সেবার ঈদে বাড়ি গিয়েছিলাম

ঈদ (আগষ্ট ২০১৩)

রোদের ছায়া
  • ২০০২
থাকি ঢাকাতে, গ্রামে তেমন যাওয়া হয়না , শহরের পরিবেশে মাঝে মাঝেই দমবন্ধ লাগে। হুটহাট যে কোথাও বেড়াতে যাব সেই উপায় তো নেই। আজ এই পরীক্ষা তো কাল ওই সমস্যা , নাহয় কারো অসুখএকটা না একটা বাধা থাকেই। বাসার সবাই যখন রীতিমত হাপিয়ে উঠেছি ঠিক তেমনি সময় গ্রামে যাবার প্লান করা হলো । সেটা বেশ কয়েক বছর আগের কথা । ঠিক হল সেবার ঈদে গ্রামে যাব সবাই মিলে । আমাদের ৯ জনের একটা দল । উৎসাহ আর উচ্ছাসের শেষ নেই । যাবার দিন ঠিক হল ঈদের ঠিক আগে আগে কিন্তু প্রথমেই গোলমাল বাঁধল বাসের টিকেট নিয়ে । ইদের আগে আগে কোনো বাসেই এক সাথে ৯ টা টিকেট পাওয়া গেল না । তাই বড় ভাইয়া বাধ্য হয়ে দুই বাসে টিকেট কাটলো । শ্যামলী বাসে টিকেট পাওয়া গেল ৫ টা , আর সোহাগ পরিবহনে ৪ টা তাও আবার দুই বাস দুই টাইমে ছেড়ে যাবে । এই খবর শুনে আব্বা প্রথমেই যাওয়া বাতিল করে দিলেন , প্রথম থেকেই তিনি এই সবের পক্ষে ছিলেন না । এতো ঝামেলা করে গ্রামে ঈদ করতে যাবার নাকি কোন মানেই হয় না । অনেক বুঝিয়ে আব্বাকে শেষমেশ রাজি করানো হল ।



তারপর এলো সেই দিন যেদিন ঢাকা থেকে রংপুরের পথে যাত্রা শুরু হবে আমাদের । সেটা ছিল ২৭শে রমজান । সবাই যার যার মতো নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রেডি । আবারও গোলমাল বাঁধল ! কে কোন বাসে যাবে তাই নিয়ে । আমরা দুই ভাই বোন , আব্বা, আম্মা আর একজন কাজের লোক মিলে ৫জন । আর সাথে যাচ্ছে ছোট চাচা চাচি আর তাদের দুই ছেলে মেয়ে । প্রথমে প্লান ছিল চাচাতো ভাই বোনের সাথে আমরা ভাই বোন আর গার্জিয়ান হিসাবে বড় কেউ আমাদের সাথে যাবে । মানে ৫ টা টিকেট যে বাসে পাওয়া গেছে সেটাতে আমরা যাব । এটা আবার ছাড়বেও বিকাল ৫টায় । আর পরেরটা ছাড়বে রাত ৯ টায় সেটাতে বাকিরা যাবে ।কিন্তু যাবার দিন আব্বা আর চাচা কেউ এই প্লান মেনে নিতে চাইলেন না । যার যার ফ্যামিলি নিয়ে যে যে যাবে এটাই তাঁদের শেষ কথা । বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা একা যাবে এটা কিছুতেই হবে না ।



কি আর করা মন খারাপ করে আমরাই প্রথমে বাস ধরার জন্য রওনা হলাম কারন আমারা ৫ জন যাব । আর চাচারা রাতের বাসে আসবে । যাই হোক গেলাম বাস ডিপোতে , গিয়ে শুনি বাস আসে নাই , আরও ঘণ্টা খানেক পর আসবে । শুরু হল বাসের জন্য অপেক্ষা । প্রায় ঘণ্টা দুই পরই বাস আসলো , ছাড়তে ছাড়তে আরও এক ঘণ্টা । শেষ পর্যন্ত ৫ টার বাস ছাড়লো রাত ৮ টায় । বাসে উঠেই সবাই ক্লান্তিকে ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল সেহেরির সময় । একটা হোটেলে বাস থেমেছে , আমরা সবাই মেনে গেলাম সেহেরি খবার জন্য।

তারপর আবার যখন বাস চলতে শুরু করলো তখন আকশ পরিস্কার হতে শুরু করেছে । একটু শীত শীত ভাব ছিল তখন , সময়টা মে মাস হবে । বেশ একটা আরাম আরাম আবেসে সবাই আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম ,ঘুম ভাঙল বাসের হেল্পারের ডাকে । এসে গেছে রংপুর বাস টার্মিনাল । সময় সকাল ১১ টা । সেখান থেকে আরও একটা লোকাল বাস ধরে গেলাম গ্রামের বাড়ি । আহ ! সব ক্লান্তি এক নিমেশেই দূর হয়ে গেল গ্রামিন পরিবেশ আর গ্রামে থাকা বড় চাচা চাচির আন্তরিক অভ্যর্থনায় ।



কিন্তু ছোট চাচারা এখন তো এলো না । সবাই দুশ্চিন্তা শুরু করলো । চাচার সেল ফোনে কল করা হচ্ছে বারবার কিন্তু কেউ ধরছে না , সবাই চিন্তায় অস্থির , পথে কোন বিপদ হল নাতো? কোন রকমে সময় কাটতে লাগলো, ইফতারের সময় আমরা সবাই বাড়ির বারান্দায় ইফতার সাজিয়ে অপেক্ষা করছি আযানের , এমন সময় ক্লান্ত বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে ছোট চাচারা এসে হাজির । পথে নাকি বাস নষ্ট হয়ে গেছিল তাই এতো দেরি হয়েছে । আর তাড়াহুড়ায় চাচা সেল ফোন আনতেই ভুলে গেছে তাই জানাতে পারেনি । তখন সবার হাতে হাতে সেল ফোন আসেনি , বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠর ও ছিল সেল ফোনের মালিকানা । আযাজ প্রায় হয় হয় , চাচারা কোন রকমে হাত মুখ ধুয়ে ইফতার করতে বসলো , সবাই মিলে ভাগাভাগি করে সেদিন ইফতার করলাম । কি অপূর্ব স্বাদ , অমৃতের মতো লাগছিল সেদিনের খাবার । ছোট চাচার কাছে ছিল বড় চাচা, চাচি আর ভাইয়া, আপুর জন্য কেনা জামা কাপড়। ইফতারের পর হাতে উপহার পেয়ে তাঁরা কি যে খুশি হলেন !

দুই দিন পরেই ঈদ , সবাই ইদের দিনের জন্য অপেক্ষা করছি ।

এর পরের দিন সেই চাঁদ দেখার পালা , ইফতার অর্ধেক রেখেই ভাই বোনরা সবাই ছুটলাম মাঠের দিকে চাঁদ দেখার জন্য , একটু পরে আকাশের গায়ে এক ফালি চাঁদ আবিষ্কার করে সে যে কি আনন্দ , শহরে এই আনন্দের সন্ধান আমরা কজন পাই ? সেবার রোজা হয়েছিল ২৯ টা , একদিন আগেই ঈদ করতে পারব সে ভাবনাতেই আমরা ছোটরা খুশিতে আটখানা । রাতেই সবাই নতুন জামা জুতা গুছিয়ে ঘুমাতে গেলাম বেশ রাত করেই । রাতেই মা , চাচিরা সকালের খাবারের আয়োজন করে রাখছিলেন , আমরা সেই খবার রাতেই একটু একটু করে চেখেও দেখলাম । সেমাই, পায়েশ, ঝাল পিঠা আর চটপটি ।আহ! কি সুস্বাদু সব খাবার । পরের দিন খুব সকালে একরাশ সুখ স্বপ্ন নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম, আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঈদ ছিল সেবারের ঈদটা । ঈদের সারাটা দিন আমরা সব ভাইবোন মিলে মজা করে কাটালাম।



আর এদিকে যে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে আর আমাদের খেয়াল নেই । দেখতে দেখতে পাঁচটা দিন যেন পাগলা ঘোড়ার পীঠে চড়ে পালিয়ে গেলো। তখনও কত গল্প করা বাকি, কত জনের বাসায় দাওয়াত খাওয়া বাকি । সব বাকি রেখেই মন খারাপ করে ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিতে হল। এখনো মনে আছে কি ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো ফেরার দিন , আর সেই কান্না চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল আরও বেশি।

ফেরার পথে অবশ্য আর মন খারাপ থাকে কি , সবাই মিলে এক বাসে ভ্রমনের আনন্দটা এবার আমাদের মন ভালো করে দিল।আর খুব সকালের মিষ্টি হিমেল বাতাস মন খারাপকে অনেকটাই উড়িয়ে দিয়েছিলো। বড়রা তাদের মত গল্প করে আর আমরা ভাই বোন মিলে নানা রকম মজা করে ঢাকার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক Apu darun valo laglo ider hasi Kanna niye mojar golpoti. Baser vromon time khub sundor bornona diyechen. Are poribarer sobai mile berate jaoya to Vinson anonder.apnake dhonnobad sundor golpotir jonno.abong khub valo lagche je apni akhon por por goalpo likhchen.apnake Amar salam o chuvechcha roilo.
জায়েদ রশীদ একসাথে ভ্রমণ করার মজাই আলাদা... তা যে ছুতোয়ই হোক না কেন। আর সমবয়সী হলে তো কথাই নেই। কিন্তু পরে এই সুখ স্মৃতিগুলো কেন জানি না... খুব কাঁদায়।
মোঃ রশীদ ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । প্রথম পাঠক হয়ে আমার লেখার মুল্যায়ন করার জন্য ।।

১৭ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪