কদম ফুলের খোঁজে

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

সিকদার আইয়ুব
  • 0
  • ৬৯
ছমিরনরা তিন ভাই বোন। ভাই বোনদের মধ্যে ছমিরন বড়। ছমিরনের বাবার বয়স পঞ্চাম বছর। তার বাবা আগের মতো গায়ে শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারে না। এখন ছমিরদের সংসারে খুব অভাব , ছমিরন অষ্টম শ্রেণীতে হাই স্কুলে পড়তো। একদিন ছমিরনের বাবা ছমিরনকে ডেকে বললো আমি তো আর পারছি না রে মা। আমার মনে হয় তোকে আর লেখা পড়া শিখাইতে পরুম না। আমার আর ঠেলা গাড়ি চালাইতে মন চায় না তুই গার্মেন্টসে যাইয়া চাকরি কর। মাস শেষে যদি তুই আমার হাতে কিছু টাকা পয়সা আইনা দেছ,তাইলে আমি কিছুটা হইলেও নিঃশ্বাস ফালাতে পারুম। বাবার কথা শুনে ছমিরন দুচোখের পানি ছেড়ে বলল বাবা আমি আর তোমারে কষ্ট দিতে চাই না। আমি তোমার কথা মত গার্মেন্টসে চাকরি নেব। তার পরদিন ছমিরন অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে চলে গেল গার্মেন্টসের হেলপার পদে আটশ টাকা বেতনে। কিছু দিন গার্মেন্টসে চাকরি করার পর সেই গার্মেন্টসের সুপার ভাইজার খবির উদ্দিন ছমিরনের দিকে নজর দেয়। এক দিন দুপুরে লাঞ্চে সুপার ভাইজার খবির উদ্দির ছমিরনকে ডেকে বলল, আমি তোমাকে তোমার ব্যক্তিগত কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই তুমি কি বল? ছমিরন নিঃসন্দেহে জবাব দিলো-হ্যাঁ আপনি কি বলতে চান বলেন। খবির উদ্দির বলল তোমার বাবা কি কাজ করেন? ছমিরন লজ্জায় ঠেলা গাড়ির কথা না বলে বললো বেবি ট্যাক্সি চালায় । খবির আবারো জিজ্ঞাস করলো তুমি লেখাপড়া করেছো? ছমিরন বললো হ্যাঁ সামান্য কিছু করেছি।তবে এটাকে লেখাপড়া বলে না । খবির উদ্দিন জানতে চাইলো কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছো । ছমিরন বলল,মাএ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি । খবির উদ্দিন বললো, এতটুকু হলেই চলবে । আর বেশি প্রয়োজন নেই । ছমিরন জিজ্ঞেস করলো আপনি আমাকে এসব কথা জিজ্ঞাসার মানে কি ভাইয়া । ‌খবির উদ্দিন বললো,তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে বলতে পারি । তুমি আমাকে বলার অনুমতি দিলে বলব, না হয় বলবো না ।হ্যাঁ আপনাকে বরার জন্যে অনুমতি দিলাম । খবির উদ্দিন বলল-আমার জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি, তবে তোমার মতো এরকম আর দেখেনি ।ছমিরন বলল আমি কেমন? খবির উদ্দিন বলল, তুমি খুব সুন্দর এবং ভালো । আমি মনে মনে একজন মেয়ে খুঁজছি । ছমিরন খবির উদ্দিনের কথা শুনে বলল আপনিও খুব ভালো ।ছমিরনের কথা শুনে খবির উদ্দিন একটু আনন্দ পেলো এবং একটু সাহস বাড়ালো । খবির উদ্দিন এ ফাঁকেই ছমিরনকে বলল, তোমাকে আরেকটি কথা বলতে চাই, তুমি জদি অনুমতি দাও । আমার বুক কিন্তু না বলার আগে থরথর করে কাঁপছে। ছমিরন বলল বলতে যদি আপনার ভয় হয় তাহলে না বলাটাই আপনার জন্য উপকার। খবির উদ্দিন বলল-না এত বেশি ভয় লাগে না ।ছমিরন বলল-ভয় না পেলে তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।সময় কিন্তু বেশি নেই। ছমিরনের কথা শুনে খবির উদ্দিন বলল-তোমাকে আমার ভালো লাগে এবং তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।ছমিরন বলল আপনাদের ভলোবাসাতো ক্ষণিকের জন্য। আমি গরিব ঘরের সন্তানামার ভালোবাসার কি দাম আছে আপনাদের মতো লোকদের কাছে। খবির উদিন বলল এ পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয় আমার গর্ভধারিনী মা, আমার মায়ের কসম খেয়ে বলছি- আমি তোমার সঙ্গে কোন প্রতিরনা করব না এবং তোমাকে কোন আঘাত দিব না। খবির উদ্দিনের কথা শুনে ছমিরন আর না বলতে পারলো না । এভাবে তাদের মধ্যে কয়েক মাস যাবৎ মন দেয়া নেয়া হচ্ছে ।একদিন খবির উদ্দিন গার্মেন্টসে না গিয়ে তার বাসায় বসে ছমিরনকে নিয়ে একটি কবিতা Yলিখছে । কবিতা শেষ না হতেই বৃষ্টি শুরু হল। খবির উদ্দিন ভাবল কবিতাcটা শেষ করে একটু ঘুমাবে।কবিতা শেষ করে যখন বিছানায় গেলো তখন আরো গভীরভাবে ছমিরনের কথা মনে পড়লো। যখনই ছমিরনের কথা মনে পড়লো তখন খবির উদ্দিন ভাবছে আমাদের ভালবাসা কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো কিন্তু আজ পর্যন্ত ছমিরনকে কোন কিছু উপহার দেওয়া হয় নি। আমি তা হলে ছমিরনকে কি উপহার দিতে পারি ?যা দিলে ছমিরন খুশি হবে। বৃষ্টির মাঝেও বাহিরে যাওয়া যায় না। এ সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খবির উদ্দিনের মাথায় সব ফুল বাদ দিয়ে কদম ফুলের কথা মনে পড়ে গেলো ।খবির উদ্দিন ভাবরো কদম ফুলের কদর যাতে কম সেহেতু ছমিরন কে একটা কদম ফুল উপহার দেব। অনেকে অনেক জনকে অনেক ফুল উপহার দেয় এবং দামি দামি জিনিসও। তবে গোলাপটা সব ফুলের মাঝে ফুটন্ত। আমি গোলাপ উপহার দেব না। বৃষ্টি এখনও ফোটা ফোটা পড়ছে, এই বৃষ্টির মধ্যে খবির উদ্দিন বাহির হল কদম ফুলের খোঁজে। হাঁটতে হাঁটতে খবির উদ্দিন একেবারে ভিজে গেছে। তারপরও সে হাঁটছে একটি কদম ফুল পাবার আশায়। অনেকক্ষন হাঁটার পর একটি বাড়ির ভিতরে কয়েকটি কদম ফুলের গাছ দেখতে পেল এবং কদম ফুল গাছে ফুটে আছে। খবির উদ্দিন কদম গাছগুলো দেখে তার মনে আনন্দের ঢেউ বইছে। এখন খবির উদ্দিন ভাবছে ফুল তো পেলাম, কিন্তু কেমন করে একটি ফুল আনা যায়। বাড়ির ভেতরের সব দরজা বন্ধ, গেটে কোনো মানুষও নেই। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খবির উদ্দিনের নজর গেলো দক্ষিণের জানালার দিকে। একজন যুবতী মেয়ে বসে দক্ষিণের হাওয়ায় তার শরীর ঠান্ডা করছে। খবির উদ্দিন ভাবছে কেমন করে ঐ মেয়েটিকে ডাকা যায়। এই ফাঁকেই বাড়ির পেছন থেকে একজন লোক বেড়িয়ে এলো, পোশাকে মনে হয় বাড়ির দারোয়ন। আসতে আসতে লোকটি গেটের সামনে আসলো। লোকটি গেটের সামনে আসার পর খবির উদ্দিন জিজ্ঞেস করলো আপনি এখানে কি চান? খবির উদ্দিন বললো কদম গাছের থেকে একটি ফুল আমি নিতে চাই, আপনি যদি দিতে পারেন তাহলে আমার উপকার হবে। দারোয়ান বললো মাটিতে তো পড়া নেই, কেমন করে আপনাকে ফুল দেবো। আর যদি আমি গাছ থেকে পেড়ে দেই, তাহলে আমার চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঐ যে দেখেন মালিকের মেয়ে জানালার পাশে বসে আছে। খবির উদ্দিন দারোয়ানকে বললো তাহলে দয়া করে আপনি ম্যাডামকে গিয়ে বলেন, ঐ লোকটি একটি কদম ফুল নিতে চায়। দারোয়ান খবির উদ্দিনের কথা মতো চলে গেলো ম্যাডামের কাছে।ম্যাডাম বললো সবগুলো ফুল ঐ লোকটি নিয়ে গেলেও আমার কোন দুঃখ নেই। কারন কদম ফুলের কদর কম এই পৃথিবীতে। তুমি গিয়ে লোটিকে বলো-সব ফুল নিয়ে যেতে। ম্যাডামের কথা শুনে দারোয়ান এসে খবির উদ্দিকে বললো-আপনার যা প্রয়োজন হয় তাই নেন, ম্যাডাম আপনাকে নিতে বলেছে। দারোয়ানের কথা শুনে খবির উদ্দিন গিয়ে কদম ফুল গাছে উঠে মাএ একটি কদম ফুল ছিরে আনল। তারপর দিন খবির উদ্দিন গার্মেন্টসে যাত্তয়ার সময় কদম ফুলটি হাতে করে খুব যত্নসহকারে নিয়ে গেলো। এবং ছমিরন গার্মেন্টসে ঢোকা মাএ খবির উদ্দিন কদম ফুলটি ছমিরনের হাতে দিয়ে বলল-আমি তোমার জন্য দামি উপহার আনতে পারতাম,কিন্তু বাবরাম কদম ফুলের যাতে কদর কম সেহেতু একটি কদম ফুল ছমিরনকে দেই। তুমি খুশি হয়েছ ছমিরন? তবে ফুলটি আনতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। তোমাকে ভালবাসতে যতটুকু কষ্ট না হয়েছে ফুলটি সংগ্রহ করতে তার বেশি কষ্ট হয়েছে। ছমিরন বললা আমি খুবই খুশি হয়েছি । কারন তুমি যে পছন্দের মূল্যবান একটি ফুল এনেছো। কদম ফুল আমার প্রিয় ফুল। খবির উদ্দিন ছমিরনকে জিজ্ঞাসা করলো, কদম ফুল তোমার প্রিয় কেনো? ছমিরন বললো – আমি গরিব, তাই কদম ফুল আমার সবচেয়ে প্রিয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sakil প্রথমে আপনাকে সাগতম . এরপর আপনার সাবলীল ভাষার গল্প বেশ ভালো লেগেছে . আশা করি নিয়মিত লিখবেন . শুভকামনা রইলো
M.A.HALIM দারুণ একটা গল্প সাঝালেন। বর্ষা মানে কদম ফুল। সুখী হ্উক খবির উদ্দীন ও ছমিরনের দাম্পত্য জীবন।
সূর্য গল্পকবিতার ভুবনে স্বাগতম, লেখাটার আবেগ মন ছুয়েছে, আর যেটুকুর আশা করছি নিয়মিত লিখলে সেটুকু আপনাতেই চলে আসবে [লেখার ঢংয়ের কথা বললাম, লেখককে লেখার চরিত্রের সাথে মিশে গিয়ে লিখতে হবে। যেমন, লেখক যদি খবিরের চরিত্রে থেকে লিখতো আবেগটা অনেক বেশি আসতো, অনেক শুভকামনা থাকলো]
অবিবেচক দেবনাথ সহজ-সরলতাপূর্ন বলার মত গল্প,ভালো লাগল।
পন্ডিত মাহী ভাবলাম কি আর শেষে দেখলাম কি... তবে কাহিনী কিন্তু ভালোই হয়েছে
Oshamajik শুভ কামনা থাকলো
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# সিকদার ভাই, গার্মেন্টস এ কাজ করে এমন মেয়েরা শুনেছি নানান ভাবে প্রতারিত হয়... খবির চরিত্রটাকে প্রথমে নেগেটিভ মনে হয়েছিল... সমিরনের জন্য কদম ফুলের জোগাড় করাটা বেশ ভালো লেগেছে... চর্চা চালিয়ে যাবেন, সামনে আপনার আরো লেখা চাই।
মামুন ম. আজিজ আমাদের এই পাঠক লেখক পরিবারে আপনাকে স্বাগতম। ....গল্পটা সুন্দর সারল্যপুর্ণ। কিন্তু লেখার রীতিটি বলার রীতির মত হয়ে উঠেছে। লেখার জন্য আরেকটু সাহিত্যমান থাকরে কদর বাড়ে। আপনি হয়তো আরেকটু চেষ্টা চালালেই পারবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা

২৯ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী