জীবনের এ গোধুলী লগ্নে এসে চাওয়া পাওয়ার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সাঈদুল ইসলাম, সবাই চেনে ডাঃ সাঈদ নামে । বাড়ির বারান্দায় হেলানো চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন । প্রতিবছর ঠিক এই সময়টাতেই যেন আপনা থেকেই এসব হিসাব নিকাশ এসে ভিড় করে চারিদিকে ।একটু দুরের কোন কিছু দেখা যাচ্ছেনা একদম শ্বেতশুভ্র চারিদিক মনে হচ্ছে পবিত্রতার চাদর দিয়ে সবকিছু ঢাকা আছে । হঠাত্ মনে হলো একটা আবছায়া একটু দুর দিয়ে চলে যাচ্ছে , যদিও দেখা যাচ্ছে না তবুও খেজুর রস নিয়ে হেটে যাওয়া আবুলকে ঠিকই চেনে ডাঃ সাহেব। আবুল । জ্যা ডাক্তার সাব । কাঁচা রস আছে নাকি ? হ ,আছে ।কিন্তু হাঁটতেই থাকে আবুল থামার কোন লক্ষন নেই । কি ব্যাপার নিয়ে আয় না ! থেমে ঘাড় থেকে কলসী বহন করা লাঠিটা মাটিতে রেখে খুব বেস্ত আছি ডাক্তার সাব । আচ্ছা আজ তোকে দেরী করাব না ! জ্যা ডাক্তার সাব তারপর দ্রুত গতিতে ব্যালকনীর সামনে এসে দাঁড়ায় আবুল । কাঁচের গ্লাসটি আরেকবার পরিষ্কার করে তাতে অনেক দরদ করে খেজুর রস ঢালে আবুল । একগ্লাস রসের দামতো ৫ টাকা তাইনা হ আমি তোরে ৫০ টাকা দিব ! তা কতক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হবে ? আবুল জানত ডাক্তারের সামনে অনেক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হবে তাই আসতে না চেয়েভনিতা করে একটু দাম বাড়িয়ে নিয়েছিল । যদিও তার খুব ভালো লাগে ডাক্তার সাবকে একগ্লাস খেজুর রস নিয়ে চেয়ারে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি যেন হারিয়ে যান এই পৃথিবী থেকে তবে দেরী হলেও তার লাভ আছে অনেক টাকা দেয় কিন্তু এতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে না সাতসকালে খেজুর রস পেড়ে এই শীতল হাওয়ার মাঝে একটা বিড়ি ধরিয়ে হাঁটলে তাও একটু গরম গরম মনে হয় কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলেই সমস্যা ।আবার একটু বসলেই ধ্যান ভেঙ্গে যায় ডাক্তারের ! এই আধাঘন্টার মত দাঁড়িয়ে থাকবি আচ্ছা যা তোকে ১০০ টাকাই দিয়ে দিব। জ্যা আইচ্ছা ডাক্তার সাব রসের গ্লাসটি নিয়ে চেয়ারে না বসে আজ দাড়িয়েই আছেন তিনি ।ধীরে ধীরে কুয়াশাগুলো কেটে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে । দৃষ্টি চলে যাচ্ছে সুদুরে চারিদিকে ঘুরে ফিরে স্থির হলো তিরিশ বছর পিছনে রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ির সিড়ির সামনে । ঠিক এই সময়টি মাঘের একদম মাঝামাঝি । রংপুর মেডিকেল কলেজের সবুজ ক্যাম্পাস কোলাহলমুক্ত শীতের সকাল । এক এক করে ভেসে আসছে বঙ্কিমের গলাবাজী আর জাপানীর অট্টহাসীর শব্দ ।হঠাত্ নুর স্যার পাশ দিয়ে যাচ্ছেন এখন তার এনাটমী ক্লাশ দশম ব্যাচে স্যারের এটাই ফার্স্ট ক্লাশ ।ক্লাশে ঢুকলাম স্যার অনেক মজাদার কথা বললেন উপদেশচ্ছলে । মেডিকেল লাইফে লেখাপড়ার জন্য পার্টনার লাগে এতবিশাল বিষয়ে পড়তে হবে একা পড়লে কিয়ামতের দিনও পড়তে হবে ! বেন্চের এককোনায় বসে আছি বামপার্শ্বেই পরের রোল জুঁই বসে আছে অসাধারণ মায়াবী চেহারা একবার দেখলে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছা করেনা আজকে লাল শাড়ির উপর এপ্রোন পড়েছে । এই কয়দিনেই তাকে মনে মনে ভালোলাগা শুরু হয়েছে এমনকি আজ রাতে স্বপ্নেও এসেছিল একবার !হঠাত্ তার দিকে তাকালাম সেও এই প্রথম আমার দিকে ! কি যে সাহস হলো বলেই ফেললাম এই তুমি কি আমার পার্টনার হবে ? কিছুক্ষন চিন্তা করতে শুরু করল এদিকে আমার হার্টবিট বেড়েই চলতেছিল তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল মনে হলো দৌড়ে বাইরে গিয়ে কেঁদে আসি অথচ কিছুই না জাস্ট পার্টনার হতে রাজি হয়েছে তবুও মনে আমি পাইলাম অনেক কিছুই পাইলাম । তারপর শুরু হলো মেডিকেলের ব্যস্ত জীবন । অর্ধেক পড়া ও করত আর বাকিটা আমি বিকেলে লাইব্রেরীতে বসে আমি আমার অংশটুকু তাকে ভালোভাবেই বুঝে দিতাম কিন্তু তার অংশটুকু বুঝানোর সময় একবর্ণও বুঝতে পারতাম না শুধু তাকিয়ে থাকতাম তার সারল্যেভরা মুখের দিকে তবে বলতেও পারতাম যদি ভালবাসা পেতে গিয়ে পার্টনারকেও হারিয়ে ফেলি ? একদিন হঠাত্ কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিলাম তাজহাট জমিদার বাড়ি দেখতে যাব রিক্সায় চড়ে । আমরা ৬ জন ছেলে আর ৬ জন মেয়ে । রিক্সা ঠিক করা হলো জুঁই যাবে মিলির সাথে এক রিক্সায় । ইতোমধ্যে দুইজনের সম্পর্ক হওয়ায় মিলি আরিফের সাথে একরিক্সায় ওঠায় বাধ্য হয়ে জুঁই আমার রিক্সায় ওঠে । চারিদিকে প্রচুর কুয়াশা কিছু দেখা যাচ্ছে না শৈত্যপ্রবাহও আছে তারমাঝেও দরদর করে ঘামছি । ভালোলাগার কথা বলব কি বলবনা নানা চিন্তায় অস্থির । মাফলার খুলে ফেললাম আরে তুমি এর মাঝেও ঘামছ ? হঠাত্ জুঁই যেন কুয়াশার ভেদ করে জোরে চিল্লায়া উঠল তারপর হিহি করে হাসি ।রিক্সার একবার চেইন পড়ায় বাকি রিক্সাগুলো একটু এগিয়ে গেছে । হঠাত্ দুর দিয়ে একজন খেজুর রস নিয়ে যাচ্ছে । চাচাকে সে ডাকল কিন্তু তবুও লোকটা চলে যাচ্ছে আমি নেমে দৌড় দিলাম তার সামনে গিয়ে কথা বললাম তখন বুঝলাম সে কানে শোনে না কথাও বলতে পারেনা ইশারা করে ডেকে আনতেছি দেখি জুঁইও রিক্সা ছেড়ে নেমে এসেছে । জানো খেজুর রস আমায় খুব পছন্দ । আমারো ! আসলে এর আগে কোনদিনও খাইনি তবুও বললাম লোকটি দুই গ্লাস রস ঢেলে দুইজনকে দিল । আমি হঠাত্ সাহস করে বলে ফেল্লাম তোমাকে ভালবাসি ও চমকে উঠে রসওয়ালাকে দেখিয়ে দিল মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না মাথা নিচু করে বললাম কানে শোনেনা অনেক্ষন পর মাথা তুলে দেখি ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে চোখে পানি টলমল করতেছে তারপর গ্লাসটি তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে রিক্সার দিকে গেল আমিও টাকা দিয়ে পিছনে গেলাম ভাবতেছি ঠিক হলো কিনা ? এসে দেখি ওর চোখে তখনও পানি জানো ছোটবেলা মা মারা যাওয়ার পর কেউ এভাবে ভালভাবে বলেনি ! তারপর কি আনন্দেই যে কাটল ভ্রমণটি বলতে পারব না ।এরপর মাঝে মাঝেই ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে দুরে ঘুরতে যাওয়া লুকিয়ে চিঠি দেয়া বাড়ি গেলে অস্থির থাকা এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো ।MBBS শেষ হওয়ার পর বিয়ে , সংসারের চিন্তা ওকে বড় ডিগ্রী নেওয়ার জন্য ঢাকায় পাঠানো আর টাকার প্রয়োজনে আদুভাইয়ের মতো আমার খ্যাপ মেরে টাকা উপার্জন । তারপর যেন সব এলোমেলো । আয়েশার জন্ম আর ও নিউরোসার্জন । সাধারন MBBS হওয়ায় স্বামী হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পাওয়া !আমার বাগানে ফুল ফুটলেও পিছু ফিরে তাকানোতে তার অনীহা ! ছাড়াছাড়ি !ওর আমেরিকা চলে যাওয়া ! আয়েশাকে নিয়ে জীবনের বাকী অংশটুকু এই বাড়িতে! আর কতক্ষন ডাক্তার সাব? সোনালী থেকে ধুসরের দিকে যাওয়া সময়ের প্রতিবিম্ব হঠাত্ থমকে গেল ।একফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল গ্লাসে আগে পড়েছে কিনা জানেনা ডাক্তার সাব !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মারুফ মুস্তাফা আযাদ
ভাইয়া, মনে কোরো না তোমাকে নিরুৎসাহিত করছি। তোমার লেখা পড়ে মনে হয়না তোমার বয়স এত কম। কারন এই গল্পের ভেতরে আরো গল্প রয়েছে। যাই হোক, অনেক ভাল লেখা হয়েছে। থেমে যেও না।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।