`„k¨-1
ইদানিং সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো মনে হচ্ছে। ঘুম ভেঙ্গেছে প্রায় দশ মিনিট অথচ আমি মনে করতে পারছিনা এখন সকাল না বিকাল নাকি মধ্যরাত! মাথাটা পুরো ফাঁকা মনে হচ্ছে! হঠাৎ মোবাইল ফোন বেঁজে উঠলো। স্ক্রিনে দিপার ছবি। রিসিভ করতেই রাগী ভয়েস-
“হ্যালো তুমি কি জেগেছো নাকি এখনো ঘুমোচ্ছো ? সকাল ১০টা বাজে! আজ বেশীক্ষণ কলেজে থাকতে পারবো না। প্লিজ একটু তারাতারী এসো।”
আমি শুধু ‘আচ্ছা’ বলেছি অমনি লাইন ডিসকানেক্টেড। এভাবে প্রায়ই আমার মনের যত্ন নিতো একজন। ভাবতে ভালো লাগতো আমার যত্ন নেবার কিংবা আমাকে নিয়ে সময় কাটানোর একজন আছে।
#
দৃশ্য-২
মধ্যরাত ! গল্প লিখছি...... হঠাৎ মনে হলো প্রিয় মানুষটির কথা। ডিস্টার্ব হবে জেনেও মোবাইল ফোনে “শব্দের অর্থ” জানতে চাওয়ার ছুতোয় কল করা....
হ্যালো; সরি তোমাকে এতো রাতে ফোন করার জন্য।
“ইটস ওকে, তুমি এখনো জেগে আছো কেন? নিশ্চয়ই গল্প লেখার ভূত মাথায় চেপেছে ?”
তুমিতো সবই বুঝতে পারো। যে জন্য ফোন করেছি...
আচ্ছা তোমার কাছে সম্পর্কের সংজ্ঞা টা কি ?
“ রাজ ! আমার মাথা এলোমেলো লাগছে...এতো রাতে তোমার আধ্যাত্মীক প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই... প্লিজ গল্প লেখা বন্ধ করো। ঘুমাও।”
এখনই ঘুমাবো...প্লিজ একটু ট্রাই করো!
“সম্পর্ক...সম্পর্ক হলো মায়া। এক প্রকার ভালোবাসা।”
নট ব্যাড। খারাপ বলোনি। তাহলে মনে করো....
“এই শোন, আমি এত রাতে কোনো কিছু মনে করতে পারবো না।”
আচ্ছা তাহলে যদি কারো সাথে কারো সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে কি মায়া কিংবা ভালোবাসা হারিয়ে যাবে?
“ রাজ প্লিজ... আমি আর পারছিনা”...
ওকে গুল্লু গুড নাইট। (ভালবেসে প্রায়ই গুল্লু বলে ডাকতাম দিপাকে)
“গুড নাইট না, বলো গুড মিড নাইট...বাই”
বাই।
#
দৃশ্য-৩
আমাদের বিশেষ দিনগুলো আমি মনেই রাখতে পারতাম না। যেমন আমাদের প্রথম দেখা, প্রথম ভালবাসা, কিংবা দিপার বার্থ ডে। এইসব দিনগুলোতে আমাকে অপ্রস্তুত করে দিত ও উইশ করে।
যেমন আজ আমাদের দু’জনের ‘ভালোবাসা’ বার্ষিকী। আজ ২৯ এপ্রিল। দিপা কখনো কোনো ‘দিবসে’ রাত ১২ টায় উইশ করতো না। কারণ জানতে চাইলে বলবে,
“তুমি যে একজন ভুলো মনের মানুষ এটা তোমাকে রাতে উইশ করলে তুমি মানতে না, বরং তখন তুমিই বলতে কিছুক্ষণ পর আমিই তোমাকে উইশ করতাম। তাই তোমাকে দিনের আলোতে উইশ করছি যাতে তুমি স্বীকার করতে বাধ্য হও তুমি আমার প্রতি কতটা কেয়ারলেস”
ছি! দিপা এভাবে বলো না...
দিপা আবারও রেগে গিয়ে বলে “তোমার কি মনে হয় না কেবল আমিই তোমাকে ভালবাসি ? তুমি এতোটা কেয়ারলেস কিভাবে হও রাজ! যে তুমি তোমার প্রিয় মানুষকে বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে যাও।”
আমি বলি, এই কারণেই আমি তোমাকে ভালবাসি।
“চুপ থাকো। তুমি আমাকে মোটেই ভালোবাসো না।” দিপা কাঁদছে... আমি পাশে বসে আছি দিপার প্রিয় বোম্বে সুইটস এর পটেটো চিপস আর সেন্টার ফ্রেশ হাতে ! দিপা হাঁসছে... “ রাজ তোমাকে ভালবাসি............”
আমি বললাম, এই কথাটা তোমার থেকে আমি ভালো জানি। শোনো মেয়ে, ভালবাসাটা হচ্ছে একটা সম্পর্ক। তোমার কাছে সম্পর্কটা যেমন কাগজে লেখা কোনো ছোট গল্প মনে হতে পারে যেন মুহূর্তেই শেষ, কিন্তু আমার কাছে তা নয় আমার কাছে সম্পর্কটা বিশাল একটা সমুদ্রের মত...বয়ে চলে এপার থেকে ওপার...অনন্তকাল। তুমি আর আমি হচ্ছি সেই সম্পর্কের পথিক। সো নো মোর ক্লাউডি।
প্লিজ ট্রাস্ট অন মি। এবার চলো কিছুক্ষণ রিক্সায় চড়ে বেড়াই।
“ রাজ তুমি এতো ভালো কেন”?
জানিনা। সরি....সরি, জানি, বলবো ?
“বলো”
তোমার কারণে.......এই বলে পকেট থেকে প্যাকেটটি বের করে দিয়ে বললাম “হ্যাপি লাভ এনিভারসারি” ..........ভালবাসি আমিও !
#
দৃশ্য-৪
রাতে ঘুমোতে যাবার আগে দু’জনের নিয়মানুযায়ী মোবাইল ফোনে গুড নাইট জানানো একটি অন্যতম শর্ত।
ফোন করে বললাম, হ্যালো যাদু কি করছো ?
“ঘটনা কি ? যাদু বলছো কেন ? কোনো দুষ্টামীর মতলব আছে নাকি ?”
আশ্চর্য! একটু আদর করে যাদু ডাকা যাবে না তোমাকে ?
“যাবে। অবশ্যই, তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন”
আর কতো আমাকে শাসন করবে দিপা ?
“যতদিন না আমরা কাগজে সাইন করছি!”
তোমার কাছে কাগজটাই বড়, নাকি মানুষটা ?
“প্লিজ রাজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। উই লিভ ইন সোসাইটি।”
একটা কাগজ আমাকে তোমার বর বানিয়ে ফেলবে রাতারাতি... আর যদি আমি কাগজে বিশ্বাস না রাখি তবে কি তুমি আমার নও, কিংবা আমাদের সম্পর্ক ভুল ?
“ রাজ! কথা শোনো। এমন করো না। আমি আমরণ আছি তোমার পাশে।”
দিপা...তুমি থেকো ছায়া হয়ে অনন্তকাল।
“ ট্রাস্ট অন মি। এবার টুং টাং শব্দ শুনবে ?”
আমি বললাম, কিসের শব্দ ?
“কেন তোমার সেই ভালবাসা বার্ষিকীতে যে চাইমটা দিয়েছিলে...সেটার।”
নাহ্ !
“ নাহ ! কেন ?”
চাইমটা নিয়ে আমার একটা ছোট্ট স্বপ্ন আছে। আমি যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরবো তখন তুমি দু’কাপ কফি হাতে বারান্দায় চলে আসবে... দু’জনে বারান্দায় আধো-আলো আাধো-অন্ধকারে বসে কফি খাবো আর আমাদের চারপাশে থাকবে অসংখ্য চাইম ঝুলানো। বাতাসে এগুলো দুলবে আর টুং টাং শব্দ বেরুবে।
“তখন তোমার ছেলেমেয়ে কোথায় থাকবে ? ওদের যন্ত্রণায় বাসায় কি চাইম ঝুলানো সম্ভব!”
নক্ষত্র আর স্নাতার কথা বলছো ?
আমাদের এই চাইমের স্বপ্ন পূরণ হবে বিয়ের পরেই। আর নক্ষত্র এবং স্নাতার স্বপ্ন হলো বিয়ের দু’বছর পরে থেকে।
হ্যালো...হ্যালো... কথা বলছো না কেন ?
লজ্জা পেয়েছো ? ওকে ফাইন, নো মোর টুডে। গুড নাইট।
“এই শোনো !”
বলো।
দিপা বলল “একটা গান শোনাবে, প্লিজ!”
এখন ?
“প্লিজ...দুই লাইন ......”
গান শুনলে তোমার আবার মাইগ্রেন পেইন শুরু হবে।
“হোক। তবুও... শুনাও না প্লিজ ”
ওকে, রেডি, ওয়ান, টু......
( আমি কার সাথে করিবো এখন অভিমান
কে ভাঙ্গাবে যখন-তখন আমার মান
আমি একলা হয়ে গেলাম সখী
একলা হয়ে গেলাম.......)
“এটা কার গান ? সুন্দর হয়েছে। আগে কখনো শুনিনি তো। কার লেখা ? ”
বললাম, অনুমান করো........
“ নাহ পারছিনা, বলনা কার ? ”
এখন বলা যাবে না......কাল বলবো।
“ আহা, বলো না! ”
আমি নিজেই জানি না...... তোমাকে কিভাবে বলবো।
“থ্যাংক্স”
কি জন্যে ম্যাডাম ?
“আমার মাইগ্রেন পেইন শুরু করায় সাহায্য করার জন্য”
সত্যি ?
“নাহ্, মিথ্যা বলেছি... এবার গুড নাইট। আই লাভ ইউ... আই লাভ ইউ ভেরি মাচ”
সেইম টু ইউ। গুড নাইট !
#
দৃশ্য- চলমান
এরকম অসংখ্য দৃশ্যের মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্কের প্রায় তিন বছর কেটে গেল। কখনো বুঝতেই পারিনি আমার একাকিত্ব। আমার বিষন্নতা ! অক্টোপাসের মত জড়িয়ে থাকতো আমার সকল অনুভূতিতে..............।
প্রায় এক বছর আগে পটুয়াখালী-কুয়াকাটার মহাসড়কে একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় দিপা আমার কাছ থেকে হারিয়ে যায়!
সেই থেকে আমি আজও একা...বিষন্ন... আমি জানি বাস্তবতা আমাকে মেনে নিতে হবে তবু আজও আমি মনে মনে খুঁজি আমার “আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট।” যেখানে বন্দি আমার সুখ, ভালবাসা, মায়া, উচ্ছলতা...আমার শক্তি, আমার স্বপ্ন! আমি আজও কথা বলি একা একা দিপার সাথে, আমি আজও খুঁজি পথে পথে অবাস্তবতার মাঝে... প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলে মনের সাথে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের। আমরণ আমি খুঁজে যাব আমার ভালবাসার সিন্দুক “আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট”কে।
১০ আগষ্ট - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪