রাতের কালো আঁধার ঠেলে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে সূর্য শিশু । অপূর্ব মহিমায় সোনালী আলোর চাঁদর বিছিয়ে দেয় পৃথিবীর ললাট জুড়ে ।
ঘুমন্ত ধরণীর বুকে আঁচর কাটে সেই জীবন্ত আভা। তাঁর মধুর পরশে প্রাণ ফিরে পায় স্বচ্ছ নীলিমা। তন্দ্রা কাঁতর পাখীর কচি ঠোঁটে গড়ায় কৃতজ্ঞতা। কালোর গাড় আবরণ ঠেলে আলোর হাসি ফুটেছে তাই !
কিন্তু আমি ? আমি এক অন্ধ মানুষ !..........। সূর্যের সেই পরম পরশ এসে পৌঁছে না আমার হৃদয় ঘরে। দীপ্তি বিকিরণে উদ্ভাসিত হয়না মনের বদ্ধ কুঠুরি .........। আমার চোখের ক্যানভাসে বন্দী চার দেয়ালের বিষণ্ণ সাদা রঙ। লাল ইটের পোড়া শেকল হাতের কব্জিতে বাঁধা ... নেই কথাও রঙধনুর স্বাধীন স্বপ্নিল ডানা !
খাঁচায় বন্দী এক পাখীর মতো আমি ছটফট করি! অসহ্য বেদনার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি! আমার ভেতর আর এক আমি... প্রবল ভাবে কেঁপে ওঠে! গড়িয়ে পড়া অশ্রু বিন্দু করে চিৎকার! মুক্তি চাই! মুক্তি চাই ! ভেঙ্গে দিতে চাই সকল বাঁধার দেয়াল ! আকাশে বাতাসে হয়ে যেতে চাই বিলীন !
দেখেতে চাই আড়মোড় ভাঙা সেই নিষ্পাপ সূর্যের মুখ! কুয়াসায় ঘেরা সবুজ মাঠ আর অস্পষ্ট ধান খেত ... খেজুর গাছের কাঁচা মুখ ভরে... শিশিরের চুমুতে নিটোল পায়ে এঁকে আলপনা ! বর্ষার এক ঘুম ভাঙা সকালে ঝুম বৃষ্টিতে চাই ভিজতে। কাঁদায় ভরা নদীর তীরে ..লুকোচুরি খেলায় মাতি... বৃষ্টির ফোঁটায় উত্তাল নির্ঝরিণীর চিবুকে চুমু আঁকি!
শর্ষে খেতের হলুদ সমুদ্রে দেব ডুব। দীঘির কূলে কলমি ফুলের মুখটা ছুঁয়ে দিয়ে.. দুহাত মেলে আকাশটা কে করবো আলিঙ্গন ... মুক্ত মেঘের মতো স্বাধীন হয়ে হারিয়ে যাবো দিগন্তের শেষ সীমানায়............।
দিনের কর্ম ব্যস্ত রুটিন শেষে আঁধার নামে আঁখি কোনে। ভয়ংকর আতংকে কেঁপে উঠি !হটাত! বাস্তবতার এই প্রাণহীন রোবট শরীর জীবন্ত হয়ে উঠতে চায় । ফিরে পেতে চায় তাঁর আদিম প্রাণ । ফিরে যেতে চায় পৃথিবীর আপন গানে।
সবুজ সমুদ্রের সেই ঢেউ খেলানো উপত্যকা... শুভ্র বরফের আদরে জড়ানো এভারেস্টের চুড়া ! তার মায়াবী হাসি... হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে । বলে – এস জয় কর আমায় ! রোমাঞ্চ করে মৃত্যু ভয়ের ছলনা আর আবিষ্কারের গভীর সুখানুভূতি ! এস আমিই যে তোমার আদি মাতা !........
চলে যেতে চাই আমাজনের গহিনারন্যে ... সভ্যতার খোলস ছেড়ে হয়ে উঠবো প্রকৃতির সন্তান... সবুজ অরুণের মায়া বিছিয়ে চোখে ... বুনো ফুলের বেগুনী বাসর সাজাবে প্রাণ!
চলে যাবো প্রাণহীন রুক্ষ মরুভূমির প্রান্তরে। রবির কিরণ ফুরিয়ে নামবে যখন আঁধার ... চাঁদের আলোয় ভাসবে মরুর বুক...। তখন আমি মৃদু অনিল হতে চাই । ধূলর মতো উড়ে উড়ে পাড়ি দিতে চাই বালুর পাহাড়। দেখেতে চাই রূপালী চাঁদের জ্যোৎস্না কেমনে ছড়িয়ে পড়ে সেই শুনশান নীরবতায় ।
প্রতিদিনের ক্লান্ত ধুলোমাখা বিধ্বস্ত শরীর চিরচেনা যান্ত্রিক পানির ফোয়ারায় ভিজতে গিয়ে চমকে ওঠে ! চোখ বন্ধ করেই শুনতে পাই পাহাড়ের বুকচেরা এক অপ্সরীর মায়াবী ডাক... অপরূপ সুন্দর ডাগর নয়নের পাপড়ির মতো সবুজ লতা আর ফুলের মালা জড়ানো এক ঝর্ণার আকুল আহবানে মন ছটফট করে। তৃষ্ণার্ত আত্মা অঞ্জলি ভরে পান করতে চায় সেই মধুর জল। শিরীষ কাগজের মতো খসখসে কণ্ঠ তাঁর স্পর্শে গেয়ে উঠে গান । নির্জীব প্রাণ ফিরে পায় মধুর মুগ্ধতা ............।
প্রতি রাতে ঘুমায় এই মন স্বপ্নের জগতের এক ক্লান্ত যাত্রী হয়ে। যে সারাক্ষণ শিউরে ওঠে দুঃস্বপ্নের ছটায় । যে সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকে জেগে উঠার … এক নতুন জগতের স্বপ্নিল বাসিন্দা হবার ।
জেগে উঠতে চাই এই বাস্তব দুঃস্বপ্ন হতে … নতুন এক মানুষ হয়ে । চোখের সামনের এই কালো পর্দা ঠেলে তাকাতে চাই সুদূর নীল আকাশ পানে । কান পেতে শুনতে চাই অচেনা পাখীর মিষ্টি সুর আর জলপ্রপাতের হাসি । বুক ভরে টেনে নিয়ে সবুজ পাতা আর ফুলেদের গোপন ঘ্রাণ ।
নতুন এক স্বপ্ন দেখবো ...। অচেনা এক সমুদ্র সৈকতে শুয়ে আছি ... সাগরের নরম স্পর্শে ভিজবে চোখের পাতা। আর তার গর্জনে শুনবো সেই আহবান – এসো আমার বুকে ..দেখো আমার হৃদয় ... কত গভীর আমি...কত অসীম আমি ... আর অফুরন্ত আমার ভালবাসা ... এসো আমার দিকে ...আমিই যে তোমার আদি মাতা ...।
আমার ভেতর আর এক আমি জেগে উঠবে আবার। ছিন্ন করে দুঃস্বপ্নের শত মায়াজাল । নতুন করে জন্ম নেবো আবার। নতুন করে দৌড় দেবো আর একবার । এগিয়ে যাবো উত্তাল ঢেউয়ের মধুর মিলনে।
ঝাঁপ দিয়ে সেই কোমল আলিঙ্গনে বলব .. মা’ আমি এসে গেছি ! আমি তোমার সন্তান! তোমায় ছেড়ে থাকি কেমনে! ‘এসে গেছে তোমার সন্তান ! আমায় বুকে টেনে নাও ...আমায় গ্রহণ করো ... আমি যে তোমার তরেই হতে চাই বিলীন !!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মনির খলজি
অনেক বড় কবিতা ...তবুও এক ঘিয়েমি লাগেনি ....কবিতার বুনত ....ভাষা শৈলী দেশ সুন্দর ....স্বাধীনতা আর তার চেতনাবোধ দুটি সুন্দর ভাবে এসেছে......ভালো লাগার কবিতা.. শুভো
মনির ভাই অনেক অনেক দিন পরে আপনাকে কবিতায় পেয়ে অনেক অনেক খুসি হলাম ।।ভাইয়া আপনি কেমন আছেন...শুনেছিলাম আপনি অসুস্থ হয়েছিলেন ।।এখন সুস্থ আছেন আশাকরি আল্লাহ্র রহমতে
মোঃ কবির হোসেন
প্রিয় তানি হক আপু অনেক দিন থেকে আপনার লেখা পড়া হয় না. সত্যি বলছি এখানে যতগুলো কবিতা পড়লাম তার মধ্যে সেরা. অসাধারণ এবং মুগ্ধ হলাম. ধন্যবাদ-আবার দেখা হবে.
আসসালামু আলাইকুম ..ভাইয়া আপনাকে আমার কবিতায় পেয়ে অনেক অনেক আনন্দিত হলাম ..কষ্টকরে দীর্ঘ্য কবিতায় মতামত প্রদান করার জন্য ..আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই ..এবং গল্পকবিতায় আপনাকে পাঠক ও লেখক হিসেবে সরব উপস্থিতি কামনা করি ..ধন্যবাদ
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।