শিশু রাসেলের যুদ্ধ

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

খান শরীফুল ইসলাম
  • ২১
  • 0
  • ৩৫
চারিদিকে গুলির শব্দ। বাংলার আকাশে বাতাসে এ কোন অশুভ সংকেত। কাক শেয়ালের ছোটা ছুটি, চিল শকুন আকাশে উড়ছে এলোমেলোভাবে। গায়ের মানুষজন ভয়ে আতংকে ছুটছে এদিক সেদিক। কেউ কেউ গরু ছাগল ফেলে টাং, বিছানা, ব্যাগ হাতে নিয়ে এই গ্রাম থেকে ঐ গ্রামে পাড়ি দিচ্ছে। রাসেলের মা একা মানুষ, এই ছোট্ট ছেলে রাসেল কে নিয়ে কি করবে ভাবতে পারছে না। রাসেল কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ঘরের এক কোনে চুপটি মের বসে থাকে। রাসেল চন্দনগাতী গায়ের গফুরের ছেলে। রাসেলের জন্ম হওয়ার পর রাসেলের বাবা বাণিজ্যে গেছে আর ফিরে আসে নাই। রাসেলের বয়স এখন সাত বছর। রাসেলের মা ছেলেকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দুঃখে কষ্টে দিনপাত করছে। এদিকে পাকিস্তানের মিলেটারী দেশ দখল কারার জন্য এসেছে । হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলছে, যুবতি মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। গণ্ডগোল শুরু হয়েছে, গণ্ডগোল শুরু হয়েছে আর উপায় নাই গায়ের মানুষের মুখে মুখে বোল উঠেছে। কান্না কান্না কণ্ঠে রাসেল মাকে না না ধরণের প্রশ্ন করে। মা ওরা কি আমাদের এই দেশ নিয়ে যাবে, কিন্তু দেশ ওরা নিবে কিভাবে। মা মেলেটারীরা কি আমাদের বাড়ী দখল করে নেবে? আমাদের কে কি মেরে ফেলবে মা। মা বলে বাবা তুমি বুঝবে না, কথা বলো না।
একদিন চন্দনগাতী গায়ে মিলেটারী ঢুকেছে সারা গায়ে খবর ছড়ে গেছে মিলেটারী আসছে। খবর পেয়ে গায়ের মানুষ যে যেদিকে পারে পলাইয়া যাচ্ছে। রাসেলের মা ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবে আর ঐ মানসেডা (রাসেলের বাবা) বাড়ীতে এসে যদি না পেয়ে আবার চলে যায়। সে আশা বুকে নিয়ে এই বাড়ীর মায়া ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না রাসেলের মা, তাই রাসেল কে নিয়ে বাড়ীর পিছনে পাজবাড়ী গাছের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পরে। রাসেলদের বাড়ীর ভিতর মেলেটারী ঢুকে পরে। বাড়ীর ভিতরে এসে বাড়ীতে কাউকে না দেখে মেলেটারীরা সব ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাসেলদের ঘরে আগুন দেখে রাসেল চিৎকার দিয়ে ওঠে, মা ঘর পুড়ে গেলো, আগুন। মা রাসেলের মুখ চেপে ধরে ফিস ফিস করে বলে বাবা কথা বলো না ওরা টের পেলে আমাদের মেরে ফেলবে। মেলেটারীদের সাথে থাকা পশ্চিম পাড়ার কলিম মুন্সি রাসেলের চিৎকারের শব্দ শুনে ফেলে, চিৎকার শুনে মেলেটারীদের নিয়ে গাছের ঝোপের দিকে যায়। রাসেলের মা রাসেল কে বলে বাবা ওই হারামির দল এই দিকেই আসছে তুমি পালিয়ে যাও, আমাকে ওরা ধরে নিয়ে যাবে। তুমি কান্নাকাটি করলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে, যাও বাবা যাও বলে রাসেলের গালে চুমু দিয়ে রাসেল কে দুরে সরিয়ে দেয়। রাসেল নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের নিকট থেকে দুরে জঙ্গলের মধ্যে চলে আসে। শিশু রাসেলের দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে। কষ্টে দুঃখে রাসেলের বুক ভেঙ্গে যায়। রাসেলের চোখ দিয়ে ঝরনার মত পানি ঝড়তে থাকে। মেলেটারীরা রাসেলের মায়ের কাপড় ধরে টানা হেঁচড়া করতে করতে নিয়ে যায়। মেলেটারীরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অনেকেই বাড়ীতে ফিরে আসে কিন্তু রাসেলের মা আর ফিরে আসে নাই। বাবা মা হারা এতিম রাসেল পাগলের মত ছুটে বেড়ায় এদিক সেদিক। রাসেল গায়ের মানুষের মুখে শুনেছে পাসের গায়ে স্কুলঘরে মেলেটারীরা ক্যাম্প করেছে। আর সেখানেই ওর মাকে ধরে নিয়ে গেছে।
কয়েকদিন পর মুক্তিযোদ্ধারা চন্দনগাতী গ্রামে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা রাসেলকে রাস্তায় পাগলের মত চলাফেরা করতে দেখে রাসেলকে আস্থানায় নিয়ে যায়। রাসেলকে বলে তুমি কি আমাদের মেলেটারীদের ক্যাম্পের খবর এনে দিতে পারবে। রাসেল বলে হ্যাঁ পারবো, ওরা আমার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি মাকে ছাড়িয়ে আনবো। মুক্তিযোদ্ধারা বলে বাবা তুমি একা ওদের সাথে পারবে না। কিভাবে কি খবর আনতে হবে সব বলে দেয়, আর বলে দেয় তুমি ওখানে গিয়ে কোন শব্দ করবে না কিছু বলবেও না, তুমি চুপ চুপ করে গিয়ে গোপনে ওদের খবর এনে দেবে তারপর আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করে তোমার মাকে ছাড়িয়ে আনবো। রাসেল বলে আমিও যুদ্ধ করবো। হ্যাঁ বাবা তুমিও যুদ্ধ করবে। রাসেলদের গ্রাম থেকে পাসের গায়ের স্কুলঘর অনেক দুরে। রাসেল হাটতে হাটতে ঐ গায়ের দিকে চলে যায়। রাসেলদের গ্রাম ছেড়ে পাসের গ্রামে ঢুকতেই খবর পায় মেলেটারী এই পথেই আসছে। খবর পেয়ে রাসেল এক বাড়ীর পিছনে গাছপালা জঙ্গলের মধ্যে লুকাইয়া পরে। জঙ্গলের মধ্যে চুপ করে বসে আছে। তখন কি এক লতা গাছ রাসেলের গায়ে পরে রাসেলের হাতের কাছে পিঠে খুব চুলকাতে থাকে। রাসেলের পিঠ যেনো জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। রাসেল পিঠ চুলকাতে চুলকাতে পাগল হয়ে কেঁদে ফেলে। বেদনায় রাসেলের চোখ দিয়ে টপ-টপ করে পানি পরতে থাকে। রাসেল ছট-ফট, ছট-ফট করতে করতে দেখে একটি লতা গাছের সাথে বিলাই আচরা, দেখতে সিমের মতো গায়ে চুলের মতো কাটায় ভরা। রাসেল বিলাই আচরা দেখে চুলকাতে চুলকাতে মনের কষ্ট প্রায় ভুলে যায়। মনে মনে কি যেনো ভেবে পাসে থেকে কচুর বড় পাতা তুলে কয়েকটা বিলাই আচরা কচু পাতায় ভরে পরনে প্যানের মধ্যে গুজে রাখে। মেলেটারীরা চলে যাওয়ার পর রাসেল আবার মেলেটারী ক্যাম্পের দিকে যেতে থাকে। রাসেল মেলেটারী ক্যাম্পের কাছে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কথামত ক্যাম্প ঘুরে দেখে খবর নেয়। রাসেল একটু দুরে গাছ পালার আড়াল থেকে ক্যাম্পের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ওর মাকে খুঁজতে থাকে। এখানেই আমার মা আছে। ওরা আমার মাকে এখানেই ধরে এনেছে। তখন মেলেটারী ক্যাম্পে মাত্র তিনজন মেলেটারী ছিল। রাসেল গাছের আড়াল থেকে দেখতে দেখতে মনের অজান্তেই মা বলে জোড়ে চিৎকার দেয়। রাসেলের ডাকের শব্দ শুনে মেলেটারী রাসেলকে দেখে ফেলে। রাসেলকে ডেকে বলে এ লারকা এধারছে আও, তুমছে স্পাই হে। রাসেল ওদের কথা কিছুই বোঝে না। ওদের মধ্যে একজন দৌড় দিয়া রাসেলকে ধরে ফেলে 'তুম ইধারছে কিয়া করতা হে বোলাও' বলে রাসেলকে ক্যাম্পের দিকে আনতে থাকে। রাসেল ভয়ে মনে মনে কাঁদতে থাকে আমাকে মনে হয় মায়ের মত ক্যাম্পের ভিতর বেধে রাখবে, না হয় মেরে ফেলবে। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে পরনের প্যান থেকে রাসেল বিলাই আচরা বের করে মেলেটারীর হাতে, চোখে মুখে ঢেল দেয়। মেলেটারী বন্দুক ফেলে দিয়ে পাগলের মত হাত মুখ চুলকাতে থাকে। সেই সুযোগেই রাসেল দৌড়ে পালায়ে আসে। রাসেল মুক্তিযোদ্ধাদের ঐ ক্যাম্পের সব খবর এনে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে রাতে মেলেটারীদের ক্যাম্পে এ্যাটাক করতে যায়। সে সময় সব মেলেটারী ক্যাম্পে ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা মেলেটারীদের ক্যাম্প ঘেরাও করে আকস্মিকভাবে গুলি ছুড়তে থাকে। অনেক সময় ধরে মেলেটারীদের সাথে গোলা-গুলি হয়। রাসেল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকে অস্ত্র গুলি আগায়ে দেয়। হঠাৎ রাসেলের মাথার পাস দিয়ে একটি গুলি সোন করে গিয়ে পাসের মুক্তিযোদ্ধার বুকে লাগে। রাসেল সাইডে পরে যায়। গুলিবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা সাথে সাথে মারা যায়। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই মুক্তিযোদ্ধারা সব মেলেটারীদের মেরে ক্যাম্প দখল করে নিয়ে এলাকা শত্রু মুক্ত করে। মেলেটারীদের ক্যাম্প দখলের পর রাসেল ক্যাম্পের চারিদিকে খোজা খুঁজে করে দেখে রাসেলের মা কোথাও নাই! আশাহত নির্বাক রাসেলকে এক মুক্তিযোদ্ধা বুকে জড়ায়ে ধরে বলে বাবা কেঁদো না তোমার মা নাই তাতে কি হয়েছে বাংলা মা তো আছে। আর আমরা ঠিকই বাংলা মাকে মুক্ত করে ছাড়বো। ক্ষুদে যোদ্ধা রাসেল আর কোন দিন ওর মাকে খুঁজে পাবে না। মা হারা রাসেলের মত অনেক রাসেলের নাম লেখা হয়নি আজো দেশ প্রেমিকের খাতায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ ভালো হয়েছে।
প্রজাপতি মন ভালো লাগলো রাসেলের গল্প, তবে লিখে আবেগ কম ছিল বলে মনে হলো. আর একটু যত্ন নিলে লিখাটা আরও সুন্দর হতে পারত.
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি মুক্তি যুদ্ধে ব্যবহৃত গেরিলা কৌশলের ছোট্ট রাসেলের মাধ্যমে সুন্র ফুটিয়েছেন।আপনাকে ধন্যবাদ............
তানভীর আহমেদ গল্পটায় দেশপ্রেম এবং আবেগ আছে। তবে দক্ষতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। আশা করি আস্তে আস্তে লেখক দক্ষ হয়ে উঠবেন।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা বাঙ্গালির দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মুলত মুক্তিযুদ্ধে । ভাল লাগলো ।
মামুন ম. আজিজ সুন্দর কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী সুন্দরই হয় সর্বদা। ..একটু তাড়াহুড়া চোখে পড়ল।
ওয়াছিম মন খারাপ করা একটা গল্প, ভাল লাগলো, রাছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে..............
M.A.HALIM খুব ভালো লেগেছে গল্প । বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রইলো।
রোদের ছায়া রাসেলের কথা পড়তে ভালো গিয়ে মন খারাপ হয়ে গেল/ লেখায় আরো সৃজনশীল শব্দের ব্যবহার লেখার মান বাড়াবে/
মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান ভাই, মন ছুঁয়ে গেল আপনার ছোট গল্পটি..........অসাধারণ......

২১ সেপ্টেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী