বীর শহীদের গর্বিত জননী।

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

ছালেক আহমদ শায়েস্থা
  • 0
  • ৮৯
মা তুমি কেঁদনা,তোমার চোখের পানি আমি সইতে পারিনা। নামজার মুখে কোন কথা নেই। এ যেন বাধ ভাঙ্গা শ্রাবনের বন্য বইছে চোখের জলে। বুকের জমিন ফসল সহ থৈ থৈ করা যৌবনা বন্যার বাণে অতল গহিনে যাচ্ছে ডুবে। ছেলে হারানোর চাইতে আরো মারত্নক মফিজের কথাগুলো,তীক্ষ্ন আক্রমন। জন্ম অস্বীকার করা জারজ সন্তানের জন্যই মানায় কোন পিতৃ পরিচয় থাকাকারীর মেনে নেয়া সহজ বোধ্য নয়তো বরং তাৎক্ষনিক বেয়াদবের দাত ভেঙ্গে জাহান্নামে পাঠালেও মনের তৃপ্তি পূর্ণ হবেনা। বীজ রোপনের পর বৃক্ষ জন্মায়, যিনি বীজ রোপন করেন তিনি জন্ম দাতা। কিন্তু বৃক্ষ জন্মমানোর পর যদি অন্য কেউ দাবী করে ওঠা তার বৃক্ষ তখন প্রকৃত জন্ম দাতা কোন ক্রমেই তা মেনে নিতে পারেন না। পারার কথা নয়। অন্যথায় রোপন কৃত বৃক্ষ যদি পিতা অস্বীকার করে তখন জন্ম দাতার মনোকষ্ট পাহাড় চাপার চাইতেও শত গুন বর্ধিত থাকে, হয় তা এক মাত্র ঐ পিতাই অনুভব করেন যিনি নর্যাযিত হয়েছেন। নাজমার চোখের পানি পড়ছে আর ভাবছেন মফিজের কথা, ওরা কি মানুষ না জানোয়ার। মানুষ হলে মানুষের জন্য, দেশ জাতির জন্য, মৃত্তিকার জন্য থাকতো মমতা স্নেহ। ভাষার জন্য থাকতো সীমাহীন দরদ। অথচ রাজার হাত হয়ে প্রজার ধন চুরি করে ওরা। জাতির এবং নিজের মান মর্যাদা,ভাষা,স্বাধীনতা বিক্রি করে কটকৌশলে। ছিঃ ছিঃ। নয়ন জলে বুক ভিজে যাচ্ছে আর ভাবছেন কি করে প্রতিকার করা যায়। এদেশে জন্ম নিলাম, বাপ দাদা চৌদ্দগোষ্টি এদেশের গোরস্থানে গেল। জন্মের পর থেকে মা বাবার বলা মুখের ভাষায় কথা বলা শিখলাম, কিন্তু এখন থেকে এভাষায় কথা বলা যাবেনা কেউ বললে তাকে আর এদুনিয়ার আলো বাতাস খেতে দেয়া হবেনা, কি হলো আর কি হতে যাচ্ছে। ওসব কেনইবা ওরা করবে ? মানবতা, সভ্যতা, বলতে কি নির্বাসনে চলে গেল ? বিবেক জাগ্রত মানুষ কি ঘুমিয়ে আছে শত জনমের জন্য ? ঘুম থেকে জেগে কি ঐ মফিজের সাঙ্গু পাঙ্গুদের রুখে দিতে কেউ বজ্র কন্ঠে বলবেনা
"আমার ভাষা তোমার ভাষা-আ-মরি বাংলা ভাষা,
মায়ের ভাষায় কথা মোরা বলব,
গিরিবাঁধ হয়ে সবাই জ্বলব।
খুন দেব রাজপথে ঢেলে,
আমার ভাষা কেড়ে নিতে এলে।
বীর বীরানি,আবাল-বৃদ্ধ,ছাত্র, জনতা রুখো ভাষা খেকোদের,তাড়াও। যুদ্ধের নিশানা বাতাসে উড়াও। এসো হে ভাই, হে বোন আমি আর সইবনা। ধিরে ধিরে নাজমার চোখের পানি বন্ধ হয়ে চেহারায় কঠিন ও অগি্নবর্ন ধারন করছে। মুখ চোখ যেন প্রতিবাদ, প্রতিরোধের বর্হিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। দাঁতে দাঁত কড়ার কড়ার করছে। যেন রাক্ষুস হলে এখন সবগুলিকে জীবন্ত শেষ করে ফেলার মত দৃশ্য। রফিক হঠাৎ করে মায়ের বদলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে হিসাব মিলাতে পারছে না-মানে তার মা কি পাগল হয়ে গেল নাকি ! এতক্ষন চোখে ছিল জল এখন আবার রাগে ফুলে কলাগাছ। রাগে চোখ গুলে লাল হওয়াতে নয়ন ভয় পেয়ে ঘরের কোণে গিয়ে কাঁপছে। রফিক বলল মা তোমার কি হয়েছে ? এতক্ষনে নাজমা বাস্তবে ফিরে এসে বললেন কই, কোথায়, আমার আবার কি হবে। রফিক: কিছু না হলে ভাল। তবে একটি কথা বলতে চাই মা: বলব। ঠিক আছে বল। তুমি এতক্ষন কাঁদলে এখন আবার রাগে চোখ মুখ লাল করে দিল তার মানে কি? রফিক ওসব তুমি বুঝবেনা বাবা। এখন স্কুলে যাও। রফিক স্কুলে চলে গেল। মোহনপুর গ্রামে রফিকের বাড়ি। স্কুলটা সুরমা নদীর পশ্চিম পাড়ে,জায়গার নাম জীবন নগর। তার পাশেই বিরাট একটা শহর নাম রাজ নগর। ওখানে কলেজ,ভার্সিটি,অফিস-আদালত,কল-কারখানা,মানে শহরে যা-যা থাকার দরকার সব আছে। স্কুল ছুটির পর রফিক বাড়ি ফিরছে। পথে শহর থেকে আসা চাচাতো ভাই জাকি-র সাথে সাক্ষাত হল। জাকি রফিককে বলল তোমাদের স্কুলে আজ কোন মিটিং মিছিল হয়েছে ? রফিক এসব বুঝিনা ভাই। তবে জীবন নগরের মাহতাব্বর মফিজ চাচা দেখলাম মাষ্টার মশাইয়ের সাথে জোরে জোরে কথা কাঠাকাটি করছেন। জাকি আগ্রহ করে জানতে চাইলো তিনি কি কি বলছিলেন। তিনি বলছিলেন উদর্ূতে নাকি আমাদের লেখা পড়া করাতে হবে। না হয় স্যারদের স্কুল থেকে বিদায় করে দেবেন। আচ্ছা জাকি ভাই উদর্ুতে কেন পড়াবেন আর উদর্ূই বা কি ? ওঠা হচ্ছে আমাদের দেশের পশ্চিম এলাকার ভাষা। তাঁরা উদর্ূ ভাষায় কথা বলে।। ওহ আচ্ছা তাহলে আমরা বাংলায় কথা বলি তাই না ভাইয়্যা। হ্যাঁ তাই। কিন্তু এখন যা শুরু হয়েছে শেষ পর্যন্ত আমাদের বাংলায় কথা বলতে পারব কি না বুঝতে পারছি না রফিক। ভাইয়্যা কেন ? শোন রফিক তুমি এত কিছু বুঝবেনা।আচ্ছা ভাইয়্যা পশ্চিমারা না হয় উর্দূতে কথা বলুক মফিজ মাতব্বর কেন তাদের ভাষা নিয়ে ঝগড়া করে। শোন রফিক মফিজরা হচ্ছে তাদের দোষর-এরা এদেশে খায়, পরে, আর সমর্তন করে পশ্চিমাদের। ভাইয়্যা ওদের রুখে,দেওয়া যায় না? আমি তোমার মত হলে ঐ ভাষা খেকোদের এদেশ থেকে তাড়িয়ে দিতাম। জাকি রফিকের সাহসের কথা শুনে অবাক বিষ্ময়ে ভাবতে ভাবতে দু'জন হাটছে। রফিক বাড়ি গিয়ে পথে জাকির সাথে আলাপের বিষয় গুলো বর্ণনা করলো মায়ের কাছে। মা ছেলে কথা শুনে গর্বে আত্তহারা হলেন। ভাবলেন তোর মত সন্তানই এ জাতি আশা করে, দেশ প্রেমিক মায়েরা প্রস্তুত থাকে বীর বীরাঙ্গনা সন্তান জন্ম দানের। যারা হুংকার দিয়ে এ দেশ থেকে ভাষাখেকোদের তাড়িয়ে দেবে। রাজপথ কাপিয়ে রক্তের ঝরনা বইয়ে রক্ষা করবে নিজের ভাষায়, মায়ের মান, দেশের সুনাম। রফিকের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বুকে টেনে নিলেন নাজমা। দু'দিন যেতেই দেশের আনাচে কানাছে শুরু হলো ভাষা আন্দোলন। রাজ পথে তুমুল লড়াই করে বাংলার বেশ কিছু যুকব রাজধানীর রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালো। আপামর ছাত্র জনতা ভাষা রক্ষার দাবীতে যুদ্ধে ঝাপিয়ে ইতিহাসের নূতন সূযর্্যদয়ের স্থান দিতে শ্লোগান আর শ্লোগানে আকাশ বাতাস কাপিয়ে তুলল। পূর্ব বাংলার ছেলে বুড়ো সবার দাবী আ-মরি বাংলা ভাষা। রফিক যথারিতি স্কুলে গেলে দেখলো স্যার-রা মিলে ব্যনার ফ্যাস্টুন আর প্লেকার্ড বানিয়ে এলাকার বেশ মানুষজন সাথে করে শ্লোগানের জন্য তৈরি হচ্ছেন। সে আনন্দে আত্তহারা হয়ে তার সহপাঠিদের নিয়ে স্যারদের সাথে মিছিলে যোগ দিল। এমন সময় মফিজ মাতব্বর পশ্চিমা একদল জানোয়ার নিয়ে তাদের মিছিলে চালায় অস্ত্রের আক্রমন। একঝাক বুলেট ছুড়ে পশ্চিমা বাহিনী। অ-আ-ক-খ- লিখা প্লেকার্ড হাতে রফিক মিছিলের আগে থাকলে বন্দুকের একটি গুলি তার ছোট্র বুকে করে আঘাত। মহুর্তে রফিক লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। নির্বিচারে কয়েক জনকে হত্যা করে মফিজ তাদের নিয়ে চলে যায়। রক্তে স্নাত রাজপথে পড়ে থাকে রফিক সহ ভাষা বীরদের শহীদি লাশ। রাজ পথে নিস্পাপ রফিক শহীদ হয়েছে নাজমার কানে খবর পৌছাল। মা পাগল না হয়ে ধর্য্যের পাথর চাপা দিলেন বুকে। আকাশের দিকে মাথা উচু করে থাকলেন কয়েক মিনিট। ভাব প্রকাশের ইঙ্গিতে এটাই অনুমান হল তার সন্তান পেটে ধরা স্বার্থক। তিনি একজন বীর শহীদের গর্বিত জননী। গাও ছেড়ে চলে এলেন রাস্তায়, পড়ে থাকা ছেলের লাশের পাশে বসলেন। গুলির আঘাত খাওয়ার পর হাতে থাকা ক-খ-গ-ঘ- লিখা পড়ে যাওয়া প্লেকার্ডটি রফিকের রক্তের জায়গায় নেইম ফলকেত মত ঝান্ডা দিয়ে গেড়ে লাশ কুলে তুলে বাড়ি দিকে হাটছেন। সংকোচ, দুঃখ, ব্যাথার আবড়ালে নাজমার চোখে আজ বিজয়ের হাঁসি। দেখতে দেখতে কিছুদিনের মধ্যে বাংলা ভাষার চুড়ান্ত বিজয় হল। রক্ষিত হল রফিকের প্রাণ বির্সজনের স্বার্থকতা। দোষর মফিজ মাতব্বর বেহায়ার মত আমাদের বাংলায় বেচে আছে। তবে তার জন্য লাখো শহীদ ও দেশ প্রেমিকদের ঘৃনা অনবরত বইছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sakil অনেক ভাল লেগেছে । লিখতে থাকুন । শুভকামনা রইল
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মিলন বনিক ভাল লাগলো..তবে আর একটু যত্ন নিলে বোধ হয় আরো ভাল হত। শুভ কামনা......
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
নিলাঞ্জনা নীল প্যারা প্যারা করা থাকলে পড়তে সুবিধা হত..
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন . . . . . . . . . . . . ভাল হয়েছে, থে আরো একটু ঘষামাজা করলে বোধ হয় আরো ভাল হত। শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি রাজ পথে নিস্পাপ রফিক শহীদ হয়েছে নাজমার কানে খবর পৌছাল। মা পাগল না হয়ে ধর্য্যের পাথর চাপা দিলেন বুকে। আকাশের দিকে মাথা উচু করে থাকলেন কয়েক মিনিট। ভাব প্রকাশের ইঙ্গিতে এটাই অনুমান হল তার সন্তান পেটে ধরা স্বার্থক। তিনি একজন বীর শহীদের গর্বিত জননী। // Valo laglo salok vai apnar golpo.....dhonnobad.........
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ ভালো লেগেছে।শুভকামনা সালক ভাই।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

২২ ডিসেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী