ভৌতিক গল্প লেখার প্রচেষ্টা

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

জাকিয়া জেসমিন যূথী
  • ১৬
  • ৪১
একজন কলম পেশাদারী যিনি লেখক, কবি, কলামিস্ট কিংবা পত্রিকার সম্পাদক যাই হোন, যিনি লেখেন তিনি বোধহয় সারাক্ষণ তার আশেপাশের ঘটনার মধ্যে থেকে তার লেখার উপকরণ খুঁজতে থাকেন। সকালে ঘুম থেকে জেগে আড়মোড়া ভাঙা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে চলে যাওয়া পর্যন্ত এমনকি ঘুমের মধ্যেও গল্পের উপকরণ নিয়ে ভাবেন। সমস্ত দিন যা ভাবেন তার ভেতর থেকে উপযুক্ত সূত্রগুলো তুলে আনার চেষ্টা করেন এবং একটা সূত্রের সাথে আরেকটা সূত্র জোড়া দিতে থাকেন। সেই জোড়া দেয়া পাঁচ সাত প্যারা নিয়েই বোধহয় একটি করে ছোট গল্প তৈরি হয়। চারপাশের ঘটনাগুলোতে কিছুটা বাড়তি স্নো পাউডার মেখে ভালোমত মেক আপ করিয়ে পাঠকের সামনে মেলে ধরা হয়। অধিকাংশ পাঠকই সাধারণ মানের। যা দেওয়া যায় গিলে খেয়ে ফেলে। কিন্তু কিছু জাঁদরেল পাঠক আছে ভীষণ খুঁতখুঁতে। যত যোগ্যতাসম্পন্ন রূপসীই হাজির করো না কেন কোনভাবেই সন্তুষ্ট করা যায় না। আমি সেরকম জাঁদরেল পাঠকদের লেখকই হতে চাই।
কয়েকদিন থেকে একটা ভৌতিক গল্প লেখার শখ চেপেছে। ভীষণ ভিরু প্রকৃতির মানুষ হয়ে কিভাবে এটা সম্ভব করবো বুঝতে পারছি না। সেরকম ভয়াল রাতের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতাও নেই যে সেই ঘটনাটা হুবহু লিখে ফেলবো। সামান্য ধুপ ধাপ শব্দে চমকে ওঠা আমার জন্য নিয়মিত ঘটনা। ছোট ভাই-বোনরাও আমাকে ভয় দেখায়। দরজার কোণা কানায় লুকিয়ে থেকে হঠাত আমার সামনে এসে ‘হুপ’ বলতেই আমি ‘আউক’ করে বিকট এক চিৎকার দিই! সেই আমি হবো কিনা ভৌতিক গল্পের লেখক!
প্রসংগক্রমে অনেক দিন আগের একটা ঘটনা বলি। তখন সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। গভীর রাত। সবাই ঘুমে। আমি দেয়ালের এক পাশে রাখা খাবার টেবিলের সবচেয়ে কোণার দিকের চেয়ারে বসে পরীক্ষার পড়া করছিলাম। হঠাত আমার মনযোগ ছিন্ন করে নিলো কিছু একটার খস খস শব্দ। যেখানে বসে আছি তার পেছনে বারান্দার দরজা। আমার মনে হলো সেই দরজা দিয়ে একটা ছায়া আমাকে জাপটে ধরতে এগিয়ে আসছে। ভাবনাটা ভাবাও শেষ আমার চিৎকার দেয়াও সারা! কিন্তু সাথে সাথেই দেখি মানুষ নয়! একটা ত্যালাপোকা খসখস শব্দ তুলে আমার চেয়ারের পাশ দিয়ে উড়ে আরেক দিকে চলে গেলো! আমি দিলাম আরেক চিৎকার। কেননা তেলাপোকা উড়লেও আমার কেমন জানি গা শিরশির করে। এদিকে আমার চিৎকারে বাবা-মা ঘুম ভেঙ্গে ঐ ঘরে চলে এসেছেন! না জানি কি হয়েছে! চরম বকা খেতে হয়েছিলো সেদিন। সামান্য একটা তেলাপোকা দেখে যার এত্ত ভয় তার সায়েন্সে পড়ার যৌক্তিকতা কোথায়! এক বছর পরেই এই তেলাপোকার পেট অপারেশন করতে হবে! ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তারা দুজনে ঘুমোতে গেলেন।
আরেকটা ঘটনা বলি। আমার ছোট ভাইটা ভীষণ দুষ্টু। এক রাতের ঘটনা। দু ঘন্টা আগেই বাবা-মা তাদের ঘরে আর আমি সোফা রুমে শুয়ে পরেছিলাম। আমি ঘুমিয়েও গিয়েছিলাম। বাথরুম পেয়ে যাওয়ায় হঠাত ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইলে সময় দেখলাম রাত দুইটা। আমার সোফার ঘর থেকে ওয়াশরুমটা বেশ খানিকটা দূরে। বাথরুম করে আমি ফ্রেশ হয়ে অন্ধকার করিডোর পেরিয়ে বসার ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকে দেখি বিছানার পাশের দেয়ালে সোফার চিপায় একটা লোক দাঁড়ানো। আমি তো ‘ও মাগোওওও’ বলে দিলাম এক রাম চিৎকার! আমার বুকটা তখনো ধরাস ধরাস করছে আর ওদিকে আমার বাঁদর ভাইটা হেসে কুটিকুটি।
লেখক হতে হলে নাকি বেশি বেশি পড়তে হয়। ভৌতিক গল্প লেখার প্রচেষ্টায় তাই ভৌতিক সিনেমা, টিভিতে ক্রাইম ও ভৌতিক নাটকগুলো দেখা শুরু করেছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা আর ভালোবাসার গল্প বহু লিখেছি। লিখতে লিখতে একঘেয়েমী চলে এসেছে। এখন আমি চাই একটা ভৌতিক গল্প লিখতে। ভৌতিক গল্পের উপকরণ খুঁজতে আমি আমার ভাবনাকে প্রসারিত করি। দৈনিক জীবনের বহু শব্দের ভিড়ে ভৌতিক অনুসংগ অনুভবের চেষ্টায় নামি।
একদিন ভৌতিক গল্প পাঠের জন্য নীলক্ষেতে ভৌতিক গল্পের বই কিনতে গেলাম। সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছিলো। গল্প লেখা শিখবার উদ্দেশ্যে গল্প পাঠ বলে অপেক্ষাকৃত সস্তায় বই খুঁজতে থাকি। নীলক্ষেত বইয়ের দোকান ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে ফুটপাথে সজ্জিত বইগুলোর মধ্যে খুঁজতে থাকি আমার জিনিস। একটা দোকানে পেয়েও যাই। দোকানীর বইয়ের মধ্যে বেশিরভাগই ভৌতিক বইয়ে ঠাঁসা! আমি একটি বই টেনে নিয়ে প্রচ্ছদটা দেখতে থাকি। কুচকুচে কালো রঙের ভেতর থেকে বের হয়ে আছে একটা রক্তমাখা ছোরা! মেরুদন্ড বেয়ে কেমন একটা শিরশিরে অনুভূতি হতে থাকে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ছোটবেলায় দেখা ইংরেজী সিনেমা দি ওমেন এর মতো আশেপাশে ঘন কুয়াশা জমতে শুরু করেছে। রাস্তার সোডিয়াম লাইট যেন নয় সব পরিবেশ পালটে যাচ্ছে! ভৌতিক গল্প লেখার জন্য আমার চারপাশ আমাকে তার রুপ বদলে দিচ্ছে।
বইয়ের দোকানে গল্পের বইটা হাতে নিয়ে দর কষাকষি করেও কেনা হয়ে ওঠে না। দোকানী ভৌতিক চেহারা নিয়ে বলে-‘এই দামে ছাড়া এই বই কোনখানে পাইবেন না! নিলে নেন না নিলে ভীড় বাড়ায়েন না!’ ব্যাটার কণ্ঠের মধ্যে কি যে ছিলো পেটের মধ্যে ভয়ের গুড় গুড় শব্দ উঠে! মনে হয় এখান থেকে এখুনি কেটে পড়তে হবে। নইলে বইয়ের মধ্যে দেখা রক্তমাখা ছুরিতে নিজেকেই এফোঁড়ওফোড় হতে হবে।
আজ বার বার দি ওমেন সিনেমার দৃশ্যগুলো মনে পরছে। দশ বারো বছর বয়সে সবাই মিলে চাচার বাসায় ভিসিআরে সিনেমাটা দেখছিলাম। বড় বড় দাঁড়কাক অনেক উঁচু কোন জায়গায় বসে থাকে। তারপর লক্ষ্যস্থির করে শাঁ করে নেমে এসে জীবন্ত মানুষের চোখ উপড়ে ফেলে! ওফস! কি ভয়ানক দৃশ্য! সিনেমার অর্ধেকটা দেখে পাশের ঘরে মাকে টেনে নিয়ে গিয়ে খুব কান্নাকাটি করেছিলাম-‘আমি আর দেখবোনা!’ সেই ছোট্ট বয়সে ছবিটা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিলো। এরপর থেকে বাথরুমে একা যেতেও গা ছমছম করতো!
বই কেনা হলো না। রিকশার খোঁজে নীলক্ষেত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরাস্তা ছাড়িয়ে কাঁটাবন কনকর্ড টাওয়ার পর্যন্ত চলে আসলাম। এখন পর্যন্ত কোন রিকশা পাইনি। হঠাৎ হ্যাঁচকা টান আর আমি নিজেকে ঠান্ডা পিচের রাস্তায় আবিষ্কার করলাম। কার ধাক্কায় পরলাম আমি না উসটা খেলাম দেখতে না দেখতেই বগল থেকে একটু নিচের দিকে খচ খচ করে দুটো কোপ। তার সাথে সাথে আরও চার পাঁচটা পোচ দিয়ে হাতটাকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। শুকনা মানুষের হাড় তো শক্ত হয় তাই এখনো মাংস কেটে গেলেও হাড় জোড়া লেগেই রয়েছে। রক্তের কোন গন্ধ নেই। এমনকি ব্যাথাও অনুভূত হচ্ছে না। রাস্তা ছুঁয়ে কাঁটা হাতের কাছে দু’জোড়া প্যান্ট পরা পা চোখে পরছে শুধু। এরা কারা? আমাকে কেন জবাই করতে চায়? গলায় চাপাতি বসিয়ে দিক। তা না করে এরা আমার ডান হাতটা কেন কেটে নিচ্ছে! ওফ! আমি যে এই হাতেই আমার চারপাশের চিত্র তুলে ধরি আমার লেখার পাতায়।...

পোওওওওও...পোওওওও...ঠাস করে ডান হাতে ডান গালের ওপরে একটা মশা মারলাম। উফ! গালে খুব জোরে চড় মেরেছি। ব্যথা লাগছে! হালকা চোখ খুলে দেখি আমি আমার বিছানায় ব্যাকাত্যাড়া হয়ে শুয়ে আছি। আমার কোলে ছোট এইচপি ল্যাপটপটা কাত হয়ে পরে আছে। কী-প্যাডে চাপ দিয়ে দেখি কম্পিউটারের ঘড়িতে পাঁচটা চল্লিশ। বিকেল? মোবাইলে চাপ দিয়ে দেখি –না! এখন ভোর হতে চলেছে! ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে। ধ্যেত! ওয়াচথার্টিটুডটকম-এ লিজি বর্ডেন’স রিভেঞ্জ মুভিটা অর্ধেক দেখা হয়ে গিয়েছিলো; এখন পুনরায় লোড দিতে হবে! ভৌতিক গল্পের রসদ কুড়ানোর জন্যই সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম কিন্তু কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। জাগিয়ে দিলো মশাটা একেবারে ফজরের আজানের আগে দিয়ে। যাই, ওজু করে নামাজটা পড়ে নিয়েই ঘুমোই আবার। ল্যাপটপ শাট ডাউন করে টেবিলে রেখে আমি বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক হুম ... এমনি হয় ... প্রচণ্ড ভয় কাজ করলে মনে ... ছায়া কেও হটাত ভুত মনে হয় ... :) বাস্তব ভাব থেকে হটাত স্বপ্নের ভেতরের ঘটনা । ভৌতিক ভাবটা আরও জটিল করেছে । ভালো লেগেছে আপু ... গল্পটা । ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল।
শুভকামনা আপু। তোমার ঠিকানাটা দিলা না তো।
নাসরিন চৌধুরী ভৌতিক গল্প লেখার প্রচেষ্টা কিন্তু মন্দ হয়নি আপু। কিছু আত্মকথা জানা হল। শুভকামনা জানবেন
হু, আপু। তোমার মত তো লিখতে পারিনা।
সোহানুজ্জামান মেহরান খুবই ভাল গল্প, শুভ কামনা ও সাথে ভোট।
এমএআর শায়েল চমৎকার গল্প। আশা করি,♥আমার লেখা ♥সে কেন এমন করল♥ পড়বেন আশা করি।
ধন্যবাদ। অসুস্থ থাকায় এখানে লগইন করা হয়নি। আগামী লেখা পাঠ ও ভোট দেয়ার আশা রাখছি।
এশরার লতিফ ভালো লাগলো ভৌতিক গল্প লেখার প্রয়াসের সাথে আতঙ্কময় কল্পনার মিশে একাকার হয়ে যাওয়া।
অনেক ধন্যবাদ, এশরার লতিফ ভাই। আসলে আগে লেখা একটা আর্টিকেলকে জাস্ট গল্পের রুপ দিয়ে তাড়াহুড়ার লেখা পোস্ট ছাড়া এটি কিছুই নয়।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী লেখনি। খুব ভাল লাগলো । শুভেচ্ছা জানবেন ।
এফ, আই , জুয়েল # বেশ ভালো একটি লেখা ।।
ধন্যবাদ, জুয়েল ভাই
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) মোটামুটি ঠিকঠাক , শুভকামনা নিরন্তর
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন লেখক হওয়ার (হতে যাওয়ার) নানান ল্যাঠা? তবে সাদামাটা ভাবে লেখা হলেও চমতকার হয়েছে। ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
ঠিক ধরেছেন। অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
রবিউল ই রুবেন অনেক ভাল লাগল আপা।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি পড়েছেন এতেই আমি খুশী।

১৭ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪