ডিজিটাল ভালোবাসা ? মানে ?
আজকাল ভালোবাসাবাসি মানেইতো স্কুল-কলেজে যাওয়ার নামে বইয়ের ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে পার্কে ছেলে বা মেয়ে বন্ধুর কোলে মাথা রেখে সারাদিন কাটিয়ে বিকেল বেলা বাড়ি ফিরে বাবা মায়ের কাছে মিথ্যে অভিনয় করা । তরুনরা চট করে ক্ষেপে যাবেন না । আগে সব কথা শুনুন । চলুন, আপনাদের নিয়ে একটু চিন্তার জগৎ থেকে ঘুরে আসি । আপনাদের এই ডিজিটাল ভালোবাসার যুগে দেখুনতো, আপনাদের মনোজগতে কিছুটা হলেও এই ভালোবাসার গল্পটা আপনাদের ভালো লাগে কি না ?
আমার এ গল্পের নায়িকার নাম রাতের রানী । তিনি কখনওই দিনের আলোতে কাউকে তার রূপ দেখান না । রাতে আব্রু থেকে একটু একটু করে নিজেকে প্রকাশ করেন । রাত যত গভীর হয়, তিনি ততোই তার অবয়ব ধীরে ধীরে উন্মোচিত করতে থাকেন । একসময় পরিপূর্ণভাবে তার রূপের সবটুকু প্রকাশ করেন । সারারাত তিনি এভাবেই তার প্রেমিকের মনোরঞ্জন করেন ।
আঁধার রাতে আলোর ঝলকানীতে তিনি তার দল মেলে দিয়ে কত না সাজে রাজার মনোরঞ্জন করলেন, অথচ দেখুন, রাত ফুরিয়ে দিনের আলোয় তার এ কী করুণ পরিণতি ! পুবাকাশ আলোকিত হয়ে ওঠার সাথে সাথে তিনি আবার নিজেকে ধীরে ধীরে আব্রুর ভেতরে গুটিয়ে নিতে চেষ্টা করেন । কিন্তু তার সে শুকনো মলিন দেহের ধ্বংসাবশেষ দেখলে মনে হবে যেন রাজা তাকে দুমড়ে মুচড়ে এমন দশা করেছেন যে, একটু আগেও তার তেজদীপ্ত মোহনীয় রূপ ছিল, তা কারো বিশ্বাসই হবে না । অথচ রাজা তাকে স্পর্শ করে নি, ছুঁয়েও দেখেনি । কেবল দুই নয়ন মেলে তাকিয়ে তার অপরূপ রূপ-শোভা উপভোগ করেছেন আর শ্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করেছেন । তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন পৃকৃতি-রাজ্যের এ রাতের রানীর এমন করুণ পরিণতি কে করল ? কেউতো তাকে বাস্তবে দুমড়ে মুচড়ে দেয়নি ? তিনি রাতে যেখানে অবস্থান করেছিলেন, দিনের আলোতে ঠিক সেখানেই আছেন । তবে কি তার অবস্থা আর সেই জলসা ঘরের ঝাড়বাতির আলোয় ফুটে ওঠা মোহনীয়, কমনীয়, উচ্ছসিত, তারুন্যের ঢেউয়ে উত্তাল রূপসী রানীর অবস্থা অবিকল একই ? রাজার মাথাটা হঠাৎ একটা চক্কর মারল । আজ রাতে খেয়ালী রাজা জলসা ঘরে না যেয়ে প্রকৃতির এই রানীর সাথে সারারাত কাটিয়েছে । ভাবছে, তবে কি প্রতিরাতে নিত্য নতুন রানীদের ধরে এনে যেভাবে সকাল বেলা উচ্ছিষ্টের মত ছুড়ে মারা হয়ে আসছে আজীবন, এটা তারই প্রতিবিম্ব ? রাতের ঐ রানী এমনভাবে নেতিয়ে পড়েছেন, যেন একরাতেই বৃদ্ধা নারীতে রূপান্তরিত হলেন ? বিশ্ব-জগৎপতি, রাজাধিরাজ- মহান শ্রষ্টা তাকে নিয়ে এমন নিষ্ঠুর খেলাটি খেলেছেন ? নাকি আমাদেরকে তিনি খেলাটা উপহার দিয়ে সতর্ক করছেন ? রাজার মনে প্রশ্ন জাগে, হে আল্লাহ ! তোমার এ অপরূপ অথচ বাহ্যিক চোখে দৃশ্যমান নিষ্ঠুর (?) খেলা থেকে আমাদেরকে কি শিক্ষা দিলে?
আচ্ছা, যুগ যুগ ধরে আমাদের তৈরী মন্ত্র-তন্ত্রে বলিয়ান রাজারা শরাব পেয়ালা হাতে নিয়ে কত না হাজার রাতের রানীকে এমনভাবে দেখেছিলেন । তারা রাজমুকুট মাথায় পরে রাতে নরমাংশের তৈরী জ্যান্ত রানী ধরে এনে খাঁচায় বন্দী করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত দেন । তারাও কি তবে রাতের রানীকে নিয়ে শ্রষ্টার এ লীলা খেলাকে সামনে এনে যুক্তি খাঁড়া করে আমাদের মাতৃজাতিকে ওভাবে অপমান অপদস্ত করতেন ? তারা কি রাজ পারিষদদের কাছে এভাবে যুক্তি তুলে ধরতেনঃ ” ঐ চেয়ে দেখ, আমার প্রভু যেমন করে ঐ প্রকৃতির রাতের রানীকে নিয়ে ক্রিড়ামোদ করেছেন, আমিতো কেবল তারই অনুকরণ করেছি, নয় কি ? তোমরা কি বল? আমি কি পাপ করেছি ? কে বলে আমি পাপ করেছি ? দিনের আলোয় চেয়ে দেখ, প্রকৃতির ঐ রাতের রানীকে শ্রষ্টা কোথায় নামিয়ে দিয়েছেন ? আমিওতো তাই করি । কি বল ? আমি এর ব্যতিক্রম করি কি ? চেয়ে দেখ, ওটাও কেমন নেতিয়ে পড়ে আছে । সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতাটুকুও নেই । তাহলে তোমরা যে আমায় দোষ দাও, বল, আমি নাকি অন্যায় করছি ? শ্রষ্টা যেমন করেছেন, আমিও তেমনই করেছি । কেন দিতে হবে তাকে সারাজীবনের জন্য রানীর স্বীকৃতি ? নিয়ে যাও ওকে সেই আস্তাকুড়ে, যেখান থেকে ওকে তুলে এনেছিলে । মাস মাস কিছু মাসোহারা দিয়ে দিও যতদিন বাঁচে । এই কি তার জন্য যথেষ্ট নয় ? মহানুভবতার ঘাটতি আছে কি আমার ? যাও ! হুকুম তামিল কর !!
যথাযথ জবাব দিয়েছেন রাজা !!
সভাশদ নিশ্চুপ । প্রজাকূল অসহায় !!
এমনি করে কেটে গেছে আমাদের পূর্বপুরুষদের হাজার হাজার বছর। আমাদের মা বোনদেরকে করেছে অসম্মান, চিরকাল রাজাদের মনোরঞ্জনের স্বার্থে তারা পেয়েছেন কেবল তীব্র অপমান আর লাঞ্চনা । এতটুকু মর্যদা করা হয়নি তাদের । কত মা বোন অকালে আত্মাহুতি দিয়ে তাদের পাপের বোঝাকে হাল্কা করে দিয়ে গেছেন, তার হিসেব কে রেখেছে ? সে ইতিহাস কি লেখা হয়েছে কোন রংগীন পাতায় ? ইতিহাস রচিত হয় ক্ষমতার কলমে যুগ যুগ ধরে এসব হাহাকার সে কালের সাক্ষী !!!
চলুন দেখি, রাতের রানীর রূপ-যৌবন নিয়ে ঐ বেটা গো-বেচারা কি ভাবছেন ?
রাতের প্রায় শেষাংশে জায়নামাজটি গুটিয়ে রেখে হাটি হাটি কদমে ব্যালকনির কোণে চাঁদের পানে চেয়ে তার সে মহান র’ব এর শুকরিয়াহ আদায় করল। ভরা পুর্ণিমার চাঁদের আলো ঠিকরে পড়েছে গাছে গাছে, লতায়, পাতায়, ফুলে-ফলে । সে আলোয় তার নয়ন জুড়িয়ে গেল রাতের রানীর বর্ধিত শোভা দেখে । কিভাবে সে তার সমস্ত দেহ-প্রাণ উজাড় করে দল মেলে দিয়ে রাতের প্রকৃতিকে মনোরঞ্জিত করেছে ! ঠিক যেমন করে মাঝরাতে তারই শয্যাপাশে যে রানী তার সবটুকু উজাড় করে তার মনোরঞ্জিত করে ধন্য করে দিয়েছিল, এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল নয়ন দুয়ারে । শুকরিয়াহ ! আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করার ভাষা নেই ! প্রকৃতির এ মহিমা মানব জীবনের সাথে আল্লাহ তায়ালা এমন করে মিলিয়ে দিয়েছেন ?
ফজরের নামায শেষে সূর্যের কিরণ যখন সর্বত্র উজ্বলতায় ঝরে পড়েছে, ঠিক তখন দুই রাকাত নামায পড়ে আবার আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করে যখন ঘরে ফিরল, তখন ব্যালকনিতে দেখা সেই রাতের রানীকে দিনের আলোয় দেখার লোভটি যে সংবরণ করতে পারল না । কিন্তু হায় ! এ কি !! এ কি চেহারা হয়েছে আল্লাহর সৃষ্ট ঐ রাতের রানীর ? এভাবে তার দেহকে জীবন্ত নেতিয়ে দিয়ে আল্লাহ কি শিক্ষা দিলেন ? তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে আসে না । কিন্তু ক্লান্ত দেহ নিয়ে একইভাবে ইশরাক আদায় করে তার জীবনের রানী যখন ধীর পায়ে রান্না ঘরের দিকে চলেছেন, তখন তার ক্লান্ত দু’টি চোখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন প্রকৃতির রাতের রানীর সাথে তার জীবনের রাতের রানীর মিল খুঁজে ফিরছে । বিছানায় দেহটা এলিয়ে ব্যালকনিতে একটু আগে দেখা নেতিয়ে পড়া ঐ রানীর চেহারাটা তার চোখের সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠল ।
-কী রাজা ! মুখটা মলিন কেন ?
কে তুমি ?
-আমি তোমার ব্যালকনিতে দেখা সেই রাতের রানী, একটু আগে তুমি যার নেতিয়ে পড়া দেহটি দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছ, আমি সেই, গো ! তোমার দেখা প্রকৃতির রাতের রানী । কি এত ভাবছ আমায় নিয়ে ?
না, না, আমি তোমায় নিয়ে ভাবব কেন ?
-উহু ! ভদ্রতা করনা । আমি তোমার ভাবনায় সাহায্য করছি । শোন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই । তোমার রানীর অবস্থাও আমার মতই । মহান আল্লাহ আমাদেরকে এভাবেই তৈরী করেছেন । তোমরা যেন আমাদের এই অবস্থাটাকে সম্মান করতে পার, যেমন করে তোমাদের প্রয়োজনে আমাদের উচ্ছসিত যৌবনকে তোমরা সম্মানিত কর । আবেগের ঢেউয়ে উচ্ছসিত মুহুর্তে তোমরা যেমন করে আমাদেরকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে রাখ, দিনের আলোয় আমাদের ক্লান্ত , জীর্ণ-শীর্ণ দেহটাকে যেন তুচ্ছ না কর, তোমার শ্রষ্টা আমাকে এই রূপে নামিয়ে দিয়ে সেই শিক্ষাটা দিচ্ছেন । বুঝতে পারলে কিছু ? তুমি আবার যখন চাইবে, তোমার রাতের রানী আবার তেমনই রংগে রংগীন হয়ে তোমাকে পরিপূর্ণতা দান করবে ।
এই বুঝি সব প্রশ্নের মিমাংসা !!
হ্যা, গো, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি ? তোমার নাস্তা তৈরী হয়ে গেছে । চলে এস ।
সম্বিত ফিরে পেয়ে রানীর কাছে গিয়ে দেখে, মিষ্টি একটু হাসিমুখে নাস্তা নিয়ে বসে আছেন তার হৃদয়ের রানী ।
হে আল্লাহ ! তোমার লীলা-খেলা বোঝার সাধ্যি কার ?
আজকের যুগে পৃথিবীতে বাস্তব রাজা-রানীদের অবস্থা কি ?
চলুন দেখে আসি ।
হালের লাঠি দিয়ে রাতের রানীকে বেদম পিটিয়ে শুরু হয় কদম আলী কৃষকদের প্রভাত যাত্রা
আর সভ্যতার ধ্বজাধারী মিঃ দস্তগীরদের মত দাপুটে আমলা, নেতা, মন্ত্রী, ---নানারকম পেশাজীবিরা মনে করেন, তাদের রানীরা কেবলই তাদের ভোগের সামগ্রি অথবা বাণিজ্যিক পণ্য । বাণিজ্যিক কারবারীরাতো নারীদেহকে বানিয়েছে টাকা রোজগারের অন্যতম হাতিয়ার !! প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে নতুন রানীর সন্ধান !!
আর তাদের প্রজন্ম অসংখ্য তরুন তরুনীরা ডিজিটাল ভালোবাসার নামে সব কিছূ ক্ষুইয়ে জীবনকে ধ্বংস করে চলেছে প্রতিনিয়ত । কারো কোন হুস নেই । হুস নেই আগামী প্রজন্মের সভ্য মানুষ জন্ম নেবে কোন মায়ের পেটে ? কোন বাবার বৈধ ঔরষে ?
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এ যুগের ডিজিটাল ভালোবাসার সাথে আগেকার যুগের মানুষের ভালোবাসার নামে মূলতঃ পৈশাচিকতার অনেকটা মিল রয়েছে (ব্যতিক্রম ব্যতিত) যা আমার গল্পের সারবস্তু । ব্যতিক্রমও তুলে ধরা হয়েছে যাতে তরুন প্রজন্ম পজিটিভলী চিন্তার অবককাশ পান ।
২৯ অক্টোবর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪