দেশ মাটি ভালবাসা

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

মোহন চৌধুরী
  • ৩২
  • 0
  • ৬৪
দিনটি ছিল মনোরম এবং ছুটির দিন। তাই বিদ্যালয়ও বন্ধ। পড়ালেখার চাপ নেই বললেই চলে। এমন দিনে বেড়ানোর জন্য গ্রামের পথ ধরে বাহির হল দুই বন্ধু। চলতে চলতে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলল ‘একটা কথা বলবো’ রাখবি? দুই বন্ধুর প্রথম জন হল ‘নিরব’ এবং পরের জন হল ‘মিথুন’। মিথুন বলল কি কথা? নিরব বলল, “আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এল। তা হলো, আমরা দুই জন দুই পথ দিয়ে যাবো, যেতে যেতে যা কিছু দেখব তা ভালো করে লক্ষ্য করব”। কিন্তু মিথুন বলে ওঠে, কেন? নিরব বলল “ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা কারো কোনো উপকার করার চেষ্টা করবো”। মিথুন বলল “এটা আবার কোন ধরনের উপকার যে পথ ধরে গেলেই করতে পারবো”? নিরব বলল “ যে কোনো ভালো কাজ যাতে কারো কোনো উপকার হয়”। এতে মিথুন রাজি হলো। যেই বলল তেমনি তারা কাজও আরম্ভ করল। নিরব ও মিথুন দুইজন দুইদিকে যেতে লাগলো। মিথুন যেতে যেতে দেখল, একজন লোক প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ধান ক্ষেতে কাজ করছে। মিথুন তাড়াতাড়ি গিয়ে লোকটিকে বলল “এই যে চাচা, আপনি তো প্রচণ্ড রোদের তাপে খুব ক্লান্ত” যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কি আপনাকে কিছুটা সাহায্য করতে পারি ? উত্তর পাওয়ার পূর্বেই মিথুন ওনাকে গাছের ছায়ায় যেতে বলে নিজেই ওনার কাজ করতে লাগলো, যেমন-জমিতে পানি দেওয়া, আগাছা পরিস্কার করা ইত্যাদি। অন্যদিকে নিরব দেখল কয়েকটি বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রী যানবাহন চলাচলের পথ অতিক্রম করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কারণ মূল সড়কের অপর প্রান্তেই তাদের বিদ্যালয়। সড়কের উপর দিয়ে অনেক যানবাহন চলাচল করছে। তা দেখেই নিরব খুব যত্নেই সড়ক পার করিয়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ে পোঁছে দেয়। কিছুদূর যেতে না যেতেই নিরব দেখল একজন অন্ধ লোক হাটের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছে। নিরব ঐ লোকটিকে কিছু টাকা দিয়ে বলল “এগুলো দিয়ে কিছু কিনে খাবেন”। তারপর আবার এগুতে লাগল। অন্যদিকে মিথুন একটা বিরাট কাজ করে ফেলল, তা হলো “একটি বাচ্চাকে পানি থেকে বাঁচানো”। ঘটনাটা হলো “একটি বাচ্চার মা যখন পুকুরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বাহির হল তখন মায়ের পেছনে পেছনে চার বছরের বাচ্চাটিও বের হল। যা মা খেয়াল করতে পারে নি। কিন্তু মা যখন ঘাঁটে নামলো তখনি বাচ্চাটি হোঁচট খেয়ে পুকুরের পাড় বেঁয়ে পানিতে পড়ে গেল।

তখন ঐ পুকুরের পাশের পথ দিয়ে মিথুন যাচ্ছিল। মিথুন তা লক্ষ্য করল এবং সাথে সাথে পানিতে লাফ দিয়ে বাচ্চাটিকে পানি থেকে বাঁচালো। বাচ্চাটির পেট ততক্ষণে পানিতে টইটুম্বর। সাথে সাথে বাচ্চাটির মাও তা দেখতে পেল। মিথুন সেই বাচ্চাটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিল। মা মিথুনকে তার এমন উপকারের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানালো। এখন দুই বন্ধুর মিলিত হওয়ার পালা। তারা দুজন সন্ধ্যার দিকে বাড়ির উঠোনে একত্রিত হল এবং যে যার কাজের বর্ণনা দিল। তারা এবার ঠিক করল যে, প্রতি শুক্রবার ঐ রকম কাজ করতে থাকবে। পরের শুক্রবার আবার দুজন পরিকল্পনা মোতাবেক যাত্রা শুরু করল। দুই জন দুই ভিন্ন পথে যেতে লাগল। কিছুদূর যেতে যেতে নিরব দেখল, একতা ছোট ঘর যার বারান্দায় অনেক শিশুকিশোর বসে কী যেন করছে। নিরব কাছে গিয়ে দেখল তাদেরই গ্রামের ‘মালতী’ কী যেন শেখাচ্ছে । মালতীকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, “আমি প্রতি শুক্রবার দরিদ্র ও অসহায় বিদ্যালয় পড়ুয়া শিশু-কিশোরদেরকে আমার বাড়িতে শিক্ষা দিই”। এখানে প্রতি শুক্রবার ১০-১৫ জন বিদ্যালয় পড়ুয়ারা আসে যারা ১ম-৫ম শ্রেণীতে পড়ে। মালতী নবম শ্রেণীর ছাত্রী এবং সে পড়ানো বাবদ তাদের অভিভাবকদের নিকট থেকে কিছু নেয় না । মালতীদের বাড়ির বারান্দাটা আকারে অনেক বড় হওয়ায় ১০-১৫ জনের বসার জায়গা হয় যা অনেক আনন্দের । মালতীর এ উদ্যোগে নিরব খুব খুশি হল । মালতীকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে সে চলে গেল । অন্যদিকে মিথুন যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলো সেই পথে কিছুদূর যাওয়ার পর একটি বট গাছ দেখতে পেল এবং ঐ গাছের ছায়ায় দাঁড়াল । সেখান থেকে তার চোখের সামনে পড়ল দূরের একটি বিল যেখানে তিনটি মেয়ে কী যেন করছে । কাছে যেঁতেই মিথুন দেখল তাদেরই সহপাঠী নাম হল –সেঁজুতি, সুবর্ণা, ও অনন্যা । মিথুনকে দেখেই সেঁজুতি বলল, “কী খবর মিথুন? হঠাৎ এদিকে আসার কোন কারণ আছে কী”? মিথুন বলল, “আমি ঘুরতে বাহির হয়েছিলাম। তোমাদেরকে দেখে মনে হল একটু দেখা করে যাই”। মিথুন তাদেরকে প্রশ্ন করল “তোমরা এখানে কী করছ” ? উত্তরে অনন্যা বলল “আমাদের রহিম চাচা (সেঁজুতির বাবা) কয়েকদিন থেকে অসুস্থ। এদিকে ওনার আলু ক্ষেতের আলু সংগ্রহের সময় হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পার হলেই আলু পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই আমরা তিন বান্ধবী সেই ক্ষেতের আলু গুলো মাটি থেকে আলাদা করে সংগ্রহ করছি”। অনন্যার কথার সাথে যোগ করে সুবর্ণাও বলল, “হ্যাঁ মিথুন তুমিও আমাদেরকে সাহায্য করতে পারো” । মিথুন বলল, “অবশ্যই করবো”। তখনই মিথুন তাদের সাথে কাজে যোগ দিল। কাজ

শেষে মিথুন তাদেরকে বিকেলে বট তলায় থাকার জন্য অনুরোধ জানালো এবং তারাও সম্মতি দিল। বিকেল বেলা নিরব ও মিথুন বট তলায় উপস্থিত হলো। অন্যদিকে সেঁজুতি,সুবর্ণা,অনন্যাও উপস্থিত হলো। তারপর কিছুক্ষণ আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্ত নিল যে , গ্রামের অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করবে। তাদের গ্রামে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। তাঁরা ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলো । কিন্তু আজ তাঁরা অসহায়। কারণ সরকারি ও বেসরকারি কোনো সহায়তা তাঁরা কখনো পাইনি। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাতার কথা বললেও তাঁরা তা পাই নি । তাই ঐ পাঁচ জন বন্ধু-বান্ধবী বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাদের অসহায় অবস্থার খবর প্রকাশের ব্যবস্থা করলো। পত্রিকায় খবর প্রকাশের সাথে সাথে সরকারি-বেসরকারি অনেক মাধ্যম থেকে সাহায্য আসতে লাগলো। আর এতে করে মুক্তিযোদ্ধা তিনজন অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি পেল। এভাবে দেশে তাদের সুখ্যাতি প্রকাশ পেল। অন্যদিকে সংবাদ মাধ্যম ঐ পাঁচজন মানবদরদীকে তাদের কৃত কর্মের জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানালো। এতে করে পাঁচজনের মন আনন্দে ভরে উঠলো। শেষে নিরব বলল “দেখো সতীর্থগণ, স্বদেশের জন্য , স্বদেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার নামই স্বদেশপ্রেম”।









আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহন চৌধুরী THANKS A LOT TO ALL OF THE COMMENTERS
মো. ইকবাল হোসেন দিনটি ছিল মনোরম এবং ছুটির দিন a„nd অন্যদিকে নিরব দেখল কয়েকটি বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রী যানবাহন চলাচলের পথ অতিক্রম করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে,How to Possible it?
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি খুব ভালো উদ্বোগ, আমাদের আসে পাশে এমন অনেক মুক্তি যোদ্দা বসবাস করে এবং তাঁরা মানবেদর জীবন যাপন করে। কিন্তু সেগুলো আমাদের ছোখে পড়েনা। আমরা শুধু সরকারের দোষ দেই। মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য আমাদেরও যে অনেক করার আছে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে জানিয়ে দেয়ার প্রয়াশকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারছিনা। ধন্যবাদ মোহন তোমাকে প্রকৃত দেশ প্রেমের দিক নির্দ্দেশনার জন্য ।
sakil লিখতে থাক এবং লিখতে থাও তাহলে একদিন অনেক ভালো লিখতে পারবে .
মোহন চৌধুরী আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ....................
ওয়াছিম তোমার গল্পের ভাষ্যটা মানুষের অনুপেরনা যোগাবে। কিন্তু প্রথম গল্প তো তাই হয়তো গল্পটি ঠিক গল্প হয়ে ওঠে নাই......... আরো চেষ্টা করতে হবে। বেশি বেশি গল্প পড়তে হবে.... আশা করি সামনে আরো ভাল হবে।
সাজিদ খান বারবার কমেন্ট মুছে তুমি প্রমান করেছে ,তুমিই এর দায়ী,,আর তুমি শুধু জয়ী হওয়ার জন্য লেখছো,,,এই লজ্জা কার???????
জাকিয়া জেসমিন যূথী ভালো লিখেছেন। গতানুগতিক গল্পের চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ভালো লাগলো। শুভকামনা রইলো।
এস, এম, ফজলুল হাসান যাক বাবা তুমি প্রথম লিখাতেই হিট হয়ে গেলে , দোয়া করি আরো ভালো লিখা পাব তোমার কাছ হতে | বন্ধুরা তো তোমার লেখায় মন্তব্য দেবে এটাই স্বাভাবিক , তবে খেয়াল রেখো নিজের বদনাম যেন না হয় | ধন্যবাদ |
মোহন চৌধুরী আপনাদের সকলকে কমেন্ট করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ .........এবং vote করার জন্য ও .........

১৯ নভেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪