ফুল দেব না

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

মাহবুবুর রহমান বকুল
  • ১৭
  • 0
  • ৫৭
“এই মা ভাত দে, মাগো এই মা হেই সক্কাল বেলা একটা বনরুডীর লগে কলা দিয়া কইসিলি দুফুরে ভাত দিবি।হাইঞ্জাবেলা ১৩ টেহা দিছি না তরে? ভাত ত দিলি না।
সপ্তাহের দুই তিন দিন এক দু বেলা না খেলেও দিব্যি চলে যায় মুক্তাদের। ভাত চরেনি আজও।মা বলে মুক্তার বয়স ছয় বছর।তবে এটুকো বয়সেই বেশ কিছু যোগ্যতা অর্জন করেছে সে।যে কোন বড় রাস্তা অনায়েসেই পার হওয়া তার জন্য কোন ব্যাপার না।আর পারে চমৎকার ভাবে জোর করে ভীক্ষা আদায় করতে।পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা চষে বেড়ায় সে।জোড়ায় জোড়ায় কাওকে বসা দেখলে প্রথমে তার মুখে একটা হাসির ঝলক দেখা যায়।কিন্তু পরক্ষনেই যেন রাজ্যের দুঃখ ভর করে তার চোখে মুখে,কাঁদো কাঁদো মুখে সে আপুমনিদের হাত পা অথবা ওড়না মরনপন ধরে রাখে যেন জান জীবন চলে গেলেও ছারবার পাত্র নয় সে।মায়ের শেখানো বুদ্ধিটা অবশ্য ভালই কাজ করে।তবে মাঝে মধ্যে ত্যাদর কোন ভাইজান হলে ভীন্ন কথা।
বাবা গোলজার তিন বছর ধরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের মৃত্যু নিজেই কামনা করে আসছে।দুনিয়ার এই এক আজব রীতি যখন মানুষ বেঁচে থাকতে চায় তাদের ডাক চলে আসে আর যখন জীবন অসহ্য হয়ে উঠে তখন দিনের সুর্য যেন অস্ত যাওয়া ভুলে যায়।ক্ষুধায় কাতর মেয়ের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল চাহনী ই বলে দেয় গোলজার কতটা আসহায়।
মুক্তার মা মাঝে মধ্যে সান্তনার সুরে কিছু বলতে গিয়েও ভাষা পায় না। আসলে ভাষা সে পায় ঠিকই,মনে ভাবনা চলে আসে দুঃখটা কার বেশি?জীবনের এটুকু পথ পারি দিতে তাকে অনেকবার হোছট খেতে হয়েছে।প্রতিনিয়ত সংসারের বোঝাটার ওজন বেরে চলছে তবু নতুন করে কিছু ভাবার ইচ্ছেটাকে বড় করে দেখেনি।
এদিকে সারাদিনে যে কতটুকু চাল ও টাকা যোগার করতে পেরেছিল তা গত সপ্তাহের কিছু ধারের শোধ দিতে হয়েছে পাশের টং এর জরিনাকে।মুক্তার আনা ১৩ টাকাই রাতের ভরসা, প্রতিটি বেলায় এত ঝামেলা আর সহ্য হয় না।
-আইচ্ছা যা তো যে দোহানতে পারস দুইডা ভাত আর তরকারি লইয়া আয়,অই মেডিকেলের গেডের কাছে হোটেলডায় আগে যাবি।খাওন কিছু বেশি অইলে দিতে পারে।
-অই হোডেলে তো সক্কালেও গেছিলাম, “হেয় কয় বারে বারে মাগতে আইওস কিলা?আমার গোডাওনে কি কীড়া পরছে লো হারামজাদী”। তয় সফি মামু এমনে খারাব না,হেদিন ডাইক্কা নিয়া একটা ইয়া বড় মাছের মাথা দিছিল খাইতে.........
-আহহারে মাইয়াডা এত্ত কতা কয়,অক্ষনে যা তো তাড়াতাড়ি।কিছু আনতে ফারলে বাপে-মাইয়ায় খাইয়া হুইয়া পর।
আমাদের মা,বোন তথা বাঙ্গালী নারীদের এই এক দোষ তারা হয় নিজেরা স্বার্থপরের মতো সব একাই চাইবে নইলে নিঃস্বার্থ ভাবে কাকের সাথে সজাগ হয়ে সারাদিন রসনার ঝঞ্ঝাট মারাবে আর সূর্য ডুবলে লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে স্বামির সুখের বোঝা দুঃখের বোঝা বহন করবে।
তবে আধুনিকতার বুলি মুক্তের মার বেলায় না আওরানোই যুক্তিসংগত। ময়মনসিং-এর গ্রাম্যবধু হওয়ার সময়,মাত্র পান খাওয়া ঠোটের মতই রঙ্গীন ছিল তার জীবন।স্বামির পানের বরজ আছে শুনে সে বউ সাজতে গিয়েও শিহরন অনুভব করেছিল।বাসরের প্রথম কথাটাও হয়েছিল এই পান নিয়ে। সেই গোলজার এই গোলজার,সেই বিছানা এই বিছানা,সেই হাসি এই কান্নার মধ্যে যতটুকো পার্থক্য,ঠিক ততটুকোই বদলে গেছে তাদের জীবন।মনের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো শুকিয়ে গেছে গোলজারের শরীরের চেয়েও বেশি।একেকটা সময় আর বাঁচতে ইচ্ছে হয় না,মনে হয় পৃথীবির সকল সুখগুলো যদি ছিনিয়ে আনার ব্যাবস্থা থাকত,একবারের জন্য যে কোন খারাপ কাজ করতে রাজী সে। মেয়েটার খালিপেট বুকে যেন কামান দাগায়।
তবে এই কামানের সবচেয়ে বড় গোলাটা আঘাত করেছিল সেদিন,যখন মুক্তা বলল, “তুই মা অইলি কেন আম্মু অইতে ফারলিনা,” এই বয়সেই সে তার মা এবং আম্মুদের মধ্যে তফাত টা বুঝে নিয়েছে ঠিকই।কিন্তু কে বুঝাবে আম্মুদের ছেলে মেয়ে হওয়ার জন্য আলাদা ভাগ্যের প্রয়োজন।
এদিকে দু তিনটা দোকান ঘুরেও খালি হাতে ফিরে এল মুক্তা।সে কিছু না বলে দাড়িয়ে কাঁদতে লাগল,কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র সহানুভুতিও এলনা বরং সব ব্যথাগুলো মুক্তার উপর ঝারতে লাগল মা...
–ঢং করছ না?রাইত কইরা অভিনয় দেহাছ আমার লগে!এইসব ভালা লাগেনা আর।সারাদিন লুলা একটার অভিনয় দেকতে দেকতে আর মন লয় না এইসব।যা যা আমার ছোখের সামনের থাইক্কা।
কিন্তু ততক্ষনে কান্না থেমে গেছে মুক্তার।হঠাৎ যেন বয়সটা দশ বছর বেড়ে যায় মুক্তার, ঠায় দারিয়ে ছেঁরা জামাটার এক কোণা কামরাচ্ছিল এতক্ষন। না এবার হাঁটা ধরেছে সে।টি,এস,সি ,রোকেয়া হল,ব্রিটিশ কাওন্সিল,ফুলার রোড পেরিয়ে ক্ষুধার্ত শরিরটা খুব ভারি লাগছিল তার।শহিদ মিনারটাই ভাল দারিয়ে আছে চুপচাপ।
কিছুক্ষন মিনারের পাদদেশে বসে থেকে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল মুক্তা………

আর একটা ভোর হয়েছে বাংলাদেশে,ঘুম ভাঙ্গেনি মুক্তার।মুক্তারা দিনের বেলা একটু বেশিই ঘুমায়,রাতের ঘুম যে এখনো তাদের চোখ সওয়া হয়ে উঠেনি।দুদিন আগে মায়ের দেওয়া ফোঁটাটা ছেদ্রে কপালে কালো দাগ হয়ে আছে,আর চোখ দুটো থেকে বেয়ে আছে ঈষৎ সাদা দাগ ।
না এ নালা এত সহজে শুকোবে না,এর দাগ মোছার আগেই আবারও কোন দুঃখ স্বপ্ন দেখে ভিজে যাবে শহিদ মিনারের বেদী।সেই ৫২ থেকে এরকম অনেক বিষফোটাই পরেছে এখানে…………
এই বেদিতে ফুল দিয়ে কি হবে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজাপতি মন অসাধারণ গল্প. দুঃখিত দেরী করে পড়ার জন্য।
রোদের ছায়া মুক্তার জীবন কথা ভালই লিখেছ যদিও বিষয় থেকে একটু দুরে .......লিখতে থাক .
বিন আরফান. দুই বার পড়লাম, পছন্দের তালিকায়ও নিলাম. ১০০ তে ১০০ . চালিয়ে যান. আগামী দিন উজ্জ্বল নিঃসন্দেহে.
সূর্য কিছু জায়গায় ভাষা এবং সূত্র আটকে যাওয়া ছাড়া খুব সুন্দর একটা গল্প। তবে একটা জায়গা ভাল লাগেনি। আমাদের রাগ অভিমান সেই সব শহীদদের স্মৃতি আর স্মৃতিস্তম্ভেই কেন ঝারতে হবে? আর একটা মজার বিষয় শেষ হয়ে যাবে আমার মন্তব্যে: গল্পের মুক্তার সারাদিনের কামাই =১৩ টাকা, গল্পটায় মন্তব্য=১৩, পাঠ তার উল্টো মানে=৩১। আমি এসে সব বদলে দিলাম। (সরি হা হা হা )
জাকিয়া জেসমিন যূথী খুব সুন্দর লিখেছেন। প্রথম গল্প হিসেবে অনেক সুন্দর। লিখতে লিখতে আরো পরিচ্ছন্ন লেখা আসবে। শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি লেখকের আবেগ রয়েছে, তবে ভাষা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হতে হবে। এমনিতে বিয়সয় বস্তু খুবই ভালো। ধন্যবাদ বাবুল তোমাকে এগিয়ে যাও............................
তানভীর আহমেদ খুব সুন্দর গল্প। ভেতর লেখে ভাষার ব্যঞ্জনা বেরিয়ে আসার অনেক লক্ষণেই স্পষ্ট। তারপরেও কোথায় যেন বারবার আটকে যায়। লেখককে অবিরত সংগ্রামে লিপ্ত থাকার আহ্বান জানাই। শুভকামনা।
M.A.HALIM খুব সুন্দর হয়েছে গল্প । বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রইলো।

২০ নভেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪