এক.
একটু মন খারাপ নিয়ে দুপুরের শেষ প্রান্ত বেলায় বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে ছিলাম। শনিবার মা-র অফিস এমনেতে ছুটি কিন্তু আজ খোলা। এসব হলো হরতালের ফল, ফলটা কু না সু ব্যাখা দেয়ার মানে হয় না। ভাইয়া আর ভাবীর অবশ্য ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে, তারা কেনাকাটার নামে কোথায় যেন প্রমোদ ভ্রমনে গেছেন। বাসায় তাই একা আমি। আর আমার নতুন চাকুরীতে যোগদানের দিন আগামী মাসে। বেশ মুক্ত বিহঙ্গ জীবন এখন, অবশ্য নিরালায় বন্দী গৃহে বিহঙ্গ। রোজার দিন বলে অবশ্য একটা সুবিধা হলো খাওয়ার ঝামেলা নেই।
মিনিট পাঁচেক আগে অবশ্য কী সুন্দর গুটুর গুটুর গল্প করছিলাম। আমরা এখন অনেক এগিয়েছি, অন্তত কথা বার্তায়তো বটেই। আমরা পরিকল্পনা নিয়ে মাতি। তবুও বিয়ে তো কেবল ঠিক হলো, হয়েতো আর যায়নি, প্রেমিক প্রেমিকার গন্ধ গায়ে গতরে লেগে আছে, যদিও আজকাল সে গন্ধ একে অন্যকে ছুঁতে চায়, প্রণতি মানে আমার হবু বউটি তা শুনে হাসে আর আমি আগামী দিনগুলোর পরিকল্পনার শুষ্ক দানা কোমল হাতে ছড়িয়ে দেই, একটু মিষ্টি মধুর কথা জলীয় উপাাদন হয়ে দানাগুলোর অংকুরোদগম ঘটাবে , তরু হবে, লতা হবে, আমরা বিয়ের পরে সে সব লতায় নিজেদের প্যাঁচিয়ে নেবো। এতকাল তো কেবল প্রেমই করলাম , সেই দীর্ঘ তিনটি বছর, এখন একটু গুছিয়ে না নিলে বিয়ের পরে কি আর ভাবার সময় হবে। তখন তো গন্ধে গন্ধে মিলনের মাতাল হাওয়া বইবে কেবল। সে কারনেই বলছিলাম, প্রণতি আমি কিন্তু বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বাবা হব, দেখো আমি সেই ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। আমার তেমন একটা বাবার স্মৃতি মনে পড়ে না। কেবল মনে আছে বাবা আমাকে ঘাড়ে উঠিয়ে হেঁটে হেঁটে একটা বড় ব্রীজের কাছে নিয়ে যেতেন , দোকান থেকে চকলেট কিনে দিতেন। আমরা ছোট বেলায় যেখানটাতে থাকতাম, আমি সেই এলাকায় গিয়েছিলাম খুঁজতে, স্মৃতিতে সঞ্চিত সেই ব্রীজটা কোথাও পেলাম না, অবশ্য একটা ছোট কালভার্ট পেলাম। আর যাই না, স্মৃতির ব্রীজকে বাস্তবের কালভার্টে বদলে নিতে চাই না। সে যাক , তুমি রাজী তো?
ওমা! এত সিরিয়াস কথা বলছিলাম, তার উপরে বাবার স্মৃতি মনে পড়তেই আমিও একটু কেমন নষ্টালজিক হচ্ছিলাম, প্রণতি হেসেই উড়িয়ে দিলো। বলল, কথা কেবল ঐ দিকে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না, দেখবো নে বিয়ের পর সোহাগের কত রূপ দেখা যায়।
বললাম, আমি সিরিয়াসলি বলছি।
ও বলল, দুই তিন বছর পর। একটু এনজয়, একটু সময়তো দেবে। দেখো আমি কত ছোট, মাত্র অনার্সে পড়ছি। এই বয়সে পেটে একটা আস্ত মানুষ, ওমা! কি ভয়ংকর।
ক’ দিনেই দেখবে তোমারই ইচ্ছে করবে। মা হতে চাইবে!
করবে না।
সেই দিয়ে সূত্রপাত ..তারপর আরও একটু কিছু কথা এগোতেই ওর ও রাগ হলো আমারও রাগ হলো আর ফোনটা মরে গেলো। আমরা অবশ্য আমাদের এই ক্ষণিক রাগটাকে নাম দিয়েছি মিউচুয়াল রাগ, আর এই রাগের পর আমরা আবার যখন কথা বলব তখন সেটার নাম মিউচুয়্যাল লাভ। কিন্তু আমার মন খারাপ হয়েছিল, বাবা হবার সাধ আমার মধ্যে আমি টের পাচ্ছি। ও রাজী হবে তো, না যা বলল সেটাই করে ছাড়বে।
কলিংবেলটা বিষন্ন ভাবটার মাঝে সুনামির একটা ছোট ঢেউ এনে তুলল। মা বোধহয়। এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললাম। জিজ্ঞেসও করলাম না।
মা কই! এ দেখি এক অচেনা লোক। বেশ পরিপাটি লোকটা। কাপড় চোপড়ে যেমন ভদ্রতার ছাপ চেহারায়ও তেমন বিনয়ের প্রাচুর্যতা। কাকে চান জিজ্ঞেস করেতই খুব বিনয়ে শুরু করল, ভাইয়া কিভাবে বলি, আপনি আমার ছোট ভাইয়ের মত। আসলে খুব লজ্জা করছে , বাসায় খালাম্মা নেই বাব বড় কেউ।
আমি আবার ভাবছি অতি ভদ্রতা চোরের লক্ষণ না তো। বললাম, আসে, কিন্তু অসুবিধা নেই আমাকেই বলেন।
দেখুন ভাইয়া, আসলে দুদিন পর ঈদ। আমি আসলে একটা ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করতাম। একটু দুর্ঘটনায়র কারণে গত দুই মাস ফ্যাক্টরীর কাজ বন্ধ। অন্য কোন কাজও যোগাড় করতে পারিনি। অনেক আন্দোলন করেছে শ্রমিকরা। আমরা অফিসাররা আন্দোলন ও করতে পারি না। পেপারেতো দেখেছেনই, ঐ যে আশুলিয়ায়। আমার বাসাও ঐ দিকে। আসলে লজ্জার কানেই এই এত দূরে এসে, খুব লজ্জা ...ছেলে মেয়েগুলোর জন্য ঈদের কোন নতুন জামা কিনতে পারিনি। দুদিন পরে ঈদ। প্রতিদিন বাসায় ফিরলে ওরা অপেক্ষা করে। ওদের কথা দিয়েছি আজকে নতুন জামা কিনেই ফিরবো। আসলে ধার করতে করতে এমন হয়েছে কারও কাছে চাওয়া মুখ নেই। তাই ভাইয়া যদি কিছু সাহায্য করতেন। কোনদিন সুযোগ হলে শোধ করে দেবো। আমি এই যে কাগজে লিখে রাখছি কোন বাসা থেকে কত দিলো।
কথা গুলো বলেই লোকটার চোখগুলো মাটিতে নেমে গেলো। সে আর তাকাতে পারছেনা লজ্জায়। আমিও তাকাতে পারছিনা। সে একজন বাবা। একজন বাবার অসহায় চোখ দেখাও মনে হচ্ছে পাপ। আমি দরজাটা ভিড়িয়ে বললাম, একটু দাঁড়ান।
ছুটে গেলাম। ড্রয়ারে দুই হাজরা টাকা পেলাম। ছুটেই ফিরলাম দরজার কাছে আবার। তখনও লোকটা মাথা নিচু করে আছে। হাতের আঙ্গুল কচলাচ্ছে। বললাম, আপনার কয় ছেলে মেয়ে?
এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটা বড়, স্কুলে পড়ে...
এই নিন, দুই হাজার টাকা। এভাবে আর নিজেকে কারও ছোট করার দরকার নেই। এই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের জন্য কাপড় আর ঈদের দিনের জন্য কিছু খাবার দাবার কিনে নিয়ে যান। আর ও টাকা ফেরত দিতে হবে না। মনে করবেন তাদের এই আংকেল উপহার দিলো।
লোকটচার চোখের কোন ভিজে এলো। আমার হাতটা ধরে পারলে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। তারপর কেবল বলল, আপনি খুব ভালো ভাইয়া, খুব ভালো, আল্লাহ আপনার সব চাওয়া পূরণ করুক। একদিন বাবা হলে বুঝবেন এক বাবার অসহায় হওয়াটা কত কষ্টের...
দুই.
পরবর্তী মাসের এক তারিখে নতুন চাকুরীতে যোগ দিয়েছি। ও মাসেরই শেষ শুক্রবার আমার বিয়ের দিন। নতুন চাকুরী, বড় অফিসে বড় চাকুরী, পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যস্ত একদিকে, ওদিকে আবার বিয়ের যোগার জান্ত। উফ! বিয়ে এত ঝক্কি ঝামেলা আগে বুঝলে লুকিয়েই ও পর্ব সেরে ফেলতাম। প্রণতিও দেখলাম আমার কথায় সায় দিলো। তাতে বুঝা গেলো ঝক্কি কেবল এক পক্ষেই নয়, এ মাল উভমুখি প্রবাহ।
নির্দিষ্ট দিন, বিয়ের দিন- আমার প্রিয় প্রণতি আমার হয়ে আসবে। এর মধ্যে বাবা হবার বিষয়ে আমাদের সুন্দর দফা রফা একটা হয়েছে। আমার এক বছর আর ওর তিন বছরের গড় করেছি। দেড় বছরে ঠেকেছে। বাকীটা উপর ওয়ালার ইচ্ছে।
মনে মনে বিয়ের রাতের কত ফন্দি এঁটে ফেলেছি । ভাবছিলাম কিছুক্ষণ প্রণতির সাথে কথার সুযোগ পেলে কিছু একটা উছিলায় শর্ট টাইম রাগ অনুরাগের একটা পালা শুরু করা যেত। সে পালার পালের দোলায় রাতে নতুন একটা চমক আসত। রাগ ভাঙানোর সুযোগে গন্ধ বিনিময়ের নতুন এক ফন্দী। কিন্তু কই কথা বলারই সুযোগ নেই। মহাব্যস্ত সে। তার বড় বোন সেঁজুতি আপু ধরল, বলল, ওতো পার্লারে।
কত সাজা যে লাগে! আরে এমনেতই সুন্দরী, বরং রঙ দিয়ে সং বানিয়ে দেবে। ঠিক তাই। বিয়ের আসরে চেহারাটা প্রণতির প্রথম দেখে মনে হচ্ছিল বড্ড অচেনা। এত সুন্দর মুখটা তার কেমন বিকৃত করে দিয়েছে রঙ চঙ ভরিয়ে। এক সুযোগে কানটার কাছে মুখটা নিয়ে বলেই ফেললাম, খুব বাজে লাগছে। বিনা সাজে এর চেয়ে তুমি কোটি গুন সুন্দর।
মুচকি হাসি যা ছুড়ে দিলো সে কথায় তাতে বুঝলাম না সেটা খুশি না বেজারের, তবে বুঝলাম ফটো শুটে আমাকেও হাসতে হবে হালকা কেলিয়ে দাঁতগুলো। মেকি হাসির চেষ্টা করছি তখনই চোখ গেলো, আরে ঐ তো ঐ তো ওপাশে সোফায় বসে আসে মেরুন পাঞ্জাবী পড়া যে লোকটা, ঐ তো ঐ তো সেই লোকটা। সেই যে ঈদের আগে ছেলে মেয়ের জন্য নতুন কাপড় কিনে দিতে হাত পেতেছিল...
এই লোক এখানে? তবে কি প্রণতিদের কোন আত্মীয়? হলেও হতে পারে। একটা ছোট মেয়ে লোকটার হাত ধরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। লোকটা তাকে বেশ আদরও করছে। চিনলাম, সেঁজুতি আপুর মেয়ে। সেঁজুতি আপুর শ্বশুর বাড়ির লোক? দুলাভাইকেও তো কখনও দেখিনি। এইতো কয়েকদিন আগে প্রণতি আমাকে আসল কথাটা বলেছে । বলেছে আমি ও বাড়ির নতুন জামাই হতে যাচ্ছি আমার আসলে জানা উচিৎ। আপুআর দুলাভাই এক সাথে থাকে না। বিষয়টা আরেকটু জটিল। আপু দুলাভাইকে বের করে দিয়েছেন বাড়ি থেকে। দু’জনের প্রেমের বিয়ে। সময়বয়সী। একসাথে মেডিক্যালে পড়তেন। ফাইনাল ইয়ারে থাকতেই ওনাদের বিয়েটা হয়। কেউ অরাজী ছিল না। কিন্তু তারপর আপু পাশ করে বের হয়ে বড় ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্যে ধুমসে প্রাকটিসও শুর করে দিয়েছে অথচ তার স্বামী আর ইন্টারনিটা কমপ্লিট করতে পারল না। প্রণতি জানাল দুলাভাই নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন আজে বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। ততদিনে একটা মেয়ের বাপ ও হয়েছে অথচ সেদিকে খেয়াল থাকে না , মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যায়। দু পরিবারে তখন ভীষন অশান্তি। মেযের সাথে বাবার বেশ খাতির অবশ্য। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপা সব সহ্য করেন। সেঁজুতি আপু আরও একটা বাচ্চা নিলেন। যদি এবার সে ঘরে ফেরে। এবার ছেলের বাবা হলেন দুলাভাই। কিছুদিন দুই বাচ্চা নিয়ে বেশ ভালো ছিলেন। আপু কিছুটা চিবিৎসা নিজেই করছিলেন। কিছু টাকাও দিলেন, সে টাকায় একটা ব্যবসাও শুরু করেছিলো ভাইয়া। একটা ডিসপেন্সারি। ভালোই চলছিল। আপারও চাকুরী ছিল বেশ নামীদামী এক ক্লিনিকে। ভালোই চলছিল। কিন্তু নেশা বলে কথা। একদিন আবার ঠিকই দুলাভাই ও পথে পা দিয়েই ফেললেন।
যখন ধরা পড়লেন। আপা আর কোন টাকা তাকে দেবেন না জানালেন। ব্যবসাটাও গুটিয়ে ফেলেছিলেন। আসলে বেঁচে দিয়েছেলেন ওষুধের দোকানটা। ও টাকা দিয়েই ভালো চালিয়েছিলেন ক’দিন নেশা। আপু ছাড়লেন না। বললেন, ভালোবাসি বলে আর দু বাচ্চার বাবা হয়েছো বলে কেবল ডিভোর্স দিলাম না। তবে আর নয়, তুমি তোমার মত পথ দেখ।
তারপর থেকে দুলাভাই আলাদা। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে দুটোকে দেখতে আসেন। আপু সময় বেঁধে দেয়। আসলে লোক তিনি ভালোই। কিন্তু নেশা উঠলে যে কী হয় কেউ জানে না। কিছু টুকটকা কাজ টাজ করে দোকানে দোকানে আজকাল। আবার সে সব হারায়ও দ্রুত। দুলাভাইকে তার ভাই বোনরাও কেউ জায়গা দেয়না। মা বেঁচে আছেন। মা একটু থাকার জায়গা দেয় তাদের বাড়িতে। নিজের পৈতৃক জমি জমাও সব তার বেঁচা শেষ। আপু কষ্ট পান, না দিয়ে পারেন না, শ্বাশুড়ির কাছে খাবার খরচটা পৌঁছে দেন প্রতি মাসে।
...ছবি তুলতে তুলতে মেকি হাসির আড়ালে হঠাৎ মাথাটা খুলে গেলো। তবে কি ঐ লোকটাই প্রণতির দুলাভাই মানে আমার ভায়রা ভাই? শিউর হওয়ার জন্য প্রণতির হাতটায় খোঁচা দিয়ে জানতে চাইলাম লোকটা কে?
উত্তরে সব হিসেব মিলে গেলো।
বললাম, প্রণতি আপু কই। আমার সাথে ওনার পরিচয় করিযে দেবে না।
পরিচয় না হওয়ায় ভালো। দেখছো না মেয়েকে নিয়ে খেলছে, কী করেছে এ মেয়ের জন্য, কী করেছে বলোতো জীবনে? একটা বদ লোক। ওনাকে আমি পারলে আমার বিয়েতে আসতেই দিতাম না।
লোকটার চেহারাটা কিন্তু বল উনি মানুষ খারাপ না।
তুমি জানো ঘোড়ার ডিম।
...তারপরই ফটোসেশন শেষ হলো। এক পাশে সেঁজুতি আপুকে দেখে এগিয়ে গেলাম । আপু বললাম, আপনার কি মন খরাপ আপু? প্রণতি দুলাভাইকে দেখালো একটু আগে। আপনারা কী কথাও বলেন না?
ও কী কথা বলার যোগ্য! ওসব আজকের দিনে বাদ দাও তো।
একটা কথা বলি আপু। গত ঈদের দিন তিনেক আগে- বিকেলে আমি বাসায় একা ছিলাম, একটা লোক দরজায় নক করল। তারপর...যা যা সেদিন ঘটেছিল আপু কে শোনালাম।
তারপর বললাম, আপনার হাসব্যান্ডই সেই লোক ছিলো। এমন একটা লোককে আপু আপনি ছেড়ে দেন না কেনো; ছেলে মেয়ের ঈদের কাপড় কেনার অভিনয় করে ভিক্ষা করে টাকা নিয়ে নেশা করতে পারে যে লোক, সে সব পারে। ওনার কাছ থেকে ছেলে মেয়েকে দূরে রাখা উচিৎ।
আমরা কথা শুনে হঠাৎ সেঁজুতি আপু চোখটা আড়াল করে জল মোছার চেষ্টা করলেন। ওনার মুখে হাসি। বললেন, কী বলছ এসব। সত্যি নাকি? তুমি সত্যি বলছ। তুমি জানো, ও তোমার ঐ টাকা দিয়ে নেশা করে নি, ও সত্যি ছেলে মেয়ের জন্য নতুন কাপড় আর মিষ্টি নিয়ে ঈদের আগের রাতে বাসায় হাজির হয়েছিল। খুব বকেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, টাকা পেলে কই? বললোই না। বললাম নির্ঘাত চুরি ডাকাতি করেছ কোথাও। ও হেসেছিল। কাপড় আর মিষ্টি গেটের সামনে ফেলে চলে গিয়েছিল। আমি ও কাপড় ওদের পড়তে দেইনি। কী ভুল করেছি! কী ভুল!
আমি এখুনি বাসায় যাব । ঐ কাপড় পড়িয়েই ওদের নিয়ে আসব। একজন স্ত্রী তাও ডাক্তার স্ত্রী হয়ে পারলাম না, আমি ভুলে গিয়েছিলাম-‘বাবা’ সম্পর্কটার এক অমোঘ শক্তি আছে, ওটাই কাজে লাগবে। ও এখনও অমানুষ হয়ে যায়নি। আজ তোমাদের সাথে আমাদেরও হবে নতুন বাসর।