বলেন তো আমাদের মাতৃভাষা কী? জানি সবাই বলবেন, ‘এ আমার কেমন প্রশ্ন?’ কে-না জানে, আমাদের মাতৃভাষা হলÑ বাংলা। কিন্তু দেশের কিছু কিছু কুঙ্গালারের কথা শুনলে কি তাই মনে হয়? ভাষার বিকৃত উচ্চারণ, ইংলিশ-বাংলা মিশিয়ে যে ভাষায় এরা কথা বলে তাকে বাংলিশ ভাষা বলে মনে হয়।
বাংলিশ ভাষার ব্যবহার শুর“ হয়েছে এই নগর সভ্যতায়। এরা নিজেদের আধুনিক বলে দাবী করে। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এসেছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এদের সাথে যোগ দিয়েছে এদেশের কিছু মীরজাফর। এম.এম রেডিও এর নামে শুর“ হয়েছে ভুল বাংলায় কথা বলা। সরকারও চুপচাপ।
রক্তের দামে কেনা ভাষার অপমান দেখে, নিজে আত্মহত্যা করি নয়তো ওদের প্রাণ কেড়ে নিই। যে তার মায়ের মুখ থেকে প্রথম শেখা বুলিকে ভুলে যায়, সেই মাতৃভাষাকে অবহেলা করে। বাংলা ভাষার চেয়ে প্রিয় হিন্দি ভাষা বা ইংরেজি। বাংলায় কথা বললে নাকি অন্যে ক্ষ্যাত মনে করে। হায়রে অভাগা কী তোর নিয়তি সৃষ্টিকর্তাই জানেন বুঝি!
কিছুদিন আগে আমার প্রিয় একজন মানুষের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাই। খেতে বসেছি, আমার সামনে একটি ছোট বাচ্চা মেয়ে, পাশে মা। বয়স কতই বা হবে চার কি পাঁচ। কিন্তু কথা বলছে সম্পূর্ণ ইংরেজিতে। সাথে মা সঙ্গ দিচ্ছে। হিংসেই হয়- এইটুকুন বাচ্চা মেয়ে ফটফট করে ইংরেজি বলছে। অথচ আমি ইংরেজিতে এক লাইনও বলতে হিমশিম খাই। মেয়েটির গুন আছেই বলতে হয়। জীবনের পথে সামনে এগিয়ে যাবে। কিন্তু এই বয়স থেকেই যদি এই ভাবে ইংরেজি বলতে থাকে বাংলা ভাষার ব্যবহার না করে তবে তো ভয়েরই কথা। কেননা এখনই মেয়েটি বাংলা ভাষার ব্যবহার এড়িয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যাবে মেয়েটি আর বাংলায় কথা বলছে না। যার ফলে বাংলার সং®কৃতি থেকে দূরে সরে যাবে। এরপর ঐ মেয়েটির পরবর্তী প্রজন্ম তার থেকে তো কিছুই জানবে না, শিখবে না। তখন কি হবে বাংলা ভাষার?
আমাদের মুখের ভাষা বাংলা। মা ডাক এই ভাষাতেই ডাকি-বলি, লিখি-পড়ি। এরপর বেঁচে থাকার তাগিদে, সময়ের প্রয়োজনে অন্য ভাষার ব্যবহারও করতে হয়। না, কোন আপত্তি থাকার কথা নয় এতে কারো। কোন আইন বা বাধ্য বাধ্যকতা নেই। পাশের দেশ ভারতের কলকাতা শহরের আইন হল সব সাইনবোর্ড, ব্যানার বাংলায় লিখতে হবে। আর দরকার হলে নিচে ইংরেজি হিন্দিতে লেখা যাবে। তারপরও কি ওখানকার মানুষ হিন্দি বা ইংরেজি বলা লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়েছে? দিচ্ছে না। যেহেতু আমাদের এখানে এমন কোন নিয়ম নেই, তাই আমরা এই বিষয় নিয়ে তেমন ভাবছি না। আর আমাদের হিন্দি ও ইংরেজি প্রীতি একটু বেশি। বিশেষ করে এই প্রজন্মের কাছে।
বাংলাদেশের প্রায় সব বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের নামও এই ইংরেজিতে। এর কারণ কী জানা আছে? এই শহরের প্রায় সব মা-বাবাই মুখিয়ে থাকেন তার সন্তান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। এরপর শুর“ হয় ইংরেজি চর্চা। এর কয়েক বছর পর ঐ সন্তান বাংলায় ঠিকমত কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না। পটপট করে ইংরেজি কথা বলে, মনের ভাব প্রকাশ করে। মনে হয় এদেশের সন্তান নয়। অন্য দেশ থেকে বেড়াতে এসেছে। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি একরকম বিরক্তি বোধ করে। এমনকি এক সময় তা প্রকাশ করে ফেলে। এদেশের সং®কৃতির সাথে পরিচিত হয় না। গল্প-কবিতা যাও শেখে তাও ইংরেজিতে, ইংরেজি সাহিত্যের। শেষ পর্যন্ত— টানও বোধ করে ঐ ইংরেজি ভাষার প্রতি।
ঢাকা শহরের আধুনিকতার সাথে আমার প্রায় বনে না। আমি নিয়মিত হোঁচট খেতে থাকি। কয়েকদিন আগে আমার অফিসের বসের বাসায় কোন একটা কাজে যাই। গিয়ে তাঁর আট নয় বছরের মেয়ের সাথে কিছু কথোপকথন হয়। মেয়েটা গত বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কথা বলে মনে হল মেয়ে বেশ বুদ্ধিমান। কথা বার্তায় বেশ চটপটে। প্রথমেই আমাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করে, আমি ফল খাবো কিনা? শুনে ভাল লাগল আমার। এতটুকুন একটা মেয়ে ইংরেজিতে কথা বলে নীরবে আমাকেই লজ্জা দিল। আমিও তো একটা ইংরেজি বাক্যে সাবলীল না। কৌতূহল বশত: জানতে চাইলাম, তুমি হিন্দি ভাষা বোঝ কিনা? জানায় সে বোঝে। এরপর আমার বাংলায় করা প্রতিটি প্রশ্নকে হিন্দিতে নিখুঁত ভাবে অনুবাদ করে দিল। শুনতে বেশ লাগল। আচমকায় মনে হল, এইরে মেয়েটা তো বাংলাই ঠিক মত বলতে পারে না, দেখে দেখে পড়া তো দূরে থাক। ভেবে দেখেছেন কি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা কি পাবে?
বাঙ্গালী গান পাগল জাতি। আমাদের গানের ভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ। শুধুমাত্র আমাদের কারণে এখন তেমন করে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রসার লাভ করেনি। কিন্তু ইদানিংকার কিছু গানের মাঝে ইংরেজি কথা ঢুকিয়ে কী সব যে গায়? কিছুই বুঝি না। অনেকেই আছে বাংলা গানের চেয়ে হিন্দি বা ইংরেজি গান বেশি পছন্দ করে। বাংলা নাকি এখন আর কেউ শোনে না। বাংলা গান নাকি ভালও হয় না আজকাল। দোকান গুলোতে দেদারসে হিন্দি গান বাজছে জোরসে এই ভাষার মাসেও। যে বাজায় সে বোঝে না আর আমরা যারা শুনছি তারাও কিছু করছি না। আর কীইবা করার আছে আমাদের?
চোখ পড়ে না কারো। আর পড়লেও কেউ কিছু বলছি না। মাথা ব্যথা নেই কারো। আমরা ভুলে গেছি ভাষার জন্য সালাম, রফিক, শফিক, বরকত বুকের রক্ত দিয়েছেন। বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ স্থানে নিয়ে গেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাতি আমরাই, যারা মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। বলেন তো, পৃথিবীর আর কোন জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে?
অন্য একটা ভাষা শেখা বা জানা অবশ্যই আর একটা বাড়তি গুন। তাই বলে নিজ ভাষাকে ভুলে গিয়ে, অবহেলা করে? অন্যদিকে আর কিছু মানুষ আছে, যারা বাংলায় জন্ম গ্রহণ করে, বাংলায় কথা বলে, পড়াশুনা করে। কিন্তু তারা যদি ভুল বাংলা বলে আর লেখে তবে তা মানা যায় কী? যার পরমান আমাদের চারপাশে বিভিন্ন সাইনবোর্ড, ব্যানারে, রিক্সা, বাসের গায়ে। আমি নিজেই ঠিকমত শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলতে বা লিখতে পারি না। হয়তো এ লেখায়ও কিছু ভুল হয়ে গেল, যা আমি ধরতে পারলাম না। তাই প্রথমে মাফ চেয়ে নিচ্ছি ভাষা শহীদের কাছ থেকে। তারপর হে মহান পাঠক আপনাদের কাছ থেকে। তো আসুন ভাষা শহীদের রক্তের দাম কিছুটা হলেও শোধ করি।
০৮ ডিসেম্বর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪