গত কয়দিন ধরে অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরঝে একটানা, খামবার কথা নাই। কল কল করে পানি নামছে হালতা বিলের মোহনায়। বিপদ সীমার উপরে ফুলে ফেপে উঠেছে পদ্মা নদির বুক। দুই কুল ছাপিয়ে বানের পানি ঢুকে পড়বে যে কোন সময়। তবুও আশাহত হয়না রজব আলি মুন্সি। বাঁধটা এখনো মাথা উঁচু করে আগলে রেখেছে সব কিছু। হ্যা ঐ বাঁধটা ছিল বলেই রক্ষে।বাঁধের কারণে বরাবর মাঠের ফসল গুলো বেচে যায়। বাঁধের উপর একটি বটগাছ গায়েবি ভাবে কবে কখন গজিয়ে ওঠেছিল তা কেউ বলতে পারেনা। সবাই জানে এক বুড়ি নাকি ঐ গাছের ডালে গলায় দড়ি দিয়ে মরে ছিল। সেই থেকে জায়গাটির নাম হয় বুড়ির বট তলা। প্রতি বছর গ্রামের লোক জন সেখানে মানসা করে যার যার ধর্ম্ মতে ঘটা করে ভক্তি দেয়। বাধের এক পাশে পদ্মা নদী অপর পাশে বিস্তর ফসলের মাঠ। আর এই মাঠকে ঘিরে রয়েছে হাজার মানুষের জীবন জীবিকা,ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট, প্রত্যান্ত লোকালয়। কুসংস্কার হলেও এখানকার লোক জনের মুখে শোনা যায় সেই বট গাছে নাকি অশরিরী বাস করে। বিষয়টা ভৌতিক বলে অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ খুব একটা ওদিকটা মারায় না। বিলের চারপাশের মানুষ সবাই জানে সেখানে কিছু একটা আছে। গভীর রাত্রে বুড়ির বটতলা আগুন জ্বলতে কম বেশী সবাই দেখেছে। যে বছর বুড়ির বট তলায় ভক্তির খেয়ানত বা কমতি হয় সে বছর নাকি বাধ ভেঙ্গে যায় আর বনের পানিতে ফসল সহ গোটা গ্রম ভেসে যায়। বিলের দক্ষিন কানি বরাবর উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে রজব আণি মুন্সি। বুক পানিতে এখনো ধান গুলো জেগে আছে। তবে আকাশে মেঘের গতিক দেখে তার ভয় হয়। বলাতো যায়না কখন নাজানি কি হয়। বিগত দিনের অভিজ্ঞতার কথা মনে করে দুঃশ্চিন্তায় বুকের ভেতরটা টন টন করে ওঠে। গত বছরের কথা মনে আছে তার। এক মুষ্টি ধানও কেউ ঘরে তুলতে পারেনি। আবার এ বছরও যদি ফসল তলিয়ে যায় তবে আর বাঁচার কায়দা থাকবেনা।গরিব কৃষকের ভরষার জায়গাই তো মাঠের ফসল। সেই ফসল যদি পানিতে ডুবে যায় তবে সে কষ্টের কথা ভুক্ত ভোগি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবেনা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বুক থেকে একটি দীর্ঘ্ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে, সাথে সাথে দু’চোখের কোনা ভিজে যায় রজব আলি মুন্সির। এমতাবস্থায় মেয়ের ডাকে সম্ভিত ফিরে পায় সে। চোখ মুছতে মুছতে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে ইশারায় জানতে চায়। মেয়ে বলে গ্রামের মানুষেরা সবাই ডালি কোদাল দিয়ে বাঁধের দিকে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে রজব আলি মুন্সির, পাগোলের মত সেও বাঁধের দিয়ে দৌড়ায়। দেখে প্রমত্ত পদ্মা ফুলে ফেপে উঠেছে বিকট ভঙ্গিমায়। প্রবল স্রোত আর পানির তোরে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরেছে। গ্রামের লোকেরা মরিয়া হয়ে সেই বাঁধ বাঁধার চেষ্টা করছে। রজব আলি পাগোলের মত কোদাল দিয়ে মাটি কোপাতে থাকে। যে কোরেই হোক ফসল বাঁচাতে হবে। গ্রামের সবাই প্রাণ পণ পরিশ্রম করতে থাকে। কিন্তু না দিন ভর গোটা গ্রামের লোকজন মিলে চেষ্টা করেও পানি আটকাতে পারেনা। হঠাৎ বুড়ির বটতলার ধার ঘেষে প্রবল বেগে বাঁধ ভেঙ্গে হুড়মুড় করে পানি ঢুকে পড়ে। কয়েক মুহুর্তে চোখের সামনে সব পানির তলায় ছয়লাব হয়ে যায়। রজব আলি এবার উর্দ্ধোশ্বাসে দৌড়াতে থাকে বসত বাড়ির দিকে। মাঠকে মাঠ গ্রামকে গ্রাম পানিতে ডুবে গেলেও ভয়ে তার অন্তরাত্তা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। কেননা গবাদি পশু গুলোকে নিরাপদ স্থানে না নিয়ে গেলে সে গুলোকেউ আর বাঁচানো যাবেনা। মানুষ যেকোন স্থানে গিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু গরু ছাগোল তা পারেনা। নিরাপদ স্থানের অভাবে সেবার বণ্যায় তার দুই দুইটা বলদ গরুকে ভাসিয়ে দিতে হয়েছিল বানের পানিতে। খাদ্য নেই ওষুধ নেই উপরোন্ত থাকার জায়গা। মানুষেরই যখন প্রাণান্ত অবস্থা তখন গরু ছাগোলের কথাতো বলাই বাহুল্য। ঘর বাড়ি ছেড়ে বেড়ি বাঁধের উপর রজব আলি আশ্রয় নেয়। বাড়ির ভেতর এক কোমড় পানি। চাল নেই চুলো নেই, কাজ নেই,খাবার নেই, এমনি ভাবে গ্রামের আরও শত শত বাণ ভাসী মানুষের সাথে বাঁচার তাগিদে নাম মাত্র বেঁচে থাকার পথ খুজে পায় সে। দিন যায় ক্ষণ যায় আশার দুয়ারে বসে অভূক্ত বাণভাসী মানুষেরা শুধু ভাবে পানি নামবে কবে? কিন্তু প্রকৃতি বড়ই নিস্ঠুর সেও চায় বদলা নিতে। মানুষ নদী খাল ভরাট করে যখন কেবল নিজেদের সুবিধা দেখে তখন প্রকৃতির আর করার কিছু থাকেনা। সেও দু কূল ছাপিয়ে মাঠ ঘাট ঘর বাড়ি প্রান্তর ডুবিয়ে তার আপন গতিতে চলতে থাকে।আসলে প্রকৃতির এই খেয়ালিপনাও এক ধরনের ভৌতিক বলে মনে হয়। সব কিছু স্বাভাবিক দেখা গেলেও প্রকৃতি সেকেন্ডের মধ্যে তার সরুপ পাল্টে দিতে পারে। গরু গুলোকে কি খাওয়াবে একথা ভেবে সারা রাত ঘুমাতে পারেনা রজব। রিলিফের চাল দিয়ে নিজেদেরি চলেনা, তার পরও আধ পেটা খেয়ে বাকী ভাত টুকু রজব আলি পরিবারের চোখ ফাঁকী দিয়ে গরু দুটোকে খাওয়ায়। গরু গুলোও মনিবের দুঃক্ষ বুঝতে পারে, ওদেরও চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে চোখের কোনা কালো হয়ে গেছে। না খেতে পেয়ে এ ক’দিনে ওদের পাঁজরের হাড় গুলো বেড়িয়ে পরেছে। অতি বিয়ানে উঠে রজব আলি গরু দুটোর গায়ে মাথায় হাত বুলাতে খাকে। গরু গুলো মনিবের অপারগতা বুঝতে পেরে হামম্বা হামম্বা রবে মুনিবের উষ্ন ভালোবাসার জবাব দেয়। মুনিবের ভালোবাসা পেয়ে তারা খালি মুখে জাবর কাটতে থাকে। রজব আলিও ওদের কৃতজ্ঞতা বুঝতে পেরে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। বনের জলে ডুবে থাকা বিরাণ মাঠের দিকে তাকিয়ে কোচড়ে রাখা একমুষ্টি রিলিফের চাল ওদের মুখে তুলে ধরে কিছু আশার বাণী শোনাতে থাকে, নে নে জলদি জলদি খায়া ফালাদি, আপচুস কইর্যাখ আর কি হবি ক, এইতো আর কয়দিন পর পানি নেমে যাবিনি তখন আবার আমরা খ্যাতে ধান লাগাবো, তোগি বেশি বেশি করে খাটতি হবি বুইচিস? বেশি করে খাটলি পরে বেশি করে খাতি পাবি, তরা খ্যাড় খেয়ে তাজা হবি আর আমরা ধান খেয়ে বাঁচবো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
’জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর’
’জীব হত্যা মহাপাপ, অহিংসা পরম ধর্ম’
অথবা, ’জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক’
শান্তির এই অমিয় বাণী গুলো বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধকে জাগ্রত করে। অথচ বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষের মনে আঘাত হেনে এবং গৌতম বুদ্ধের ধর্মীয় মূল্যবোধকে বুড়ো আঙ্গুল প্রদর্শ্ণ করে মায়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বি সরকার আজ মানবতার চরম লঙ্ঘন করে রহিঙ্গা জাতি নিধনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার নজির সারা বিশ্বে আজোবদ্দি ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।বিশ্ব মানবতা বাদীদের কাছে আমার একটাই দাবী মায়ানমার সরকার যেন রহিঙ্গাদের জাতিগত ভাবে স্বীকৃতি এবং সন্মানের সাথে তাদের নিজ জন্ম ভূমিতে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করে তার জন্য বিশ্ব জনমত গড়ে তুলে বিশ্ব মানবতার পাশে দাড়ায়।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
’জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর’
’জীব হত্যা মহাপাপ, অহিংসা পরম ধর্ম’
অথবা, ’জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক’
শান্তির এই অমিয় বাণী গুলো বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধকে জাগ্রত করে। অথচ বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষের মনে আঘাত হেনে এবং গৌতম বুদ্ধের ধর্মীয় মূল্যবোধকে বুড়ো আঙ্গুল প্রদর্শ্ণ করে মায়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বি সরকার আজ মানবতার চরম লঙ্ঘন করে রহিঙ্গা জাতি নিধনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার নজির সারা বিশ্বে আজোবদ্দি ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।বিশ্ব মানবতা বাদীদের কাছে আমার একটাই দাবী মায়ানমার সরকার যেন রহিঙ্গাদের জাতিগত ভাবে স্বীকৃতি এবং সন্মানের সাথে তাদের নিজ জন্ম ভূমিতে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করে তার জন্য বিশ্ব জনমত গড়ে তুলে বিশ্ব মানবতার পাশে দাড়ায়।
ঘাস ফুল
আবার আমরা খ্যাতে ধান লাগাবো, তোগি বেশি বেশি করে খাটতি হবি বুইচিস? বেশি করে খাটলি পরে বেশি করে খাতি পাবি, তরা খ্যাড় খেয়ে তাজা হবি আর আমরা ধান খেয়ে বাঁচবো, আশার বাণী খুব ভাল কথা।
কাজী জাহাঙ্গীর
লেখাটায় বেশ আবেগী হয়ে পড়লাম। প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে কৃষকরা কিভাবে বেচেঁ থাকে সেটা বেশ ভাল ভাবেই তুলে ধরেছেন। অনেক শুভকামনা রইল জ্যোতি ভাই সাথে ভোট।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।