অত্তখরণ

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

অনন্ত হৃদয়
  • ১৭
  • 0
  • ৪৯
শেষরাত থেকেই মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। যাকে বলে ভাসিয়ে দেওয়া জলধারা। সবকিছুকে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় সহজাতে। রাতমিলা স্বপ্ন দেখছিল। স্বপ্নে তারা কোন একটা সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গিয়েছে এই প্রথম। অথচ রাতমিলার কেন যেন মনে হচ্ছে এ জায়গাটাতে রাতমিলা এর আগেও এসেছিল। সোহেলকে কথাটা বলতেই সোহেল একগাল হেসে তার হাতটা ধরে রাতমিলার গা ঘেষে দাঁড়াল।

জায়গাটা খুব সুন্দর; তাই হয়তো তোমার এমনটা মনে হচ্ছে। মানুষের এমন হয়। প্রথম দেখা অনেক কিছুকেই দেখে মনে হয় ইতিপূর্বেও আমি হয়তো এ জিনিষটা আরো কয়েকবার দেখেছি। যেমন মানুষের কিছু মুখ দেখলেই ভিতরটা চমকে উঠে। আরে এর আগে মানুষটাকে কোথায় যেন দেখেছি। কিন্তু সত্য হচ্ছে তুমি তাকে এই প্রথম দেখছ।

না না .... সোহেল তুমি বিশ্বাস কর। আমি এর আগেও এই জায়গায় এসেছি।
তখন কি তোমার পাশে আমি ছিলাম নাকি অন্য কেউ? সোহেল হেসেছিল।
যাও, তুমি আমার কনসেন্স নিয়ে ফান করছ তুমি; না.....
আচ্ছা বাদ দাওতো। আসলে এসেছি তাতে কি হয়েছে। এক জায়গায় কি একাধিকবার আসা যায়না? তারপরও রাতমিলা মনে মনে তার মস্তিস্কের সাথে তোড়জোর চালাচ্ছে মেমোরী থেকে সঠিক তথ্য বের করে আনতে। আর ঠিক এমন সময় রাতমিলার বুকের উপর একটা ভারী কিছু পরতেই তার স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেল সেই সাথে মুখের উপর মৃদু গরম কিছু। রাতমিলা চোখ মেলতেই দেখে ভারী জিনিসটা আর কিছু না সোহেলের হাত । যা এর মধ্যেই সচল হয়ে উঠেছে রাতমিলা তার হাতটা আলতো করে নামিয়ে দিল।
আজ আর না। সকাল হয়ে আসছে আমাকে উঠতে হবে।
এই বৃষ্টিতে উঠে কি করবে। তার চেয়ে থাকনা বুকটা জুড়ে লক্ষিটি।
ঠান্ডা পরেছে। রাত্রির রুমের এসিটা বন্ধ করে দিতে হবে। তুমি থাক আমি উঠছি। আমাকে আবার তোমাদের জন্য নাস্তা তৈরী করতে হবে। রাত্রিকে তুলে স্কুলের জন্য তৈরী করতে হবে।

তোমার মেয়ে এই বৃষ্টিতে কিছুতেই স্কুলে যাবেনা।ও যে বৃষ্টি পাগল! আজ ওর টিউটোরিয়াল পরীক্ষা আছে। যেতে হবে। স্বামীর পাজরের আবদ্ধন থেকে রাতমিলা উঠে বাথরুমে চলে গেল। তার মাথার ভিতরে এখনও স্বপ্নের জায়গাটা বার বার ঘোরপাক খাচ্ছে। তার মেমোরী এখন পর্যন্ত সঠিক ডাটা প্রেরণ করতে পারেনা কিন্তু রাতমিলার মন নিশ্চিত জায়গাটা তার পরিচিত। সামান্য একটা জায়গা নিয়ে নিজের সাথে রাতমিলার এতো বাড়াবাড়ির কি আছে? তাও আবার স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্নের নিজেরিতো নির্দিষ্ট কোন অবস্থান নেই তার আবার স্থান! ;

রাতমিলার ব্যস্ত হবার কারণ হচ্ছে দুটো। তার একটি হচ্ছে রাতমিলা যে জায়গাটা স্বপ্নে দেখেছে তার পাশ দিয়ে একটি নদী বয়ে গেছে যা বর্ষার জলে টুইটুম্বর। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে তার পাশের মানুষটা সোহেল ছিল না অন্য কেউ। যদিও স্বপ্নে তার পাশের মূখটাকে সোহেলের মতোই মনে হয়েছে কিন্তু রাতমিলা নিশ্চিত লোকটি অন্য কেউ ছিল। কারণ বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত রাতমিলা সোহেলের সাথে কখনই কোন নদীর পাড়ে বেড়াতে যায়নি এমনকি নদী পথে কোন স্থানেও না। তাহলে লোকটা কে? আর স্বপ্নতো তাই যা আমরা করেছি অথবা করবো বলে মনের ভিতরে আশার বীজ বুনে যাই।

সোহেল নাস্তা সেরে মেয়েকে নিয়ে বের হেয় গেছে। রাত্রিকে তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে সে চলে যাবে তার অফিসে। রাতমিলা হাতের কাজগুলো শেষ করে নাস্তা সেরে এক মগ কফি নিয়ে ব্যালকোনীতে এসে বেতের চেয়ারটাতে বসেছে। তার এই জায়গাটা থেকে মেইন রাস্তার অনেকটা দেখা যায়। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে তবে তা আর ভোর রাতের মতো ভারী বর্ষণ নয়। আবার কুকুর বিড়াল বৃষ্টিও নয় বরং এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে তাকে বলা চলে গা ভেজানো বৃষ্টি। হঠাৎ করে এসেই গা ভিজিয়ে দিয়ে আবার উধাও। এরি মাঝে রাস্তায় পানি জমে গেছে। বর্ষাকালে যাদেরকে বাইরে কাজে যেতে হয় তাদের যেন দূর্ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাতমিলা রাস্তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তার মানে তার মাথা থেকে স্বপ্নের মানুষটি এবং জায়গাটা এখনও যায়নি। রাতমিলার এই এক সমস্যা। তার মাথায় একবার যদি কোন কিছু ঢুকে তাহলে তা সমাধা না করা পর্যন্ত তার স্বস্থি নেই। তা ব্যাপারটা যতোই তুচ্ছ হোক অথবা বিশাল। আর একবার যদি কোন কিছুর ইচ্ছে হল তাহলেই হয়েছে। যে কোন মূল্যে তা পূরণ করা চাই! এছাড়া রাতমিলা খুব ভালো একজন মেয়ে। এখন ভালো একজন স্ত্রী এবং আর্দশ এক মা।

রাতমিলার হাতের কফি মগেতেই ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাহিরে বৃষ্টি এখন একদম থেমে গেছে। কিন্তু জল ঝড়ছে রাতমিলার চোখে। তার মানে রাতমিলার মনের কথাই সত্য। তার মস্তিস্ক তাকে সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছে। রাতমিলা এই আট বছরে অনেক চেষ্টা করেছে এই দূঃসহ ভয়ংকর স্মৃতিটা ভূলে থাকতে। সে তাই পারে সারাটা বছর। শুধু বিপাক শুরু হয় যখন বর্ষাকাল আসে আর বৃষ্টি শুরু হয়। বর্ষা-বৃষ্টি -দূঃস্বপ্ন -দূঃসহ স্মৃতি রাতমিলা হারায় অতলে ...

রাতমিলা তখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর আরেফিন আনন্দ মোহেন মাষ্টার্স ফাইনাল দিবে। অখনও বর্ষাকাল ছিল। সেদিন সারাটাদিন বৃষ্টি হয়ে দুপুরের একটু পরে বৃষ্টি থামল। আরেফিন মোবাইল করল সে আসছে রাতমিলা যেন তৈরী থাকে দুজনে মিলে শহরে যাবে। বৃষ্টি থেমে যাওয়া নির্মল এক পরিবেশ। বাতাসে স্বচ্ছতার সজিবতা। নদীর পাশে বসে দুজনে কথা বলছিল হঠাৎ রাতমিলা উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
চলো আমরা দুজনে মিলে এই চমৎকার একটা বিকালে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াই। রাতমিলার কথা শুনে আরেফিন খুশি হতে পারে না বরং চমকায়।
আমি তোমাকে বলে রেখেছিলাম আমরা শহরে যাবো।
বেশতো চলো নৌকায় করে যাই। নৌকা করে পার্ক পর্যন্ত তারপর সেখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রিঙ্ায় শহড়ে চলে যাবো ব্যাস হয়ে গেল।
সে অনেক সময়ের ব্যাপার । এরচেয়ে চলতো রিঙ্ায় করে যাই।
না...না... আমি নৌকায় করেই যাবো। তা নাহলে কোন ভাবেই যাবো না আমি চললাম।
তুমি একটু বোঝার চেষ্টা কর। আমার কথা শোন।
না... না... আমি কিছু বুঝতে চাইনা আমি তোমার পাশে নৌকায় বসে ঘুড়তে চাই।
তুমি যাবে কিনা বল? এই আমি উঠলাম। রাতমিলা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল চলে যাবার জন্যে। আরেফিন জানে রাতমিলা যখন একবার মুখ দিয়ে বলেছে তখন করেই ছাড়বে। আরেফিনও খুব ইচ্ছে রাতমিলাকে পাশে নিয়ে এই সুন্দর একটা বিকালে ঘুড়ে বেড়াবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে যে সাতার জানেনা। ইচ্ছে ছিল কিন্তু কখনও শেখার সুযোগ হয়নি। আর এই কথাটা রাতমিলাকে সে বলে কি করে। রাতমিলা শুনলে হেসে গড়াগড়ি খাবে। আর যেতে না চাইলে রাতমিলা খুব কষ্ট পাবে। হয়তো কিছু দিন কোন কথাই বলবেনা তার সাথে। আরেফিন তাকে কষ্ট দিতে চায়না। সে যে রাতুিমলাকে খুব ভালোবাসে খুব... তাকে নিয়ে বাকিটা জীবন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে স্বপ্নবাসে। আরেফিন ভালোবাসার কাছে ভয়কে পরাজিত করে। রাতমিলার হাতধরে নৌকায় উঠে। রাতমিলা যে কি খুশি। আর তার খুশি দেখে আরেফিন মুগ্ধ হয়। তৃপ্তি পায় ভালোবাসায়। নিজেকে স্বার্থক মনে হয়। ভুলে যায় অন্যসব। ভাবে; বেঁচে থাকার জন্যে এ মুহুর্তে এ সুখটুকুই যথেষ্ট।
সেদিন রাতমিলাকে নিয়ে আরেফিনের গন্তব্যে পৌছানো হয়নি। গড়া হয়নি স্বপ্নের ঘর বসতি ভরা ব্রক্ষ্রপুত্রের ঢেউ এর বিপরীত দিকে পাল তোলা নৌকা ভাসতে ভাসতে মাঝামাঝি পথ পাড়ি দিয়ে যখন সম্ভুগঞ্জ ব্রীজের কাছে আসে ঠিক তখন বিশাল এক ঘূর্নিতে হঠাৎ নৌকাটা ঘুড়তে থাকে। মাঝি যা বুঝতে পারেনি। তারপর...

তারপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যাডে রাতমিলা যখন চোখ খুলে তখন তার পাশে অনেকগুলো পরিচিত উদ্বিগ্ন মুখ। শুধু মাত্র একটা মুখ নেই, একজন নেই। দুই দিনের অক্লান্ত চেষ্টা করেও আরেফিনের লাশটা পাওয়া যায়নি। তারপরও চেষ্টা চলছে। তারপর দীর্ঘ এগারোটা বছর জীবনের তাগিদে ভুলে থাকতে চেয়েছে সবকিছু। তারপরও কি পেরেছে? ভুলে থাকতে চাইলেই কি ভুলে থাকা যায়?

রাতমিলা জানে স্মৃতি তাকে কিছুতেই সে দুঃসহ দিনটাকে ভুলে থাকতে দিবে না। অমৃতু্য এভাবেই আঘাত হানবে বুকপাজরে সময়ে অসময়ে।

আর এই বর্ষা?

এই বর্ষাও কি তাকে মুক্তি দিবে হৃদয়ের দেয়ালে আত্নক্ষরণে অথবা আরেফিনের অকৃত্রিম ভালোবাসার আবদ্ধন থেকে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বশির আহমেদ খুব ভাল লেগেচে . ভবিস্যতে আরোও ভাল লেখার প্রত্যাশায়-----
খন্দকার নাহিদ হোসেন ভাল একটা গল্প। ঝরঝরে লেখা। বলতেই হচ্ছে কবিতার চেয়ে গল্পকার গল্প ভাল লেখে।
মিজানুর রহমান রানা এই বর্ষাও কি তাকে মুক্তি দিবে হৃদয়ের দেয়ালে আত্নক্ষরণে অথবা আরেফিনের অকৃত্রিম ভালোবাসার আবদ্ধন থেকে?
শাহ্‌নাজ আক্তার ভালই লাগলো ..................
সূর্য গল্পের প্লট এবং গল্পটাও বেশ সুন্দর। কিন্তু লেখকের কিছু উদাসীনতাও দৃশ্যমান। [নামকরণ: অত্তখরণ এর মানে বুঝতে পারলাম না]/[সোহেলকে কথাটা বলতেই সোহেল একগাল হেসে তার হাতটা ধরে রাতমিলার গা ঘেষে দাঁড়াল। এখানে তিনজনের উপস্থিতি মনে হয় না?>>সোহেলকে কথাটা বলতেই একগাল হেসে রাতমিলার হাতটা ধরে গা ঘেষে দাঁড়ল]........
শামীম আরা চৌধুরী বুঝতে পারলাম না মনে হয়। ভোট দিলাম
রনীল প্রজাপতি- আমার তো মনে হয় "রক্তক্ষরণ"।
প্রজাপতি মন ভালো লাগলো, রাতমিলা নামটি বেশ Uncommon. বেশ ভালো লাগলো, গল্পের নাম বোধহয় হবে আত্মক্ষরণ তাই না? হুম এমন বেদনাবিধূর স্মৃতি থাকলে তো আত্মক্ষরণ হবেই।
রনীল "অত্তখরণ" এটা কি বানানের ভুল, নাকি এমন কোন শব্দ যেটা আমি কখনো শুনিনি... যদি বানানের ভুল হয়, তবে এতো সুন্দর গল্পে মাত্র ১২ ভিউ এর রহস্যটা বোঝা গেল... আর যদি বানান ভুল না হয় তবে বলব পাঠক খুব চমৎকার একটি গল্প মিস করলেন!

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪