গর্বের এপিঠ ওপিঠ

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

মনির খলজি
  • ৭৫
  • 0
  • ১২১
গর্ব নিয়ে কি লিখব বেশ কিছুদিন ধরে চিন্তা করে কিছুই ঠাওর করতে পারছিলাম না - কারণ আমার জীবনে কিছুতেই গর্ব করার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না - গর্ব করার মত বিভিন্ন দিক নিয়ে চিন্তা করলাম যেমন ভাবলাম একটা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গর্ব করার মত কি কি ধাপ, পর্ব, বিষয় অথবা কোনদিকগুলো আসতে পারে :- ভাবনাতে এলো প্রথমে যেখানেই কোনো মানুষের জন্ম হয় সে ‘পরিবার ও প্রতিপত্তি’ নিয়ে গর্ব, যেমন সম্রাট আকবর বা জাহাঙ্গীর কিংবা শাহজাহানের যে পরিবারে জন্ম অর্থাৎ 'মোগল পরিবার' তা তাদের গর্ব করার মত ...কিন্তু আবার যখন দেখা যায় তাদের মোগল পরিবার ও সম্রাজ্যের অনেকেই অনেক সময় ক্ষমতার জন্য যে হীন চরিত্রের জিঘাংসায় কুখ্যাত (যেমন শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব একমাত্র মুসলিম বাদশাহ যে নাকি তার পিতা, ভাই, বোন এবং পুত্রকে খুন করে) তা তাদের সব গর্বকে ম্লান করে দেয় । অন্যদিকে গরীব পরিবারে জন্ম নিয়ে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ১ম আসন নিয়ে আছেন । আর যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের বিখ্যাত যে priest-রা বা সাধকেরা এ দুনিয়াতে এসেছেন তাদের বেশীরভাগই নিম্ন পরিবারের এবং প্রতিপত্তি আরাম আয়েশ থেকে দুরেই থাকতেন । তাহলে তো ‘পরিবার ও প্রতিপত্তি’ গর্ব করার মত কোনো একটা factor কি ? তাই এ বিষয়টা আমার কাছে important মনে হল না আর এর কারণে বংশের বাপার্টাও গৌণ হয়ে গেল ।

'সমাজ' বা 'সামাজিক পরিবেশ' নিয়ে গর্ব করার মত অনেক কারণ দেখা যায় । যেমন একটা উচ্চশিক্ষিত সামাজিক পরিবেশে সন্তানেরা ভালভাবে গড়ে উঠে । আবার ওই সমমস্ত highly educated and cultured society খ্যাত পরিবারে সাংসারিক সুখ বলতে যা বোঝায় তার কতটুকু তারা ভোগ করে সেটা তারাই হাড়ে হাড়ে বোঝে । তাদের অনেক সন্তানদের 'ইয়াবা' ছাড়া রাতই কাটেনা । অন্যদিকে, আরেক প্রমান সরূপ বলা যায় - আমারদের পরিবারে অনেক ছোটবেলায় জরিনা নামে ৫/৭ বছরের ছোট মেয়ে পেটের দায়ে 'আসাম' থেকে কাজের জন্য আসে যার এ দেশে কেউ নেই বললে চলে । আমাদের ভাই বোনেদের মামা, খালা, বলে ডাকতে ডাকতে একপর্যায়ে তাকে ভাগ্নি হিসেবে গণ্য করি । আর এতিম বলে তার উপর আমার মা বাবার একটা soft corner ছিল এবং তার বয়স এসে পড়লে তাকে একটা ভালো ছেলে (আমাদের জমি-জায়গা বর্গা নিয়ে আবাদ করত তার ৩ নম্বর ছেলে) -এর সাথে বিয়ে দেয়া হয় । পরিবারটা ভালো হলেও আশপাশের পরিবেশ চাষাভুষা মানুষেরই বসবাস । প্রথমে জরিনার পরিবারে সচ্ছলতা থাকলেও ক্রমে তিন সন্তানের (১ ছেলে, ২ মেয়ে) ভরনপোষণ, লিখাপড়া চালাতে হিমশিম খেতে হয় এখনো । আমরাও চেষ্টা করি যতটা পারি । তার ছেলে S.S.C. তে GPA-5 এবং HSC তেও GPA-5 পেয়ে বর্তমানে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চেস্ট করছে । তার মেয়ে দুটোও কৃতিত্বের সাথে একজন ইন্টার আরেকজন ক্লাস এইট পড়ছে যদিও তাদের বাবাকে এখনো দিন মজুরের কাজ করে আসতে হচ্ছে । তাই এখন জরিনা অভাবের মাঝে তার তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে গর্ব করতেই পারে। এরকম আরো অনেক পরিবারের সন্তান আছে যাদের উপরে উঠার, মানুষ হবার পেছনে মন্দ সামজিক পরিবেশের কোনো প্রভাব নেই । তাই আমার মনে হচ্ছে সামাজিক গর্বটা contardictory matter তাই পাঠকরাই ঠিক করবেন সামাজিক গর্বটা কতটা যুক্তি যুক্ত ?

এখন আসা যাক 'ধর্ম' –কে নিয়ে গর্ব করা । এটা মানুষের একটা সহজাত বিশাল ও বিশেষ স্পর্শকাতর দিক । আমরা মুসলমানেরা আমাদের ধর্ম নিয়ে খুবই গর্ব করি যে ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তি ও ভ্রাতিত্তের ধর্ম । কিন্তু যারা হিন্দু, বৌধ্হ, খ্রিস্টান তারাও নিজ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেন এবং তা নিয়ে ভীষণ গর্বও করেন । আবার চোখটা অন্যদিকে একটু দেন, সোমালিয়া, কঙ্গো, ইথীওপিয়ায় মানুষ মানুষকে চুষছে, দিনে দিনে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, আর আমীর বাদশাহ-রা রিয়েল, দিনার, দিরহাম এর পাহাড় গড়ছে, শত শত সু-উচ্চ অট্টালিকা গড়ছে, …লন্ডন, প্যারিস ও ডালাস এর বৃহৎ ও বিখ্যাত শপিং মল ছাড়া তাদের প্রসাধনী ক্রয় চলে না, Swimming pool ছাড়া তাদের গোসল হয়না, ত্রিশ রকমের খাবার ছাড়া Buffet lunch বা Dinner হয় না, night queen ছাড়া ঘুম হয়না আরো কত কি ! যেখান মানবতার চরম বিপর্যয়, যেখানে জাত-ধর্ম-কুল কোনো বিবেচ্য বিষয় নয় সেখানে মুসলিমরা না হয় অন্ধ সেখানেতো অন্য ধর্ম অবলম্বিরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন, তাদেরকে অভিশপ্ত দ্বারিদ্রতা থেকে চিরতরে মুক্ত করে দিতে পারে । কিন্তু তা তো দুরের কথা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যে বৈষম্যের আচরণ তাতে দিনে দিনে মনুষত্বের স্খলন ও দৈন্যতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এক ধর্মাবলম্বী আরেক ধর্মের শিশুদের উপর white phoshphorous মেরে তার কার্যকরিতা পরীক্ষা করছে, dron (মনুষ্যবিহীন বিমান) হামলায় নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, সেখানে ধর্ম নিয়ে গর্ব মানায় না । তাই ধর্ম নিয়ে গর্বের বুলি আওড়িয়ে কোনো লাভ নেই ।

এখন আরেকটা গর্বের কথা মনে হলো তা হলো 'বাক্তিরূপ গর্ব' হাঁ, এখানে কিছু বলার ও দেখার আছে আপনার রূপ-সৌন্দর্য আছে আপনি খুব রূপসী /beautiful অথবা Handsum হলে আপনি নিজেও গর্বিত বা আপনার পরিবার এ জন্য খুবই গর্ব বোধ করবে আর অনেকের প্রশংসা কুরোবেন ! আর প্রেম ও বিয়ের বাজারে আপনার কদর অনেক । কিন্তু বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রূপ/সুন্দর/সুন্দরী প্রতিযোগিতায় শুধু অবয়ব বা চেহারা রূপ থাকলেই চলবে না এটার সাথে যুক্ত হতে হবে মেধা, জ্ঞান-বদ্ধিমত্তা, গুন আর দেহে যৌন আবেদন/আদল কতটা বেশি এসবের উপর । আবার কারো রূপ আছে গুন নেই, আচার আচরণও ভালো নয়, …অন্যদিকে রূপ নেই, দেখতে ভালো নয় কিন্তু অনেক গুনের, খুবই ভালো আচরণ ও স্বভাবের আপনি তখন কার গুন-কীর্ত্তন গাইবেন, কাকে নিয়ে গর্বটা আসবে ? তাই জন্মসুত্রে পাওয়া শুধুমাত্র বাক্তি রূপটা গর্বের বিষয় নয় বা গর্ব করার কিছুই নেই ।

বাক্তিগত অর্জন নিয়ে গর্ব, আপনি অনেক শিক্ষিত একজন, আপনার এত এত বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছেন একটা ভালো চাকুরী নিয়ে নিতে পারবেন এবং মাস পুরোলে যা পাবেন তা দিয়ে আপনার সংসার কোনরকমে চলে যাবে কিন্তু যখন দেখবেন একজন মস্ত ব্যবসায়ীর স্ত্রীর একদিনের হাত খরচারও চেয়েও আপনার কামাই কম । তখন কেমন লাগবে ? কিন্তু যখনি আপনি আপনার নীতির অবক্ষয় করে অসৎ চরিত্রে 'টু-পাইস' কমাবেন তখন আপনার স্ত্রীর বা সন্তানের দৈনিক খরচ অঙ্কটাও একই রকম হয়ে যাবে তখন আপনিও নিজেই "বনের রাজা'র মত টাকার গদিতে শুয়ে থাকতে পারবেন । যেখানে আপনি নীতির কাছে পরাজিত সেখানে আপনার এত কষ্টের অর্জনের কি দাম রলো ? আবার আপনার লিখা পড়া নেই তা কি হয়েছে আছেত রাজনীতি, ব্যবসা নাহলে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ইয়া ইয়া ভিটা বাড়ি-সম্পত্তি । একসময়ে আপনি প্রচুর ঐশ্বর্যের মালিক হয়েছেন যা গর্ব করার মতই কিন্তু কি যেন একটা অসুখ আপনার মনের মধ্যে ! হয়ত আপনার স্ত্রীর স্বভাব, চাল চলন ভালো না, নয়তো স্ত্রী বেশ ভালো কিন্তু সন্তানেরা হয়েছে বকলম বা গো-অক্ষর অথবা সন্তানেরাও ভালো হয়েছে, গর্ব করার মত, তাদের স্বভাব চরিত্র ও উত্তরোত্তর উন্নতিতে আপনার বুক প্রসারিত হয় কিন্তু আপনার জামাই-টার স্বভাব চরিত্র ভালো না বা বৌমাটা আপনাদের সহ্য করতে পারছেনা । একটা অতৃপ্তি, একটা অস্বস্তি আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কারণ আপনার মেয়েটা ভালো নেই, ছেলেটা সুখে নেই । তাহলে বলুন আপনার এত সমৃদ্ধির মাঝে কি গর্ব করার আছে ?

বয়:সন্ধি কালের গর্ব – এক্ষেত্রেই গর্ব করার মত শুধু দেখি জীবনচক্রের কিছু অংশে শৈশব, কৈশোরের আর যৌবনের দিনগুলো ....শৈশবের শেষের দিনগুলোতে কিছু কিছু মনে আছে, যেমন বাবা মা ভাই বোন আত্তীয় স্বজন সবার কাছ থেকে আদর-যত্ন পেতাম, পর্বের দিনগুলো এলে খুশিতে আটখানা হতাম, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে ও ঘুরতে আর বায়না ধরতাম এসব আজ সবি শুধু গর্বের সৃতি। কৈশোরে লিখা-পড়ার পাশাপাশি খেলা-ধুলা, বন্ধুদের নিয়ে কখনো আড্ডা, কখনো দুষ্টমিতে মেতে কারোও গাছের ফল চুরি ..ইত্যাদি ভালই দিনগুলো কেটেছে মনেহয় যেন আবার কৈশোর জীবনে ফিরে যাই যা অবাস্তব । এসবকিছু যেন সৃতির দোলাচালে অন্তরকে নাড়ায় দেয় আর হা হুতাশ করেই মরি । যৌবনটাও ভুলবার নয় .....ভার্সিটির দিনগুলোত যেন জীবনের স্বর্ণযুগ ..কিন্তু প্রথমেই মাতৃবিয়োগ লিখাপড়ায় অমনযোগী হয়ে পরলেও পরে কিছুটা সামলিয়ে নিলেও ...প্রেমে পরে লিখা পড়ার কখনো ভীষণ গতিময় কখনো শ্লোথ যা প্রেমের খোশমেজাজের উপরই নির্ভর করত । যদিও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না কিন্তু তার প্রভাব লিখা পড়ার উপর প্রচন্ড ব্যঘাত ঘটিয়েছে....অনেক সময় মনে হয়েছে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে চাকুরী ছাড়াই পেনশন নিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে হবে । তাই টক্-মিষ্টি-ঝাল মিলিয়ে যৌবন কাল চলেছে .... বোধ করি পাঠক বৃন্দের বেলায় যৌবনের এ অংশটা ভিন্ন । এ স্তবকটা শুধুই আমার একান্ত নিজের জীবন প্রবাহের অংশবিশেষ । ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সাংসারিক জীবনের গর্ব করার মত আমার কিছুই নেই তাই অন্যের সংসারের সুখ পাখিটা সম্পর্কে আমার ধারণা কমই হবে এজন্য গর্বটা শুধুই আপনারা করতে পারবেন বলে মনে হয় ।

এবার একটু বাক্তি ছেড়ে সমষ্টিগত দিকে যাই, মানে 'জাতিগত গর্ব', পেছনের বিশ্বপরিক্রমায় একটু ঘুরে আসলে দেখা যাবে যে ....জাতিগত গর্ব যেমন একটা ভালো বলে মনে হয় তার আবার ভয়াবহ ও অন্ধকার পরিনিতির দিক রয়েছে । যেমন: এডলফ হিটলার বলেছিল, "Germanic People" always should be of "Nordic Blood" (Nordics are typically described as six to seven feet tall with long blond hair and blue eyes, and are commonly reported as being male. Their skin is said to range from fair colored to tanned and they are sometimes reported to wear skintight clothing.)" এবং এরা হবে সবসময় Anti 'Jews' (who belonged to the "Oriental-Armenoid" race, but was directed against all members of the Jewish ethnic population). আর এই Nordic Blood Germanic people গোটা বিশ্বকে শাসন করবে । তাই 2nd world war ওর মাথায় এমন একটা নেশা চাপিয়ে বসলো যে সবকিছু কে তুচ্ছ করে যুদ্ধ বাঁধিয়ে একের পর এক দেশ জয় করে চলল আর ইহুদীদের কচুকাটা করে অন্য জাতিদেরও তুচ্ছ করে যুদ্ধের ডামাডোলে জঘন্য জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে লাগলো । অবশেষে এলো "এটম বোম" তারই গর্বের সৃষ্টির গবেষণা লব্ধ যা আমেরিকানরা চুরি করে নিয়ে তাদের উপরই নিক্ষিপ্ত করল আর অবসান হলো তার জাতিগত দর্পের । থামল বিশ্বজয়ের রথ্ । কবর হলো Nazi বাহীনির । বৃটিশরাও হিটলারের করুণ পরিণতিতে শঙ্কিত হয়ে তারাও তাদের তল্পী-তল্পা গুটিয়ে ধীরে ধীরে বিশ্বময় সম্রাজ্যের শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো । তারাও এতদিন অতি গর্বের সাথে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ও শাসনের পরিধি বাড়িয়ে চলছিল । ঠিক তেমনি অত্যধিক মাত্রায় গর্বে পাকিস্তানিরাও হিটলারের মত আমাদের বাঙ্গালীদের উপর বহুদিন অত্যাচার আর হত্যা চালিয়েছে । আর তার ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলা আর পাকিস্তানে পেয়েছে নিত্য নৈমিত্তিক বৈদেশিক আর আত্মঘাতী বোমে শত শত পাকিস্তানীর বলি ।

একটু দেখা যাক দেশ নিয়ে গর্ব অর্থ 'স্বদেশপ্রেম' । প্রত্যেক মানুষ তার দেশকে 'মা' হিসেবে ভালো বাসে আর এভক্তি যার মধ্যে নেই তাকে মানুষ বলতে আপনারা হয়ত ঘৃনা পাবেন বা রাজাকার বলে আখ্যায়িত করবেন । হাঁ, আমাদের এদেশের গর্ব করার মত অনেক কিছুই ছিল বা আছে । যেমন এবাংলার মানুষের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয় হলো আমাদের 'বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন' আর তার অনুসৃত মুক্তিযুদ্ধের ফল "স্বাধীন বাংলা' । এ গর্বদ্বয়ের প্রতিটি পরতে পরতে আমাদের সন্তানদের রক্তের বলিদানে বীরত্বগাঁথা সফলতার মাল্যে সত্যি বুক আনন্দে ভেসে যায়, আঁখিপাতে সুখের অশ্রু ঝরে ! আমাদের আরোও গর্ব করার মত অনেক কিছুই আছে । উল্লেখ করার মত যেমন শের-ই-বাংলা, হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দি, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়া, সূর্যসেন, ভাষাবিদ ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জয়নুল আবেদীন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, ড: মুহাম্মদ ইউনুস আরোও কতজন…… বলে শেষ করা যাবেনা. । একেকজন বীরশ্রেষ্ঠ, বীরোত্তম, বীরবিক্রম এদের বীরত্বের কাহিনী দিয়ে একেকটা গল্প কিংবা ইতিহাস তৈরী হয় ! তেমনি পরিতাপের বিষয়ও আছে, অনেক মুক্তিযোদ্ধা আজ রিক্সা চালিয়ে বা দিনমজুরী করে পেটের আহার যোগাচ্ছে, অনেকেই এ স্বাধীন দেশে না খেয়েও মরে গেছেন । স্বাধীনতার পথীকৃত বঙ্গবন্ধু, আর জিয়াউর রহমান দুজনকে হত্যা করে জাতির ইতিহাসে কলংকময় অধ্যায় যুক্ত করেছে এদেশেরই পথভ্রষ্টরা ।
কিন্তু উপরে উল্লেখিত দেশ বরেণ্যরা সকলি কি এদেশের বর্তমান যে হাল, যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অস্থিরতা, কাঁদা ছুড়াছুড়ি, আর্থ-সামজিক অস্থিতিশীলতা, ক্যান্সার তুল্য দুর্নীতি, দ্রব্বমুল্যের অগ্নিগতি, অর্থ ও ক্ষমতার লালসায় খুনা-খুনী, সবকিছুতে দলীযকরণ, জন-প্রতিনিধিদের যখন তখন পাগলের প্রলাপ..... ইত্যাদি অবলোকনের জন্য তাদের জীবন উত্সর্গ করে গেছেন বা সাধনা করে যাচ্ছেন ? না, তা কখনই না । চিন্তা করুন আমরা আসলেই কি অগ্রসর হচ্ছি ? সামনে এগিয়ে যাচ্ছি? আরেকটু চিন্তা করুন, বিশ-ত্রিশ বছর আগে বাজার দ্রব্য মুল্য কি ছিল, তখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সীমার মধ্যে ছিল কিনা, জনগনের নিরাপত্তা কতটুকু ছিল, কি হারে ছিনতাই-চুরি হত, সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ব কত ছিল, রাস্তায় বেড়ানোর কতটা নিরাপত্তা ছিল, রাস্তায় দুর্ঘটনা কত হত, থানা-আদালতে খুন-ধর্ষণের মামলা মোকাদ্দমা কত হত .....ইত্যাদি ! আমার মনে হয় আপনিও আমার সাথে একমত হবেন যে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বর্তমান ঝুকি অনেকটাই বেশী । তাহলে আমরা কি এগিয়ে চলছি, না কি পিছিয়ে যাচ্ছি ?? তাই সামগ্রিক দৃষ্টিতে বর্তমানে আমাদের দেশের হাওয়া সম্পর্কে বহির্বিশ্বে কতটুকু গর্ব করতে পারি ? Digital বাংলাদেশ গড়তে যেয়ে আবার Difficult বাংলাদেশ হবে নাতো ?
দেশের গর্ব নিয়ে একটা চু্টকির কথা মনে পড়ে গেল:
অস্ট্রলিয়ায় তিন প্রবাসী ভদ্রলোক কাজের খাতিরে একই dormitory -তে থাকে ১ম জনের মাতৃভূমি জাপান, দ্বিতীয়জন আমেরিকান ও তৃতীয়জন বাংলাদেশী । অবসর সময়ে তিনজনে বেশ খোশ-মেজাজে বিভিন্ন ধরনের কথা বার্তা বলতে বলতে কোনো এক সময়ে নিজ নিজ দেশ সম্পর্কে ভালো কিছু বলার প্রসঙ্গ চলে আসে । জাপানী ভদ্রলোক গর্ব করেই বলেন, "জানেন আমার দেশের এক মহিলা রান্নঘরে কাজ করার সময় ধারালো ছুরি দিয়ে অসাবধানতায় তার একটা আঙ্গুল কেটে বিছিন্ন করে ফেলেন এবং সাথে সাথে তাকে বিছিন্ন আঙ্গুলটির টুকরো সহ হাসপাতালে নেয়া হয় । সার্জনরা নিখুঁতভাবে আঙ্গুলের টুকরোটাকে জোড়া লাগিয়ে দেয় এখন সে ওই আঙ্গুল দিয়ে আগের মত কাজ করতে পারে!" এখন দ্বিতীয়জন বলছে, "আরে রাখো তোমার আঙ্গুল, আমার দেশে এক ভদ্রলোক কারখানায় কাজ করার সময় তার ডান হাত টি কাটা পরে কনুই থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়, পরে তাকে বিছিন্ন হাতের অংশটা সহ হেলিকপ্টারে করে হাসপতালে নিলে ডাক্তাররা সুন্দর করে বিছিন্ন অংশটুকু জোড়া লাগিয়ে দেয় এবং সে এখন ওহাত দিয়ে দিব্যি কাজ করছে কোনো অসুবিধাই হয় না !" তারপর বাংলাদেশী ভদ্রলোক এখন কি বলেন দেশের বর্তমান হালতে গর্ব করার মত তো কিছুই দেখি না, কিন্তু একটা কিছুতো বলতেই হয়, "আরে ধিত তারি রাখেন আপনাদের আঙ্গুল আর হাতের কাহিনী, জানেন আমাদের দেশের ডাক্তাররা কত গুনে গুনান্নীত ! আমাদের ওখানে এক ১২ /১8 বছরের ছেলে রাস্তা পার হবার সময় ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে তার কোমরের নীচ থেকে পরের অংশ সম্পূর্ণটাই নষ্ট হয়ে যায়, বাধ্য হয়েই কোমরের একটু অংশ রেখে ডাক্তাররা বাকিটুক কেটে ফেলে দেন আর তার পরিবর্তে এক ছাগীর কোমর হতে নীচের অংশ অতি নিখুঁতভাবে জোড়া লাগিয়ে দেন । এখন সুন্দর ভাবে সবকাজ করছে এবং সে দুধও দেয়, double benefits !" অপর দুজন হা করে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশীর দিকে ।
**[ আমার স্বল্পজ্ঞান, দৃস্টি ও অনুভব দ্বারা উপরের লিখাটিতে পাঠকদের ভিন্ন মত ও অমিল থাকতে পারে আর এ জন্য ত্রুটি-বিচ্যুতি গুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আর শেষের স্তবকটা কাল্পনিক কৌতক বিশেষ ।]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মনির খলজি >> প্রজাপতি মন << আপনি ধৈর্য ধরে আমার লিখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ....ভালো থাকুন !
প্রজাপতি মন এত এত বড় গল্প লিখেছেন যে, পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে গেলাম, তবে সবগুলো কথাই চরম সত্য (জোকস বাদে)।
মনির খলজি >> M.A.HALIM << হালিম বন্ধু, আসলেই "কি কমেন্ট করব" ....এটাই একটা বিশাল মন্তব্য ....আর পরে যা যা বললে, এত বড় ভার আমার উপর চাপিয়ে দিলে যার যোগ্য আমি নই বোধয় ! ...বন্ধু তোমার অসাধারণ মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ....আর ভালো থেকো ।
মনির খলজি >> Pondit Mahi << মাহী ভাই, আমার লিখা নিয়ে আপনার "দারুন" মন্তব্য টা আমার মনে রেখাপাত করে গেল !...যাদের পদভারে মুখরিত এ-গল্পকবিতা তাদের থেকে 'দারুন' কথাটা শুনা একটা ভাগ্যের ব্যাপার ! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ অবেশেষে ধৈর্য ধরে আমার লিখাটা পড়ার জন্য ...ভালো থাকুন !
মনির খলজি >> আশা << আশা ভাইয়া, আপনার মন্তব্যে মনটা ভরে গেল ...এত সুন্দর করে অনেক কিছু বললেন যে আসলেই বিবেকের কাছে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় গর্বের স্বরূপ নিয়ে ....আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে লিখাটা পড়ার জন্য ....আর ভালো থাকুন !
মনির খলজি >> আহমাদ মুকুল << শ্রদ্ধেয় এ. মুকুল দা, আমার লিখায় আপনার প্রবেশ অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তার চেয়ে আরো অনেক বড় তাত্পর্যপূর্ণ আপনার প্রশংসিত মন্তব্য ....আর এজন্য লিখার চেষ্টা টা আমার বৃথা নয় তা কিছুটা ভাবতে পারি ....আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে লিখাটা পড়ার জন্য । এবার কিছুদিন ধরে আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা বিধায় অনেকের লিখায় যেতে পারিনি ...আর গ্রাম-বাংলা এর উপর লিখাটাও ঠিক মত পোস্টিং দিতে পারিনি ....আমার অপঠিত লিখাগুলো এর মধ্যেই শেষ করব বলে আশা করছি ....ভালো থাকুন ।
M.A.HALIM বাহ! কি কমেন্ট করব।? যে গল্প শুধুই প্রশংসার দাবিদার। কত বেশী সাহিত্য জ্ঞানের অধিকারী হলে এরকম একটা গল্প সাজাতে পারে ভাবতেই নিজকে শিষ্য মনে হয়। অসাধারনের বিকল্প কোন শব্দ মনে পড়ছে না। .............................শুভ কামনা বন্ধুর জন্য।
পন্ডিত মাহী ব্যাক্তি, বংশ, ধর্ম এর বিশ্লেষন... ডিজিটাল ও ডিফিকাল্ট বাংলাদেশ, আর শেষএর কৌতুক--- সব মিলিয়ে দারুন একটা লেখা পড়লাম...
আশা ভালোই লাগল। গর্ব সংখ্যায় কত জনের গর্ব দেখে যে আমিও গর্বিত হয়েছি- তার শেষ নেই। কিন্তু সব গর্বই মাটি হয়ে গেল- যখন আপনার এখানে এসে জানলাম গর্ব করার কিছুই নেই। আসলেই তাই। আমি অনেক টাকার মালিক, আরাম-আয়েশের মাঝে দিন কাটে- তাই আমার গর্বের শেষ নেই। কিন্তু আমার পাশে অন্য কেউ অনাহারে ধুকে ধুকে মরছে। তাতে আমার গর্ব বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য। গর্বের প্রকৃত স্বরূপ বিশ্লেষণের এ অসামান্য চেষ্টার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবু আমি আপনাকে নিয়ে গর্বিত।
আহমাদ মুকুল গল্প হল, না প্রবন্ধ হল- তাতে কিছু যায় আসে না। ফর্মেটে কঠিনভাবে বন্দী থাকলে এরকম গবেষণাধর্মী লেখা পেতাম কই? অনেক সাধুবাদ এরকম লেখা এখানে দেয়ার জন্য। আপনি আমার নিয়মিত পাঠক, আপনার লেখাতেও আমি ঢু মারার চেষ্টা করি। এবার দেরী হয়ে গেল, অবশ্য পুরো গ.ক তেই এবার পিছিয়ে পড়েছি। ভাল থাকবেন।

২৫ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪