Housewife

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

মিষ্টি
  • ৪১
  • ৬০
আমার প্রতেকটা সকাল শুরু হয় আম্মার চিৎকার শুনে । আমি ঘুমাতে থাকি আর আম্মা এসে ডাকাডাকি শুরু করে। তারপর ঘুম থেকে উঠেই কলেজ এর জন্য দৌড় ।আমার আম্মা একজন housewife । সোজা বাংলায় গৃহিনী । তার একমাত্র কাজ আমার পিছে লেগে থাকা । সকালে আমাকে ঘুম থেকে উঠানো, কলেজে পাঠানো, কার বাসায় গেলাম তার খোঁজ রাখা । সোজা কথা আমার প্রতেকটা কাজ তদারকি করা।আম্মার কারনে যখন আমার জীবনটা আমার কাছে অসহ্য লাগতে শুরু করেছে তখনি আমার রিতির সাথে পরিচয় । রিতি আমার সাথেই পড়ে । আমার নতুন বন্ধু । ওর লাইফস্টাইল টা আমার ভীষণ ভাল লাগে ।ওর আব্বা আম্মা দু’জনেই চাকুরী করে । চাকুরিসুত্রে তারা প্রায় সময় বাইরে বাইরে থাকে। রিতিকে তাই বেশির ভাগ সময় একা বাসায় থাকতে হয় । ওর উপর সর্বক্ষণ নজর রাখার কেউ নেই । সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য কেউ ওকে ডাকাডাকি করে না । ঘুম থেকে উঠতে না পারলে ও কলেজেই আসে না । এ নিয়ে কেউ ওকে বকাবকি পর্যন্ত করে না ।এই যে আজকে কলেজ থেকে রিতির বাসায় চলে এসেছি, এই জন্যও আম্মার বকা খেতে হবে । রিতির ঘর টা চমৎকার ভাবে গোছানো । আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম , “তোর ঘর কে গুছিয়ে দেয় ?” ও এক্ত হেসে জবাব দিল , “আমি নিজেই গুছাই” । আমি বললাম , “আমার ঘরতো সবসময় আমার আম্মা গুছিয়ে রাখে”। রিতি হাসতে হাসতে বলল , “আমার আম্মা সপ্তাহে ২ দিন বা ১ দিন বাসায় থাকে। সে কখন আমার ঘর গুছিয়ে দিবে ?” সে দিন রিতির জীবন টা নিয়ে আমার রিতিমতো হিংসা হতে থাকে । ও চাইলেই সারা রাত মুভি দেখতে পারে , যখন ইচ্চা চা খেতে পারি । সারা রাত জেগে থাকলেও ওকে কেউ ঝাড়ি মারে না । ওর জীবন টা পুরোপুরি স্বাধীন । আমি রিতিকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম , “ তোর আম্মা তোর খোঁজ নেয় না ?” রিতির মুখটা কেমন যেন বিষন্ন হয়ে উঠলো । ও বলল , “ নেয় তো , আম্মা প্রতিদিন ফোন করে”। অনেকক্ষণ হল এসেছি । আর দেরি করে আম্মা আস্ত রাখবে না । তাই দ্রুত বাসায় চলে আসলাম । বাসায় এসে দেখি আম্মা খাবার নিয়ে বসে আসে । তাড়াতাড়ি খেতে বসে গেলাম। আমি যতক্ষন খাই ততোক্ষন আম্মা আমার পাশে বসে থাকে । অসহ্য , আমি কি ছোট মানুষ নাকি ? আমার এত বিরক্ত লাগলো যে আমি আম্মকে বালেই ফেললাম , “ আম্মা তুমি কেন আমার খাওয়ার সময় আমার পাশে বসে থাকো ?” আম্মা একটু হেসে বলল , ,”তোর খাওয়া দেখতে ভাল লাগে তাই”। আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেল । বলেই ফেললাম , “ তুমি বসে থাক কারন তোমার আর কোন কাজ নেই । তুমি একজন housewife। তুমি কেন চাকরি করলে না ?” আম্মা একদম স্তব্ধ হয়ে গেল।আমার দিকে তাকিয়ে বলল , “চাকরি তো আমি করতাম , সরকারি চাকরি । ছেড়ে দিয়েছি তোর জন্য , তোকে ভালভাবে বড় করার জন্য । তোকে বাসায় রেখে অফিসে যেতে একদম ইচ্ছা করতো না । সবাই কত না করলো । আমি বাচ্চা আর সংসারের দিকে তাকিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম”। আম্মা কাঁদছিলো । আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না । পরেরদিন কলেজে যেয়ে দেখি রিতি আসেনি । কলেজ ছুটির পর ওর বাসায় গেলাম । ভেবেছিলাম ও ঘুম থেকে উঠতে পারে নি । কিন্তু যেয়ে দেখলাম ওর জ্বর । ওদের বাসার কাজের মেয়েটা ওষুধ আর খাবার দিয়ে গেছে ও খাওয়ার চেষ্টা করছে । আমাকে দেখে যেন ও সান্তনা খুঁজে পেল । আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম “ তোর আব্বা আম্মা কেউ আসবে না?” ও বলল, “ এই সপ্তাহে আসতে পারবে না”। আমি বললাম “ তোকে এখন দেখবে কে?” ও বলল , “ আমার আম্মাকে তো কখনই আমি কাছে পাই না । অসুখ হলে ওষুধ খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকি” । আমি আর কি বলবো ? আমার জ্বর হলে তো পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখি। আম্মা আমাকে খাওয়ায় দেয় । যতক্ষণ আমি জেগে থাকি আম্মা আমার কাছে বসে থাকে । রিতির অবস্থা দেখে সেদিন আমার কষ্টই লাগলো । রিতি আমাকে বলল , “ তুই অনেক ভাগ্যবান । কেউ একজন সবসময় তোর পাশে থাকে”। সেদিন বাসায় ফিরে দেখি আম্মা আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে । আমি আম্মার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না । আম্মা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আমার কাঁধে হাত রাখলেন । আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম “ আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম আম্মা । আমি তোমার আত্মত্যাগটা বুঝতেই পারি নি” ।আর কিছু বলতে হলো না । বরাবরের মতই আম্মা আমার না বলা কথা গুলো বুঝে নিলো । আমাকে এখন যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তোমার মা কি করে ? আমি গর্বের সাথে উত্তর দেই , আমার আম্মা housewife ।আমি এখন জানি housewife হওয়া চাট্টিখানি কথা না । আমার জীবনের প্রতেকটা সাফল্যে্র পিছনে আছে আমার housewife আম্মা । অফিস সামলানোর মতো ঘর সামলানোও যথেষ্টট কঠিন কাজ ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Ishtiaq Ahmed খুবই ভালো লাগলো। আমার মা নেই। তাইতো গল্পটি পড়ে চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছিল। সন্তানের মানুষ হওয়ার জন্য একজন মায়ের ভুমিকা আমি খুব ভালোই অনুভব করি। তাইতো নিজের সন্তানের জন্য ওর মাকে চাকুরী করার জন্য নিরুতসাহী করি। লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ডাঃ সুরাইয়া হেলেন মার প্রতি শ্রদ্ধা ।পরিচ্ছন্ন লেখা,ভোট করে েগেলাম ।শুভকামনা ।
আশা আপনার গর্ব দেখে আমি মুগ্ধ। সত্যি যে ঘরে হাউজওয়াইফ না থাকে, সে ঘরে সন্তানের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা অনেক কষ্টের। গল্প যেভাবেই লিখেছেন অসাধারণ বললাম শুধু থিমটার জন্য। শুভকামনা লেখকের প্রতি।
মিষ্টি মৌসুমী আপু , আপনের ছেলে তো ছোট তাই হয়তো ব্যাপারটা বোঝে না । কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষও হাউজ ওয়াইফদের অবদানকে মুল্যায়ন করে না । গল্পটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা । অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য ।
মনির মুকুল চোখটা ছলছল করছে। পাঠকের মনটাকে একেবারে নরম করে ফেলা সোজা কাজ নয়। এটার জন্য আলাদা শক্তি লাগে; সেটা আপনার মধ্যে দৃশ্যমান। শুভকামনা।
রোদের ছায়া বাস্তব কথা বলেছেন./ সেদিন আমার ছেলে আমাকে বলছে আম্মু তুমি doctor হলে ভালো হত তাহলে খেলনা কিনে দিতে পরতে. কিন্তু ওকে তো আর বুঝতে পারি না যে ওর জন্যই আমি চাকরি করি না. আজকের প্রজন্ম হয়ত বেপারটা বুঝবেই না
amar ami আমি পাঠক হিসেবে শুধু আবেগ তাই বুঝলাম আর সমালোচনা তেমন না করে বলছি ভালো লাগলো তবে আরো একটু মনোযোগ দিলে লেখা ভালো হবে আশা করছি
sakil প্যারা করে লিখলে ভালো হত . সুন্দর জীবনের গল্প সেই সাথে মাকে নিয়ে গর্ব করা গল্প . ভালো লিখেছেন . শুভকামনা রইল .
সালেহ মাহমুদ মিস্টির মতই উপাদেয় গল্প | আপনার গল্পটি খুব সুন্দর | মাকে এভাবে কেউ ভেবেছে কি না কে জানে? আপনাকে অনেক ধন্যবাদ | শুভো কামনা রইলো |

০৭ সেপ্টেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪