশেষ দিনটির সন্ধ্যা। আর তার সাথে শেষ হল প্রথম পর্যায়ের অনুস্ঠান। দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুস্ঠান শুরু হবার আগেই কফি আর পকোড়া বিতরণ করা হল অনুস্ঠানে উপস্থিত সকলের মধ্যে। তারপর সপ্তম শ্রেনীর একটি মেয়ে শুরু করল কবিতা "বেনীমাধব বেনীমাধব তোমার বাড়ি যাব....."। আর এই ভাবে শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুস্ঠান।
নানারকম গান আর কবিতায় আজ আমাদের মাতৃভাষার গৌরব প্রকাশ পাচ্ছিল। সবাই গর্বিত বোধ করছিল বোধহয় আজ নিজের মাতৃভাষা কে নিয়ে, কারণ আজ দিন টা যে ২১শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই যারা বাংলা কম বলতে পারে বলে, বা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে বলে সবসময় গর্ববোধ করে, তারাও আজ বাংলা কবিতা বলছে বা গান গাইছে। এই
দিনটিতে এরা বোধহয় নিজেকে বাঙালী দেখাতে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যারা হয়তো অন্যদিন কেউ বাঙালী বললে অপমানিত বোধ করে। অনুস্ঠান প্রায় শেষের দিকে, মঞ্চে উঠলো একটি দশম শ্রেনীর মেয়ে, মাইকের সামনে এসে গান শুরু করল "সারে জাঁহাস আচ্ছা হি্দুস্থান হামারা..."। সবাই তো অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে, মেয়েটি আজকের দিনে হিন্দি গান গাইছে। অনেকে নিজেদের
মধ্যে নানারকম কথা শুরু করে দিয়েছে। গানটি শেষ করে মেয়েটি মঞ্চ ছেড়ে গেল না। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল "উপস্থিত সকল দর্শকের উদ্দেশ্যে আমার কিছু বলার আছে। আপনারা হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছেন আজকে মাতৃভাষা দিবসের সন্ধ্যায় আমি হিন্দি ভাষায় গান করেছি দেখে। এখানে উপস্থিত সকলে বাঙালী কারণ তাদের বাবা বাঙালী এবং মাতৃভাষা
বাংলা কারণ তাদের বাবা, মা উভয়েই বাঙালী। আমার বাবা বাঙালী, তাই আমিও বাঙালী। কি্ন্তু আমার মা তো বাঙালী নয়, তাহলে আমার মাতৃভাষা বাংলা কি করে সম্ভব। অথচ স্কুলে আমাকে মাতৃভাষা বাংলা লিখতে হয়েছে, যেহেতু আমার বাবার ভাষা বাংলা। তবুও আমি আজ এখানে বাকিদের মত‍‌ বাংলা গান বা কবিতা পরিবেশন করিনি। আমি শুধু তাই করেছি যা
অনুস্ঠানের পূর্বে সভাপতি মহাশয় বলেছেন, আমি শুধু আমার মায়ের ভাষা আমার মাতৃভাষাকে এই মঞ্চে সকলের সামনে শ্রদ্ধা জানানোর একটা চেষ্টা করেছি মাত্র। আমাদের সমাজে 'মাতৃভাষা' শুধুমাত্রই একটি শব্দ, সকলেই সেই ভাষায় কথা বলে যেটা পিতৃভাষা। আমি আজ আমার মাতৃভাষায় গান পরিবেশন করে আমার মা কে শ্রদধা জানিয়েছি।" মঞ্চে উপস্থিত সভাপতি মহাশয়
প্রথম আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে উঠলেন। মেয়েটির মায়ের চোখের কোণে জল। মেয়েটি মঞ্চ ছেড়ে নেমে এসেছে মায়ের কাছে। মেয়ের জন্য আজ প্রথমবার সত্যিকারের সম্মানিত বলে মনে হচ্ছিল তার। পুরস্কার বিতরনী অনুস্ঠানে, দ্বিতীয় বিভাগে যুগ্ম প্রথম বিজয়ীর মধ্যে ছিল আজকের দিনের সেই মেয়েটি বৃন্দা চৌধুরী। বৃন্দা মঞ্চে উঠে পুরস্কার নিতে যাবার সময় ওর
মায়ের চোখে পড়ল দূরে রাখা বোর্ড টির দিকে। যাতে সাদা প্রেক্ষাপটে নীল কালিতে লেখা রয়েছে 'মাতৃভাষা -কে অশ্রদ্ধা করার অর্থ, নিজের মা কে অশ্রদ্ধা করা। তাই মাতৃভাষার অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলন।'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sisir kumar gain ভাল গল্প লিখেছ । কিছু বানান ভুল আছে। বানানের দিকে লক্ষ্য রখাবে।শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মিলন বনিক শেষের ভাবনাটা সুন্দর কিন্তু জননী জন্মভূমি একই সুত্রে গাথা তাই মার কাছে অনুরোধ বাংলাকে ভালোবেসে বাঙালি হতে..... শুভ কামনা...
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এম এম এস শাহরিয়ার সুন্দর লিখেছেন বন্ধু ................... শুভ কামনা রইলো ...........
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অদৃশ্য মানবী ভালো লাগলো |
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি ভালো লাগলো|
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সূর্য গল্প আরো সংগঠিত হয়ে উঠুক ভাবনার সুতোয় গেথে। ভাল লাগা রইল।......☼
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Lekhar Uddomota achche valo laglo...suvokamona...Soma..apnake........
সেলিনা ইসলাম স্বাগতম - বেশ কিছু রুঢ় সত্য তুলে ধরেছেন গল্পে ! আরো ভাল লেখা পাবার প্রত্যশায় শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা মাতৃভাষা -কে অশ্রদ্ধা করার অর্থ, নিজের মা কে অশ্রদ্ধা করা। তাই মাতৃভাষার অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলন।'--------------------অসাধারণ (৫)
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ স্বাগতম। সামনে নিশ্চয় আরও ভালা হবে।
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

০৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪