রোবট তোমাকে ভালবাসি

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

faruk আহমেদ
  • ১২
  • ৭৩
রায়হান,শফিকুল ও তুষার তিন বন্ধু একসঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। তারা পড়াশোনা করে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে এবং তিনজনের পড়াশোনোর বিষয় হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স। তারা যে ফ্ল্যাটটিতে থাকে তার ভাড়া হচ্ছে দশ হাজার টাকা। তিনজনে মিলেই দুই বেডরম্নম এবং একটি ডায়েনিং রম্নমের এ ভাড়া দেয়। রায়হান টিউশনি করে তার উপার্জন প্রায় ১০ হাজার টাকা ।রায়হানের সেমিষ্টার ফি গুলো বাড়ি থেকেই দেওয়া হয়, বাকি খরচ সে চালিয়ে নেয়। বাকি দুজনের টাকা গ্রামের বাড়ি থেকে পরিবার টাকা পাঠায়।

প্রথম ঘটনা
শফিকুল তিন বন্ধুর মাঝখানে বলে ওঠে, আমরা যে ফ্ল্যাটে ওঠলাম তার ভাড়া একজনকে না একজনকে একহাজার টাকা বেশি করে প্রতিমাসে দিতে হবে।

তুষার আশ্চর্য রায়হান আমাদের তিনজনের মধ্যে উপার্জন করছে, আমরা বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে থেকে পড়াশোনা করবো আর রায়হান একহাজার টাকা বেশি দিবে এটাইতো স্বাভাবিক । কিরে রায়হান চুপ করে আসিস কেন ? আমরা বন্ধুতো নাকি!

রায়হান তোদের পক্ষে যেহেতু সম্ভব না তাহলে তো তাই করতে হবে।

শফিকুল যাক বাবা সবার সম্মতিক্রমে একটা সিদ্ধানত্দে পৌছঁতে পারলাম আমরা । চল এবার রাতের খাবার এর ব্যবস্থা করি ।

রায়হান আজকের রাতের খাবারটা চল আমরা বাহিরেই সেড়ে নিই। নতুন বাসায় উঠলাম কালকে বাজার করা যাবে।

তুষার ঠিক আছে বন্ধু, সত্যিই তোমার আইডিয়াটা পছন্দ করার মতো। চল বের হই ।

তারা তিনজন দরজা বন্ধ করে, একসঙ্গে বের হয়ে গেল । একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে খাবার অর্ডার করলো ভাত ও গরম্নর মাংস। খাবার শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে রায়হান হাত ধুয়ে বন্ধুদের বলে সিগারেট ধরাতে বাহিরে গেল। ততক্ষণে বাকি দুজনের খাওয়া অনেক বাকি। রায়হান খাবারের বিল নিজে দিবে,তাই পকেটের টাকার সঙ্গে বাজেট মেলাতে নিজে তরকারি বেশি না নিয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে সিগারেটের কথা বলে উঠে আসে। সে সিগারেট শেষ করে আসতে যতক্ষন দেরি হয় ততক্ষন বাকি দুই বন্ধু খাওয়া শেষ করে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে।

তুষার কিরে কিছু বুঝতে পারলি। রায়হান ভেবেছে বিল না দিয়ে আমাদেরকে দিয়ে বিলটা দেওয়াবে। কত সুন্দর সিগারেটের তাড়া দেখিয়ে বেরিয়ে গেল। এত তাড়া না দেখালে যেন হতো না। আসলে শোন, মুখেই সব। স্বার্থপরতা এভাবেই প্রকাশ পায়।সামনে দেখ কত কি হয়। আমি ও কম না চুপ করে বসে থাক ...

তাদের কথা না শেষ হতেই রায়হান চলে আসে তুষারের পেছন দিক থেকে । শফিকুল রায়হানকে দেখে হাত উঠিয়ে তুষারকে থামার জন্য ইশারা করে । অবশ্য রায়হান কিছু্ই শুনতে পায়নি ।

শফিকুল আমাদের খাবার বিলটা নিয়ে আসুন । ( হোটেলের লোককে বলে )

বিল নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রায়হান বিল দিয়ে দেয়, যদি ও শফিকুল পকেটে হাত দেয়।

রায়হান তোদের কোনো আপত্তি নেই তো, নিশ্চয়ই সবার সম্মতিক্রমেই এবারের ঘটনাটা ঘটলো।

তুষার আরে আমাদের আবার সম্মতি, যার টাকা আছে তার ইচ্ছার বিরম্নদ্ধে কি কিছু বলা যায়।চল

শফিকুল চল উঠি তাহলে।

তারা তিনজন মিলে ধূমপান করতে করতে বাসায় চলে আসে। বাসায় একটি রম্নমেই তিনটি খাটে তারা ঘুমোয়। আর অন্য বেড রম্নমকে তারা কমপিউটারের কাজ ও পড়াশোনার জন্য ব্যবহার করে।

দ্বিতীয় ঘটনা
মজার ব্যাপার তাদের জীবনে আরো একজনের অবস্থান বেশ দারম্নণভাবে হয় । হ্যাঁ, মেয়েটির নাম অনন্যা । মেয়েটি রাজাবাজারে পরিবারের সঙ্গেই থাকে। পরিবারে তার বাবা ও মা এবং সে মোট তিনজন। সে ও একই ইউনিভার্সিটিতে কমপিউটার সায়েন্সে তাদের সঙ্গেই পড়াশোনা করছে। ক্লাশেই তাদের সঙ্গে তার দেখা হয়। একদিন ক্লাসে তারা তিন বন্ধু বেশ আগেই চলে আসে এবং একটি বেঞ্চে একসঙ্গেই বসে থাকে । তারা এ সময় বেশ জোরে একটি গান গাইতে থাকে। ঠিক এমন সময়ই মেয়েটি এসে দরজার সামনে উপস্থিত হয় । অনান্যা ভেবেছিল প্রতিদিনের মতো আজকেও সে সবার আগেই আসবে। অনন্যা যতগুলো পোশাকই পড়তো সবগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট ছিল রং এর ব্যাপারে। সে যে রংয়ের জামাই পড়তো তা একটি রংয়েরই হতো অন্য কোনো প্রিন্ট শেখানে থাকতো না, সুতোর কাজ থাকতো। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে সে শুধুমাত্র চারটি রংয়ের জামাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতো। রং ৪টি হলো সাদা, কালো, লাল এবং নীল । অনন্যা, সবসময় পেছনের দিকে বসে,তাই তারা তাকে আগে কখনো দেখেনি।

আজকে মেয়েটি লাল রংয়ের জামা পড়ে আসে এবং তার একদিকে চুল শিতি করা ছিল । চুলগুলো সামনে আনা ছিল । সবমিলিয়ে তাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল। তার হাতে ছিল একটি ফাইল। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সে যখন দরজায় দাড়াঁয় তখন তিনজনের চোখই তার দিকে যায় এবং তারা তিনজনই একসঙ্গে আনন্দে পুলকিত হয়ে এবং কিছুটা অবাক হয়ে বেশ জোড়েই ওয়াও বলে একসঙ্গেক দাঁড়িয়ে যায়। আসলে তারা তখন যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । কিন্তু এদিকে অনন্যা এমনিতেই এত আগে ক্লাশে মানুষ দেখে অবাক হয়, তার মধ্যে দরজায় দাড়াঁতেই এরকম আশ্চর্যজনক ঘটনায় সে ভয় পেয়ে চমকে উঠে এবং হাতের ফাইলটা ফেলে দেয় । ফাইলটি গিয়ে তাদের ব্যাঞ্চের একটু সামনে পড়ে। তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি করে তিনজনই বেঞ্জের উপর দিয়ে নুয়ে ফাইলটি তুলতে যায় কিন্তু এ পদ্ধতিতে তাদের কারো হাতই ফাইল পর্যনত্দ পোৗছেঁ না। তারা পেটের ওপর চাপ দিয়ে ঠিকই চেষ্টা করতে থাকে। অনন্যা তাদের সামনে আসতে করে ফাইলটা তুলে নেয় এবং তাদের দিকে তাকিয়ে হালকা করে স্বসত্দির নিঃশ্বাস ফেলে। সবশেষে অন্যান্য যখন তাদের বেঞ্চকে পাশ কাটিয়ে পেছনের দিকে যেতে থাকে তখন তারা একসঙ্গে তাকে ধন্যবাদ জানায়।কিনুত্দ এ ধন্যবাদের কারণ অনন্যা বুঝতে পারেনি এবং বুঝতে চায়ও নি। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাকি ছেলেমেয়েরা ক্লাশে আসতে শুরম্ন করে এবং এক পর্যায়ে ক্লাশ শেষ ও হয়ে যায়।

যখন সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, ঠিক তখনই তিন বন্ধু স্থির করে যে তারা অনান্যার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে এবং দুঃখ প্রকাশ করবে। আর এ সুযোগে পরিচিত হয়ে নেওয়া যাবে। তারা রাসত্দার ধারে ঠিক সেখানেই গিয়ে দাড়ায়ঁ যেখানে অন্যান্যা ও আর একটি মেয়ে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছে।

শফিকুল আমাদের মধ্যে কে গিয়ে প্রথমে কথা বলবে ?

রায়হান সত্যইতো কি দিয়ে শুরম্ন করি ভাবতে পারছি না।

তুষার বিষয়টা হচ্ছে, সাহসের শোন বন্ধু ভাবাভাবির কিছু নেই ।

শফিকুল তাহলে তুই শুরম্ন কর।

রায়হান হ্যাঁ, শুরম্ন কর ।

আসলে তুষার ও প্রস্তুত ছিল না। মান রাখতে তুষার হুমড়ি খেয়ে তাড়াতাড়ি কোনো রকম ডাক দিয়ে উঠল এই যে,অনন্যা যখনই পেছনে ফিরেই চুলগুলো পেছনের দিকে নিল এবং বেশ অবাক হয়ে তাকাল, ঠিক তখনই তুষার তোতলামো করতে করতে রাসত্দায় তাকিয়ে দেখল যে একটি সিএনজি থেমেছে। সে অন্যান্যার চোখ থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সিএনজির দিকে অগ্রসর হতে লাগল।অনন্যাকে বেশ রাগী অবস্থায় দেখা গেল। ঠিক তখনই রায়হান উপায় না দেখে, পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রম্নত অন্যান্যার সামনে এসে টানটান হয়ে হয়ে দাড়িয়ে পড়ল এবং বলতে শুর করলো

দেখুন, অনাকাঙ্খিত ঘটনা বলতে বোঝায় যে, যে ঘটনার ওপর কারও হাত নেই। আর এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে মনে রাখা কারও জন্য স্বাস্থ্যকর নয় কিংবা বলতে পারেন সুখকর নয়। আসলে সৌন্দর্য্য এমন একটা বিষয় যা শুধু আকর্ষণই করে না, বুঝতে পারলাম জ্ঞান শূণ্যও করে ফেলে। দেখুন, আর এত অবাক হওয়ারই বা কি আছে আমরা তো ছেলে তাই না আর আপনি একটা মেয়ে.. ৃৃ..

রায়হানের কথা না শেষ হতেই, অনান্যা আবার রেগে বলে কি বলছেন কি এসব ?

শফিকুল আসলে শেষটা ভাল হয়নি। যাই হোক ও একটু আপসেট আছে আপনিতো ঠিকই আছেন। তাহলে আমরা আজ থেকে বন্ধু ।
পাশের মেয়েটি অবস্থা খুব একটা সুবিধার না দেখে, তাদেরকে বলল কেননা। একই ক্লাসে থেকে যদি বন্ধু হতেই না পারি তাহলে একে ওপরের দ্বারা উপকৃত হব কিভাবে। তাহলে আজ আসি। এ কথা বলেই তারা সিএনজিতে উঠে পড়ে।

এভাবে এক পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কয়েকদিন তাদের মধ্যে কথা হতে হতে অনন্যার সঙ্গে তাদের তিনজনের সম্পর্কই তুই এ রূপানত্দরিত হয়। তারা একে অপরকে তুই বলে সম্বোধন করে। প্রায় সময়ই তারা ইউনিভার্সিটিতে একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে এবং কথা বলে।

তৃতীয় ঘটনা

নিজেদের বাসায় তারা তিন বন্ধুরা সোফায় বসে কথা বলতে থাকে।

তুষার তোরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস আমি অনন্যাকে ভালবাসি।

রায়হান বন্ধুদের কারোও টা বুঝতে চাইলি না ।

তুষার বুঝলাম না। (একটু উত্তেজিত হয়ে )

শফিকুল বুঝতে পেরেছি । তোরা শানত্দ হয়ে বস। সমাধানতো এখানে হবে না। সমাধান তো হলো অনন্যার কাছে। নিশ্চয়ই সবার সম্মতিক্রমে আমরা এ সিদ্ধানত্দে পৌছঁতে পারি। চল ঘুমোতে চল।


চতুর্থ ঘটনা
রায়হান যে বাসায় টিউশনি করে সেখানে দুজনকে পড়ায় । তারা দুজনই এইচএসসি তে সায়েন্সের ছাত্র এবং ছাত্রী। দুই ভাই বোন। এখানেই সে দশ হাজার টাকা পায় । তবে প্রতি মাসের টাকাটা সে ১৫ তারিখের পরে পায়, কারণ ঘরের কর্তাও বেতন পাওয়ার পর তাকে টাকাটা দিতে হয়। তবে, তাদের সঙ্গে রায়হান এর সম্পর্ক বেশ ভালো। প্রায় সময়ই, তাদের মা এসে বসেন, এবং রায়হানের পড়াশোনার এবং অন্যান্য খোঁজ খবর নেন। একদিন তাদের মা এসে খুব অনুরোধ করে রায়হানকে বলে যে, পরীক্ষা সামনে এখন তাদেরকে কয়েকটা দিন দুবেলা করে পড়ালে ভালো হতো। রায়হানও রাজি হয়ে যায়। তবে এজন্য একসপ্তাহ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ রাখতে হয়।

পঞ্চম ঘটনা
নিয়মিত রায়হানরা যেভাবে আড্ডা দেয় সেভাবেই আড্ডা দিতে বসে কিন্তু সেদিন যে রায়হান অনুপস্থিত তা অনন্যা প্রথম থেকেই বুঝতে পারে।

অনন্যা আচ্ছা, রায়হান নিশ্চয়ই পড়াশোনার চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার খবর ঁ তো তোদের কাছেও পেলাম না।

তুষার টাকা পয়সা এমন জিনিস এটার গন্ধ যে একবার পায়, তার কি কোনো কিছুর খেয়াল থাকে । নিশ্চয়ই টিউশনি আর একটা বাড়িয়েছে । আরে আমাদের তো একটা মন আছে, যান্ত্রিক রোবর্টতো হতে পারি না। দেখনা, যখনই বাসায় চলে যাই, তখনই ভাবি পরের দিন কখন আসবো আর এ জায়গাটায় বসবো। কিসের জন্য একটা টান অনুভব করি। ( কথাটা সে বিনয়ের সহিত অননন্যার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বলে )।

অনন্যা প্রায় সময়ই আড্ডায় রায়হানের কথাটাই বেশি আনন্দ নিয়ে শুনতো, তবে তার অনুপস্থিতিতে আড্ডাটা তার জন্য একবারে প্রাণহীন হয়ে পড়বে সেটা সে আজকেই বুঝতে পারলো। কিন্তু মনের এ অবস্থা সে নিজেই মানতে পারছিল না। আর বন্ধুদের বুঝতে দেওয়ার তো মানেই হয় না। অনেক কষ্টে সে নিজের ভেতরের অস্থিরতাটা কাটিয়ে উঠল,তবে নিজের বাবার কথা বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসল।

সত্যই সেদিন কেউ কিছু বুঝল না। অনন্যা, নিজেকে নিজে নিশ্চিত করাতে চাচ্ছে যে সে কোন মতেই রায়হানকে ভালবাসেনা। কিন্তু এটা কি ধরণের টান সে অনুভব করছে। পরের দিন, আবার সে আড্ডায় বসলেও বারবার ইউনিভার্সিটির গেইটের দিকে মনে অজানত্দেই তাকাতে থাকে।

শফিকুল কিরে, তোর কি কেউ আসবে নাকি বাসা থেকে?

অনন্যা না কে আসবে? আসলে শরীর অসুস্থতো বাবা জেনেছে তাই ভাবলাম অফিস থেকে আবার চলে আসবে কিনা। কথা গুলো সে বানিয়ে বলে এবং কিছুটা থতমতো হয়ে। সাত দিন কোনোভাবে পার হয়ে যায়। এদিকে রায়হানও অস্থির হয়ে থাকে কখন অনন্যাকে দেখবে । এর মাঝে অনন্যা রায়হানকে ফোন করবে ভেবেও করেনি, কারণ সে ভেতরে ভেতরে বেশ দুর্বল ছিল যে সে কি রায়হানকে ভালবেসে ফেলল কিনা? আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক এমন হবে, এটা সে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ও শেয়ার করতে রাজি নয়। বরং, প্রথম দিনের পর সে আর একবার ও রায়হানের কথা জিঞ্জেস করেনি কাউকে ।

তবে, অনন্যা আশা করছিল যে বন্ধু হিসাবে হলেও রায়হান ফিরে এসে এতদিনের আড্ডাটা যে মিস করেছিল তা নিশ্চয়ই বিশেষভাবে ব্যক্ত করবে। পরে, তাদের একত্রে দেখাও হয় । কিন্তু অনন্যা নিরাশ হয় । রায়হান এতদিনের ক্লানত্দি থেকে ফিরে আড্ডায় বসে শুরম্নতেই ছাত্র ছাত্রীর কথা দিয়ে শুরু করে। তবে সেদিন তারা জানতে পাওে, পরের দিন অর্থাৎ ১২ তারিখে অনন্যার জন্মদিন । তবে, এ নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান তারা পারিবারিকভাবে কখনই করে না বলে জানায়।

৬ষ্ঠ ঘটনা

তুষার আচ্ছা বন্ধু, আমি যে ভীষণ বিপদে আছি একজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছি সে টাকাটা যেভাবেই হোক আজকে দিতে হবে। তবে, আমি ভেবেছিলাম কালকে বাড়ি থেকে টাকা আসলেই টাকাটা দিয়ে দিব । আসলে আমার হাতে কোনো টাকা নেই। শফিকুলের হাতে ও টাকা নেই,কথাটা বলার সময় সে শফিকুলের হাত ধরে চাপ দেয়। তুষারে ইচ্ছা ছিল সে রায়হানের কাছ থেকে টাকাটা নিবে।

তুষার দেখ তোর জরম্নরী কোনো দরকার থাকলে থাক। তবে বন্ধু আজকের দিনটা আমার জন্য বেশ গূরত্বপূর্ণ।

আসলে মাসের ১২ তারিখ তাই রায়হানের কাছে মাত্র ৪০০ টাকা ছিল । কিন্তু রায়হান এবং তুষার দুজনেরই ইচ্ছা তারা আজকে অনন্যাকে কিছু গিফট করে শুভেচ্ছা জানাবে।রায়হানের ইচ্ছাটা তুষার বুঝতে পেরে এ ধরনের একটা আবদার করে।

শফিকুল দেখ বন্ধু আমার কাছে থাকলে আমি দিয়ে দিতাম । শফিকুল ও রায়হানকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে এ কথা বলে।

শেষ পর্যনত্দ তুষার রায়হানের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আর রায়হান ও শফিকুল ফোনেই অনন্যাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় এবং ভালো মন্দের খোঁজ নেয়। আর এ অবসথায় অনন্যাকে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টা তাদেরকে বলেতে রায়হান নিজেকে ছোট ভাবছিল, তাই সে সিদ্ধানত্দ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।

তুষার ফুল কিনে অনন্যাকে সংসদের সামনে এসে ফুসকা খেতে আসার জন্য আকুতি জানায়। অনন্যা শেষ পর্যনত্দ আসে এবং তুষারের হাতে ফুল দেখে সত্যই খুশি হয়। তারা একসঙ্গে ফুচকা খেয়ে পরে যার যার বাসায় ফিরে যায়। অনন্যা, এবার ও রায়হান কিংবা শফিকুলের কথা জিজ্ঞেস করবে ভেবেও জিজ্ঞেস করেনি।তুষার অনণ্যার কাছে অনুরাধ করলো সে যেন ভুলেও তার এখানে আসার কথা বন্ধুদের না বলে, তাহলে বন্ধের দিন তাদেও সঙ্গে না থাকার জন্য তাকে শাসত্দি পেতে হবে।

অনন্যা, প্রথম দেখাতে রায়হানের মুখে যে ধরনের কথা শুনেছিল সেদিনই রায়হানকে তার অন্যরকম মনে হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সে তার ধারণা থেকে ফিরে আসতে এবং তুষারের কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

ইতোমধ্যে তাদের সেমিষ্টার পরীক্ষায় সামনে চলে আসে। এঙ্াম ফি জমা দেওয়ার জন্য যেদিন ইউনিভার্সিটিতে যখন ১৪ তারিখে অনন্যা আসছিল তখন, সে তার এবং রায়হানের সম্পর্ক নিয়ে দুশ্চিনত্দা করতে করতে টাকা ব্যাগে ঢুকাতেই ভুলে গিয়েছিল। শেষে সে যখন বুঝতে পারে যে সে টাকা আনে নি এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে । এ অবস্থায় তুষার ও শফিকুল ভাবে যে টাকার জন্য অনন্যাকে যেন বাড়িতে আবার যেতে না হয় । ঘটনাক্রমে সেদিন রায়হান যে বাসায় টিউশনি করে সে বাসায় তখন উপস্থিত ছিল, এখানে সেখান থেকেই আসার কথা ছিল।

তুষার অনন্যার উপকার করার আর একটা সুযোগ পায় কিন্তু বাড়ি থেকে পাঠানো টাকা নিজের সেমিষ্টার ফি দিয়ে আবার অনন্যার ফি দেওয়ার পর আবার তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া সে তখন কি সিদ্ধানত্দ নিবে বুঝতে পারছিল না। আসলে সে কিছুদিনের মধ্যে অনন্যাকে ভালবাসার কথা জানাবে বলে স্থির করে।

অবশেষে, সে বুদ্ধি করে অনন্যাকে জানায় চিনত্দার কিছু নেই আমার ছোট বেলার একবন্ধু পাশেই থাকে। তাকে বললেই এখনই টাকা নিয়ে আসবে আমার কথা ফেলতে পারবেনা। আর বাড়ি থেকে পুরো টাকাটা আসলে তো আমিই পারতাম।

তুষার এবং শফিকুল যুক্তি করে তাড়াতাড়ি, রায়হানকে ফোন দেয়। শফিকুল ফোনে কথা বলে।

শফিকুল রায়হান পুরো ঘটনা বলে, রায়হানকে বলে দেখা যাবে এবার তুমি অনন্যাকে কেমন ভালবাসো।জলদি টাকা নিয়ে আস। তোমার তো টিউশনি আছেই। আর আজতো ১৪ তারিখ।

রায়হান অনন্যাকে একটু দেওয়া যাবে ।

শফিকুল বোকা নাকি অন্যান্যা তোর কাছ থেকে টাকা নিবে কেন সে জানে না আমাদের অবস্থা। তুই টাকা আনবি কিনা বল ? আমরা অনন্যাকে অন্য একজনের কথা বলেছি। আর তাছাড়া তুই আমাদেরকে কেন ছোট করতে চাচ্ছিস অনন্যার কাছে ?

রায়হান ঠিক আছে বন্ধু আমি আসছি।

রায়হান সত্যই টাকা নিয়ে আসার জন্য ব্যসত্দ হয়ে পড়ে । সে অস্থির হয়ে তার ছাত্রছাত্রীর আম্মুর কাছে টাকা চেয়ে বসে। তবে ১৫ তারিখের আগে কোনো ভাবেই তারা তাকে পুরো টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়। কিন্তু সে টাকার ব্যাপারে তাদেরকে জোর করতে বাধ্য হয় । তার কাছে তারা এ ধরনের ব্যবহার আশা করেনি। তাকে তারা বলে যে, হঠাৎ করে তোমার টাকার কি প্রয়োজন হলো বলো তো,তুমি একদিন আগে বললেও তো হতো।

রায়হান দেখুন সবসময় আপনারা দেরী করেন। আমার টাকাটা নিতে আমাকে এত আবদার করতে হচ্ছে আপনাদের কাছে।
তারা তাকে পরের দিন থেকে না আসতে বলে এবং তার পাওনা টাকা পাশের ঘর থেকে বলে কয়ে এনে তাকে দিয়ে দেয়।

অবশেষে, সামান্য একটা বিষয়ে আবেগপ্রবন হয়ে এবং পরিস্থিতির কারণে তার এতদিনের উপার্জনের পথটাও বন্ধ হয়ে যায়। সে এটা ভাবতে ভাবতেই শফিকুল ও তুষার ফোন করে টাকা নিয়ে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ক্যাফেতে আসতে বলে। তারা দুজন গিয়ে টাকা বুঝে নেয় এবং তাকে কিছুক্ষন পর আসতে বলে অন্যান্যাকে নিয়ে টাকা জমা দিয়ে আসে।

এদিকে নিজের জন্য সেমিষ্টার ফি এবং এঙ্ামফি জমা দেওয়ার টাকা তার কাছে নেই। কারণ বাড়ির থেকে যে লোক সেমিষ্টার ফি নিয়ে আসার কথা ছিল সে অসুসথ। রায়হান বাড়িতে গিয়ে টাকা নিয়ে আসে । সেদিন আর তার অনন্যার সাথে দেখা হয় না।

৬ষ্ঠ ঘটনা
তাদের পরীক্ষা হয় । কিন্তু রায়হানের মানসিক অবস্থা সবদিক মিলিয়ে এত খারাপ ছিল যে সে পরীক্ষার ভাল করেনি।এদিকে অনন্যার সঙ্গে ঘটানাক্রমে তার দূরত্ব শুধুই বাড়ছে। অন্যান্য ও পরীক্ষার ফল দেখে আরো নিশ্চিত হয় যে, টাকা পয়সার প্রতি তার অনেক মোহ তাই সত্য। এ ধরনের একটা ছেলেকে সে ভালবাসতে পারেই না। অনন্যা, আচরনের মাধ্যমে রায়হানকে বোঝাতে থাকে যে সে তাকে অপছন্দ করে।

রায়হান ও কোনো কিছু না বোঝার না চেষ্টার করেই আত্নসম্মানের কথা ভেবে নিজেকে ঘুটিয়ে নেয়। আর, তাছাড়া সে তো অনন্যাকে বলতেই পারেনি যে তাকে ভালবাসে। এখন তো সম্ভবই নয়।

৭ম ্রঘটনা
১ মাস পর
রায়হান খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম এবং নির্ঘুম রাত কাটাতে কাটাতে অসুসহ হয়ে পড়ে।

এদিকে, তুষার ও শফিকুল দুজনই অনন্যার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। একদিন তুষার অনন্যাকে বলেও ফেলে যে সে তাকে ভালবাসে। অনন্যা তার ভালবাসা গ্রহন করে। কিন্তু শফিকুল জানতে পেরে তুষারের ওপর ক্ষোভ জন্মায়। তাই সেও হিংসার কারণে অনন্যাকে জন্মদিনের ঘটনা বলে যে, রায়হান সেদিন তাকে কি কারণে শুভেচ্ছা জানাতে আসতে পারেনি। অবশ্য তুষার যে এসেছিল সেটা সে নিজেও জানত না। তারপর, এঙ্ামফির ঘটনা ও বলে । আরো বলে রায়হান মটেও স্বার্থপর নয় সে আমার খুব ভাল একটা বন্ধু, উপকারী বন্ধু।

অনন্যা সত্যিই রায়হান আমাদের ভাল বন্ধু আর আমরা তাই তাকে উত্তম প্রতিদান দিলাম। তোদের কি বলব ? আমি তাকে পছন্দ করেছি কিন্তু তাকে বুঝিও নি, তার ওপর আস্থাও রাখিনি। শুধু অন্যের কথার ওপরই আমি তাকে সাজিয়েছি। কখনও জানার চেষ্টাও করিনি।

হঠাৎ তুষার এসে হাজির হয়। সে বুঝতে পেরেছে যে সব রটে গেছে। তাই সে লজ্জিত হয়ে পড়ে। সে মাথা নিচু করে রাখে।

অনন্যা বুঝলি, তুষার তুই চোর, ডাকাত, এবং প্রতারকের চেয়ে ও ভয়ঙ্কর। চোর চুরি কওে, ডাকাত জান ও মালের ক্ষতি কওে, প্রতারক কাছের লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে। তুই একই সঙ্গে সত্যকে চুরি করেছিস, বন্ধুর জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিস আর আমাদের সকলের সঙ্গে প্রতারণা করেছিস।



শেষ ঘটনা

অনন্যা আমাকে শেষ বারের মতো ্একটু দয়া করবি। শীঘ্রই আমাকে রায়হানের কাছে নিয়ে চল। অনেক দেরি হয়ে গেছে।

তারা গিয়ে রায়হানকে মূমূর্ষ অবস্থায় পায় এবং জলদি হাসপাতালে নিলে সে সুস্থ হয়।

অনন্যা রায়হান তুই কি আসলে মানুষ নাকি রোবর্ট ?

রায়হান আমি বলতে চাচ্ছিলাম ।আমার অজানত্দে ভুল হয়ে থাকলে মাফ করিস।

অনন্যা চুপ! অজানত্দে তো আমি ও ভুল করেছি । এখন মাশুল দিতে আসলাম।

রায়হান মানে কি?

অনন্যা রোবর্ট, আমি তোমাকে ভালবাসি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আসন্ন আশফাক সেইরকম নাটকের স্ক্রিপ্ট , ভালো ভালো, একটা পেকেজ নাটক হবে এটা দিয়ে , এগিয়ে যান
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া যাক শেষ পর্যন্ত পরলাম গল্পটি , খুব ভালো ও লাগলো...কিন্তু শীত কে একেবারেই বাদ দিয়ে লিখা গল্প...আর একটু কাটছাট করে লিখলে আরো পাঠক পেত গল্পটি./ দৃ; আ; ৬ষ্ঠ ঘটনা ভুল বসত ২ বার হয়েছে ...
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
শাহরিয়ার হায়দার দারুন দারুন ......... অনেক মজা পেলাম গল্প পড়ে
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
এফ, আই , জুয়েল # গল্পের থীমটা বেশ ভাল । শেষের দিকটা অনেক ভাল লেগেছে ।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
সালেহ মাহমুদ সুন্দর হয়েছে। বন্ধু তোমাকে অনেক পড়তে হবে। গল্প লিখতে চাইলে ভালো ভালো লেখকের গল্পগুলো পড়তে হবে। উপন্যাস লিখতে চাইলে ভালো ভালো উপন্যাস পড়তে হবে। এই আর কি। এমনিতেই গল্পের বর্ণনা খারাপ লাগে নি। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
sakil tushar ekebare bondhu namer kolongko , onydike shophikul o temoni . rayhaner moto valo manush ache bolei amora ajo beche achi . sundor golpo
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১২
Mohammad Alvi ভালো লাগলো....বর্ণণা আরেকটু স্বতস্ফুর্ত হলে আরো ভালো লাগত
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ স্বাগতম প্রথমেই। তিনটি চরিত্রের পরিষ্টুটন সুন্দর। তবে গল্প লেখার হাতটা আরেকটু পাকাতে হবে। বিশেষ করে বর্ননা শৈলী।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১২
নিলাঞ্জনা নীল সুন্দর..........

০৯ ডিসেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪