ইচ্ছা পুরুন

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

মোল্লা সালেহ
  • ৬৩
সেদিন সকালে আজম আমাকে বিপুল জোর করে ঘুম থেকে উঠায়ে বিপুল উৎসাহের সাথে বলতে লাগল , “ জানিস কি হয়েছে ? তোর সেই অনিকা মানে তোদের ক্লাশের অনিকার বিয়ে হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার কি জানিস ? বিয়ে কিন্তু পারিবারিক ভাবে হয়নি। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। হা.. হা.. হা... । ঠিকই হয়েছে। যে মানুষের মন কে খেলার পুতুল মনে করে তার অমন দূর্ঘটনা ঘটাই ¯^াভাবিক। হা.. হা.. হা.. । জানিস এলাকায় ছি ছি রব উঠেছে। সবার কাছে এটা মুখরোচক গল্প। ”
ও মনের আনন্দে অনর্গল বলতেই থাকে। যাকে সে শ্রোতা মনে করে এত কথা বলছে সেই শ্রোতা তার কথার কথার প্রতি কতটা মনোযোগী তার দিকে কোন খেয়াল নাই। বলতে পারাটাই ওর কাছে বিশাল কিছু। কেউ শুনুক বা না শুনুক। কেউ বুঝুক বা না বুঝুক।
কোন এক দিন ওকে আমার অতীত জীবনের কিছু কথা বলেছিলাম। আমার জন্মের কথা , জন্মের পর বাবা মারা যাওয়ার কথা। অন্য লোকের সাথে মার সংসার পাতার কথা। তবে ওর মনে যা সবচেয়ে বেশী দাগ কেটেছিল তা হল অনিকার কথা। অনিকার সাথে পরিচয় , ভাল লাগা। ভাল লাগা থেকে ভালবাসা। অবশেষে... ..
ওর কৌতুহল দমন করার জন্য ওর প্রশ্নের যে সব হালকা হালকা উত্তর দিয়েছিলাম তা থেকে অনুমান করে ও ধরেই নিয়েছে যে অনিকা আমাকে বেশ ঠকিয়েছে। ওর জন্য আজ আমার এ চরম অবনতি। অনিকা আমার সাথে যে আচারন করেছে তা খুবই নিন্দানীয়। সেই থেকে আজম অনিকাকে এক রকম ঘৃনার চোখে দেখে। ওর নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে চোখ বুজে নিন্দা করে আমার বন্ধুত্বের দাম দেয়। ওর সম্পর্কে খবরও রাখে। খারাপ কিছু পেলেই হল। সোজা ছুটে চলে আসে আমার কাছে। প্রথমে বিশাল একটা ভূমিকা আওড়ায়। ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে অনেক কথা বলে। তারপর আসল কথা শুর“ করে। কখনও বা উত্তেজনায় ভূমিকা টুমিকা রেখে ব্রেকিং নিউজের মত বলে , “ ঐ যে সেদিন রাকিব নামের একজনের সাথে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিল যে ও ওর প্রাইমারির বন্ধু। ওটা কিন্তু আসলে ডাহা মিথ্যা কথা। আগে ওদের মধ্যে কোন পরিচয়ই ছিলনা। কলেজে পড়ার সময় এক বান্ধবীর মাধ্যমে পরিচয়। ছেলেটি ঢাকায় পড়ে। মাঝে মাঝে এখানে আসে। অনিকা কত বড় মিথ্যাবাদী জানিস? বাড়ীতে ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে বলে , “ ও আমার ক্লাশমেট।”
এ ভাবেই আজম ওর ব্যাপারে বলতে থাকে। এতে ওর কোন ক্লন্তি নেই। অনিকা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই ওর খারাপ কিছু ঘটলে আমি শুনে শান্তি পাই Ñ এটাই ওর বিশ্বাস। ও তো আমার মনের কথা বুঝতে পারেনা। ও কি করে জানবে আমি অনিকাকে কত ভালবাসি। কখনও চাইনা ও কষ্ট পাক , দু:খে থাকুক। যাকে ভালবাসি তার খারাপ চাই কি করে ?
আমার চিরদিনের ¯^ভাব কম কথা বলা। নিশ্চুপ থাকা। একাকী থাকা। আজম আমার এ রকম ¯^ভাবের জন্য অনিকাকে দায়ী করত। আমার সব অনিষ্টের জন্য যেন অনিকা দায়ী। সিনেমা কিম্বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তেমন একটা যেতাম না। আজম খুব জোরাজুরি করত। আমার মন কিছুতেই সায় দিত না। ও নিরাশ হত না। বলত , “ আচ্ছা তুই গান বাজনা পছন্দ করিস না। বেশ ভাল কথা। কলেজ মাঠে নাইবা গেলাম। বছরের একটা দিন। চল আমরা ইছামতি দিয়ে হাটি। ” পরে ও নিজেই বলত , “ ইছামতি কি আর ইছামতি আছে ? প্রায় মরেই গেছে। লাশকাটা ঘড়ের কাছে ইছামতি তো একটা সিমেন্টের চোঙ। ” আরও কত কি বলত। তবে ঘড় থেকে বের করতে পারত না।
কিছুদিন পর এসে বলল , তুই না রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করিস। রবী ঠাকুরের জন্ম জয়ন্তী। চল শাহজাদপুরে যাই। উত্তরে আমি যা বলতাম তা থেকে ও বুঝে নিত ও আমার দিকে যে টোপ দিয়েছে তা মূল্যহীন। ও আ¶েপ করে বলত , “ তুই আগে কতটা চঞ্চল ছিলি। তোর কথার চোটে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। সেই তুই আজ কতটা শান্ত হয়ে গেছিস। ভাবতেই অবাক লাগে! অনিকা তোর জীবনে এতটা কাল হয়ে দেখা দিবে ভাবতেই পারিনি। এটাকে কি জীবন বলে ? দিনভর কজী অফিসের খাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা । বাঁকী সময় এই মেস আর ঐ মাঠ। এ তোর কেমন জীবন বল। মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস ? মনে হয় তুই পাগল হয়ে যাবি। ” তারপর ও রহস্য করে বলত , “ পাগল হলে অবস্য সমস্যা নাই। হেমায়েতপুর তো হাতের কাছেই। পাগল হলেও ভাল। তবু যদি ইকটা নতুন জীবন ফিরে পাস। ”
ও অবস্য ঠিকই বলত। আমার জীবনটা একঘেয়ামিতে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে র“টিন মাফিক কিছূ কাজ। সারাদিন অফিসের খাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। সন্ধ্যায় ঘড়ে ফেরা। বিকেলটা কোনমত কাটিয়ে রাত্রিজুরে আরেকটা দিনের জন্য অপে¶া। কোন ভিন্নতা নেই। কে যেন জীবন ঘড়ি চালিয়ে দিয়েছে আর একই নিরিখে ঘড়িটা চলছে। টিপটিপ। টিপ টিপ। সেকেন্ড , ঘন্টা , দিন , মাস।
আমি কি কখনো এমন জীবনের কথা ভেবেছিলাম ? না কখনই না। যদিও জানতাম আমার জীবন একটা ঠুনকো কাঁচ যা যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। বাবার চেহারা মনে পড়ে না। অতটুকু বয়সের কৌতুহলী চোখ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে জানে। কোন কিছুকে স্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে পারেনা। মায়ের চেহারাটা কিছু মনে পড়ে। সময়ের সাথে সেটাও বিস্মৃতি হতে চলেছে। ছোটবেলা থেকে মেধবী ছিলাম। ওটাই সবার নজর কারত। এ গুণের জন্যই হয়ত এতিমখানার বদলে কাজী সাহেবের বাড়ীতে ঠাই পেয়েছিলাম। কাজী সাহেব খুব স্নেহ করতেন। লেখাপড়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিতেন। সব চাহিদা পূরণ করতেন। যখন বার্ষিক পরী¶ার রেজাল্ট দিত এবং তিনি শুনতেন যে আমি সবাইকে ডিঙ্গিয়ে প্রথম হয়েছি তখন তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠত। সমস্ত শ্রম ¯^ার্থকতা পেত। তার সন্তানের অভাব দুর হয়ে যেত।
অনিকার সাথে পরিচয় দশম শ্রেণী থেকে। টি সি নিয়ে এসে দশম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল। স্কুলের শি¶রা আমাকে নিয়ে যে ভবিষ্যতবানী করেছিল তা হয়ত অ¶রে অ¶রে পূরণ হত যদি অনিকার সাথে পরিচয় না হত। আমাকে নাকি ওর ভাল লাগত। কেন তা জানিনা। হয়ত মেধাবী ছিলাম অথবা কুশ্রী ভেবে পাশ কাটিয়ে যাবার মত ছিলাম না। কত সুন্দর ই না কেটেছে দিনগুলো। আমার জীবনে যদি সোনালী অধ্যায় থাকে তবে নি:সন্দেহে ঐ দিনগুলো।
যে দিন জানতে পারলাম অনিকা আমার সাধ্যের বাইরে সে দিন কিছু করার ছিলনা। নির্বাক দু’ চোখের অশ্র“ ঝড়াতে হয়েছিলো। সাধ ছিল সাধ্যের বাইরে। তখন ওর কাছে একটাই দাবী রেখেছিলাম , ওর বধুবেশ যেন দেখতে পারি। অনিকাও আমাকে আশ্বস্ত করেছিল। তরপর কেটে গেল কতদিন।
পরী¶ায় এতটাই খারাপ করলাম যে লেখাপড়ার পাঠ চুকে গেল। কাজী সাহেব বড় ভালবাসতেন। তিনি আমাকে ফেলতে পারেন নি। কাজীর কাজে লাগিয়ে দিলেন।
সেদিন কাজী সাহেব প্রায় মাঝরাতে তলব করলেন। একটা বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হবে। পালানো বিয়ে। বিদ্যুত ছিলনা। তবুও মোমবাতির আলোতে কনেকে চিনতে অসুবিধা হলনা। মূহুর্তে ভিতরটা কেঁপে উঠল। চোখে চোখ পড়াতে কনেও যেন একটু হকচকিয়ে উঠল। কনে কি অপরূপ সাজে সজ্জিত! বধূবেশ। একদম বাংলার বধূ। দু চোখ ভরে দেখতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু এখানে আমার অন্যরকম ভূমিকা। সংযত হতে হল। নাম ধাম লেখা শুর“ করলাম। এলাকার লোকেরা কেমনে যেন বিষয়টা জানতে পেরেছিল। বাইরে শোরগোল চলছিল। সবাই বিষয়টা মিটমাট করার জন্য বাইরে গেল। চারপাশে সীমাহীন নিরবতায়। মোমবাতি উচিয়ে ধরলাম। দেখলাম , কনের মুখটি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আমার দিকে তাকাবার সাহস পাচ্ছিলনা। চোখ দু ’টো বোজা। অনে¶ন দু’ জনে নিরব। আমিই নিরবতা ভেঙ্গে ওকে নাম ধরে ডাকলাম Ñ অনিকা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী চমৎকার ভাবনায় সুন্দর গল্প। শেষ অংশটা সত্যিই নতুন এবং মুগ্ধ করলো।
মিলন বনিক খুব সুন্দর...শেষের দিকে মোড়টা গল্পকারের দক্ষতা প্রমান করেছে....ভালো লাগলো....
তাপসকিরণ রায় bhaalo laaglo galpoti.ashuddha kichhu shabda chokhe parlo.baaki bhaab bhaasha dhaaraabaho sundar.
এফ, আই , জুয়েল # চমৎকার ভাবনার বাহার । অনেক সুন্দর গল্প ।।
Tumpa Broken Angel সুন্দর লিখেছেন।

২৭ সেপ্টেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪