"আচ্ছা সন্দিপ? কাল তুমি কি বলতে চেয়েছিলে?" প্রশ্নটি করেই পুর্ণ দৃষ্টিতে সন্দিপের দিকে চেয়ে থেকে উত্তরের অপেক্ষা করে জুঁই।সন্দিপ হঠাত্ উদাস হয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যায়। "কাল কি বলতে চেয়েছিলে বললে না তো?" আবার জানতে চায় জুঁই। সন্দিপ জুঁইয়ের দিকে ফেরে।ওটা কাল বলার ছিল আজ নয়।জুঁইও আর জানতে চায় না। চুপ করে ভাবতে থাকে ওর পাশে বসে থাকা ছেলেটা সম্পর্কে। কখনোই বুঝতে পারে না।কেমন যেন ঘোলাটে ও।ধরা ছোঁয়ার বাইরে।ইদানিং ওদের সম্পর্কটা বেশ শিতল হয়ে যাচ্ছে। দুজনেই যেন হাঁপিয়ে গেছে এই সর্ম্পকে, বড্ড একঘেঁয়ে। এখন প্রায় ভাঙে ভাঙে অবস্থা। তবুও কিসের টানে যেন দুজন আটকে আছে।পুরুপুরি ছেড়ে যাওয়ার উপায় করে উঠতে পারছে না।পাঁচ বছরের সম্পর্কে ঘুন ধরেছে যেন তেমন কোন গুরুতর কারণ ছাড়াই। দুজনের সামান্য মতের অমিল,এটা অবশ্য পরোক্ষণেই ঠিক করে নেয় ওরা। তবুও কোথায় যেন ফাঁকা থেকে গেল। জুঁই ভাবছে গতকাল ও আমাকে কি বলতে চেয়েছিল? ও কি শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে? আমাকে কে এটাই বলতে চেয়েছিল সন্দিপ যে "জুঁই আমি আর পারছি না। আমরা ভালই থাকব। আমাদের দুজনের পথ আজ থেকে আলাদা।"পারবে কি সন্দিপ এটা বলতে? জুঁই একবার সন্দিপকে দেখে নেয়। আগের মতই উদাস হয়ে চেয়ে আছে।গতকালও দুজন এইভাবে বসে ছিল। তবে উঠে যাওয়ার আগে সন্দিপ জুঁইকে বলছিল কিভাবে দিনগুলো চলে যাচ্ছে তাই না?একেবারে লবন ছাড়া পানি ভাত।একটু লবন আর একটা কাঁচামরিচ হলেই জমে যেত, বলেই হাঃ হাঃ করে হেসে দিল সন্দিপ। জুঁই চুপ করে শুনে "আমি যাই" বলেই উঠে চলে গেল।আকাশটা কালো করে তখন তুমুল বৃষ্টি শুরু হল।জুঁই তরিঘরি করে একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল।মাঝরাস্তায় সন্দিপের ফোন।জুঁই ফোন রিসিভ করে কিন্তু বৃষ্টির ছাঁটের কারণে কথা বলতে পারছিল না।জুঁই কেবল শুনতে পেয়েছে সন্দিপ বলছে তুমি কোথায়?একটা কথা ছিল। তারপরেই নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে ফোন কেঁটে যায়।পরে অবশ্য জুঁই ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল কি কথা? কিন্তু সন্দিপ কিছু বলে নি।আজও একই প্রশ্ন করে জুঁই কোন উত্তর পায় নি। জুঁইয়ের হঠাত্ কান্না পাচ্ছে।ওর চোখের জল আড়াল করতেই যেন চারদিক কালো করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। জুঁই তরিঘরি করে কোন ছাউনির নিচে যাবে বলে ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সন্দিপকে বলছে সন্দিপ চলো আমরা কোন ছাউনিতে গিয়ে বসি। সন্দিপ হঠাত্ করে ওর হাতটা ধরে ফেলল। জুঁই বেশ অবাক হয়ে বলল, "কি হল"? সন্দিপ জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাত্ করে ওর মুখ খুব উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। ও বলল, কাল তোমাকে কি বলতে চেয়েছিলাম শুনবে না? জুঁই কিছুই বলল না হতবাক হয়ে শুধু চেয়ে রইল।ওর চোখ ছলছল করছে। সন্দিপ কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলল, "শুভ বর্ষা"। জুঁইয়ের ছলছল চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা পানি পড়ল।আঙুলের মাথায় জুঁইয়ের অশ্রু ফোঁটা নিয়ে সন্দিপ বৃষ্টি পানে তুলে ধরে ।অশ্রু ফোঁটা বৃষ্টির জলে ধুয়ে যায়। সন্দিপ বলে "জুঁই চল এভাবে সব দুঃখ কষ্ট পানসে জীবন ধুয়ে ফেলি বর্ষাকে আলিঙ্গন করে"।শেষবারের মত জুঁই আরো একবার উপলব্ধি করল এই মানুষটাকে ছেড়ে থাকা সত্যিই অসম্ভব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রনীল
বৃষ্টির মজাই এখানে... হুটহাট করে চলে আসে, আর একপশলা বৃষ্টি নিপুন ভাবে মুছে দেয় সব রিক্ততা আর গ্লানি... ছোট গল্পে বেশ মুনশিয়ানার সাথে বৃষ্টি নামিয়ে দিয়ে জুঁই আর সন্দ্বীপ কে পাশাপাশি এনে দিয়েছেন।
প্রজাপতি মন
ভাল লাগলো। সন্দিপ বলে "জুঁই চল এভাবে সব দুঃখ কষ্ট পানসে জীবন ধুয়ে ফেলি বর্ষাকে আলিঙ্গন করে"।শেষবারের মত জুঁই আরো একবার উপলব্ধি করল এই মানুষটাকে ছেড়ে থাকা সত্যিই অসম্ভব
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।