এক.
এ বছরের শেষ ইফতারির গ্রহণের পর্ব সম্পূর্ণ হয়েছে একটু আগে। আগামী কাল ঈদ।
টিভিতে ঈদের সেই চিরায়ত নজরুল সংগীতটা বাজছে। ‘ও মোর রমযানের ঐ রোযার শেষে এল খুশির ঈদ...।’ এত বছর ধরে প্রতিটি বাংগালী শুনে আসছে তবুও এর আবেদন প্রতিবারই নতুনের কেতন উড়িয়ে চলে মনে। দু’একটা চ্যানেল ঘুরাতেই অভি চেনা মুখের দু’জন বক্তার টক শোতে মনকে নিবেশ করার চেষ্টা করল। দেশে ফেরার পর থেকে আর কিছুতে তেমন আনন্দ আর সুখ খুঁজে না পেলেও এই টিভি টক শো গুলোর মাঝে কিছুটা ভিন্ন আমেজ আর আনন্দ খুঁজে পায় সে আজকাল। এ যেন জ্ঞানের ভারে উপচে পড়া এক মৃত নদীর কালো জলে মৃদু ঢেউ, ভালোই লাগে তার, সময় কেটে যায়।
কাজের মেয়েটা ছুটে এল হঠাৎ, বলল, ভাইজান, ভাবীসাবের খুব মাথা বেতা করতাছে, দুই তিনডা বড়ি খাইয়া হুইছে।
অভির স্ত্রী নিশা। মাইগ্রেন আছে তার। অভি তাই খুব একটা উতলা না হয়ে বলল, শুয়ে চোখ বন্ধ করেছে তো?
-করছে মনে হয়, ভাইজান।
-ঘুমাক, কাছে গেলে মেজাজ চড়বে, ব্যথা আরও বাড়বে তার, তুই মাইশাকে নিয়ে অন্য ঘরে খেলা ঘর। ও একা একা কিছুক্ষণ শুয়ে থাক।
কাজের মেয়েটা নতুন এসেছে, নিশার মাথা ব্যথার প্রচন্ড রূপ সে আগে কখনও দেখেনি। দেখলে বুঝত নিশার জন্য ওটা খুবই স্বাভাবিক। এর মধ্যে মাইশা এসে হাজির, অভির কোলে মাথা রেখেই বলে উঠল, বাবা, বাবা আমারও খুব মাথা ব্যথা করছে।
এ ঘটনাও পুরাতন। যখন লন্ডলে ছিল তখন থেকেই। মার মাথা ব্যথা শুরু হলেই মাইশার ও মাথা ব্যথা শুরু হয়। টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা নীল রঙের প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে একখানা সাদা রঙের ট্যাবলেট বের করে মেয়ের হাতে দিয়ে খেয়ে নিতে বলল। কাজের মেয়েটা ছুটে গিয়ে মাইশার পানি খাবার গ্লাসটা ভরে পানি নিয়ে এল। মেয়ের ট্যাবলেট গলধ:করণ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছে অভি। মাত্র সাড়ে চার বছর বয়স মেয়েটার এখন। ওর জন্ম লন্ডনেই। ডাক্তার দেখিয়েছিল লন্ডনে থাকতেই। মাথা ব্যথার কোন সমস্যাই আসলে তার নেই। পুরোটাই মানসিক। ওদিকে সেই সময় তখন পিইচডি করছিল অভি, সাইকলজিতে অনার্স আর মাষ্টার্স তার। পিউচডিতে প্ল্যাসেবো এফেক্ট নিয়ে একটা গবেষণা ছিল, তার প্রফেসর ঐ বিষয়ে বেশ গবেষণা করেছেন, তারই কিছু ডেভোলপমেন্ট করতে দিয়েছিলেন অভিকে তার থিসিসের পার্ট হিসেবে। মেয়ের উপর সেই বিদ্যা যথার্থ কাজ করেছে। মাইশাকে যে ট্যাবলেট দেয়া হয় ওটা ইনার্ট মানে নিষ্ক্রিয় ট্যাবলেট, ওতে কোন ফিজিক্যাল এফেক্ট হবার কথা নয়, কিন্তু মাইশা প্রতিবার ট্যাবলেটটি খাবার এক ঘন্টার মধ্যে দৌড়ে এসে বাবার গালে চুমু দিয়ে বলে ওঠে, ‘বাবা হেডেক ফুললি রিকভারড।’ তার মা’ও ঠিক ঘন্টা খানেকের মধ্যে উঠে বসে, তিন তিনটে পেইন কিলার খেয়ে তবে শোয়, এক ঘন্টায় উঠে না বসতে পারলে পেইন কিলারকেই সে কিলার করে ফেলবে, তার মেজাজে সেই ক্ষমতা প্রবল।
মাইশা ওষুধ খেয়ে সোফায় হেলান দিয়ে রিমোটটা হাতে নিলো। অভি মেয়ের মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল তখনও। মা’র চেয়েও সুন্দর হয়েছে। কাল ঈদ। মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাবে, কোথায় যাওয়া যায় ভাবছে সে। পুরো শহরে আজকাল যে জ্যাম হয়, ঈদের দিনে নিশ্চয় কিছু ফাঁকা থাকে! শ্বশুর বাড়ীতে তো যেতেই হবে সকালে, সে থাক কাল ভাবা যাবে। রোযা শেষ, পুরো এক মাস কোন বোতল খোলা হয়নি। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকতে থাকতে নেশাটা ভালোই হয়েছে। মাঝে মাঝে এক দু প্যাগ না হলে চলে না। মন চাইছে রিডিং রুমটাতে গিযে বসতে, ওখানেই নিরিবিলি ড্রিংক করে মাঝে সাঝে অভি। একজন সঙ্গী পেলে খুব ভালো হতো... টেবিলের উপর রাখা মোবাইলটা বাজলো ঠিক সেই সময়। হাতে নিলো। নবীন কল করেছে। নবীনকেই তো অভির দরকার। এই একটা বন্ধু তার যার কোন রূপ নেশাতেই অরুচী নেই। কত জন নেশায় নষ্ট হলো, নবীন কিন্তু তা হয়নি। সে নেশাকে এক পাশে রেখে জীবন যুদ্ধ করেই চলেছে। খুব একটা খারাপ নেই। ছোট খাট কিছু ব্যবসা করছে। দেশে ফিরে নবীনের সাথেই কথা হয়েছে বেশি। দেখাটাও। খুব ভার্সেটাইল একটা গ্রুপ ছিল মহল্লায় অভিদের। নানান ধরণের ছেলের দল। কেউ খুব লেখাপড়ায় ভালো ছিল, কেউ আবার লেখাপড়াই করতো না। অথচ মিল ছিল সবার। নেশার চল ছিল বিশেষ কোন দিনে। তবে সব সবাইকে আক্রান্ত করত না। কেউ কাউকে বাধাও দিতনা। নবীনের গাঁজার রাজ্যে বিচরণ ছিল চিরায়ত। অথচ তবুও সে নেশাখোর হলো না। আবার আদনান নামে এক বন্ধু লেখাপড়া ছেড়ে মদ গাঁজায় জীবন উচ্ছন্নে দিয়ে দিল। ভালো ছাত্র ছিল। এইচএসসির পর আর হলো না। বিয়ে দিযে দিয়েছিল তাড়াতাড়ি তার বাবা মা। নবীনের কাছে শুনেছে এখন মদ গাঁজা নিয়ে পরে থাকে। কারও সাথে মেশে না তেমন। দু একবার ছিনতাই টিনতাই করে জেলেও গেছে বলে। পারিবারিক ব্যকগ্রাউন্ড ভালো তার, কোন এক চাচা সম্পর্কের কেউ সরকারী দলের এমপি, তার সাথেই বলে গিয়ে জুটেছে আজকাল, নেশাকে সাথেই নিয়েই। বউটা অবশ্য ছেড়ে চলে গেছে।
নবীনের ফোন পেয়ে ভালোই লাগলো অভির। ঈদের আগের রাত। নবীন এলে তো তার ভালোই হয়।
-কী রে নবীন। কেমন আছিস?
-এইতো বস, একটা সমস্যা হয়েছে। তোমার হেল্প লাগবে। যদি ...
-আই, আগে বল, তুই আমারে তুমি করে বলিস কেনো, দেশে আসার পর থেকে দেখছি...
-মুখের কথা কেড়ে নিয়ে নবীন বলে উঠল, বস, তুমি এখন ডক্টরেট করছো, ভার্সিটির টিচার হইছো, আর আমরা কোন ছাড়, আমগো ফোন যে ধরো এইটাই তো অনেক..
-একটা মাইর দিমু হারামজাদা, বল কি সমস্যা?
-মানে, ঐ যে, আসলে তোমারে একটু আমার লগে থানায় যাওয়া লাগবো। ঐ যে মুন্সীর কথা মনে আছে...
-মনে থাকবো না, আমগো দলের সবচেযে ভদ্র পোলাডা। শুদ্ধ কথার ওস্তাদ। বাপের বেশ টাকা পয়সা ছিলো। কয়েকটা দোকান ছিলো ওদের...’
-ওসব আর সে রকম নাই, বাড়ীটা কোন মতে আছে। বাপ মারা যাবার পর তিন ভাই সব ভাগ বাটোয়ারা করল.. সে যাক বেচারা থানায় আছে। সে অনেক কথা, মুন্সীটা এখনও ভোদাইই রযে গেছে। আমাগো লগে জীবনে কোনদিন দেখিনাই এক ফোঁটা মদ গলায় ঢালতে, হেয় বলে বস বোতল নিযা ধরা খাইছে। তাও কেরুর বোতল। বারের থেইক্যা কিনা রাস্তায় দিযা ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ কইরা নিয়া যাচ্ছিল, গাধা একটা। বস তোমার, সরি তোর ড্রিং করার লাইসেন্স আছে শুনলাম। তুই যদি আইসা কস তোর লাইগ্যা কিনতে গিছিল, তারোপর তুই প্রফেসর মানুষ, তুই কইলে ওরা ছাইরা দিবো। যদি একটু আইতি, মুন্সীর ভাইরা কেউ আইবো না কইছে, এখন ...’
-কোন থানায়?
-তেজগাঁও।
-তুই দাঁড়া আমি আসতাছি এখুনি।
দ্রুত টিশার্টটা গায়ে জড়িয়ে ড্রিংক করার লাইসেন্সটা ড্রয়ার থেকে খুঁজে নিযে নিশার বিছানার দিকে এগেলো। নিশা নিথঢ় ঘুমাচ্ছে। ডাকলো না। অভি তাকে আরেকটু রেষ্ট নিতে বলে দরজার দিকে এগোতেই মাইশা ছুটে এসে বলল, বাবা , বাবা মাথা ব্যথা টোটালি রিমুভড, ইওর ট্যাবলেট ইস শো গুড, সো গুড, থ্যাংকস বাবা।
আজ মাইশার উপর প্ল্যাসেবো এফেক্ট কাজ করেছে বেশ দ্রুততর। বাহ! মন প্রসন্ন হলো অভির।
দুই.
থানায বেশি ঝামেলা হলো না। কিছু টাকা অবশ্য খসাতে হলো। টাকা, লাইসেন্স আর বিদেশ ফেরত প্রফেসর-তিনটে ট্রাম কার্ড, কাজ তো হবেই।
যাবার সময় অভি কোন হিসেব মেলাতে পারছিল না। সবচেয়ে ভালো ছেলেটা ছিল মুন্সী। খুবই কনজারভেটিভ স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। সবাই গাঁজা আর মদের আসরে না বসলেও সিগারেটে দলের কারও অরুচি ছিলনা। অন্তত আড্ডায, একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ঐ মুন্সী। তার ব্যবহারও ছিল তেমনই অমায়িক। সবাই তাকে পছন্দ করত। বেশিই পছন্দ করত। সবাই যখন মেয়েদেও পেছনে ছোটার একটা বয়সে সে পথেই ছোটার বাসনায় লিপ্ত হতে শুরু করেছিল তখনও মুন্সী মেয়েদের দিকে মুখ তুলেও তেমন একটা তাকাতো না। সেই ছেলে থানায়, চৌদ্দ শিকে... কেনো ? তাও মদের বোতল নিয়ে ধরা খেয়ে! বিশ্বাস মিলানো দায়। গবেষনার সেই শিক্ষাটা কী একবার মুন্সীর উপর প্রয়োগ করে দেখবে! কিন্তু তার আগে জানতে হবে নেশা কেনো তাকে হঠাৎ টনের্ডোর মত উড়ে এসে ঘুর্ণণের মাঝে টানছে।
মাথাটা নিচু করে বসে আছে অভির এলিয়ন গাড়ীর সামনের সিটে মুন্সী। পেছনে নবীন একা। অমায়িক মুখশ্রীটা এখনও সেই রকম মুন্সীর। গাড়ী চালাতে শুরু করেছে অভি। চালাতে চালাতেই জিজ্ঞেস করল, বিস্তারিত বলতো নবীন।
মুন্সী মাথাটা নবীনে দিকে একটু উঁচু করে তুলে বলল, নবীন, আমার সত্যি মদ দরকার। এক বোতল মদ, আমি সহ্য করতে পারছি না আর, তোরাই তো বলতি মদ খেলে সব ভুলে থাকা যায়। তোর কাছে গাঁজা হবে? হবে নিশ্চয়। ও জিনিস তোর কাছে না থেকে পারে না। ওতে নাকি দ্রুত কাজ হয়। আমাকে খাওয়া শিখাবি?
-মুন্সী, আমি অভি, চিনসোস তো আমারে। অভি। ঐ যে রাফিয়াদের গলিতে আমাগো বাসা ছিল। রাফিয়া না তোকে ভালবাসতো। কী অবস্থা এখন মেয়েটার?
-রাফিয়া, আবার রাফিয়া...কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছিস অভি। অনেক বড় হয়েছিস। জেল থেকে বের করলি, মুক্তি দিলি। নুন দিবি তো। দেদে, নুন ও দে। সাথে এক গ্লাস মদ দে না। আর সহ্য হয় না। তোরা কত খাইলি, এবার আমার পালা...।
-নবীন, তুই বলতো কি হয়েছে আসলে, রাফিয়ার কথা শুইনা আরও চেতলো মনে হয়...?
-আরে সে সব অনেক কথা। ঐ মাইয়াডর লগে একটা সম্পর্ক শেষমেষ হইছিল ষ মুন্সীর। মেয়েটা ঘুরঘুর করত যেমনে। তুই তো দেখছোস ই। মুন্সীর একসময় রাজী হয়েছিল। বিয়া তো করতেই হবে। রাফিয়াই ভালো। তখন মুন্সীর অবস্থাও বেশ। বাবার মারা যাবার পর দোকান একটা ভাগে পাইছিল আর নগদ অনেক টাকা। দোকান জমছিল না তার। বেঁচে দিলো। সেই টাকা সব খাটাল শেয়ারে। ধুপধাপ বাড়তে লাগলো। আমরা বন্ধু বান্ধবরাও অনেকে কিছু কিছু টাকা তারে দিলাম। সে সবাইরে লাভ দেয়। তারপর তো ধ্বস নামল, সে কি ভয়াবহ ধ্বস, সারা দেশে তোলপাড়, হাজার হাজার মানুষ মুহূর্তে সব টাকা হারাল। যার কাছ থেকে যা নিছিল সব শোধ করতে করতে মুন্সীর পুঁিজেিতই টান পড়ল। বিয়ের চাপ দিচ্ছিল রাফিয়া। কিন্তু ওদিকে তখন না পারছে টাকা তুলতে না পারছে শেয়ার বেঁচতে। মা অন্য দুই ভাইয়ের কাছে থাকতে চায়না। ভাবীদেও সাথে বনে না। মার দেখাশোনাও ঠিকমতো হয়না। নগদ টাকা পয়সা তার হাতে নেই। একটা দোকানে কাজ নিলো। রাত দিন খেটে খুটে যা পায় পোষায় না। রাফিয়া দোকানদারকে বিয়ে করবে না বলে ক্যাচক্যাচ করতে থাকে। প্রেমের চেয়ে ধীরে ধীরে প্রেসটিস বড় হয়ে উঠতে থাকে...
-উফ! নবীন চুপ করবি।
মুন্সীর কথায় অবশ্য নবীন থামেনা বলতেই থাকে...শেষে দোকানদারী ছেড়ে আমার সাথে ভাঙারির ব্যবসায় ঢুকলো। আর মাঝে মাঝে শেয়ার কেনাবেঁচা করে কিছু ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু ও মাল এমন কমাই কমেছে আর্ধেক পুঁজিও আর ওঠে না। আমার সাথে ব্যবসা এমন পর্যায়ে ওতে দু বেলায় ভাত হয়, ওতে বড়লোক হওয়া যায় না অথচ মুন্সীরাতো শৈশব থেকেই ছিল বড়লোক। ও পারবে কেনো। রাফিয়ার সাথে নিত্য খটখট লেগেই থাকে। এক বছর আগেও ঈদে রাফিয়াকে হাজার পনের দিয়ে ড্রেস কিনে দিয়েছিল আর এবার ঈদে ওর হাতে সামান্য হাজার চারেক টাকা দিযে বলেছিল কিছু কিনে নিয়ো। রাফিয়া সে টাকা ছুড়ে ফেলে বলেছিল, ও ক’টাকায় আমার কাজের মেয়ের ড্রেসও হবে না। আমি দূর থেকে দেখেছিলাম। ভাইয়েরাও মার সাথে রাগারাগি করত ওর মত উচ্ছেন্নে যাওয়া ছেলের সাথে থাকার জন্য। মা যেতে চাইতো না। কিন্তু মুন্সী জিদ করে মাকে বড় ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিলো। মার চিকিৎসা করানোর সামার্থ্যও তো আর তার নেই। তবুও মুন্সী চুপ করে সহ্য করছিল। আমার কাছে সব বলত। এরপর এই এক দুদিনে আাবার কি যে হলো ... কী হয়েছে তুইই বলনা মুন্সী। বল , আমাদের বলবি না তো কাকে বলবি!
-দূর! ও শুনে কী হবে। রাফিয়া ফিরে আসবে? আসবে না। ও ছেলের সাথে ওর প্রেম আজকের না। অনেকদিনের। আমাকে এক্সট্রা হিসেবে রেখেছিল। যদি ও ব্যাটা ফসকে যায় , তবে...ওসব রাখতো। পারলে একটু গাঁজা মাজা দে। একটু ঘুমাবো, কত দিন ঘুমাই না। নবীন তোকে দেখেছি গাঁজা খেয়ে কি নিশ্চিন্তে ঘুমাতি।
অভি বলল-চুপ! আমার বাসায় চল। আমার ফ্রিজে সব সময মদ থাকে। এক সাথে তিন বন্ধুতে মিলা খাওয়া যাবে জমপেশ। ভালোই হলো পার্টনার বাড়লো একজন।
-আরে মুন্সী অভি বস তো ব্যবস্থা করলোই, গাঁজার আয়োজন আমি করে ফেলব, চিন্তা করিস না।। কিন্তু ঘটনা খুলে বল না।
-দূর ! বাদ দে না। ঐ মাইয়্যার জাতই খারাপ। বলে গেছে ঈদের তিনদিন পরে ওর বিয়ে ঐ পোলার সাথে। সে বলে ইঞ্জিনিয়ার। ক তো এত বছর প্রেম করে! আমি কি এতই খারাপ ছেলে। কোনদিন কোন মেয়ের হাতও ধরি নাই। শুধু ওকেই ভালবাসছি। টাকা পয়সা নাই। আবার হবে। হবেনা বল। তাই বলে চলে যাবে...যাক। আমিও নেশায় ডুবমু। আমি সত্যি ওকে ভুলতে চাই।
বলেই নবীনের হাত থেকে সিগারেটটা নেবার জন্য হাত টানলো মুন্সী, বলল, দে , দে তো একটা টান দেই।
-তুই মদ খাবি, আমারে কইতি। আমি ব্যবস্থা কইরা দিতাম। নিজে গেছাস কেন বারে?
-আসলে হুশ ছিল না। তোকে বলব, তুই আবার মানা করবি কিনা নবীন।
তিন.
তিন বন্ধু অভির বাসায় পৌঁছে গেছে। রিডিং রুমে গিয়ে বসলো। মা মেয়ে এখন সুন্দর ঘুমাচ্ছে। কাজের মেয়েটা জানাল নিশার মাথা ব্যথা কমেছে । রাতে ঈদের জন্য রাঁধতে বসবে। এখন একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। বারোটায় ডাকতে বলেছে। ভালোই হলো।
মুন্সীকে বসিয়ে রেখে নবীন কে ডাইনিংয়ে ফ্রিজের কাছে নিয়ে আসল অভি। প্ল্যাসেবো এফেক্ট সম্পর্কে সংক্ষেপে বুঝালো । গাড়ীতে বসেই পরিকল্পনা করেছে অভি। কাজ হবে সে আশা করে। এখনও কোনদিন মদ পান করেনি মুন্সী। ও বুঝবেই না। নবীনকে বারান্দা থেকে শুকনো কিছু গাছের ডাল এনে দিলো। বলল, এটাই সিগারেটের সাথে মিশিয়ে গাঁজা বলে চালিয়ে দে মুন্সীর কাছে।
নিজের প্রস্তুতকৃত নকল মদ ফ্রিজে বানানো আছে। আদনানের উপর প্রয়োগ করার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু নবীন তাকে নিয়ে আসতে পারেনি। গিনিপিক আজ পাওয়া গেছে। যদিও সেই অর্থে গিনিপিক ঠিক না। এটা পরীক্ষিত যে প্ল্যাসেবোতে ক্ষতির আশংকা নেই বললেই চলে। নকল মদ চেহারায় এবং গন্ধে অবিকল মদের মতই বানায় সে। নিশা একবার জিদ করেছিল, বলেছিল খাওয়া না ছাড়লে সেও খাবে। তাকে নকল মদ দেয়াতে কাজ হযেছিল। এক প্যাগ মুখে দিয়েই বলেছিল, ছিঃ এ মানুষ খায়। এবং আশ্চর্য হলো সেই অ্যালকোহল বিহীন মদ খেয়ে সে বলেছিল তার মাথা ঘুরছে। প্ল্যাসেবো এফেক্ট সত্যি চমৎকার। যেমন চমৎকার মানব সাইকোলজি।
অভি আর নবীন এক গ্লাস করে সত্যিকারের মদ নিলো আর মুন্সীকে দিলো নকল এক গ্লাস।
মুন্সী হাতে নিয়ে বলল, নেশা হবে তো। ভুলতে পারবো তো?
নবীন নকল গাঁজার তৈরী সিগারেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, সাথে এই যে তোর জন্য গাঁজা নিয়ে এসেছি না...
-তোরাই আমার সত্যিকাওে বন্ধু রে। হা হা নকি তোরাই নষ্ট বন্ধু । মদ ধরালি...
-কী বললি। এক চুমুকেই তো ধরেছি দেখছি তোর......
নবীনের সে কথায় মুন্সী বলল, আরে ফান করলাম। বলেই মুন্সী গল গলকরে নাক কাচু মাচু করে গলায় ঢেলে দিলো গ্লাসের বাকী অংশ।
...ঘন্টাখানেক বাদে।
তিন বন্ধুতে অনেক গল্প হচ্ছে। অভি আর নবীন আরও দু গ্লাস গিলেছে ইতিমধ্যে। বিদেশী মাল। নবীন খুব খুশি। এত অল্পতে এ দুজনের কিছু হবার কথাও না। অন্যদিকে মুন্সী তখন টলছে। গলা কাঁপছে। অভি মুচকি মুচকি হাসছে। তার প্ল্যাসেবো এফেক্ট কাজ করেছে।
সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো, দোস্ত দ্বয় কাজ হয়েছে রে। দে তো রাইফ্ফা মাগীরে এক কল দে, দফা রফা এখনই ক...ককইরা ফেলাই। মাইয়া যা তা বলে চলে গেলো, হুম, মনের খায়েশ মিটাই , দে কল দে।
অভি বলল, সে দেখা যাবে। কাল ঠান্ডা মাথায় না হয় তিনজন মিলে যাব ওর কাছে, বোঝাব।
শুদ্ধ ভদ্র কথা বলা মুন্সীর মুখে এখন গালির বর্ষণ হচ্ছে। কোথায় তার চিরায়ত শুদ্ধতা- দূর শালার পো, এখন এই মাতাল অবস্থায় না বলবার পারলে আমি আর বলবার পারবো না। যা বলার এখনই বলতে হবে মাগীডাওে, একটা নটী, আমার লগে নষ্টামী...
সত্যি সত্যি মোবাইল বের করল মুন্সী। হাত কাঁপছে পাকা মাতালের মত । মোবাইলটা পরেও গেলো একবার টেবিলের উপর। উঠিয়ে কল দিলো। তিনবার কল দেয়ার পর রাফিয়া ধরল। মেজাজটা তাতে আরেকটু গরম হলো অ্যলকোহল হীন মদে মাতাল মুন্সীর।
...কেডায়, রাফিয়া নি...মাগী তোরে বিয়ে না করলে আমার কি বাল ছিড়া যাইবো, মাইয়ার কি অভাব পড়ছে। তুই একটা নটি, তুই নটি ছিলি, নটি আছোস, নটিই থাক, তোরে **লাম না। যা...বলেই ফোন রেখে দিলো মুন্সী। ওপাশের কোন কথা সে শুনবে কেনো। তার মুখে এখন মিষ্টি হাসি। প্রশান্তির পরশ।
হাসি অভির মুখেও, নিজের সফল গবেষণায় সে মুগ্ধ। প্ল্যাসেবো এফেক্ট কাজ করেছে। বেশ কাজ করেছে। নকল মদে নতুন মুন্সী মাতাল হয়েছে মিছে ঢংয়ে অজ্ঞাতেই।
নবীন তখন আরেক প্যাগ মদ নিয় এক কোনে এক চেয়াওে হেলান দিয়ে বসে ঢেলেই যাচ্ছে গলায় আর হাসছে নবীন ও মুন্সীর কান্ড কারখানায। সেদিকে এগিয়ে গেলো অভি। বলল, চল কাল ঈদে বউ বাচ্চাকে শ্বশুর বাড়ী রেখে এসেই দুপুরে ঘুরবো তিন বন্ধু জমপেশ। মুন্সী উঠে এস টলতে টলতে কাঁধে হাত রেখে বলল, ঠি..ই..ইক বন্ধুদ্বয়, রাফিয়া গন, লাইফ এগেইন বিগান। হা হা হা।