ঘটনাকাল ২০২৭: উত্থান পর্ব

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

মামুন ম. আজিজ
  • ২৯
  • 0
  • ১৩২
সব আয়োজন ঠিকমতো সম্পন্ন করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। সাড়ে এগারোটার বেশি বাজে। ঘরে ফিরতে ফিরতে বারোটা। কোথাও কোন খুঁত রাখতে চায় না রুহুল। এত বড় সাপ্লাইয়ের কাজটা পেতে যেমন যথার্থ তদবির এবং সিস্টেম মেইন্টেনে তার কোন খুঁত থাকে না, তেমনি কাজও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করাতে তার কোন কার্পণ্য থাকে না।
ঈষৎ উষ্ণ পানিতে খানিকক্ষণ শরীর ভিজিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল সে। নতুন চাঁদের রূপালী আলো এসে বারান্দার অর্ধেকটা জড়িয়ে রেখেছে লাবণ্য প্রভায়। ভীষণ মায়াবী। কামাতুর। এ প্রভা নিঃসঙ্গতার শত্রু। অথচ কিছু করার নেই। এত বড় ফ্লাটে রুহুল এখন একা। তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় গেছে। মেয়ের স্কুলে টানা তিনদিনের ছুটি । নানা বাড়ীতে বেড়ানোর এই তো সুযোগ। রুহুলও মানা করেনি। সে মানা করেও না। এই হঠাৎ হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত নিঃসঙ্গতাগুলো অতীতের সাথে যোগসূত্র ঘটায়। রুহুল জানে অতীতের সাথে স্মৃতির সে মিতালী মাঝে মাঝে বেশ আনন্দ দেয় । কিন্তু কষ্টই দেয় অধিক সময়।
রুহুল ২৫ তলার উপরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে সমুদ্র টা বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। দূর থেকে দূরে কালো আকাশের অন্ধকার ছায়া নোনা জলের বিস্তৃতিতে। রাতের নীরবতায় ছাপিয়ে ঢেউ এর গর্জন স্পষ্ট কানে আসতে থাকে। ঐ দূরে উত্তর পশ্চিমে একরাশ আলো ফুটে রয়েছে সাগরের বুকে। ওটাই সোনাদিয়া দ্বীপ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর। একটা আলোক বিন্দু আরেকটু দূর থেকে আলোকগুচ্ছের দিকে এগিয়ে আসছে। বাণিজ্য পণ্য নিয়ে এগিয়ে আসছে কোন জাহাজ। সেদিকে খানিক তাকিয়ে থাকে রুহুল। আলোর এগিয়ে চলার সাথে চোখটাও এগোতে তাকে একই সরলরেখায়।
নিকোটিন বিহীন সিগারেটটা ধরাতে ধরাতে সে রোজকার মত ভাবে ভাগ্যিস এই সিগারেট তৈরি হয়েছিল, না হলে নেশা তো দূর হতো না, জীবনটাই দূর হতো। মিশে যেত হয়তো মৃত্যু সমুদ্রে বহু আগেই।
চলমান আলোক বিন্দু আলোক গুচ্ছে পৌঁছে গেছে প্রায়। সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নোঙর করবে। পালে পালে নাবিক নামবে। তারপর বোটে করে ছুটে আসবে এই দিকেই এই কক্সবাজারে । এ মেগা সিটিতে হোটেলের কোন অভাব নেই। সবচেয় ভালো হোটেলটা ৫৮ তলা। বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী আজ কক্সবাজার। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীও বটে। মুহূর্তে মুহূর্তে এখানে মানুষ আসছে। মানুষ যাচ্ছে। একটা প্লেন নামবে। কালো আকাশে সে প্লেনের বুকে জ্বলছে আলো। সেদিকে তাকিয়ে গর্বে ফুলে ওঠে রুহুলের বুক। মনে পড়ে যায় এখানে এইতো বছর দশেক আগেও একটা ছোট্ট এয়ারপোর্ট ছিল কেবল। রাতে কোন বিমান নামতে পারতো না। আজ কি অভাবনীয় পরিবর্তন। বিমান মাঝে মাঝে নামতে থাকে মিনিটে মিনিটেও। এই নতুন মেগা সিটি বদলেছে তার জীবন। জীবনের বিভীষিকা কাল ছাইয়ের ধোঁয়ার মত শূন্যে অনেকটাই আজ বিলীন হয়েছে। একটা শান্তির দীর্ঘশ্বাস নেয় তারপর রুহুল সিগারেটের শেষাংশটা বারান্দার কোনায় রাখা ইলেকট্রনিক রিসাইকেল বিনটার মধ্যে ফেলে ঘরের ভেতর চলে আসে।
সারাদিনের ক্লান্তির পর চোখ দুটো লেগে আসতে চায়। বিছানায় শুয়ে পড়তে পড়তে বিছানার পাশে দেয়ালে সংযুক্ত মাষ্টার পিসির ভয়েস রিকগনাইজার স্ক্রিনটার দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে যায়।
'সিকিউরিটি চেক'।
মুহূর্তে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ঘরের প্রতিটা জানালা এবং দরজার চিত্র; সেগুলোর ক্লোজ কন্ডিশন।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে-'পারফেক্ট'। রুহুল নিশ্চিন্ত হয়।

আগামীকাল ১৪ই এপ্রিল। বাংলায় ১লা বৈশাখ। বাঙালীর বহু কালের ঐতিহ্যময় দিন। আধুনিকতা যতই আঁকড়ে ধরুক পহেলা বৈশাখের পুরনো আমেজ ভোলেনি বাঙ্গালী। এতো ভোলার নয়।
কাকতালীয় ভাবে এই দিনেই পড়েছ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলা। কক্সবাজার সি ভিউ স্টেডিয়ামেই খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ভারত আর বাংলাদেশে যৌথ ভাবে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ১৪ তম আসরের ফাইনালে জন্য দু'দেশের মধ্যে এই স্টেডিয়ামই সর্বোত্তম। খেলোয়াড়াও সবাই এখানে আসার জন্য উদগ্রীব থাকে। এখানে অপূর্ব এ শহরের সাথে বাড়তি প্রাপ্তি হয়ে হঠে সাগরে দীর্ঘ তীর আর উষ্ণ নোনা জল। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বালু তীর। একে এড়ানোর সাধ্য কি আর হয় কারও!
বিছানায় গাটা এলিয়ে দিয়ে রাহুলের মনে পড়ে সেই ২০১১ সালের কথা। সেবার সেই ১০ম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশও আয়োজক দেশের একটি ছিল। আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সেটাই ছিল প্রথম। সারা দেশে সেবার অভূতপূর্ব সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল। ছোট্ট বাংলাদেশে তখন সমস্যা ছিল চতুর্মুখই। একমাত্র ক্রিকেটই যেন ছিল নিরপেক্ষ এবং প্রকৃত আনন্দের ঐক্য। সহস্র হতাশায় হতাশাগ্রস্ত মানুষের সব আশা ভরসা হয়ে উঠেছিল ক্রিকেট। কিন্তু দেশের তখনকার চতুর্মুখই আশাহত ঘটনার মতই ক্রিকেট দল শেষ পর্যন্ত আশাহতই করে তোলে জাতিকে। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার ঢেউ লেগেছিল ক্রিকেটের তীরে। মানুষ আশাহত হলেও স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন নিয়েই শান্ত থেকেছে।

সেই নিদারুণ দিনটির কথা কখনও ভোলেনি রাহুল। সেদিন সে নিজেও মাঠে ছিল। হয়তো কপালের ফের। দিনটি ছিল ৪ঠা মার্চ ২০১১ সাল। শুক্রবার। ছুটির দিন। ঐ বিশ্বকাপে সেটা বাংলাদেশের তৃতীয় খেলা। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রচণ্ড টেনশনের ম্যাচ। জয়ের আশা সেদিন বাংলাদেশের জন কোন অন্যায় আবদার ছিলনা। অনেকরকম পর্যালোচনা আর পর্যবেক্ষণের ফসল ছিল বাংলাদেশের জয়ের প্রত্যাশা।
বেলা আড়াইটায় খেলা শুরু হলো। ঢাকার মিরপুরের মাঠে। টসে জিতে তখনকার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান ব্যাটিং নিয়েছিল। সেই সাকিব আজও আছে দলে। দলের সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় সে। সবচেয়ে অভিজ্ঞ। একজন ক্রিকেটার হিসেব দেশের সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের অধিকারী। বয়স এখন ৩৯ বছর। গত বিশ্বকাপ পর্যন্ত সাকিব দলের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। ২০২৩ এর ঐ বিশ্বকাপে ফাইনালে অল্পের জন্য হেরে গেলো ভারতের কাছে। এবার অবশ্য বাংলাদেশই টপ ফেভারিট। এখনও পর্যন্ত আনবিটেন রয়েছে। গত এক বছর ধরে ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশই এক নম্বরে।
অথচ ২০১১ সালের বহুল প্রত্যাশার সেই ম্যাচটিতে মাত্র ৫৮ রানে ধরাশায়ী হয়েছিল সাকিব বাহিনী। ১৮.৫ ওভারেই ওল আউট। পুরো খেলার মধ্যে একমাত্র সান্ত্বনা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেরেন সামীর উইকেটটা। তাছাড়া হাসতে খেলতে মাত্র ১২ .২ ওভারেই জিতে গিয়েছিল অতিথি দেশ। ১০০ ওভারের খেলা শেষ মাত্র ৩১ ওভারে। সময় লেগেছিল মাত্র আড়াই ঘণ্টা। ঐ দিনের মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পড়েই আবার ও বিপর্যয়। সেটা ছিল সাউথ আফ্রিকার সাথে। এবার ২৮৪ রানের টার্গেট এবং একই সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণের প্রেশারে মাত্র ৭৮ রানে অল আউট হয়ে ভীষণ লজ্জায় নিমজ্জিত করেছিল জাতিকে।
শুয়ে শুয়ে রুহুল ভাবে, সাকিবের কি কাল ফাইনাল খেলতে গিয়ে এই কথা গুলো একটুও মনে পড়বে না? অবশ্যই পড়বে। আর ভাগ্যের কি পরিহাস। কাল ফাইনালে প্রতিপক্ষ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভাগ্যের চাকাটা আসলেই বোধহয় গোল।
নিজের জীবনে কখন আবার এই প্রভাব পড়ে ভেবে ভয় হয় রুহলের। এত উত্থান কখন না জানি পতিত হয় নোনা পানির ভেতর?
রুহুলের ইচ্ছে হচ্ছে খেলা বিষয়ে নতুন কোন একটু খবরা খবর জানার। আবার ঘুরলো দেয়ালে লাগানো স্ক্রিনটার দিকে দিকে। হাতের টাচ রিমোটে নিউজ বাটনে স্পর্শ করেতেই দেশের সব নিউজ সাইটের লিংক চলে এলো। এবার মুখে বলল ডেইলি কক্সবিডি। মুহূর্তে টাটকা খবর সব ভেসে উঠল পর্দায়।
প্রথম খবরেই সাকিবের সাক্ষাৎকার। এক নিমিষে পড়ে ফেললো রুহুল। সাকিব ভোলেনি। খুব সহজ স্বাভাবিক ভাবে উল্লেখ করেছে সেদিনের কথা। সাংবাদিক ব্যক্তিটি ৫৮ রানের সেই পুরানো ক্ষতর মাঝ ব্যথা দিতেই সাকিব যেন বলে উঠেছে,
.. সেদিনের সেই লজ্জার কথা আর সকলে ভুলে গেলেও আমি তো ভুলতে পারিনি। এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে গেলে লজ্জিত হন মনঃপ্রাণ। মনে পড়ে আমার ওদের বহনকরা গাড়ীতে ইট ছুঁড়ে মেরেছিলাম। কি ভীষণ লজ্জা ছিল ৫৮ রান করা, তার চেয়েও যেন বেশী হয়েছিল ইট ছোঁড়ার বিষয়টা। কাল নিশ্চয় বিশ্বকাপ জয় করে আমরা কিছুটা হলেও সেই লজ্জা হতে পরিত্রাণ পাব। স্বপ্ন হবে পূরণ। ...

রুহুলের সেদিনের কথা মনে পড়ে। খেলা শেষের আগে আগেই পুরো স্টেডিয়াম খালি হয়ে গিয়েছিল। ঐ দিন মাঠে যে প্রতিষ্ঠান খাবার দোকানের লিজ পেয়েছিল সেখানে বাবুর্চি ছিলেন রুহুলের বাবা। বাবার বদৌলতে খাবারের সাথে সেলস ম্যানের একটা চাকুরী জুটে যায়। সেদিন তার বয়স ছিল ২০ বছর। টগবগে তরুণ। সেলস ম্যান এর কাজের চেয়ে বড় পাওনা ছিল মাঠে ঢোকার লাইসেন্স। ঢাকা ততদিনেই এমন এক শহর হয়ে উঠেছিল, সেখানে যে কাজই হোক তাতে একটা জট লাগবেই। জট আর অনিয়ম ছিল খেলার টিকেট বেচা নিয়েও। এক একটা টিকিট এক মহা দুষ্প্যপ্য বস্তু। পরে আবার ব্লাকেও বিক্রি হয়েছে। কি আশ্চর্য জনক অরাজকতা চলত নীরবে। এইসব ছোটখাটো অনিয়ম দূর হয়েছে আজ অন্তত দেশের। মানুষ শিক্ষিত হয়েছে। অধিকার আদায় করতে শিখেছে। তারপরও রাজা মহারাজার দৌড়াত্ম জনিত দুর্নীতি কমেনি। ওট বোধহয় কখনই কমবেনা।
দূর্নীতিতো বাংলাদেশের আজন্ম সঙ্গী। তখন আরেকটু বেশীই ছিল। অথবা এখন হয়তো সয়ে গেছে। দুর্নীতির থেকে এ জাতির মুক্তি নেই। তবে আইন কঠোর হয়েছে। মানুষ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েছে। ভাবাই যায়না, যে রাজধানী ঢাকার বুকে এক সময় মানুষ আর মানুষ গিজগিজ করত। মনে হতো মানুষের পঙ্গপাল কেবল ছুটছে আর ছুটছে । সেখানে আজ সব কিছু পরমিত। গুনে গুনে লোক ঢোকে ঢাকায়, গুনে গুনে বের হয়। তারপরও আইনের চোখকে ফাঁকি দেয়ার নেতিবাচক অবস্থা তার চেয়ে আর কতজন জানে।

বিচলিত আর ব্যথিত মানুষের ঢল সেই ২০১১ এর ৪ঠা মার্চে মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে। মাঠের ভেতরে গুমোট নীরবতা। দু'একজন তখনও বসে বসে ভাবতেই পারছেনা কি থেকে কি হয়ে গেলো। ডে নাইট ম্যাচ ছিল। অথচ গোধূলির তার রক্তিম আলো ছড়ানোর আগেই সেই ম্যাচ শেষ। এত কষ্টের টিকেট নিয়ে অনেক মাঠে পৌঁছানোর আগেই ঢোকার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলো।

মানুষ নেই, নিথর পড়ে ছিল তার বাবার হাতে রান্না করা তিন হাজার প্যাকেট বিরানী। ম্যানেজার স্যারের মাথায় হাত। তিনি কিছু বুঝতেই পারছিলেন না এ কি হয়ে গেলো। প্যাকেট ঢুকছোলি তখনও। অথচ মাঠে কোন খেলোয়াড় আর খেলছিলনা। খেলা তো শেষ। কোন দর্শক চোখ মেলে খেলা দেখার অপেক্ষায় ছিল না। বিদায়ের পদযাত্রায় মনে বিষণ্ণ দুঃখ তাদের।
ম্যানেজার খুব হৈচৈ করছিলেন। এমনেতেই রুহুলের মন খারাপ। এত বাজে খেললো। মনে মনে খেলোয়াড়দের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছেড়েছিল। এর মধ্যে ম্যানেজারের চ্যাঁচাম্যাচি ভালো না লাগারই কথা। সেও কাজ ফেলে গ্যালারি থেকে বের হয়ে গেলো কাউকে কিছু না বলে।
বাইরে নিন্দা মিছিল চলছে। দর্শক ক্ষিপ্ত আর উত্তেজিত ভীষণ। তারও ইচ্ছে করছিল মিছিলে মিশে যায় । পেছন থেকে কে যেন ডাকলো তখন। ওর মতই আর একজন সেলস ম্যান। সেদিকে কান দিলো না। তবে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল বিরিয়ানির প্যাকটে বিক্রি করছে। আশ্চর্য দাম। গ্যালারিতে বিক্রি করা হয় ১৮০ টাকা। আর এখন বাইরে মাত্র ৫০ টাকায় প্রতি প্যাকটে সেল করা হচ্ছে। যাক ম্যানেজারের পুঁজিটা অন্তত উঠবে। এই কথা ভাবতে ভাবতে কখন সে নিজেও মিছিলে মিশে যায় সে বুছতে পারে না। মিছিলটা আর এগোচ্ছিলনা। মেইন গেটটার বাম দিকে জনতার ঢলের সাথে এক হয়ে মিশে যায় সে ।
খেলোয়াড়দের বহন করে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরপর দুটি এসি বাস বের হতে থাকে। আশপাশ থেকে হঠাৎ উত্তেজিত কয়েকজন দর্শক প্রথম বাসটার দিকে ঢিল ছুড়ে মারে। হয়তো তারা ভেবেছিল ওটা বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের বাস। কিন্তু মানুষের ভাবনা কেনো জানি উল্টোই হয় সবসময়। বাসের ভেতের থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা অনলাইনে সেই আক্রমণের কথা জানিয়ে দেয়। মুহূর্তে জেনে যায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। কি লজ্জার কথা!
কিন্তু লজ্জা পাবার হাহুতাশ করার সময় হয়নি রুহুলের। পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ে রুহুলও অন্তরিত হয়। জেলখানায় থেকেই বুঝছিল , আইওয়াশ বলে একটা ব্যাপার এ দেশে বহুল প্রচলিত।
আইওয়াশের ঠেলায় পড়ে পাঁচটা দিন জেল খাটতেই হলো। ওখানেই পরিচয় হয় রিছলুর সাথে। রিছলু জেলে ছিল একটা চুরির ঘটনায়। খেলা সংক্রান্ত কোন কম্লিকেসি তার ছিল না। তার মাথায় কেবল বড় লোক হবার ফর্মুলা। রুহুল লেখাপড়া করা ভদ্রলোক না হলেও চোর বাটপারের সাথে মেশার মতও ছেলে না। অবশ্য তার অনেক বন্ধুই পাড়ায় বড়সড় মাস্তান । তারা কদাচিৎ ছিনতাই টিনতাই করে সে জানে, কিন্তু ছিঁচকে চোর তো না। মাস্তান বন্ধু না থাকলে এলাকায় বাস করা কঠিন। তার উপর তার বাবা এলাকার নাম করা বাবুর্চি। বাবুর্চির ছেলে হিসেবে সবার সাথেই তার একটা খাতির গড়ে উঠেছে। সেই খাতিরের একজন রাফি ভাই। রাফি ভাই এলাকাতে নেতা হিসেবে সুখ্যাতি ও কুখ্যাতি দুইই কামিয়েছেন। তার পরিচয়ের সূত্র ধরেই রিছলুর সাথে কথার সূত্রপাত। জেলে তিনদিন কাউকে তো পেয়েছিল। না হলে ঐ বিষণ্ণ পরিবেশে বসবাস করা রুহুলের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত। শুধু তাইনা। রিছলুর সাথে সখ্যতার খাতিরে খাবার, গোসল এসব কাজে সুবিধা ভোগ করতে পেরেছিল। নিয়মিত যাতায়াতের কারণে রিছলুর সুবিধা আদায়ের আইন সব জানা ছিল। বড় লোক হবার প্রচণ্ড লোভ যে রুহুলের মধ্যেও বসবাস করে সে সত্য বুদ্ধিমান রিছলু তারই মুখ দিয়ে আদায় করে নিয়েছিল।
জেল থেকে ফেরার পর বাবা অনেক বকেছিলেন। অথচ তার কি দোষ। এমনকি বাবা পরের শুক্রবারে বাংলাদেশ -ইংল্যান্ডের ম্যাচে তাকে সেলসম্যানের চাকুরীটিও করতে দেননি। খুব রাগ হয়েছিল। অথচ সেই ম্যাচে ঠিকই জিতেছিল বাংলাদেশ। মাঠের উন্মাতাল আনন্দে শরীক হওয়া হয়নি তার। সে সব কথা মনে পড়লে হাসি পায় রুহুলের। আজ মাঠে ভিআইপি পাশ পায় সে। কিন্তু দুঃখ আজ আর উন্মাদনায় মিশে যেতে ইচ্ছে হয় না। টাকা থাকলেই রাশভারি হাল হয় মনের।
কক্সবাজারে রুহুলের একটা খাবারের রেস্তোরা আছে আজ। একেবারে শুধু নিজের। সেখানে কোন গডফাদারের করাল থাবা নেই। বিভিন্ন বড় আকারের প্রোগ্রামে সে খাবার সাপ্লাইয়ের কন্ট্রাক্টও নিয়ে থাকে। বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলাতেই ভিআইপি লাউঞ্জে সবার মুখে ভোজান রসে রসময় হয় তারই সাপ্লাই করা খাবারে। সাপ্লাইয়ের কাজ পাওয়ার লাইন ঘাট সে অনেকদিন আগেই পেয়ে গেছে। একটা সময় একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট সহযোগিতা নিতে হলেও আজ আর সে কোন দলের নয়। আজ সে পাকা ব্যবসায়ী। অন্ধকার জগতের ব্যবসা প্রায় সবই সে ধীরে ধীরে গুটিয়ে এনেছে। কিন্তু পাপ কর্ম হলো গায়ের চামড়া। যতই কেটে ফেলা হোক আবার গজাবে এবং গজাবে বিকৃত রূপে। মাছে মাঝে তার খাবারের আড়ালে দু'একটা মাদকের চালান না করে দিলে গডফাদারের হাতটা মাথার উপর থেকে উঠে যাবে তা সে ঠিক জানে।

জেল থেকে বের হবার দিন রিছলু একটা ফোন নম্বর দিয়েছিল তাকে। একটা মেয়ের নম্বর। বলেছিল মন খারাপ হলে কল করতে। মন ভালো হয়ে যাবে। আর বলেছিল তাকে প্রয়োজন হলে যে কোন কাজে ঐ মেয়ের কাছেই পাওয়া যাবে তার খোঁজ। রুহুল এর বেশী কিছু আর জিজ্ঞেস করেও জানতে পারেনি।
মেয়েটার নম্বরে ফোন করার আগ পর্যন্ত রুহুলের ধারনা ছিল অন্যরকম। ভেবেছিল রিছলু তাকে ভোঁদা পোলা ভেবে প্রেম করা জন্য নম্বর দিয়েছে। মেয়েটাকে ফোন দেবে। মেয়েটা গুটুর গুটুর কথা বলবে। রুহুলের সময়টা ভালো যাবে। অথবা হতে পারে রুহুলকে ভালো ছেলে মনে করে রিছলু তার কোন বোনটোনকে তার কাছে গছিয়ে দেয়ার পায়তারা করেছে।
রিছলু জেল থেকে ছাড়া পাবার খবর জানতেই হয়তো রুহুল ফোন করেছিল একদিন সন্ধ্যায়। তারপর ঘটে গেলো কতকিছু। ঘটে গেলো জীবনে উথাল পাথাল ঢেউ।
মেয়েটার কণ্ঠটা আকর্ষণীয় ছিল। তরুণ বয়সে সে কণ্ঠের যথার্থ আবেদন কার্যকর হলোই। মনে দোলা লাগল এক অন্যরকম ভালো লাগার। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় মেয়েটা তাকে আগে থেকেই চেনে। রিছলু ছাড়া পেয়েছে কয়েকদিন আগে। মেয়েটার নাম ছিল নাতাশা। কণ্ঠ আর আবেগের জাদুতে কথা বলার পালা শুরু হলো।
মেয়েটার বাসাতে রুহুল যায় পরিচয়ের প্রায় ১০/১৫ দিন পরই। রিছলুর সাথে দেখা করাটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। রিছলুই তাকে ডেকেছিল। কত বছর হয়ে গেছে আজ সেই দিনের পর। কিন্তু রিছলু কিংবা নাতাশা কেউই কোনদিন বলেনি তাকে তাদের দু'জনের সম্পর্ক। রুহুল অনেক ভেবেছে। একবার মনে হয়েছে মেয়েটা কল গার্ল। প্রমাণ পাইনি। হতে পারে তাকে প্রমাণ দেয়া হয়নি। তারা তাকে কেবল ব্যবহারই করতে চেয়েছিল তাদের প্রয়োজনে। তারপর রুহুল যখন তাদের ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো আরও কয়েক ধাপ উপরে তখন তারা হয়ে গেলো বহু নিচের মানুষ। সত্য আর জানা হলো না। কিন্তু সেই সময় নাতাশার প্রতি একটা ভালো লাগা কষ্ট দিত। সেটা ঠিক ভালোবাসাও হয়তো নয়।
নাতাশা একা একটা বাসায় থাকত। ঐ বয়সের একটা মেয়ে! ঐ সময় রুহুল অনেক ভেবেছে। নাকি সে রিছলু কিংবা রিছলুর উপরের কারও আশ্রিতা, পার্ট টাইম বউ। সে কিছুই জানতে পারেনি। একসময় এসব জানার ইচ্ছে তার চলেই গেলো, সে তখন উপরে উঠছে, অনেক উপরে।
বাবা খুশি হয়েছিলেন। বিদেশে যাবার ভূত মাথা থেকে বিদায় নিয়েছিল। আড্ডা কমেছিল। বাবার ইচ্ছেমত বাবার ওখানে খাবার সাপ্লাইয়ারের ছোট চাকুরীটা শুরু করে দিল। বেতন খুবই কম। মাঝে মাঝে বখশিশ। কিন্তু সব কিছুর আড়ালে খাবারের প্যাকেটে বিরিয়ানির ভেতর চালান হয়ে যেত ইয়াবা, ফেন্সি ট্যাবলেট, গাঁজার পুরিয়া আর কত নেশা দ্রব্য। গুলশান বনানীর নানান গোপন ক্লাব , নাইট ক্লাব থেকে তাদের ওখানে খাবারের অর্ডার আসছিল অহরহ। ম্যানেজার তো মহা খুশি। রুহুলের বেতনও বেড়ে গেলো। কিন্তু তিনি কি করে জানবেন খাবার তার দোকান থেকে বের হবার পর মাঝে আরেকবার রি-প্যাক হয়। তখন ঢুকে যায় কাস্টোমারের গোপন চাহিদা বস্তু। প্রতি চালানে রুহুলের হাতে চলে আসতে থাকে মোটা টাকা। টাকা পয়সার লেনদেন টা মূলত নাতাশার বাসাতেই হতো।
তারপর সেই শাপে বর ঘটনা। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল হাতে নাতে। ধরা পড়ল খাবারের প্যাকেট ইয়াবা ভরার সময়। রুহুল , রিছলু, নাতাশা আর সাথে আরেকটা ছেলে। তার নামটা ছিল মাহিন। ছেলেটার সাথেই সরাসরি এই ব্যবসার গদ ফাদারের যোগাযোগ ছিল এবং আশ্চর্য থানায় গারদে ঢোকানোর আগেই ফোন এলো। মাহিনকে ছেড়ে দেয়া হলো। সে অবশ্য সবাইকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলল 'বড় ভাই কিছু একটা ব্যবস্থা করবেনই'।
অনেক কাষ্টমারের সাথেই রুহুলের সু সম্পর্ক ছিল। তার ব্যবহারের কারণে অনেকেই তাকে যথেষ্ট খাতির করত। এমন একজন ছিলেন এক মন্ত্রীর ছেলে। পুলিশকে পটাতে সময় লাগেনি। একটা ফোন করল রুহুল মন্ত্রী পুত্রের কাছে। তখনও সে জানতো না যার হয়ে সে কাজ করে সে ঐ মন্ত্রী পুত্রেরই বন্ধু জন।
ছাড়া পেলো সে মন্ত্রী পুত্রের বদৌলতে। তার কোম্পানির ম্যানেজার নিজে স্ট্যাটমেন্ট দিলেন। লিখলেন ঐ দিন সাপ্লাইয়ের কাজ তার ছিল না। সাপ্লাইয়ের কাজ ছিল সুমন নামের এক ছেলের। রাস্তায় তার সাথে রুহুলের দেখা হয়। তারপর পুলিশ তাকে ভুল করে ধরে আনে। সুমনের নামে কেস হয়ে যায়। অথচ রুহুল কোনদিন ঐ নামের কাউকে ঐ কোম্পানিতেই দেখেনি।
ম্যানেজার তার বাবাকে চাকুরী চ্যুত করেছিলেন তার গ্রেফতারে পরেই। অথচ নিজেই ডেকে আনলেন এই ঘটনার পরে। রুহুল বুঝে যায় অনেক কিছুই ঘটে গেছে । সে সোজা চলে যায় মন্ত্রী পুত্রের সাথে দেখা করতে। সেই দিনই প্রথম পরিচয় হয় তার গডফাদার লোকটির সাথে। যার দলের হয়েই সে মূলত নেশার সাপ্লাইয়ার হয়েছে। লোকটার পুরো মাথায় টাক। কোথায় যেন দেখেছে দেখেছে মনে পড়ে। সেদিন চেনেনি। কিন্তু আজ তো ঠিকই চেনে।
আলাপ হয়। তার নামে প্রশংসা চর্চা হয় । বিরিয়ানির প্যাকেটে নেশা দ্রব্য সাপ্লাইয়ের বুদ্ধিটা যে তারই সেটা তার গডফাদার জানত। সেটাও একটা কারণ হতে পারে।
গডফাদার তাকে প্রমোশন দিলেন। ন্যাশনাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল বানিয়ে দিলেন। প্রতি মাসেই তিন চারবার রুহুল বিদেশ যায়। মাল আনতে যায়। মালের আড়ালে গোপন কত কিছু।
অনেক দিন কেটে যায়। বছর চারেক তো হবেই। রুহুল ফ্লাট আর গাড়ীর মালিক হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একদিন রিছলু আর নাতাশা এসে হাজির হয় তার কাছে। কথায় কথায় জানতে পারে তারা এখনও সেই আগের লাইনেই আছে। কিছু টাকা ধার চায় । রুহুল দেয়ও। মানা করে না। সপ্তাহ খানেক পরে আবার আসে। রুহুল সেবারও দেয়। কিন্তু মানা করে আর না আসতে। তারা শোনেনা। আসতেই থাকে।
কিন্তু এই রুহুল তো আর সেই রুহুল নেই। এবার আর টাকা দেয় না। সে জানে ওরা ছিচকে চোর, ছোট সাপ্লাইয়ার। ওরা ওর কি করবে। ওর উপরে এখন কত জনের হাত।
পরের চালান আনার সময় বিদেশ থেকে এয়ারপোর্টে নামতেই পুলিশের হাতে আবার ধরা পড়ে সে। সাথে স্বর্ণের কয়েকটা বিস্কুট সহ।
সেই মন্ত্রী পুত্র তখন আর মন্ত্রী পুত্র নেই। তার গডফাদারও এক রাজনৈতিক ঝামেলায় একটু গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। মহা বিপদে পড়ে গেলো রুহুল। ঝামেলা কাটতে সময় লাগল দুই বছর। এই দুই বছর জেলে বসে পঁচতে হয়েছে তাকে। কিন্তু গডফাদার মুখ ফেরান নি। বিদেশে গা ঢাকা দেয়া জীবন থেকে ফিরে এসেই রুহুলকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন।
পত্রিকার পাতায় পাতায় রুহুলের নানা কীর্তি নিয়ে ফিচার ও লিখেছে শত্রু হয়ে উঠা দু'একজন সাংবাদিক। গডফাদার তাকে আর সাপ্লাইয়ার এর কাজে রাখলেন না। তবে সেই শুরু হলো রুহুলের প্রকৃত উত্থান। স্মাগলার থেকে সেও বনে গেলো একজন ছোট খাট গডফাদার।

ততদিনে ঢাকা শহর থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত নতুন গড়ে উঠতে থাকা শহর কক্সবাজার সিটির দিকে শিফট হতে শুরু করেছে। অনেক দেরীতে হলেও সরকার বুঝতে পেরেছিল আমাদের কক্সবাজার হয়ে উঠতে পারে আরেকটা সিংগাপুর কিংবা সেনজেন। বিশাল বিশাল দালান তৈরি হচ্ছে। পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানি আসছে। দেশীয় কোম্পানিও এগিয়ে কম না। রাজনৈতিক প্রভাবেও কেউ কেউ নতুন সমাজ্য গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। এ সবের আড়ালে প্রকৃত পক্ষে গড়ে উঠছিল কক্সবাজার সিটি। রুহুলের গডফাদার কক্সবাজারে তার নিজস্ব জমিতে একটা ফাইভ স্টার হোটেল এর কাজে হাত দিয়েছিলেন। রুহুলকে সেখানেই পাঠিয়ে দিলেন তিনি। পুরো কাজটার তদারকি সেই করেছে।
বিনিময়ে পেয়েছে হোটেলের একটা ছোট্ট শেয়ার। ঐ ডিরেক্টও শিপটাই গডফাদারের সাথে তার যোগসূত্রটা ঠিক রেখেছে। রিছলু আর নাতাশা শুনেছে এখনও ঢাকায় থাকে। গডফাদারের হয়েই কাজ করে তারা। গডফাদারকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল তাদের বিষয়ে। তিনি চেপে যান। রাগ হয় রিছলুর। কিন্তু অনেকে কিছু হারানোর ভয়ে ঐ দুই বেঈমানকে না পাওয়ার বেদনা সে ভুলে গেছে।
ধীরে ধীরে তার চোখের সামনেই গড়ে উঠেছে অপূর্ব এই কক্সবাজার সিটি। দুর্নীতি , স্মাগলিং সবই কিন্তু রয়েছে কিন্তু এই শহরটা গড়ার পেছনে দল মত নির্বিশেষের ঐক্যবদ্ধতাও অনস্বীকার্য। এই ঐক্যটা যদি সেই স্বাধীনতার পর থেকেই থাকত ঢাকা শহরটাও তাহলে আজ অযোগ্য শহরের খেতাপ পেতো না।
এখানে সে নতুন করে জীবন শুরু করেছে। নতুন ফ্লাট কিনেছে। বিয়ে করেছে। তাদের হোটেলের দোতলায় একটা ব্যাংকে চাকুরী করত তার বউ। সেখান থেকে পরিচয় , প্রেম। তারপর বিয়ে। তার বউ এমবিএ পাশ।

সব কিছু যেন ভেসে ওঠে স্মৃতির পাতায়। সেই ২০১১ সালের খেলার মাঠ থেকে তার উত্থানের শুরু। কাল আবার সেই খেলা। সেই বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে পুলকিত হয়। কাল নিশ্চিত বাংলাদেশ জিতবে। তারপর মনে নতুন সংশয় জাগে । কাল আবার নতুন কোন অধ্যায়ে উত্থান ঘটে যদি। কিংবা পতন। তিলে তিলে গড়ে তোলা তার আপন ঐশ্বর্য ভুবন। তার সুন্দরী শিক্ষিতা স্ত্রী। প্রাণ প্রিয় সন্তান রাইনা। মাত্র ছ' বছর বয়স।
সে বিছানা হতে তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে। ঢাকায় ফোন দেয় এক বিশেষ নম্বরে। এক বাক্যে নির্দেশ দেয়। 'রিছলুকে কিছু করতে হবে না।' ওকে মেরে ফেরার আদেশ ক্যান্সিল করে সে।
রিছলু আর নাতাশাকে সে খুঁজে পেয়েছে ক'দিন আগেই। সে জেনেছে রিছলু তার গডফাদারেরই একটা বারের ম্যানেজার। অন্ধকার বারে আর কতদিন লুকিয়ে থাকবে। রুহুল খুঁজে ঠিকই বের করেছে।
নাতাশা একটা নাচের স্কুল চালায়। মেয়েটা নাচও জানতো নাকি! ভেবে একটু নাক সিটকায় রুহুল।
কাল ১লা বৈশাখ ঐ স্কুলের মেয়েদের অনুষ্ঠান আছে শিল্প কলায়। রিছলু ওখানে যাবেই। হত্যার পরিকল্পনা ওভাবেই করা হয়েছিল। যাক এতক্ষণ মনের স্মৃতিচারণ তার পরিকল্পনা বদলে দিয়েছে। আসলেই রিছলুই তার এই উত্থানের জন্য দায়ী। খারাপ চেয়েছে। জেল খাটিয়েছে , বিনিময়ে সে তো সভ্য একটা জীবন পেয়েছে। রিছলু আর নাতাশা বরং তার কাছে উপহার প্রাপ্য।
গডফাদারকে চটানো ঠিক হবে না। সময় মতো রুহুল সেটান বুঝতে পেরেছে। সে আগামীকাল বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্ব জয়ের স্বপ্নটা শুধু বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যেতে থাকে। আর ভুলে যায় বাকী সব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ঝরা ভোটে দিলাম এক্কেবারে 5
মামুন ম. আজিজ আমি আবেগা আপ্লুত আপনাদের নান্দনিক সব মন্তব্যে।
রওশন জাহান লেখাটা পড়ে অনেকদিন আগেই মন্তব্য দিয়েছিলাম.কিন্তু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মন্তব্য দেখা যাচ্ছেনা. তাই আবার ফিরে এলাম এবং প্রিয় তালিকায় যোগ করলাম.এতেই বুঝে নিতে পারেন লেখাটা কতটা ভালো লেগেছে.
sohel ভাই একবার কক্সবাজার গিয়েছিলাম। যদি আপনার গল্পের মতো কখনও হয় তখন গিয়ে আপনাকে অনেক মনে পড়বে। সিংগাপুরের আদলে কক্সবাজারটাকে বদলাতে চেয়েছেন। অনেক ভালো লেগেছে।
অজানা আমি KHURSHED ALAM ভবিষ্যৎকে দেখিয়ে বরতমান কে উপস্থাপন করেছেন।খুব ভাল হয়েছে। একটি বিশেষ ঘটনার সিরনামে একটি সম্পুরন জীবন কথন।
খোরশেদুল আলম অনেক ধর্য্য ধরে বড় একটি গল্প লিখেছেন অনেক কিছুই গল্পের মধ্যে জানতে পারলাম, খুব ভাল লিখেছেন।
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) তোমার চোখে চোখটি রেখে হয়নি আমার বলা ,তোমার লেখা লেগেছে ভালো নয়কো ছলাকলা /
ফাতেমা প্রমি ভালো লাগলো...cricket আর কক্সবাজারেরর উন্নতি'র এই গল্প-গাথা যেন সত্য হয়..তবে সেই সাথে ওই গডfather রাও যেন ''চ্যালাদের'' সহ সমুদ্রে ডুবে যায়...নতুন উন্নত সুন্দর বাংলাদেশ এর চমত্কার স্বপ্ন,ভালো লাগলো...
মামুন ম. আজিজ সত্যি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ তাবস্সুম

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী